সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: বিস্ময়ের নায়াগ্রা জলপ্রপাত

বিস্ময়ের নায়াগ্রা জলপ্রপাত



চোখ বুজে একদণ্ড কল্পনা করুন তো, কোনো জনমানবহীন পথে হেঁটে চলেছেন। দূর হতে শুনতে পাচ্ছেন ঝরনাঝরার ঝরঝর স্বর। অরণ্যের পর্দাটা সরে যেতেই চোখের সামনে উন্মোচিত হলো মোহনীয় এক রূপ। সৌন্দর্যের অনিন্দ্য এক জগৎ। মোহনীয়-অপরূপ এই সৌন্দর্যে তার স্রষ্টার প্রতি বিনম্র চিত্তে বেরিয়ে এলো কৃতজ্ঞতা। হ্যাঁ পাঠক, আপনার চিত্তকে জয় করে নিয়েছে যার রূপ তা একটি জলপ্রপাত। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে আছে অসংখ্য জলপ্রপাত। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় জলপ্রপাতের অবস্থান উত্তর আমেরিকায়। হ্যাঁ, নায়াগ্রা জলপ্রপাতের কথাই বলা হচ্ছে। নায়াগ্রাই পৃথিবীর বৃহত্তম জলপ্রপাত। তো আসুন, নায়াগ্রার হাঁড়ির খবর জানতে একটু নাক গলানো যাক।


পুরো দুটি ধারায় প্রবাহিত হচ্ছে নায়াগ্রা জলপ্রপাত। এর হর্স শু ফলস্ পুরোটাই কানাডায় অবস্থিত। ১৭৩ ফুট উঁচু এবং ২ হাজার ২০০ ফুট চওড়া এই জলপ্রপাতের প্রবাহের গতি ঘণ্টায় প্রায় ৪০ মাইল। হর্স শু ফলস্ দিয়েই নায়াগ্রার নব্বই শতাংশ পানির পতন হয়। আমেরিকান ফলস্ এবং লুনা ফলস্'র পুরোটাই যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত। আমেরিকান ফলস্ উচ্চতায় ১৮২ ফুট ও চওড়ায় ১ হাজার ১০০ ফুট। এই যুগ্ম জলপ্রপাতটি কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তে অবস্থিত। লুনা আইল্যান্ড নামের এক চিলতে জমি দিয়ে এগুলো আলাদা। পহেলা এপ্রিল থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত নায়াগ্রার পর্যটন মৌসুম। এই সময়ে দুই দেশের সমঝোতায় জলপ্রপাতের পানির ধারা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এ সময়ে প্রতি সেকেন্ডে এক লাখ ঘনফুট পানি নায়াগ্রাতে বয়ে যায়। অথচ নায়াগ্রার পানি পতনের স্বাভাবিক গতি সেকেন্ডে দুই লাখ বারো হাজার ঘনফুট। পর্যটন মৌসুমে সন্ধ্যার পর পানির ধারা আরও কমিয়ে দেওয়া হয়। তখন পানি প্রবাহিত হয় সেকেন্ডে প্রায় পঞ্চাশ হাজার ঘনফুট। 


নায়াগ্রায় পানি সজোরে পতিত হওয়ার কারণে প্রচণ্ড ফেনার সৃষ্টি হয়। প্রকৃতপক্ষে এই ফেনার দাবিদার ক্যালসিয়াম কার্বনেট। পানির শৈবালের সঙ্গে ক্যালসিয়াম কার্বনেট মিশ্রিত হয়ে নায়াগ্রার পাদদেশে সজোরে যখন পতিত হয় তখন তা ফেনার সৃষ্টি করে। কিছুদূর গিয়েই তা অবশ্য পানিতে মিশে যায়। গোধূলী বেলায় এ ফেনার সৌন্দর্য মনে হয় অপরূপ-মায়াবী। নায়াগ্রাতে পানিপ্রবাহের কারণে সৃষ্ট ভূমিক্ষয়ের হিসাব রাখা হচ্ছে ১৯৪২ সাল থেকে। হর্স শু ফলস্ পে;্রতিবছর ক্ষয়ের মাত্রা তিন দশমিক আট ফুট। তবে ১৯০৬ থেকে ১৯২৭ সাল পর্যন্ত ক্ষয় হ্রাস পেয়ে দুই দশমিক তিন ফুটে নেমে আসে। বর্তমানে পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণের অত্যাধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে ভূমিক্ষয়ের হার অনেক কমিয়ে আনা হয়েছে। বিস্ময়কর হলেও সত্য যে, নায়াগ্রার গতি দুই লাখ ঘনফুটের বেশি হওয়ার পরও তার পানিপ্রবাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সেটি ১৯৪৮ সালের কথা। ২৯ মার্চ মধ্য রাত থেকে ৩০ মার্চ সকাল পর্যন্ত নায়াগ্রার পানির গতি অর্ধেকে নেমে আসে। নায়াগ্রার উৎসস্থলের দিকে লেক ইরির কাছে নায়াগ্রা নদীর মুখে বরফ জমতে শুরু হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। ৩০ মার্চ পানিপ্রবাহ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ৪০ ঘণ্টার মতো প্রবাহ পুরোপুরি বন্ধ ছিল। এর ফলে নায়াগ্রা পানিশক্তির ওপর নির্ভরশীল কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যায়।
 
জলপ্রপাতের সম্মুখের নদীটি একেবারে শুকিয়ে যায়। নদীতে নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং বিপাকে পড়ে নদীর মাছগুলো। অবশ্য পহেলা এপ্রিল প্রত্যুষে আবার প্রাণ ফিরে পায় নায়াগ্রা। ১৯০১ সাল থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত মোট ১০ জন অভিযাত্রী নায়াগ্রার ওপর থেকে নিচে ঝাঁপ দেন। এর মধ্যে সাতজন সফল হলেও বাকি তিনজনকে হারিয়ে যেতে হয় চিরতরে। পঁচাশি সালের পরও আরও পাঁচজন সাহসিকতা প্রমাণে অংশ নেন। এবারও তিনজন সফল হলেও অন্য দু'জন বির্সজিত হন নায়াগ্রার স্রোতে। পরবর্তীতে আর কেউ এমন চেষ্টা করেননি। অবশ্য এই লাফ দেওয়া এখানে আইন অমান্যের শ্রেণীতে পড়ে। অনেক প্রণয়াকাঙ্ক্ষী নায়াগ্রার সানি্নধ্যে তাদের প্রণয়লগ্ন কাটাতে প্রত্যাশী। কর্তৃপক্ষ তাদের জন্য এই সুবিধা করে দিয়েছে। এ জন্য প্রথমে পাত্র-পাত্রীর পরিচয় নিশ্চিত করতে হবে। ফি গুনতে হবে ৭৫ ডলার। নায়াগ্রা ফলস্ সিটি হলে বিয়ের লাইসেন্স প্রদান করা হয়। 
 খালেদ আহমদ শিমুল


সূত্রঃ  বাংলাদেশপ্রতিদিন,   এপ্রিল ২০১২ খ্রিঃ।

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।