সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: জাপানে বাংলার রিকশা

জাপানে বাংলার রিকশা



রিকশা শব্দটি জাপানি শব্দ 'জিনরিকিশা' থেকে এসেছে। 'জিন' অর্থ মানুষ, 'রিকি' অর্থ বল বা শক্তি আর 'শা' অর্থ বাহন। জাপানিজ এই পুরো শব্দের অর্থ দাঁড়ায় 'মনুষ্যচালিত বাহন'। এর উৎপত্তি জাপানে হলেও কালক্রমে সেখান থেকেই হারিয়ে গিয়েছিল রিকশা। অন্যদিকে বাংলাদেশের ঐতিহ্যের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে রিকশা। বাংলাদেশের 'রিকশা' নিয়ে একজন জাপানি ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার ওকিনাওয়া থেকে হোক্কাইডো প্রায় ছয় মাসের একটি লম্বা ট্যুরে সারা জাপান নিজে পায়ে প্যাডেল চালিয়ে ঘুরছেন। ইতোমধ্যে তিন মাস পেরিয়ে গেছে আর কদিনের মধ্যেই টোকিও এসে পৌঁছবেন। এখান থেকে তিনি হোক্কাইডোর দিকে যাবেন এবং হোক্কাইডোর শেষ সীমানার ঘড় সধহং ুড়হব পর্যন্ত প্যাডেল চালিয়ে এ ট্যুরের সমাপ্তি করবেন। এ অভিনব ট্যুরের খবর জেনেই আমরা তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি। প্রথম ই-মেইল ও পরবর্তীতে সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা।


মাসাসি মিৎসুই, ৩৫। জন্ম কিওতোতে। কোবে ইউনিভার্সিটির ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টি থেকে গ্রাজুয়েশন করেছেন এবং পরবর্তীতে একটি মেশিন ম্যানুফেকচারিং প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ২০০১ সালে একটি দীর্ঘ সফরে দেশের বাইরে গেলে ফটোগ্রাফিতে উৎসাহী হয়ে ওঠেন এবং দেশে ফিরে চাকরি ছেড়ে ট্রাভেল ফটোগ্রাফার হিসেবে নতুন পেশায় নিয়োজিত হন। নিশ্চিত চাকরি ছেড়ে এ রকম অনিশ্চিত পেশায় চড়াই-উতরাই থাকলেও মনের জোর আর ছবি তোলার নেশা তাকে আটকাতে পারেনি। বিশ্বের প্রায় ৪০টি দেশ পরিভ্রমণের অভিজ্ঞতা। এশিয়ার প্রায় প্রতিটি দেশ একাধিকবার সফর করেন। এশিয়ার দেশগুলোতে তার তোলা অসংখ্য ছবি নিয়ে প্রদর্শনী হয়েছে জাপানে বহুবার। বই বেরিয়েছে বেশ কয়েকটি। ঘঐক সহ জাপানের সব দাপুটে মিডিয়ায় তার ছবি ও রিপোর্টিং বেরিয়েছে বহুবার।


বাংলাদেশেও তিনি একাধিকবার সফর করেন, অসংখ্য ছবি তোলেন। তার ছবির বিষয়বস্তু 'ংসরষব' হাসি। তার প্রতিটি ছবিতেই হাসির ঝলক থাকবে। পরিশ্রমী শ্রমিক কিন্তু মুখজুড়ে স্নিগ্ধ হাসি, শিশুদের সারল্যমুখ, গৃহবধূদের বিনম্র হাসি। মাসাসি আমাদের জানান, 'মানুষের হৃদয়ের ভেতর লুকানো হাসি মুখে এসে ভিড় জমায়, সেই হাসিটাকেই আমি ক্যামেরাবন্দী করতে চাই।' বাংলাদেশের রিকশা বাংলাদেশের রিকশা তাকে প্রবলভাবে আকৃষ্ট করেছে। প্যাডেলচালিত তিন চাকার এ রিকশার প্রেমে তিনি পড়েছেন প্রথমবার বাংলাদেশে নেমেই। যে কদিন ছিলেন, রিকশাই ছিল তার প্রধান বাহন। রিকশা-জিন রিকশা শব্দটির উৎপত্তি জাপান থেকে। এ জিন রিকশার প্রচলন ছিল একদা জাপানে। সেই নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মাসাসি মিৎসুইয়ের এ রিকশাপ্রেম। দুই পায়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে বাংলাদেশের একজন রিকশাচালক ঘাম ঝরিয়ে উপার্জন করেন আর এ যান দূষণ না ছড়িয়ে, পৃথিবীর উষ্ণতা না বাড়িয়ে যে প্রকৃতির ভারসাম্য তৈরি করতে পেরেছে সে তুলনায় যন্ত্রদানবের তাণ্ডবেই আজ বিশ্বব্যাপী জলবায়ুর এ বিরূপ আচরণ।


মাসাসি বলেন, রিকশা দেখতে চমৎকার, রিকশার রং ব্যবহারটাও নান্দনিক। চড়তে ও চালাতেও আনন্দ। ঢাকায় একটা রিকশা কিনে ফেলি এবং শিপে করে তা জাপানে নিয়ে আসি। যেখানেই যাই ওই রিকশা দেখতে সবাই ভিড় করে, চড়তে চায়। হঠাৎ করে একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি, বাংলাদেশি 'রিকশা' নিয়ে সারা জাপানে একটা ট্যুর করলে কেমন হয়? তিন মাস ধরে প্রতিদিন ২০-৪০ কি.মি. চালাচ্ছি। যেখানে রাস্তা নেই সেখানে 'ফেরি' ব্যবহার করছি। ওকিনাওয়া থেকে শুরু করেছি। গ্রাম থেকে শহর_ যেখানেই যাচ্ছি মানুষ কৌতূহল নিয়ে দেখছে। বাংলাদেশকে একটু একটু করে জানছে। এ মুহূর্তে আমার অবস্থান টোকিওতে। এক মাস ছুটি নেব, আমি পিতা হয়েছি। সন্তানকে সঙ্গ দেব, তারপর আবার শুরু। 'রিকশা' নিয়ে এ ট্যুর যে অতটা আলোচিত হবে আগে বুঝিনি। সব জায়গায় সব মানুষ কৌতূহল নিয়ে দেখছে। নিয়মিত মেইল পাচ্ছি। নেভিগেটরে আমার অবস্থান জেনে মানুষ অপেক্ষা করছে, আমিও যথাসম্ভব যোগাযোগ রাখছি। বাংলাদেশের মানুষ ভীষণ অতিথিপরায়ণ। তারা আমাকে নানাভাবে আপ্যায়ন করেছে, তাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা অপরিসীম। জাপানের পথে পথে আমি বাংলাদেশের রিকশাকে, পাশাপাশি বাংলাদেশকে পরিচিত করছি_ এটা আমাকেও আনন্দ দিচ্ছে।


সূত্রঃ  বাংলাদেশপ্রতিদিন,   এপ্রিল ২০১২ খ্রিঃ।

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।