বিশ্বের এ যাবৎকালের সবচেয়ে শক্তিশালী কম্পিউটার ভাইরাস ‘ফ্লেম’ সম্পর্কে সতর্কতা জারি করবে জাতিসংঘ। দের আশঙ্কা, বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে স্থবির করে দিতে ভাইরাস ব্যবহার করা হতে পারে। এর নমুনা ইতিমধ্যেই দেখা গেছে। জাতিসংঘের কম্পিউটার নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান মারকো ওবিসো বলেছেন, এ পর্যন্ত জারি করা হুঁশিয়ারির মধ্যে এটাই হবে সবচেয়ে মারাত্মক হুঁশিয়ারি। ‘ফ্লেম’ নামের ভয়াবহ এ সুপারবাগ ইরানের কম্পিউটার হ্যাকিংয়ের কাজে ব্যবহৃত হওয়ার পর মঙ্গলবার তিনি এ তথ্য জানিয়েছেন। ইসরাইল অবশ্য এ ভাইরাস ছড়ানোর জন্য নিজেদের দায়িত্ব স্বীকার করেছে। সাধারণ ভাইরাসের চেয়ে ১০০ গুণ আকারে বড় স্পাইওয়ারটি কেবল ইরান নয় সুদান, সৌদি আরব, লেবানন, মিশরসহ মধ্যপ্রাচ্যের কম্পিউটারে হামলা চালাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাশিয়া ইন্টারনেট সিকিউরিটি প্রতিষ্ঠান ক্যাসপারস্কি অবশ্য ইরানকেই এর প্রাথমিক লক্ষ্য বলে উল্লেখ করেছে।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক টেলিকমিশন ইউনিয়নের সাইবার সিকিউরিটি কো-অর্ডিনেটর মারকো ওবাইসো বলেছেন, সব সদস্য দেশকেই এ ভাইরাসের ভয়াবহতা সম্পর্কে হুঁশিয়ার করা হবে। কম্পিউটার সিস্টেমে এ ভাইরাস আক্রমণের ফলে কম্পিউটারটি একটি শ্রবণযন্ত্রে পরিণত হয়। এটি আক্রান্ত কম্পিটারের অডিও সিস্টেমকে সক্রিয় করে তোলে। ফলে স্কাইপির কথোপকথন, অফিসের আলাপ-আলোচনায় আড়ি পাতাসহ স্ক্রিনশট বা কি বোর্ড চাপার লগ সংরক্ষণ এমনকি আশপাশের ব্লুটুথ সমৃদ্ধ মোবাইল ফোন থেকেও তথ্য সংগ্রহ করে নিতে সক্ষম হয়।
এ পর্যন্ত সাইবার জগতে যত ধরনের ভয়াবহ হামলার ঘটনা ঘটেছে এ ভাইরাসের জটিলতা, কার্যকারিতা এবং ভয়াবহতা সে সবগুলোকেই ছাড়িয়ে গেছে। মস্কোভিত্তিক ক্যাসপারস্কি ল্যাব জেডএও বলেছে, এ ভাইরাসের আক্রমণ আসলে সাইবার যুদ্ধ এবং সাইবার গোয়েন্দাবৃত্তির ধারণাই পুরো পাল্টে দেবে। স্টাক্সনেট ভাইরাসের কথা মনে আছে? দু’বছর আগে এই কম্পিউটার ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল৷ এবার অনেকাটা এরকমই এল ‘ফ্লেম’ নামে৷
ইরানের পরমাণু স্থাপনায় থাকা কম্পিউটার ব্যবহার করে যন্ত্রপাতি অকেজো করে দেয়া-এই কাজই করেছিল স্টাক্সনেট৷ আর নতুন আবিষ্কৃত ফ্লেম ভাইরাসের কাজ হচ্ছে কম্পিউটারে থাকা গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য পাচার করা৷ এছাড়া কম্পিউটার ব্যবহারকারী কী কথা বলছেন তাও পাচার করতে সক্ষম নতুন এই ভাইরাস৷ এজন্য সে কম্পিউটারে বিল্ট-ইন হিসেবে থাকা মাইক্রোফোন ব্যবহার করে থাকে৷মূলত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে এই ভাইরাস আক্রমণের হদিশ পাওয়া গেছে৷ বিশেষ করে ইরানের তেল কোম্পানিগুলোতে৷ তাই অভিযোগের তিরটা ছুটে গেছে ইসরায়েলের দিকে৷ যেমনটা হয়েছিল স্টাক্সনেটের ক্ষেত্রেও৷গতমাসে ধরা পড়া এই ভাইরাস থেকে কম্পিউটারগুলোকে মুক্ত করতে না পেরে অবশেষে তেল মন্ত্রণালয় ও ক্রুড তেল রপ্তানিকারকদের কম্পিউটারে থাকা ইন্টারনেট সংযোগই বন্ধ করে দিয়েছেন ইরানের প্রযুক্তিবিদরা৷দেশটির সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গোলাম রেজা জলিলি বলছেন, ‘‘ইরানের তেল সহ কয়েকটি খাতে ব্যবহৃত কম্পিউটারে আঘাত হেনেছিল একটি ভাইরাস৷ তবে সুখের খবর হলো, আমরা সেটিকে চিহ্নিত করতে ও নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছি৷'' তবে শুধু ইরানেই নয়, মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশের জ্বালানি খাতে আঘাত হেনেছে ফ্লেম৷ যে কারণে ইন্টারনেট বিষয়ক নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে, এর মাধ্যমে বিশ্ব নতুন এক ‘সাইবার যুদ্ধ বা গোয়েন্দাগিরি'র যুগে প্রবেশ করলো৷
অ্যান্টি-ভাইরাস সফটওয়্যার তৈরির নামি এক কোম্পানি ম্যাকাফি৷ তার এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ডেভিড মার্কাস বলছেন, এখনকার ভাইরাসগুলো আগের চেয়ে আরও উন্নত৷ তারা নির্দিষ্টভাবে জানে যে, কোন কম্পিউটার এবং কেন তাতে হামলা করা হচ্ছে৷ ফ্লেম ভাইরাসের অস্তিত্ব আবিষ্কার করতে সমর্থ হয়েছে ক্যাসপারস্কি ল্যাব৷ এর প্রতিষ্ঠাতা ইউজিন ক্যাসপারস্কি বলছেন, স্টাক্সনেট ছিল এক ধরণের ভাইরাস যেটা সারা বিশ্বে সাইবার যুদ্ধ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে৷ আর ফ্লেম ভাইরাস যেন সেই উদ্বেগকেই আরেক ধাপ বাড়িয়ে নিয়ে গেল৷
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।