পুরুষের স্ফীত স্তন না থাকলেও, খুব কম পরিমাণে স্তন টিস্যু রয়েছে। আসল ব্যাপার হলো- একজন পূর্ণবয়স্ক পুরুষের স্তন বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছানো বালিকার মতো এবং স্তনের আশপাশে স্ফিত মাংস ও অন্যান্য টিস্যু থাকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বালিকার স্ত্রী হরমোন নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় টিস্যুগুলো বেড়ে উঠে ফলে স্ফিত হয়। কিন্তু পুরুষের ক্ষেত্রে ওই ধরনের হরমোন যথেষ্ট পরিমাণে নিঃসরিত হয় না বলে স্তনের টিস্যুগুলোর সেভাবে উন্নতি ঘটে না।
যাই হোক, যেহেতু পুরুষেরও স্তন টিস্যু রয়েছে সেহেতু তাদেরও স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বস্তুত পুরুষের স্তন ক্যান্সার ঠিক মেয়েদের স্তন ক্যান্সারের অনুরূপ। যদিও তাদের ক্ষেত্রে দুগ্ধ উৎপাদনকারী এবং মজুদকারী অঞ্চলে এ রোগ খুবই বিরল। আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির হিসাব মতে, ২০০৯ সালে ২ হাজার ৩শ’ জন পুরুষের মধ্যে স্তন ক্যান্সার ধরা পড়েছে। তবে মেয়েদের স্তন ক্যান্সারের ঘটনা যতো বেশি শোনা যায় পুরুষের ক্ষেত্রে ততোটা কেন নয়? এর জবাব হলো- পুরুষের ক্ষেত্রে এ রোগ খুবই বিরল। এর সম্ভাব্য কারণ, পুরুষের স্তনে খুব কম পরিমাণ স্তন টিস্যু রয়েছে। এছাড়াও পুরুষরা এস্ট্রোজেনের মতো হরমোনগুলো খুব কম পরিমাণে উৎপাদন করে। আর এ ধরনের হরমোনই মেয়েদের স্তন ক্যান্সারের জন্য অনেকটা দায়ী।জরিপে দেখা গেছে, একশ’তে একজন পুরুষের ক্ষেত্রে স্তন ক্যান্সার সমস্যা হয়ে থাকে। আর দশ লাখে মাত্র ১০ জনের মধ্যে স্তন ক্যান্সার হতে দেখা যায়। কোন ধরনের পুরুষের মধ্যে স্তন ক্যান্সার হতে পারে এরও একটা প্রাথমিক ধারণা দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন, ৩৫ বছরের কম বয়সী পুরুষের মধ্যে স্তন ক্যান্সার খুবই বিরল। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর সম্ভাবনা বেড়ে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ৬০ থেকে ৭০ বছর বয়সীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার ধরা পড়েছে। সাধারণত রক্ত সম্পর্কীয় নারী আত্মীয়র মধ্যে স্তন ক্যান্সার থাকলে বা বুক তেজষ্ক্রিয় বিকিরণ আক্রান্ত হলে পুরুষের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
পুরুষের স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে যদি কোনো ওষুধ বা হরমোন চিকিৎসা নেওয়ার কারণে অথবা সংক্রমণ ও বিষক্রিয়ার কারণে স্তন অস্বাভাবিক বড় হয়ে যায়। স্তনের এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধিকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলে গাইনেকোমাসশিয়া। আবার জিনগত সমস্যার কারণে যাকে বলে ক্লিনেফেল্টার সিনড্রোম এর কারণে স্তনের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হতে পারে এবং এতে স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে। আবার যেসব পুরুষের যকৃতের গুরুতর সমস্যা থাকে তাদের পুরুষ হরমোন যেমন অ্যান্ড্রোজেন নিঃসরণ কমে যায় কিন্তু স্ত্রী হরমোন যেমন এস্ট্রোজেন নিঃসরণ বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রেও স্তনের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটতে পারে এবং ক্যান্সার প্রবণতাও বাড়তে পারে।
