বর্তমান সময়ের স্মার্টফোনগুলোতে পূর্ণাঙ্গ কম্পিউটারের অনেক বৈশিষ্ট্যই অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে থাকে। আগে কম্পিউটার দিয়ে করতে হতো এমন অনেক কাজই এখনকার আধুনিক স্মার্টফোন দিয়ে করা যাচ্ছে। পাশাপাশি রয়েছে বহু ধরনের গেম এবং কাজের অ্যাপ। আর এই এত ধরনের অ্যাপ চালানোর ফলে ফোনের ব্যাটারির চার্জও কমে যায় দ্রুত। তবে অনেক অ্যাপ ব্যবহার করলেই যে ব্যাটারির চার্জ খুব দ্রুত কমে যাবে, ব্যাপারটি এমনও নয়। খুব সাধারণ কিছু অভ্যাসের মাধ্যমে এ ধরনের অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
ভালো ও খারাপ মানের অ্যাপ সম্পর্কে জানুনঃ স্মার্টফোনের জন্য যে লক্ষাধিক অ্যাপ রয়েছে তার মধ্যে এমন অনেক অ্যাপ আছে যেগুলোর প্রোগ্রামিং ত্রুটি অনেক ক্ষেত্রে অ্যাপগুলো মোবাইলের পাওয়ার ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সহায়ক নয়। ফলে এ ধরনের অ্যাপগুলো অনেক ক্ষেত্রেই সক্রিয় থাকে, যখন সেগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা। অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএসভিত্তিক ডিভাইসগুলোর ক্ষেত্রে ব্যাটারির ব্যবহার মনিটরিং করার জন্য বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ রয়েছে। বেশ কিছু অ্যাপ মনিটর করার পাশাপাশি মোবাইল ফোন কীভাবে ব্যবহার করলে আরও দীর্ঘক্ষণ চার্জ থাকবে, সেটিরও পরামর্শ দেয়।
অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকরীদের জন্য জুস ডিফেন্ডার নামের (http://goo.gl/vibyI) একটি জনপ্রিয় অ্যাপ রয়েছে। স্মার্টফোনটি দীর্ঘ সময় ব্যবহার করার জন্য এই অ্যাপ বেশ কিছু সুবিধা দিয়ে থাকে, যেমন, ৩জি/৪জি বা ওয়াইফাই ব্যবহার করার সময় ব্যাটারি-ব্যবস্থাপনা। নির্দিষ্ট সার্ভিসগুলো চালু বা বন্ধ করার জন্য সিডিউল নির্ধারণ করে দেওয়া, নেটওয়ার্কের বাইরে চলে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওয়াইফাই বন্ধ করে দেওয়া ইত্যাদি।
ব্যাকগ্রাউন্ডে কোন অ্যাপগুলো চালু আছেঃ এমন ঘটনা হতেই পারে, যে অ্যাপগুলো বন্ধ আছে বলে ধরণা করা হলেও সেগুলো ব্যাকগ্রাউন্ডে চলছে এবং যার ফলে অনিচ্ছা সত্ত্বেও স্মার্টফোনের ব্যাটারি খরচ হচ্ছে। অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএসে এ ধরনের অ্যাপগুলো খুঁজে বের করার কাজটি বেশ সহজ। আইওএস থেকে হোম বাটনে দুবার ক্লিক করে এই তালিকাটি পাওয়া যাবে।
অ্যান্ড্রয়েডে ‘সেটিংস’ থেকে ‘অ্যাপলিকেশন’-এ যেতে হবে এবং সেখানে ‘রানিং সার্ভিসেস’ ট্যাব থেকে চালু রয়েছে এমন অ্যাপের তালিকা দেখা যাবে। বর্তমানে ব্যবহূত হচ্ছে না এমন অ্যাপ বন্ধ করে দেওয়া যাবে এখান থেকে। তবে কিছু সিস্টেম অ্যাপ সব সময়ই চালু থাকবে, সিস্টেম অ্যাপগুলো বন্ধ করা হলে অনেক ক্ষেত্রে অন্যান্য অ্যাপ ব্যবহারে অসুবিধা হতে পারে। যেমন, জিমেইল অ্যাপটি নতুন কোনো ই-মেইল আসছে কি না, সেটি ব্যাকগ্রাউন্ডে চেক করে। এই সার্ভিসটি বন্ধ করা হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নতুন ই-মেইলের নোটিফিকেশন পাওয়া যাবে না। স্মার্টফোনগুলোতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অ্যাপ সিনক্রোনাইজেশনের অপশন থাকে। কিছু কিছু অ্যাপের নিয়মিত সিঙ্ক করা গুরুত্বপূর্ণ হলেও এমন বেশ কিছু অ্যাপ আছে যেগুলোর ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় সিঙ্ক বন্ধ রাখা যেতে পারে। যেমন, যোগাযোগের জন্য প্রতিনিয়ত ই-মেইল চেক করা প্রয়োজনীয় হতে পারে, কিন্তু সব সময়ের জন্য ফ্লিকার, আবহাওয়ার খবর জানার অ্যাপগুলো সমান গুরুত্বপূর্ণ না-ও হতে পারে।
