সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: উচ্চরক্তচাপ সম্পর্কে সচেতন হোন

উচ্চরক্তচাপ সম্পর্কে সচেতন হোন



উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে দেহে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়। হার্ট ফেইলিওর থেকে শুরু করে কিডনি নষ্ট এমনকি মস্তিষ্কে স্ট্রোকও হতে পারে। কেউ কেউ মনে করেন, উচ্চ রক্তচাপ তার দৈনন্দিন জীবনপ্রবাহে কোনো সমস্যা করছে না। এমনকি ওষুধও খেতে চান না। এ ধারণাটাও সম্পূর্ণ ভুল। এ ধরনের রোগীই হঠাৎ করে বিভিন্ন জটিলতার মুখোমুখি হয়ে থাকে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত না থাকলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ চারটি অঙ্গে মারাত্দক জটিলতা হতে পারে। যেমন_ হৃৎপিণ্ড, কিডনি, মস্তিষ্ক ও চোখ। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ থেকে হৃদযন্ত্রের মাংসপেশি দুর্বল হয়ে হার্ট ফেইলিওর হতে পারে। রক্তনালির গাত্র সঙ্কুচিত হয়ে হার্ট অ্যাটাক বা ইনফার্কশন হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপের কারণে কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে, মস্তিষ্কে স্ট্রোক হতে পারে, যা থেকে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। এ ছাড়া চোখের রেটিনাতে রক্তক্ষরণ হয়ে যে কোনো সময় অন্ধত্ববরণ করতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপের কারণঃ
৯০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কোনো নির্দিষ্ট কারণ জানা যায় না, একে প্রাইমারি বা এসেনসিয়াল রক্তচাপ বলে। কিছু কিছু বিষয় উচ্চ রক্তচাপের আশঙ্কা বাড়ায়। যেমন_

বংশানুক্রমিক বংশগত ধারাবাহিকতাও আছে, যদি বাবা-মায়ের উচ্চ রক্তচাপ থাকে, তবে সন্তানেরও উচ্চ রক্তচাপের আশঙ্কা থাকে।

ধূমপানঃ অতিরিক্ত ধূমপানে রক্তচাপ বাড়ে।

অতিরিক্ত লবণ গ্রহণঃ অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ করলে রক্তনালিতে পানির পরিমাণ বেড়ে রক্তচাপ বেড়ে যায়। অধিক ওজন এবং অলস জীবনযাত্রা : যথেষ্ট ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রম না করলে ওজন বেড়ে যেতে পারে।

অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসঃ অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় খাবার, যেমন_ মাংস, মাখন ও ডুবো তেলে ভাজা খাবার খেলে ওজন বাড়বে। ডিমের হলুদ অংশ এবং কলিজা, গুর্দা, মগজ এসব খেলে রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে যায়। রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল হলে রক্তনালির দেয়াল মোটা ও শক্ত হয়ে যায়। এর ফলে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে।

মদপানঃ মদপান করলে উচ্চ রক্তচাপ বেশি হয়।

ডায়াবেটিসঃ বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ডায়াবেটিস রোগীদের উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়। তবে সবার ক্ষেত্রে নয়।

অতিরিক্ত উৎকণ্ঠাঃ অতিরিক্ত রাগ, উত্তেজনা, ভীতি এবং মানসিক চাপের কারণেও রক্তচাপ সাময়িকভাবে বেড়ে যেতে পারে। কিছু কিছু রোগের কারণে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া গেলে একে বলা হয় সেকেন্ডারি হাইপারটেনশন। এ কারণগুলোর মধ্যে কয়েকটি হলো_ কিডনির রোগ, অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি ও পিটুইটারি গ্রন্থির টিউমার, ধমনির বংশগত রোগ, গর্ভধারণ অবস্থায় অ্যাকলাম্পসিয়া ও প্রি-অ্যাকলাম্পসিয়া হলে অনেক দিন ধরে জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ির ব্যবহার, স্টেরয়েড গ্রহণ এবং ব্যথানাশক কিছু কিছু ওষুধ খেলে।

করণীয়ঃ 
জীবনযাত্রার পরিবর্তন এনে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। খাওয়া-দাওয়া নিয়ন্ত্রণ ও নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। ধূমপান অবশ্যই বর্জনীয়। যাদের ডায়াবেটিস আছে, তা অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নিয়মিত বিশ্রাম, সময় মতো ঘুমানো, শরীরকে অতিরিক্ত ক্লান্তি থেকে বিশ্রাম দিতে হবে।

নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে গিয়ে রক্তচাপ পরীক্ষা করানো উচিত। উচ্চ রক্তচাপ সারে না, একে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এর জন্য নিয়মিত ওষুধপত্র সেবন করতে হবে। কোনোক্রমেই চিকিৎসকের নির্দেশ ছাড়া ওষুধ সেবন বন্ধ করা যাবে না।

আবার কেউ কেউ ভাবেন যে, উচ্চ রক্তচাপ তার দৈনন্দিন জীবনপ্রবাহে কোনো সমস্যা করছে না বা রোগের কোনো লক্ষণ নেই, তাই উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খেতে চান না। এক কথায় উচ্চ রক্তচাপকে তারা পাত্তাই দেন না। এই ধারণাটাও সম্পূর্ণ ভুল। এ ধরনের রোগীই হঠাৎ হৃদরোগ বা স্ট্রোকে আক্রান্ত হন, এমনকি মৃত্যুও হয়ে থাকে।

লেখকঃঅধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ
 ডিন, মেডিসিন ফ্যাকাল্টি,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।


সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন, ০৫ জুলাই ২০১২ খ্রিঃ

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।