অন্যদিকে অণ্ডকোষ বা শুক্রাশয়ের বিভিন্ন রোগ যেমন- স্ফিতি, আঘাত অথবা শুক্রাশয়ের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পুরুষের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। পুরুষের স্তন ক্যান্সার কতোটা মারাত্মক এ প্রশ্নে চিকিৎসকরা আগে ভাবতেন এটা মেয়েদের চেয়ে বেশি কঠিন রোগ। কিন্তু পরে দেখা গেছে, স্তন ক্যান্সার পুরুষ এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে সমান ঝুঁকিপূর্ণ এবং নিদেনপক্ষে একই ধরনের পরিণতি দেখা যায়। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো পুরুষের ক্ষেত্রে স্তন ক্যান্সার ধরা পড়ে মেয়েদের তুলনায় অনেক দেরিতে। এর একটা কারণ হতে পারে; শরীরের ওই অঞ্চলে অস্বাভাবিকতা দেখা দেওয়ার ব্যাপারে পুরুষরা একটু কম সন্দেহপ্রবণ। এছাড়া তাদের খুব কম পরিমাণ স্তন টিস্যু থাকার কারণে এমন অস্বাভাবিকতা ধরতে পারাটাও বেশ কঠিন। আর এ কারণেই পুরুষের স্তন ক্যান্সার প্রাথমিক অবস্থায় ধরতে পারা কঠিন হয়ে যায় এবং এ কারণে টিউমাররূপী ক্যান্সারটি টিস্যুর চারপাশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
পুরুষের স্তন ক্যান্সারের উপসর্গগুলোর সঙ্গে মেয়ের স্তন ক্যান্সারের অনেক মিল রয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একজন পুরুষের স্তন ক্যান্সার ধরা পড়ে যখন সে বুকের ওপর একটি শক্ত মাংসের স্তুপ অনুভব করে। অবশ্য চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার ক্ষেত্রে মেয়েদের তুলনায় পুরুষের মধ্যে অনীহা রয়েছে। কোনো ভয়াবহ উপসর্গ যেমন: স্তনের বোটা দিয়ে রক্ত ঝরা এবং ক্যান্সার আক্রান্ত অঞ্চলে ত্বকের অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে তারপর তারা চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হয়। কিন্তু ইতোমধ্যে ক্যান্সার অনেকখানি ছড়িয়ে যায়।
পুরুষের স্তন ক্যান্সার পরীক্ষা এবং চিকিৎসাঃ
পুরুষের স্তন ক্যান্সার হয়েছে কি না তা পরীক্ষার জন্য মেয়েদের মতো একই কৌশল অবলম্বন করা হয়। যেমন: শারীরিক পরীক্ষা, ম্যামোগ্রাম, বায়োপসিস বা টিস্যুর নমুনা পরীক্ষা। আবার চিকিৎসার ক্ষেত্রে একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। মেয়েদের স্তন ক্যান্সারের চার ধরনের চিকিৎসা যেমন: অস্ত্রোপচার, তেজষ্ক্রিয় চিকিৎসা (রেডিয়েশন), ক্যামোথেরাপি এবং হরমোন চিকিৎসা পুরুষের ক্ষেত্রেও নেওয়া হয়। তবে দেখা গেছে, মেয়েদের তুলনায় পুরুষের ক্ষেত্রে হরমোন চিকিৎসা ভালো ফল দেয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, অনেক স্তন ক্যান্সার হরমোন গ্রাহক। ক্যান্সার কোষের নির্দিষ্ট অঞ্চলে নির্দিষ্ট হরমোন যেমন এস্ট্রোজেন ভাল কাজ দেয়। পুরুষের ক্ষেত্রে এই হরমোন গ্রাহক ক্যান্সার কোষ বেশি পরিমাণে দেখা যায়। একারণে পুরুষের স্তন ক্যান্সারে হরমোন চিকিৎসা তুলনামূলক কাজ দেয়।
জাহাঙ্গীর আলম, নিউজরুম এডিটর
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
এখনতো নিজেরই ভয় লাগছে।
উত্তরমুছুন