চার্জ দেওয়ার সময় ব্যাটারি ঠান্ডা জায়গায় রাখুনঃ অধিকাংশ স্মার্টফোনে লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি ব্যবহার করা হয় এবং বিষয়টি অবশ্যই খেয়াল রাখা উচিত যে অত্যধিক উচ্চ তাপমাত্রায় এ ধরনের ব্যাটারির কার্যক্ষমতা কমে যায়। এ ধরনের ব্যাটারিগুলো ৩২ থেকে ৯৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রার মধ্যে সঠিকভাবে কার্যকর থাকে। একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে, ৯৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় ব্যবহার করা হলে ফোনের কার্যক্ষমতা ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।
ফোনের তাপমাত্রা যেন খুব দ্রুত বেড়ে না যায়, সে জন্য সাধারণ কিছু অভ্যাস তৈরি করা প্রয়োজন, যেমন, সরাসরি সূর্যের আলোয় ব্যবহার না করা, পাশাপাশি আরও কিছু বিষয় খেয়াল রাখা প্রয়োজন সেগুলো হলো, ফোনের সঙ্গে যদি ফোনকভার বা অন্যান্য কিছু ব্যবহার করা হয়, চার্জ করার সময় সেটি খুলে রাখা, চলাফেরার সময় ফোনটি সব সময় হাতে না রেখে ব্যাগ বা বেল্ট ক্লিপের সঙ্গে রাখা উচিত। ব্যাটারি অতিরিক্ত চার্জ করা হলেও ব্যাটারির কার্যক্ষমতা কমে যায়। তাই সব সময়ই মুঠোফোনটি চার্জারের সঙ্গে লাগিয়ে না রেখে যখন চার্জ কমে যাবে, কেবল তখনই চার্জে দেওয়া উচিত।
শুধু প্রয়োজনের সময় ফোরজি ব্যবহার করুনঃ স্মার্টফোনগুলোতে এখন থ্রি-জি বা ফোর-জি প্রযুক্তি ব্যবহারের সুবিধা যোগ করা হয়েছে। কিন্তু এ ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করার জন্য প্রচুর পরিমাণ ব্যাটারির পাওয়ার প্রয়োজন হয় এবং নেটওয়ার্ক দুর্বল রয়েছে, এমন এলাকায় ব্যাটারি শেষ হয়ে যাবে আরও দ্রুত। আবার এমন যদি হয়, ব্যবহারকারী নতুন একটি জায়গায় যাচ্ছেন যেখানে ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক সম্পর্কে নিশ্চিত নয়। সে ক্ষেত্রে ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক বন্ধ রাখা যেতে পারে, আবার নতুন জায়গা খুঁজে পাওয়ার জন্য ফোনের জিপিএস বিশেষ সহায়ক হতে পারে। কিন্তু এই সেবাটি সব সময়ের জন্য ওপেন করে রাখা উচিত নয়। ব্লু-টুথের ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যেতে পারে।
নতুন স্মার্টফোনগুলোর ব্যাটারির একটি বড় অংশ খরচ হয় উচ্চ রেজ্যুলেশনের উজ্জ্বল স্ক্রিনের জন্য। সব সময় একটি উজ্জ্বল স্ক্রিন দেখানোর চেয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঔজ্জ্বল্য নিয়ন্ত্রণ করার অপশনটি অধিক কার্যকর।
বাড়তি একটি ব্যাটারি, চার্জার রাখুনঃ দীর্ঘ সময় ব্যাটারি ব্যবহার করার বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করার পরও যদি ফোন চাহিদা অনুযায়ী কার্যকর না হয়, তবে একাধিক ব্যাটারি ব্যবহার করা যেতে পারে। যেন একটির চার্জ শেষ হলে অন্যটি ব্যবহার করা যায়। তবে আইফোন বা এ ধরনের কিছু ডিভাইসে ব্যাটারি পরিবর্তন করার সুযোগ নেই। সেখানে ব্যাটারি বুস্টার বা অতিরিক্ত চার্জার কেনা যেতে পারে।
ইয়াহু নিউজ অবলম্বনে
সূত্রঃ প্রথম আলো, প্রজন্ম ডট কম, ১৩ জুলাই ২০১২ খ্রিঃ
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।