সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: স্পুটনিক-২-এর লাইকা

স্পুটনিক-২-এর লাইকা



১৯৫৭ সালে স্পুটনিক-২ নামের একটি কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন লাইকা নামের একটি কুকুরকে মহাকাশ ভ্রমণে প্রেরণ করে ইতিহাস রচনা করে। পৃথিবীর চারপাশের কক্ষপথে ভ্রমণকারী প্রথম প্রাণী লাইকা। লাইকার পাশাপাশি আরও দুটি কুকুরকে এই মহা অভিযানের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত লাইকাই নির্বাচিত হয়।

লাইকার মূল নাম 'কুদরিযাভকা' এবং সে একটি মেয়ে কুকুর ছিল। রাশিয়ার পাঠানো কুকুরটি ১৯৫৭ সালে স্পুটনিক-২ মহাকাশ যানে মহাশূন্যে যায়। অবশ্য এ যাত্রাই ছিল তার শেষ যাত্রা, কেননা তখনো মহাকাশ থেকে ফিরে আসার প্রযুক্তি আবিস্কার হয়নি। এর আগে কোনো জীবিত প্রাণীকে মহাকাশ ভ্রমণে প্রেরণ করা হয়নি। রকেট উৎক্ষেপণের পর অত্যধিক চাপ এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই লাইকা মারা যায়। তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় কোনো সমস্যার কারণে এমনটি হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এ মহাকাশ অভিযানের কয়েক দশক পর লাইকা মৃত্যুর প্রকৃত কারণ মানুষকে জানানো হয়। ১৯৫৭ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়ন কর্তৃক যেসব কৃত্রিম উপগ্রহ প্রেরণ করা হয় সেগুলো স্পুটনিক নামে পরিচিত। পৃথিবীর আবহাওয়া মণ্ডল নিয়ে গবেষণা চালানো, মহাকাশ যাত্রায় প্রাণীর দেহে কি প্রভাব ফেলে এবং সোভিয়েত রকেট প্রযুক্তি পরীক্ষা করে দেখাই ছিল স্পুটনিক কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য। স্পুটনিক-২-এর জন্য তিনটি কুকুরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল যাদের নাম আলবিনা, মুশকা এবং লাইকা। রুশ মহাকাশ জীব-বিজ্ঞানীরা লাইকাকে নির্বাচন করেন এবং তাকে প্রশিক্ষণ দেন। নভোযানটিতে জীবন ধারণের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছিল। এতে একটি অক্সিজেন উৎপাদক এবং অক্সিজেনকে বিষাক্ত হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ছিল। একটি পাখা ছিল যা কেবিনের তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে বেড়ে গেলেই সক্রিয় হয়ে উঠতো এবং কুকুরের সহনীয় তাপমাত্রা বজায় রাখতো। ৭ দিন বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় খাবার 'জেলাটিন' হিসেবে সরবরাহ করা হয়েছিল। উঠে দাঁড়ানো, হাঁটা বা শোয়ার জন্য লাইকা যেন বেশি নড়াচড়া করতে না পারে এজন্য শিকল ছিল। কেবিনটিতে উল্টো দিকে ঘোরার মতো যথেষ্ট জায়গা ছিল না। তাই কুকুরকে ঘোড়ার সাজের মতো একটি হার্নেস পরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। হৃদযন্ত্রের পাল'স নির্ণয়ের জন্য একটি ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম ছিল। এ ছাড়া শ্বসন হার, সর্বোচ্চ ধমনী চাপ এবং কুকুরের চলাচল শনাক্ত করার উপযোগী যন্ত্রপাতিও ছিল। ২০০৮ সালের ১১ এপ্রিল রুশ কর্মকর্তারা লাইকার সম্মানে একটি স্মৃতিসৌধ স্থাপন করে। মস্কোর একটি সামরিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কাছে এই ছোট্ট স্মৃতিসৌধটি অবস্থিত। নাসার এক দলিলে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৫৭ সালের ৩১ অক্টোবর অর্থাৎ উৎক্ষেপণের ৩ দিন আগেই লাইকাকে কৃত্রিম উপগ্রহটির ভেতর স্থাপন করা হয়েছিল। উৎক্ষেপণের দিন সেখানে শীত ছিল। এ কারণে একটি নমনীয় নলের ভেতর দিয়ে গরম পানি প্রবাহিত করার মাধ্যমে লাইকার ধারকটিকে গরম রাখা হচ্ছিল। উৎক্ষেপণের ঠিক আগে লাইকাকে সার্বক্ষণিক চোখে চোখে রাখতে দুই জন সহকারী নিয়োগ করা হয়েছিল। স্পুটনিক ২-এর ওজন ছিল ৫০৮ কিলোগ্রাম। ১৯৬০ সালের ১৯ আগস্ট স্পুটনিক ৫ বহন করে বেলকা আর স্ট্রেলকা নামের দুটি কুকুরকে। এটিই প্রথম যান, যাতে কোনো প্রাণী কক্ষপথে ভ্রমণ শেষে জীবিত অবস্থায় পৃথিবীতে ফিরে আসে। * তানভীর আহমেদ
সূত্রঃ   বাংলাদেশপ্রতিদিন, ১ এপ্রিল ২০১২ খ্রিঃ।

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।