সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: রহস্যঘেরা হ্রদ ভোস্টক

রহস্যঘেরা হ্রদ ভোস্টক


ভোস্টক হ্রদ

রহস্যময় এক লেকের নাম ভোস্টক। সুবিশাল এই হ্রদটি বরফের রাজ্য বলে পরিচিত দক্ষিণ মেরুতে অবস্থিত। ভোস্টক হ্রদের দৈর্ঘ্য ১৭০ আর প্রস্থ ৩০ মাইল। এটি একটি বিশাল আকৃতির খাদ বা গর্ত, যার অবস্থান বরফের নিচে। পৃথিবীর আয়তনের তিন ভাগ জল আর এক ভাগ স্থল। এ তিন ভাগ জলের মধ্যে ৭০ ভাগ খাবার পানিই রয়েছে দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে। নদ-নদী, সমুদ্র আর বরফে ঢাকা পুরো অঞ্চল। দক্ষিণ মেরুর আয়তন ৭০ লাখ বর্গমাইল। এখানে একটানা ছয় মাস সবচেয়ে বেশি শীত থাকে। সে সময় অন্ধকারে ঢাকা থাকে অ্যান্টার্কটিকা বা দক্ষিণ মেরু অঞ্চল। সূর্য অস্ত যায় ২১ মার্চ আর উদয় হয় ২১ সেপ্টেম্বর-আল্লাহতালার সৃষ্টি রহস্যের এ এক অপূর্ব নিদর্শন।
 
আমরা অবশ্য এখানে ভোস্টক হ্রদের কথা বলব। রহস্যঘেরা এ হ্রদটি প্রতিনিয়ত বিজ্ঞানীদের আকর্ষণের বস্তু হয়ে উঠছে। বিজ্ঞানের এ চরম উন্নত যুগেও বিজ্ঞানীদের পক্ষে ভোস্টক হ্রদের রহস্য পুরোপুরি আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। এখনো আবিষ্কার করা যায়নি প্রকৃতপক্ষে এর গভীরতা কত? এমন বিশাল একটি প্রাকৃতিক গর্ত কেমন করে সৃষ্টি হলো, যার অবস্থান পুরো বরফ স্তরের অনেক নিচে! সেখানে কখনো সূর্যের আলো পেঁৗছে না। তাই সব সময় গাঢ় অন্ধকারে ঢাকা থাকে ভোস্টক হ্রদের শরীর। তাপমাত্রা মাইনাস ১২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে। সর্বশেষু তাপমাত্রা মাপা হয়েছিল ১৯৮৩ সালে। কোনো হ্রদের সর্বনিম্ন মাইনাস তাপমাত্রা হিসেবে গিনেস বুক অব রেকর্ডসে এ তাপমাত্রার উল্লেখ রয়েছে।
ভোস্টক হ্রদ
ভোস্টক হ্রদ
উত্তর মেরুর বরফের স্তর এতটাই পুরু আর শক্ত যে, সাধারণ কোনো যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে তা ছিদ্র করা একেবারেই সম্ভব নয়। অথচ বরফের নিচে গড়ে ওঠা ভোস্টক হ্রদের রহস্য উন্মোচন করতে হলে বরফ ছিদ্র করে নিচে নামতেই হবে। কিন্তু সমস্যা হলো বরফ কাটার জন্য যেসব যন্ত্রপাতি এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়েছে, ভোস্টক হ্রদে পৌঁছার জন্য তা কোনো কাজে আসছে না। এ জন্য আরও উন্নত ও আধুনিক কোনো প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হবে। পৃথিবীর উপরিভাগে যেসব হ্রদ রয়েছে তার মধ্যে সুবৃহৎ হিসেবে মেনে নেওয়া হয়েছে রাশিয়ার সাইবেরিয়ায় অবস্থিত বৈকাল হ্রদ আর পূর্ব আফ্রিকার মালয় হ্রদ।

ভোস্টক হ্রদ
ভোস্টক হ্রদ
এ দুটি হ্রদসহ এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত আরও ৭৬টি হ্রদের ধারণকৃত সবটুকু পানি খুব স্বাচ্ছন্দ্যেই ভোস্টকে ধরে রাখা সম্ভবুহবে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, ভোস্টকের অন্ধকার জগতে লুকানো রয়েছে বিপুল এক রহস্যভাণ্ডার। সেখানে কি কোনো প্রাণী বাস করে? তারা কি আকৃতিতে নীল তিমিদের চেয়েও বড়? ভোস্টকের তলদেশে কি জলজ লতাগুল্ম জন্মায়? যদি সেখানে কোনো মাঝারি বা ক্ষুদ্র আকৃতির প্রাণী থেকে থাকে, তবে তারা কেমন করে দুঃসহ ঠাণ্ডা আর বিশাল পরিমাণ পানির চাপ সহ্য করে টিকে আছে এসব প্রশ্ন ভাবিয়ে তুলেছে বিজ্ঞানীদের। কিন্তু তারা জবাব খুঁজে পাচ্ছেন না। কারণ ভোস্টকের অবস্থান বিশাল বরফ প্রান্তরের নিচে। আর সেই বরফের পুরুত্ব ২.৫০, মানে আড়াই মাইল। ১৫ মিলিয়ন বছর আগ থেকে পৃথিবীর আবহমণ্ডলের রেকর্ড জমা রয়েছে ভোস্টকের উপরিস্থ বরফের পরতে পরতে_ বিজ্ঞানীরাও তাই মনে করছেন। ভোস্টক সত্যি সত্যিই রহস্যময় এক হ্রদ। এর রহস্য জানতে হলে আড়াই মাইল পুরু বরফের স্তর কাটতে হবে বিজ্ঞানীদের, তাতে কি ঘাবড়ে যাচ্ছেন তারা? মোটেও নয়। চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।


সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন, তারিখঃ ০৩ অক্টোবর ২০১২ ইং

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।