নামকরা সার্চ ইঞ্জিন গুগল৷ তাদের একটি গোপন ল্যাব রয়েছে যার নাম ‘গুগল এক্স’৷ উচ্চাভিলাষী সব আবিস্কার নিয়ে কাজ সেখানকার বিজ্ঞানীদের৷ সম্প্রতি তারা এমন এক চশমার কথা বলেছেন যেটা নিয়ে এখন চলছে তুমুল আলোচনা৷ ধরুন, আপনি কোনো দেয়ালে ড্রিল মেশিন দিয়ে ফুটো করতে চাচ্ছেন৷ কিন্তু বুঝতে পারছেন না এর ভেতরে কোথায় বৈদ্যুতিক তার রয়েছে৷ কিংবা ধরুন, আপনি কোনো বড় বইয়ের দোকানে গেছেন৷ কিন্তু আপনার কাঙ্খিত বইটি দোকানের কোন অংশে আছে সেটা বুঝতে পারছেন না৷ এসব থেকে নিমিষেই মুক্তি দিতে আসছে গুগলের ভবিষ্যত চশমা৷
ভিডিও
সম্প্রতি, সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ‘গুগল প্লাস'এ সোয়া দুই মিনিটের একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে৷ তাতে বিশেষ এই চশমা পরা একজনের সারাদিনের কর্মকাণ্ড দেখানো হয়েছে৷ শুরুতে দেখা যায়, ঘুম থেকে উঠে চশমাটা পরতেই চোখের সামনে চলে আসে নানান তথ্য৷ যেমন আজকের তাপমাত্রা কত, বৃষ্টি হবে কীনা ইত্যাদি৷ এমন কী ঐ ব্যক্তির আজ কোথায় কোথায় যাওয়ার কথা সেই তালিকাটাও জানিয়ে দিচ্ছে চশমাটি৷ এরপর নাস্তা করতে করতে ঐ চশমা পরিহিতকে ফোন করে তার এক বন্ধু৷ জানতে চায় আজ দেখা করা সম্ভব কীনা৷ উত্তরটা সে দিয়ে দেয় মুখ দিয়ে অর্থাৎ কথা বলে৷ আর চশমা সেটা পাঠিয়ে দেয় তার বন্ধুর কাছে৷ মানে, বার্গারে কামড় দেয়ার ফাঁকেই সে তার বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগটা সেরে ফেলে৷
এরপর ঘর থেকে বের হয়ে বইয়ের দোকানে যাওয়ার জন্য পাতাল রেলে যেতে চাইলে স্টেশনে ঢোকার আগেই চশমাটা তার ব্যবহারকারীকে জানিয়ে দিচ্ছে যে, আজ পাতাল রেল বন্ধ৷ বিকল্প হিসেবে পায়ে হেঁটে কোন পথ ধরে ঐ বইয়ের দোকানে যাওয়া যাবে সেটাও বাতলে দিচ্ছে চশমাটি৷ আবার বইয়ের দোকানে গিয়ে কাঙ্খিত বইটি কোথায় আছে সেটাও বলে দিচ্ছে গুগলের এই বিশেষ চশমা৷ মাঝে দোকানে আসার পথে দেয়ালে টাঙানো পোস্টার দেখে রাতের কনসার্টের একটা টিকিটও কেটে ফেলেন ঐ চশমা পরিহিত তরুণটি৷ এভাবে চলতে থাকার পর দিন শেষে দেখা যায় তার এক বানধ্বী তাকে ফোন করে৷ সেসময় ভিডিও চ্যাটের মাধ্যমে চশমা দিয়েই বান্ধবীটিকে সূর্যাস্ত দেখায় তরুণটি৷
কেন ভিডিও
এতক্ষণ যে কাজগুলো সম্পর্কে বলা হলো তার কিছু হয়তো বর্তমানের স্মার্টফোনগুলো দিয়ে করা সম্ভব৷ গুগল বলছে তারা ভিডিওটি পোস্ট করেছে ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে পরামর্শ পাবার আশায়৷ কীভাবে এই চশমাকে আরও উন্নত করা যায় সেটা জানতে চায় গুগল৷এরই মধ্যে অনেকে অনেক ধরণের পরামর্শ দিয়েছেন৷ কেউবা ভবিষ্যতের এই চশমা দেখে বিষ্মিত হয়েছেন৷ আবার কেউ কেউ এর নেতিবাচক দিকটার কথা বলছেন৷ যেমন একজন বলেছেন, কেউ যদি গাড়ি চালানো অবস্থায় এই চশমাটা পরে থাকে তাহলে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকবে৷ আরেকজন, চোখের এত কাছে একটা স্ক্রিণ থাকাটা চোখের জন্য কতটা ভাল সে প্রশ্ন তুলেছেন৷ গুগলের এই চশমা ইন্টারনেটকে এমন একটা টুলে পরিণত করতে পারে যেভাবে মানুষের মস্তিস্ক এখন কাজ করছে৷ কথাটা বলেছেন সায়েন্স ফিকশন লেখক ভের্নর ভিঙ্গে৷ কন্টাক্ট লেন্সের মাধ্যমে মানুষ একজন আরেকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করছে এমন একটা গল্প নিয়ে ২০০৬ সালে একটি বই লিখেছিলেন ভেক্টর ভিঙ্গে৷
কবে আসবে
কবে নাগাদ চশমাটি বাজারে আসতে পারে সে সম্পর্কে গুগল অবশ্য কিছু জানায়নি৷ তবে গুগলের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গুগল এমন সব বিষয়ে গবেষণা করে যেগুলো অদূর ভবিষ্যতেই বাস্তবে রূপ পেতে পারে৷ এমন কোনো বিষয় নিয়ে নয়, যেটা আগামী ১০ বছর পর বাজারে আসবে৷ গুগলের এই কর্মকর্তার কথার সূত্রে ধারণা করা যেতে পারে যে, হয়তো অল্প দিনের মধ্যেই বিষ্ময়কর এই চশমা ব্যবহারের সুযোগ পাওয়া যাবে৷
তবে চশমাটা আদৌ বাস্তবে পাওয়া যাবে কীনা সেটা নিয়েও কিন্তু সন্দেহ প্রকাশ করা যেতে পারে৷ কেননা অতীতেও দেখা গেছে, গুগল এমন সব বিষয়ে গবেষণা করছে যেগুলো কোনোদিন পূর্ণতা পায় নি! তবে যাই হোক, চশমাটা যদি সত্যিই পাওয়া যায় তাহলে আপনি সেটা কিনবেন কীনা সেটা এখনই ভেবে রাখতে পারেন৷
প্রতিবেদন: জাহিদুল হক (এপি, এএফপি)
সম্পাদনা: রিয়াজুল ইসলাম
দেখতে পারলাম তো বিজ্ঞান আমাদের কি উপহার দিচ্ছে । সবইতো বুঝলাম কিন্তু মনে হয় এর কিছু কুফলও থাকতে পারে ।
উত্তরমুছুন