সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: হাতির দাঁতের পাটি

হাতির দাঁতের পাটি



বিশ্বের প্রতিটি দেশের জাতীয় জাদুঘরই বিশেষ কিছু নিদর্শন সংগ্রহ ও প্রদর্শনের জন্য বিখ্যাত। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরও তেমনি কয়েকটি নিদর্শন প্রদর্শনের জন্য জননন্দিত। এসব নিদর্শনের মধ্যে হাতির দাঁত দিয়ে তৈরি একটি পাটি অন্যতম। জাতীয় জাদুঘর সূত্রে জানা গেছে, লন্ডন মিউজিয়ামে হাতির দাঁতের তৈরি ছোট আকারের পাটি থাকলেও জাতীয় জাদুঘরে প্রদর্শিত পাটিটি সর্ববৃহৎ এবং বৈশিষ্ট্যময়। বিশ্বের আর কোথাও এ আকারের পাটি নেই। উনিশ শতকের তৈরি এ পাটিটি সিলেট থেকে সংগৃহীত।

একসময় এ দেশের পাহাড়ি এলাকায় অসংখ্য হাতি দেখা যেত। তাই হাতির দাঁতের প্রাপ্তি ছিল সহজলভ্য। সেকালে পূর্ববঙ্গের সিলেট ও পশ্চিমবঙ্গের ইদিলপুরে বহু গজদন্তশিল্পীর বসবাস ছিল। এসব গজদন্তশিল্পীর তৈরি শিল্প-সামগ্রী ছিল বিশ্বমানের। এসব শিল্পকর্মে তৎকালীন জনজীবনের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক চিত্র ফুটে উঠত।

সেকালে সুলতান, সম্রাট, রাজা, বাদশা ও জমিদাররা হাতির দাঁতের তৈরি বিলাসসামগ্রী ব্যবহার করতেন। অভিজাত সমাজে এর ব্যবহার ছিল জনপ্রিয়। হাতির দাঁতের তৈরি সামগ্রী ব্যবহার ছিল তখন আভিজাত্যের প্রতীক। তখন কেউ কেউ গজদন্তশিল্পীদের দিয়ে পছন্দমতো সামগ্রীও তৈরি করাতেন। নবাব আহসান উল্লাহ উনিশ শতকের শেষের দিকে সিলেটের গজদন্তশিল্পীদের দিয়ে এ বিস্ময়কর পাটিটি তৈরি করে ঢাকায় নিয়ে আসেন। শীতলপাটির জন্য সিলেট বিখ্যাত। শীতলপাটির আদলেই এ পাটিটি তৈরি করা হয়েছে। হাতির দাঁত দীর্ঘসময় পানিতে ভিজিয়ে নরম করে তা থেকে চেঁচে প্রথমে চিকন শলা বের করা হয়। এসব শলা একটির সঙ্গে অপরটি আড়াআড়ি করে অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে বুনে পাটিটি তৈরি করা হয়। এর দৈর্ঘ্য ২৩০ সেন্টিমিটার ও প্রস্থ ১২৯ সেন্টিমিটার।

 এর জমিনের রং উজ্জ্বল সাদা। জমিনে অসংখ্য ডোরাকাটা দাগ ফুটে আছে। পাটির চার প্রান্তে সোনালি রংয়ের নকশা আঁকা আছে। এ নকশা আঁকতে স্বর্ণের অতি চিকন পাত ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে পাটিটি দেখতে আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। এক সময় এ দেশে যে উচ্চমানের গজদন্তশিল্পীদের বসবাস ছিল এ পাটিটি তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ। ঢাকার নবাবদের বিয়ে অনুষ্ঠানে এ পাটিটি ব্যবহার করা হতো। নবাব পরিবারের কোনো সদস্যের বিয়ের পর এ পাটিতে বসিয়ে বর-কনেকে সংবর্ধনা দেওয়া হতো। বিংশ শতকের দ্বিতীয় দশকে নবাব পরিবারের সম্পত্তির প্রধান ব্যবস্থাপক মো. আবু বকর সিদ্দিকীর কাছ থেকে এ বিরল নিদর্শনটি ঢাকা জাদুঘর কর্তৃপক্ষ কিনে নেয়। বর্তমানে এ পাটিটি জাতীয় জাদুঘরের দোতলায় অবস্থিত হাতির দাঁতের শিল্পকর্ম গ্যালারিতে একটি কাঁচের শোকেসের মধ্যে উপস্থাপিত আছে। * স্বপন কুমার দাস
সূত্রঃ   বাংলাদেশ প্রতিদিন, ১৯ এপ্রিল ২০১২ খ্রিঃ।

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।