হৃদরোগে
আক্রান্ত হয়েছেন এ ধরনের উপসর্গ হচ্ছে কিন্তু পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে তা শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না_ এ
ধরনের অবস্থার মধ্যে অনেকে বিভিন্ন চিকিৎসকের
শরণাপন্ন হচ্ছেন কিন্তু কিছুতেই আপনি সুস্থ হতে পারছেন না। আমাদের দেশে এ ধরনের রোগীর সংখ্যা অনেক। আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সময় ডি-কস্টা নামক এক চিকিৎসাবিজ্ঞানী যুদ্ধে অংশ নেওয়া
জোয়ানদের মধ্যে বিদ্যমান থাকা এ সমস্যাকে প্রথম
শনাক্ত করেন বলে এ রোগকে ডি-কস্টা সিন্ড্রম নামকরণ করা হয়েছে।
সাধারণত এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বয়স ২০ থেকে
৫০ বছরের মধ্যে হয়ে থাকে। পুরুষ ও মহিলা
উভয় ধরনের ব্যক্তিই এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। আক্রান্ত রোগীদের বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়। যেমন : বুক ধড়ফড়, অল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে যাওয়া বা
শ্বাসকষ্ট হওয়া,
খুব বেশি দুর্বলতা, অবসাদ
বা ক্লান্তি অনুভব করা, বুকে ব্যথা।
বুক ধড়ফড়ঃ
আমরা
সাধারণত হার্ট বিট বা হৃদস্পন্দন অনুভব করি না। আমাদের অজান্তেই প্রতি মিনিটে ৬০ থেকে ১০০ বার আমাদের হার্ট বিট দিচ্ছে কিন্তু
যদি
কখনো আমরা বুকের হার্ট বিট অনুভব করি, এ অবস্থাকে বা হার্ট বিট বুঝতে পারাকেই
চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় প্যালপিটিশন বা বুক ধড়ফড় বলা হয়। হঠাৎ
কোনো
শব্দ শুনে চমকে গেলে, আলোর ঝিলিক দেখলে প্যালপিটিশন শুরু হয়ে যায়।
শ্বাসকষ্ট হওয়াঃ
অল্প
পরিশ্রমে হাঁপিয়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্টের সঙ্গে বুকে ব্যথা অনুভূত হওয়া বা বুক ধড়ফড় করা। শ্বাসকষ্টের সঙ্গে শুকনো কাশি থাকতে পারে,
বিছানায় শুতে গেলে শ্বাসকষ্ট ও কাশি হওয়া।
পরিশ্রমের সময় শ্বাসকষ্ট হওয়া এবং বিশ্রাম
গ্রহণ করলে তা কমে যাওয়া।
দুর্বলতা বা অবসাদ ও ক্লান্তি অনুভব করাঃ
সাধারণভাবে
খুব অল্প পরিশ্রমে অবসাদ অনুভূত হয়। কোনো কাজেই মন বসে
না। রোগী কাজ করতে গেলে হাঁপিয়ে যায়। শরীর
খুব বেশি দুর্বল থাকে। সর্বদা ঘুম ঘুম ভাব থাকে।
বুকে ব্যথাঃ
সাধারণত
পরিশ্রম ও দুশ্চিন্তা, এই দুইয়ের প্রভাবে বুকজুড়ে ব্যথা অনুভূত হওয়া, বিক্ষিপ্তভাবে বুকের বিভিন্ন স্থানে
ব্যথা অনুভূত হওয়া, সারাক্ষণ মৃদু, সহনীয় ব্যথা অনুভূত, শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে ব্যথা
কম-বেশি হওয়া।
অল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে যাওয়াঃ
বাজারের
ব্যাগ বহন করা,
তাড়াহুড়া করে বাসে ওঠা,
বৃষ্টি এলে দৌড়ে কোথাও আশ্রয় নেওয়া, অনেক সময় ধরে গোসল করা। এর সঙ্গে উদ্বিগ্নতার লক্ষণসমূহ বিদ্যমান থাকতে পারে।
উদ্বিগ্নতার উপসর্গঃ
মানসিকভাবে
ভারাক্রান্ত অনুভূত হওয়া, অসহায়ত্ত, ভয়ভীতি,
গলা চেপে আসা, আত্দবিশ্বাস কমে
যাওয়া, ভীত-সন্ত্রস্ত থাকা, বুকে চাপ বা ব্যথা অনুভূত হওয়া, শ্বাসকষ্ট অনুভূত
হওয়া বা দীর্ঘশ্বাস আসা, বুক ধড়ফড় করা, মানসিক অস্থিরতা দেখা দেওয়া, মাথা ঘোরা বা মাথা হালকা অনুভূত হওয়া,
হাত, পা ও শরীরে
অস্বাভাবিক অনুভূতি ও অবসাদ অনুভব করা, মুখ শুকিয়ে যাওয়া,
ক্ষুধামন্দা হওয়া, অনিদ্রায়
ভোগা, অযৌক্তিকভাবে রাগান্বিত থাকা, দুর্বলতা অনুভূত
হওয়া, রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া, সর্বদা অস্থির চিত্ত থাকা।
চিকিৎসাঃ
উপযুক্ত
চিকিৎসার মাধ্যমে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো হলো : একটু লম্বা সময় ধরে ওষুধ গ্রহণ করার প্রয়োজন হয়ে থাকে, মানসিক আশ্বস্ততা, পারিবারিক সহায়তা, ক্ষেত্রবিশেষে যোগব্যায়াম, মেডিটেশন, শিথিলায়ন, ধ্যান, আত্দবিশ্বাস
গঠন_ এসব পৌরাণিক পদ্ধতি অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতির সঙ্গে একত্রে গ্রহণ করলে সুফল পাওয়া যায়। সুতরাং অতিরিক্ত চিন্তা
ও
উদ্বিগ্নতায় পরিহার করতে হবে।
ডা. এম. শমশের আলী
সহকারী অধ্যাপক
ঢাকা মেডিকেল
কলেজ ও হাসপাতাল
কলেজ ও হাসপাতাল
ফোন : ০১৯৭১-৫৬৫৭৬১
সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন, ১১
ডিসেম্বর ২০১২ ইং
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।