সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: বন্ধ হলো বুশ হাউসে বিবিসির ৭০ বছরের পথচলা

বন্ধ হলো বুশ হাউসে বিবিসির ৭০ বছরের পথচলা



বিবিসি বাংলা। সংবাদপিপাসু মানুষ মাত্রই নামটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পরিচয়। এমন অনেকেই আছেন যারা বিবিসির শেষ খবর না শোনা পর্যন্ত হয়তো তৃপ্তি বা মানসিক প্রশান্তি অনুভব করেন না। সেই জনপ্রিয় বার্তা সংস্থার কার্যক্রম এতদিন লন্ডনের বুশ হাউস থেকে পরিচালিত হয়েছিল। কিন্তু ১২ জুন ২০১২ স্থানীয় সময় ১২টার সংবাদ পরিবেশনের পরপরই অবসান হলো ঐতিহাসিক বুশ হাউসের সঙ্গে বিবিসির পথচলা।


প্রায় ৭০ বছর যাবৎ বিভিন্ন জনপ্রিয় অনুষ্ঠান বিবিসির বুশ হাউস থেকে প্রচারিত হয়েছে। ৭০ বছর পর নতুন আরও এক আধুনিক ভবনে আশ্রয় নিয়েছে বিবিসির কার্যক্রম। নতুন এ ভবনে একসঙ্গে কাজ করবে বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস, অনলাইন এবং বিবিসি বাংলাসহ সব বিভাগ। তবে ৭০ বছর ধরে যে হাউস থেকে বিবিসি সংবাদ পরিবেশন করে এসেছে সেখানে জড়িয়ে ছিল নানা স্মৃতি। সেই হাউস থেকে সর্বশেষ সংবাদ পরিবেশনের সময় এর কর্মীদের মধ্যে কাজ করে এক আবেগময় মুহূর্ত। সর্বশেষ সংবাদ পরিবেশনের ২ ঘণ্টার মধ্যে বুশ হাউসে নেমে আসে ভুতুড়ে পরিবেশ। ২৪ ঘণ্টার ৩৬৫ দিনের প্রতিটি মুহূর্ত যে ফ্লোরগুলো মুখরিত থাকত সেগুলো খাঁ খাঁ করতে দেখা য়ায়। ফলে বলা চলে একদা জমজমাট বুশ হাউস এখন শান্ত-নিঝুম। নিশ্চুপ বসে আছে বহু বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে চেয়ার এবং টেবিলগুলো। উঁচু উঁচু থাম আর দেয়ালের সুদর্শন এ বাড়িটিও যেন প্রিয় মানুষদের হারিয়ে নিশ্চুপ-নিথর দাঁড়িয়ে রয়েছে। কয়েকদিন পর হয়তো আবারও নতুন মানুষদের নিয়ে নতুন পরিচয়ে যাত্রা শুরু করবে বুশ হাউস। তবে আপাতত তাকে ফেলে আসা ৭০ বছরের সম্পর্কের অতীতকেই হয়তো খুঁজে ফিরবে। বিবিসির সংবাদ পরিবেশনের ভঙ্গিমা বা টিউনে অনেক সময় বদল এসেছে ফেলে আসা দশকগুলোতে। কিন্তু মাঝের এই গোটা সময় ধরেই বিবিসি ওযার্ল্ড সার্ভিস ও তার মূল্যবোধের প্রতীক হয়ে রয়েছে এ ভবনটি। চলতি পথে এ ভবনটিকে ডাকা হতো আরও সংক্ষিপ্ত নামে 'বুশ'। আর বুশ বলতে যে নিরপক্ষ ব্যতিক্রম নির্ভরযোগ্য খবর সেটি জানা ছিল সবারই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান বোমায় বিবিসির ইউরোপিয়ান ভাষাবিভাগগুলো যেখানে ছিল সে ভবনটি বিধ্বস্ত হয়, তখন থেকেই অর্থাৎ ১৯৪১ সালে বিবিসি তার দলবল নিয়ে প্রথম উঠেছিল বুশ হাউসে। বুশের সঙ্গে দীর্ঘ পথচলার সেই শুরু।

ফরাসি নেতারা যুদ্ধের সময় তাদের বার্তাগুলো সম্প্রচার করতেন এ ভবন থেকেই। এ ছাড়া অনেক বিখ্যাত কবি সাহিত্যিক, নোবেল জয়ী, বিদ্রোহী বা জাতীয় নেতা এখানে এসেছিলেন তাদের বার্তা বিশ্বের কাছে পৌঁছানোর জন্য। ১৯৪৪ সালে ওই ভবনটি নিজেই একটি বি-টু ফ্লাইং বোমায় ভীষণ বিধ্বস্ত হয়। কিন্তু তবুও সেখান থেকে রেডিও সম্প্রচার থামেনি। বুশ হাউস এক পর্যায়ে রেডিও সম্প্রচারের জাতিসংঘে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু ওই বুশ হাউসের সঙ্গে বিবিসির পথচলা সামনে আর হবে না। আর কখনোই বিবিসি ওয়ার্ল্ডর্ সার্ভিসের কর্মীদের পদভারে মুখরিত হবে না বুশ হাউস।

আনোয়ার হোসেন

সূত্রঃ বাংলাদেশপ্রতিদিন, ১৪ জুলাই ২০১২ খ্রিঃ

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।