সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: শিশুটির ভিটামিনের ঘাটতি নেই তো!

শিশুটির ভিটামিনের ঘাটতি নেই তো!



শিশুরা ঠিক মতো খেতে চায় না। এটি মনে হয় সবার কথা। এই সময়ে ব্যস্ততার ফাঁকে বাবা-মাও শিশুর যত্নে অনেক সময় অবহেলা করে থাকেন। এজন্য কাজের ফাঁকে, ব্যস্তার মধ্যেও খেয়াল রাখতে হবে যে, আপনার শিশুটি যেন ভিটামিনের অভাবে না ভোগে। তাহলে জীবনের শুরুতেই তাকে রোগাক্রান্ত হতে হবে। 
মনে রাখা ভালো, ভিটামিন শুধুমাত্র খাওয়ার জন্য খেতে হবে তা কিন্তু নয়। ভিটামিন শরীরের বর্ধন এবং সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে।  স্বাস্থ্যকর খাদ্য শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন সরবরাহ করতে পারলেও আমাদের ব্যস্ত জীবন যাপন এবং অনিয়মিত খাদ্যাভাস শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি তৈরি করে। তাই শিশুর শরীরের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। শিশুর খাদ্যাভাসে পরিবর্তন এনে তার শরীরে ভিটামিনের অভাবগুলো পূরণ করতে হবে। শিশুর শরীরে ভিটামিন ঘাটতির লক্ষণগুলো ভালোভাবে বুঝতে পারলে সমস্যার সমাধান করা সহজ হবে।

ভিটামিন ডিএর অভাবের লক্ষণঃ এটি শিশুদের একটি সাধারণ সমস্যা। ভিটামিন ডিএর অভাবে যে সকল লক্ষণ শিশুদের মাঝে দেখা যায় সেগুলো হলো- দাত উঠতে দেরি হওয়, খিটখিটে মেজাজ, শারীরিক বৃদ্ধি ধীরে হয় এবং পেশীর সংকোচনজনিত সমস্যা সৃষ্টি হয়। খিচুনি এবং শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যাকেও ভিটামিন ডিএর অভাবজনিত লক্ষণ বলে চিহ্নিত করা যায়। 
 
প্রতিকারঃ ভিটামিন ডিএর অভাবজনিত সমস্যা সমাধানে সূর্যের আলোতে ভ্রমণ করতে হবে। কেননা সূর্যের আলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ডিপাওয়া যায়। এছাড়া খাবার হিসেবে দুধ, মাখন, দই এবং ডিম খেতে হবে।

ভিটামিন এর অভাবের লক্ষণঃ ভিটামিন এর অভাবের ফলে মারাত্মক চোখের সমস্যা হতে পারে। প্রায় আমরা শুনি যে, শিশুর রাত কানা রোগ হয় ভিটামিন এর অভাবে। শিশুদের মাঝে এই ভিটামিন অভাব দেখা দিলে শিশুরা সহজেই অবসাদগ্রস্ত বা ক্লান্ত হয়ে যায়, তাদের চুল পড়ে যায়, দুর্বলভাব আসতে পারে, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা এবং ওজন হ্রাস পেতে পারে।

প্রতিকারঃ হলুদ ও কমলা শাক-সবজি (যেমন-গাজর, কুমড়া), ডিম, মাখন ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে খেলে ভিটামিন এর অভাবজনিত সমস্যা এড়ানো সম্ভব।

ভিটামিন বি-১২এর অভাবের লক্ষণঃ ভিটামিন বি-১২এর অভাবজনিত সমস্যা বিভিন্নভাবে দেখা দিতে পারে। ভিটামিন বি-১২এর অভাবে স্নায়ুতন্ত্রের নানান সমস্যার সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে মস্তিষ্ক এবং হার্টের সমস্যা দেখা দেয়। এই ভিটামিনের অভাবে শিশুর পেটে ব্যথা, দুর্বলভাব, ডায়রিয়া, খিচুনি, অনিদ্রা হতে পারে। এমনকি শিশু তার গলার স্বরও হারাতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিটামিন বি-১২এর অভাবের কারণেই শিশুদের বিভিন্ন আচরণগত সমস্যা যেমন, অমনোযোগী, খিটখিটে মেজাজ ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।

প্রতিকারঃ ভিটামিন বি-১২এর অভাবপূরণে বিভিন্ন রকম মাংস, মাছ, বাদাম, ডিম, দুধ, মাখন, সবজি খেতে হবে নিয়মিত।

ভিটামিন সিএর অভাবের লক্ষণঃ শরীরে কোথাও ক্ষত বা ছিঁড়ে গেলে তা শুকাতে দেরি হলেই বুঝতে হবে শিশুটি পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সিপাচ্ছে না। তাছাড়াও হাত পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা, শুষ্ক ত্বক, কম ক্ষুধা, ইনফেকশন ইত্যাদি ভিটামিন সিএর অভাবের লক্ষণ। এই ভিটামিনের অভাবে শিশুর নাক দিয়ে ঘনঘন রক্ত পড়তে পারে।

প্রতিকার প্রচুর পরিমাণ সাইট্রিক এসিডযুক্ত খাবার যেমন- লেবু, স্ট্রবেরি, টমেটো, ব্রকলি, সবুজ শাক সবজি ইত্যাদির মাধ্যমে ভিটামিন সিএর অভাবজনিত সমস্যা এড়ানো সম্ভব।

ভিটামিন বি-৬এর অভাবজনিত সমস্যাঃ ভিটামিন বি-৬এর অভাবে শিশুর ডাইরিয়া, রক্তশূন্যতা, দুর্বলতা, খিটখিটে মেজাজ এবং হৃদরোগ দেখা দিতে পারে। এই ভিটামিনের অভাবে শিশুদের মধ্যে অসঙ্গত আচরণ লক্ষ করা যায়। বিশেষ করে পরবর্তীতে অপরাধ প্রবণতা, আবেগপ্রবণতা এবং রুঢ় মেজাজ দেখা দিতে পারে। এর অভাব পুরণে প্রচুর মরিমাণে মাংস, মুরগি, মাছ, বাদাম, ডিম, দুধ, সিম, মটরশুটি, পনির ইত্যাদি খেতে হবে। এক্ষেত্রে যারা নিরামিষ ভোজন করে তাদের ওপরের খাবারগুলোর সম্পূরক খাবার খেতে হবে।

এসকল লক্ষণগুলোর একটিও যদি আপনার শিশুর মধ্যে খুঁজে পান তাহলে আজই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। প্রতিকার করতে গিয়ে খেয়াল রাখবেন যাতে ভিটামিনের ওভারডোজ না হয়ে যায়। যদিও বিভিন্ন ভিটামিনের ঘাটতিজনিত সমস্যা মারাত্মক হতে পারে। তবে মাত্রাতিরিক্ত ভিটামিন গ্রহন শরীরের জন্য বিষাক্ত হতে পারে। তাই এদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ওষুধের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে প্রাকৃতিকভাবেই ভিটামিনের ঘাটতি পুরণে চেষ্টা করতে হবে।

সূত্রঃ বাংলাদেশ নিউজ২৪, এপ্রিল ২৩, ২০১২ খ্রিঃ।

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।