ডেঙ্গু প্রতিরোধে টিকা (ফাইল ফটো) |
ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত মশার কামড় থেকে হয়৷ প্রতি বছর সারা বিশ্বে প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়৷ মারা যায় প্রায় পঁচিশ হাজার মানুষ৷ থাইল্যান্ডের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ভিরাচাই ভিরামিটিকুল বেশ গর্বের সঙ্গে জানান, ডেঙ্গু প্রতিরোধে টীকা হয়তো এই রোগ বিস্তার বন্ধ করতে সহায়ক হবে৷ গবেষণাগারে ইঁদুরের ওপর এই পরীক্ষা চালানো হয়৷ তাতে দেখা যায় ডেঙ্গুর ভাইরাস প্রায় ৮০ শতাংশ নির্মূল করা সম্ভব হয়েছে৷ ভিরাচাই ভিরামিটিকুল জানান, ‘‘ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধে এটা নিঃসন্দেহে বড় একটি সাফল্য৷ গত ২০-৩০ বছর ধরে আমাদের বিজ্ঞানী, গবেষক এবং চিকিৎসকরা এ নিয়ে গবেষণা করছেন৷' অবশ্য তা এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে৷
আফ্রিকা ছাড়াও অ্যামেরিকা, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের পূর্বাঞ্চলে, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিমাঞ্চলে ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা যায়৷ এসব অঞ্চলে সব মিলিয়ে প্রায় ১০০টির বেশি দেশে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ৷ এবং ডেঙ্গুর চারটি ভিন্ন ধরণের ভাইরাসের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে প্রতি বছর এসব দেশের প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ জেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়৷ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পর শুরুতে শুধু হালকা জ্বর আসে৷ তবে অবস্থা যখন গুরুতর হয় তখন রক্তক্ষরণসহ তীব্র জ্বর দেখা দেয়৷
চিয়াং মাই বিশ্ববিদ্যালয়, ন্যাশনাল সেন্টার ফর জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যান্ড বায়োটেকনলজি এবং মাহিডোল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা একটি হাইব্রিড ভাইরাস তৈরি করেছেন৷ যার নাম শিমেরিক লাইভ এ্যাটেনুয়েটেড ভ্যাকসিন৷ এই ভ্যাকসিনটিই ডেঙ্গু জ্বরের চার ধরণের ভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবে বলে জানানো হয়েছে৷
মাহিডোল বিশ্ববিদ্যালয়ের মলিকিউলার বায়োসায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক প্রাসের্ট অয়ারাকুল জানান, ঠিক ঠিক গুণে, নিখুঁত সামঞ্জস্যে ভ্যাকসিনটি তৈরি করা জরুরি যাতে ভাইরাসটি তার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে৷ তিনি বলেন, ‘‘যে চারটি ধরণের ভাইরাসের কথা আমরা শুনেছি সেই চারটি ভাইরাসই মানবদেহে প্রবেশ করতে পারে৷ সেখানে টিঁকে থাকতে পারে৷ অথচ চারটি কিন্তু চার রকমের৷ আমাদের এমন একটি ভ্যাকসিন তৈরি করতে হবে যা চারটি ভাইরাসের সঙ্গেই মানবদেহে লড়াই করতে সক্ষম৷''
যে কোন মানবদেহ মাত্র একটি ভাইরাস প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রাখে৷ একসঙ্গে যদি দুটি ভাইরাস আক্রমণ করে তখন মানুষটি দুর্বল হয়ে পড়ে৷ চিকিৎসাও তখন জটিল হয়ে পড়ে৷ শিশুদের শরীরে এ ধরণের কোন ক্ষমতা না থাকায় শিশুরা সাধারণত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই মারা যায়৷
চিয়াং মাই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. বুনসুক কিলাপাং জানান, শিশুদের সুস্বাস্থ্য এবং সুরক্ষার বিষয়টির দিকে আরো নজর দেয়া জরুরি৷ সেটাও আমাদের গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে৷ ড. বুনসুক কিলাপাং'এর কথায়, ‘‘শিশুদের সুস্বাস্থ্য খুবই জরুরি৷ এই গবেষণায় আমরা যদি পুরোপুরি সফল হই তাহলে এর মাধ্যমে আমরা শিশুদের রক্ষা করতে সক্ষম হব৷ থাইল্যান্ডের মানুষ খুব সহজেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে৷ শুধু থাইল্যান্ডে নয়, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় এই রোগ দেখা যাচ্ছে সবচেয়ে বেশি৷ যতো দ্রুত আমরা কাজ শেষ করতে পারবো ততোই তা মানুষের জন্য মঙ্গলকর হবে৷''
এই ভ্যাকসিন বাজারে ছাড়তে প্রয়োজন প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার৷ এই বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতে এগিয়ে এসেছে বায়োটেকনলজি কোম্পানি বায়ো-নেট এশিয়া৷ প্রতিষ্ঠানের প্রেসিডেন্ট ভিটুন ভংসাঙ্গুল বললেন, ‘‘আমরা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোর মত নই৷ আমরা চাচ্ছি এই ভ্যাকসিন খুব সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছাক৷ যদি এটা সহজলভ্য হয় তাহলে এর চাহিদা বাড়বে এবং থাকবে৷'' বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বাড়ছে৷ এর সঙ্গে তাল রেখে দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু জ্বরের ভাইরাস৷ ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধে ওষুধের চাহিদা চীন থেকে শুরু করে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া ছাড়িয়ে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত পৌঁছাবে৷ এমনই প্রত্যাশা করছেন বিশেষক্ষ এবং চিকিৎসকরা৷
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।