সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: প্রাকৃকিত সৌন্দর্যের খাগড়াছড়ি ও আলুটিলার রহস্যময় সুড়ঙ্গ

প্রাকৃকিত সৌন্দর্যের খাগড়াছড়ি ও আলুটিলার রহস্যময় সুড়ঙ্গ


সুড়ঙ্গের প্রবেশ পথ

খাগড়াছড়ির আলুটিলার রহস্যময় সুড়ঙ্গ পথ (আলুটিলা গুহা) দেখতে পর্যটকদের ভিড় এখন উপচে পড়ছে। ঈদ আনন্দের ছুটি কাটাতে দেশীয় পর্যটকদের ভিড় এখন সবচেয়ে বেশি। ছেলে, মেয়ে ও পরিবার-পরিজন নিয়ে প্রতিদিন ছুটে আসছে অসংখ্য পর্যটক। হোটেল, মোটেল, রেস্ট হাউস, গেস্ট হাউস কোনোটাতে এখন ঠাঁই মিলছে না। কেউ কেউ পুরনো বন্ধুবান্ধব কিংবা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া বন্ধুবান্ধবদের বাড়িতে থাকছে। চেঙ্গী, মাইনী বিধৌত এ পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলা গোটা জেলাকে ঘিরে রেখেছে অসংখ্য পাহাড়ি ঝর্ণা। মং সার্কেলের আওতাধীন এ জেলা রাঙামাটি চাকমা সার্কেল, বান্দরবান বোমাং সার্কেল ও খাগড়াছড়ি হচ্ছে মং সার্কেলের অধীনে। বর্তমানে মং সার্কেলের রাজা সাচিং প্রু চৌধুরী বংশানুক্রমে মং রাজার দায়িত্ব পালন করে চলেছে।

চেঙ্গী নদীর পাড় কিংবা জেগে ওঠা চরে তৎকালীন বহু বছর আগে ছোট আখের ন্যায় এক প্রকার সরু লম্বা আখ জন্মাতো, যা এখানকার ভাষায় খাগড়ানল হিসেবে অধিক পরিচিত ছিল। খাগড়ানলের পাশেই ছড়া, খাগড়া যোগ ছড়া এ নিয়ে পরিচিত পেল খাগড়াছড়ি। এভাবেই অনেকে এ জেলার নামকরণ খুঁজে পান। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে এ জেলার প্রধান কেন্দ্র ছিল রামগড়ে। রামগড় মহকুমা শহর ছিল তৎকালীন এ জেলার কেন্দ্রবিন্দু। কালের আবর্তে দেশ স্বাধীন হলো। পর্যায়ক্রমে এখন গোটা জেলার কেন্দ্রবিন্দু।

খাগড়াছড়ি সমতল দৃশ্য
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পাহাড়, ঝর্ণা, সবুজ বনানী ঘেরা খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা। এখানে উপজাতীয় চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের পাশাপাশি বাঙালিদেরও বসবাস রয়েছে। এ জেলায় সর্বমোট ৩ লাখ ৪২ হাজার ৪৮৮ জন লোকের বসবাস। পার্বত্য শান্তি চুক্তির পর এখানে ব্যাপকহারে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড শুরু হয়। শান্তি চুক্তির মধ্য দিয়ে রক্তপাত বন্ধ করার চেষ্টা চালানো হলেও তা এখনো বন্ধ হয়নি। ঝর্ণা, পাহাড়, ছড়া, বন-বনানীর সমন্বয়ে খরস্রোতা চেঙ্গী নদীর পাড়ে এ জেলার মূল শহর অবস্থিত। ১৯৮৩ সালে জেলা হওয়ার পর থেকে এখানকার রাস্তাঘাট ও বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ধীরে ধীরে শুরু করা হয়, যা অদ্যাবধি চলছে।

আলুটিলা থেকে খাগড়াছড়ি'র দৃশ্য
নয়নাভিরাম পাহাড়ে আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে এ জেলায় আসতে হয়। আলুটিলা সর্বোচ্চ পাহাড়, যা এককালে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা ছিল। আলুটিলা পাহাড় থেকে খাগড়াছড়ি শহরের দৃশ্য এক অপূর্ব, যা যে কাউকে এক সেকেন্ডের জন্য হলেও থাইল্যান্ডের কোনো নগরীর কথা মনে করিয়ে দেবে। বহমান চেঙ্গী নদীর পাশ ঘেঁষে শহরের আশপাশ এলাকা যতদূর চোখ যায়, শুধু সবুজ বন-বনানী ও পাহাড় মালা। দূরের পাহাড় আকাশের মেঘ ঘেঁষে সুউচ্চ পাহাড়ের রূপ নিয়েছে। আলুটিলা পর্যটন এলাকা ব্যাপক স্বীকৃতি না পেলেও এখানে প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী ভিড় করে। 


খাগড়াছড়ি আলুটিলা সুড়ঙ্গ
আলুটিলা পাদদেশে রয়েছে এক প্রকৃতিগত ভাবে গড়ে ওঠা সুড়ঙ্গ পথ। প্রায় আধা কিলোমিটার এ পথে রয়েছে ছড়া ও ঝর্ণার কলকাকলির সংমিশ্রণ। হাতে বাঁশের চোঙ্গায় মশাল জ্বালিয়ে দর্শনার্থীরা সুড়ঙ্গ পথে প্রবেশ করে। সুড়ঙ্গে প্রবেশ করলে মনে হয় কোনো এক স্বপ্নপুরীর দেশে যাচ্ছি। গা ছম্ ছম্ করে ওঠে। শরীরে শিহরণ জাগায়। পথ চলতে পায়ে ঠাণ্ডা হাওয়া লাগে। শব্দ করলে তা পাহাড়ের গায়ে প্রতিধ্বনি হয়ে উঠে। এ এক অজানা রহস্যপুরী। রাতে খাগড়াছড়ি শহর আরও মনোমুঙ্কর। শহরের ঝিলিমিলি বাতিগুলো মনে হয় যেন সাগরে দূরের সমুদ্র জাহাজের ন্যায় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। পাহাড়ের জনপদে পাহাড়িদের জীবনধারা, চাল-চলন আলুটিলার পাহাড়কে আরও ছন্দ-গতিময় করে তুলে। পাহাড়ি তরুণী কলসি কাঁকে ঝর্ণা থেকে গোসল সেরে পানি নিয়ে বাড়ি ফেরার সে এক অপরূপ দৃশ্য। পাহাড়ের গায়ে জুম চাষ, আদা, হলুদ, কাঠ আহরণসহ নানা দৃশ্য চোখে পড়বে। সবমিলে খাগড়াছড়ি শহর এখন পর্যটকদের ভারে উৎসবমুখর নগরীতে পরিণত হয়েছে। পর্যটকদের আকর্ষণ করতে নতুন সাজে সাজানো হয়েছে জিরোমাইল এলাকায় স্থাপিত জেলা পরিষদ পার্ক।


মো. জহুরুল আলম, খাগড়াছড়ি

সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২৫ আগষ্ট ২০১২ ইং।

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।