গত কয়েকদিন ধরে প্রথম সারির বেশ কয়েকটি পত্রিকার শিরোনামে দেখা যাচ্ছে ডেসটিনি’র খবর। খবরটি মূল কথা- বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি ডেসটিনি পরিদর্শন করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ডেসটিনির কার্যক্রম বৈধ নয়। ডেসটিনি কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ ব্যাংকের দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। পাল্টাপাল্টি এ দাবি শেষ পর্যন্ত আদালতে গড়িয়েছে। তাই কার দাবী সঠিক তা আমরা এখনো বলতে পারছি না। অপেক্ষা করতে হবে আদালতের রায় পর্যন্ত।
ডেসটিনি ২০০০ সাল থেকে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে এ দেশে। এ সময়ের মধ্যে লাখ লাখ গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা নিয়ে তারা বিভিন্ন মুখী ব্যবসা শুরু করেছে যা অন্যসব এমএলএম কোম্পানী থেকে ভিন্ন। এখন বলা হচ্ছে ডেসটিনি অবৈধ। আর এমন একটা সময়েই বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনটা প্রকাশ করা হল যখন ডেসটিনির সাথে জাড়িয়ে পড়েছে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত প্রত্যেকটা অঞ্চলের মানুষ। কোথাও কোন পরিবারের সদস্য, আবার কোথাও পুরো পরিবার। প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক-এতদিন কোথায় গিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক, সরকারই বা কী দায়িত্ব পালন করেছে? হত দরিদ্রদের সব টাকা যখন হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে তখন কোথায় ছিলেন আমাদের কর্তারা? এ প্রশ্ন থেকে আওয়ামি লীগ বা বিএনপি কেউ বাঁচতে পারবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক ডেসটিনিকে অবৈধ বললেও লক্ষ লক্ষ গ্রাহকের কোটি টাকার কি হবে, কে দেবে এত টাকার হিসাব সে সম্পর্কে কোন কিছু বলেনি। আর সেই প্রশ্নের উত্তর কে দেবে, কিংবা আদৌ দেবে কি না সেটাও বলতে পারছি না আমরা। কারণ আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা আছে। আমরা সংকিত। আমরা শেয়ার বাজারকে দেখেছি অসহায় মানুষকে খুন করতে; যুবক, ইউনিপে-টু’কে দেখেছি মানুষকে ফকির বানিয়ে পথে বসাতে। সরকার কোন ব্যবস্থা নেই নি। চেয়ে চেয়ে শুধু দেখেছে সর্বহারা মানুষের কান্না। এবার সম্ভবত ডেসটিনিকে দেখতে হবে মানুষকে ভিটা ছাড়া করতে।
কিন্তু সাধারণ মানুষের অপরাধটা কোথায়? মন্দার বিশ্বে যুক্তরাস্ট্র, যুক্তরাজ্যের মত দেশ যেখানে দারিদ্র্য থেকে মুক্তির পথ খুঁজছে সেখানে বাংলাদেশের কি আর আলাদিনের চেরাগ আছে! দেশকে দারিদ্র মুক্ত করার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু এ দেশের সরকার কখনো নিঃস্বার্থভাবে ক্ষুধার্তদের মুখে যে খাবার তুলে দেবে না সেটা সবাই জানে। তাই মানুষ দু-বেলা পেটপুরে খাওয়ার জন্য, দু-মুঠো মুখে দেয়ার জন্য যখন সাধ্যমত কোন চেষ্টা করে তখন অদৃশ্যের নির্দেশে তাদের পেটে লাথি মেরে মুখের খাবার কেড়ে নেয়া হয়। পত্র-পত্রিকার বিভিন্ন প্রতিবেদনে পাওয়া যায় এ সবের পরোক্ষ/প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রক সরকার। সরকারের কোন ঘনিষ্ট মহল এসবের সাথে জড়িত থাকে। এ দৃশ্য আমরা শেয়ার বাজারে দেখেছি, ইউনিপে-টুতে দেখেছি, যুবক সহ আরো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দেখেছি। ভবিষ্যতেও দেখব তাতে সন্দেহ নেই।
১৯৭১ সাল পূর্ব ইতিহাস পড়লে মনে হয় আজ আমরা স্বাধীন, এ স্বাধীনতা আমাদের খুবই দরকার ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক হালচাল দেখলে মনে হয় আমরা এখনো রয়েগেছি সে মজলুমদের দলে, শোষিতদের কাতারে। ক্ষমতার পরিবর্তন হয়ে শুধু শাসন পরিবর্তন হয় নি। ৭১ পূর্ব বাংলাদেশের মত আমাদেরকে এখনো পঙ্গু, বোবা করে রাখা হয়েছে। স্বাধীনতা পায় নি, স্বাধীনতা পেয়েছে আওমি লীগ আর বিএনপি। আমরা কোন কিছু’র প্রতিবাদ করতে পারি না, পারি না কিছু বলতে। সাথে সাথে নেমে আসে অবর্ণনীয় নির্যাতন, সরকারী পুলিশ বাহিনীর ডান্ডা-বেড়ী। তাহলে পার্থক্য কোথায় ৭১ পূর্ব বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশের মধ্যে? রাজনৈতিক দলগুলো সব সময় বলে বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। তাহলে আব্রাহাম লিংকনের Democracy is the government of the people, by the people, for the people সংজ্ঞাটাতো পরিবর্তন করতেই হবে।
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।