সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: A Job Please - আমাকে একটা চাকরি দেবেন?

A Job Please - আমাকে একটা চাকরি দেবেন?


চাকরি চাহিয়া বিলবোর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে অ্যাডাম পাসিট্টি
চাকরি চাহিয়া বিলবোর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে অ্যাডাম পাসিট্টি

চাকরির জন্য মানুষ কত কিছুই না করে। আপনাদের সেই গল্পটা মনে আছে নিশ্চয়ই। এক বাংলায় এমএ কোথাও চাকরি না পেয়ে শেষে বাঘের খাঁচায় ঢুকেছিল। বাঘের ছাল পরে বাঘ সেজে থাকত। কেউ বুঝতে পারেনি এ এক নকল বাঘ। চাকরি মন্দ নয়। প্রথম দিনটা ভালোই কাটল। সমস্যা কেবল বাঘের খাঁচার আরেকটি বাঘ। গভীর রাত। বাংলায় এমএর নকল বাঘটি খাঁচার এক কোণে ভয়ে জবুথবু। অন্য বাঘটি হালুম-মালুম গর্জন করেই যাচ্ছে। এভাবে চাকরি করতে এসে বেঘোরে প্রাণ দেওয়া! আশঙ্কা সত্যি হলো। অন্য বাঘটি হালুম-মালুম করতে করতে এগিয়ে এল বাংলায় এমএধারীটির দিকে। এই বুঝি দেয় এক থাবা। ভয়ে নকল বাঘ চোখ বন্ধ করে থরথর কাঁপছে। এমন সময় ফিসফিস একটা শব্দ শোনা গেল, ‘আরে ভাই, ডরান ক্যান, আমিও বাংলায় এমএ!


চাকরির জন্য আসলেই মানুষ কত কিছুই না করে। তবে অ্যাডাম পাসিট্টি যা করেছেন, সেটা আগে কেউ করেছে বলে শোনা যায়নি। যাকে বলে অভিনব এক আইডিয়া। আর এ কারণেই পাসিট্টি রীতিমতো আলোচনায়। তাঁকে নিয়ে খবর করেছে ডেইলি মেইল, ডেইলি মিরর-এর মতো পত্রিকাগুলো। মোটামুটি বেশ শোরগোলই ফেলে দিয়েছেন ২৪ বছর বয়সী ব্রিটিশ এই তরুণ। কী করেছেন পাসিট্টি? চাকরির আবেদন জানিয়ে বানিয়েছেন বিশাল এক বিলবোর্ড। বিলবোর্ডের বাঁ কোণে নিজের ছবিচশমাধারী পাসিট্টি বিরসবদনে তাকিয়ে আছেন। ডান হাতের তর্জনী একটি লেখার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করছে: আমি আমার সঞ্চয়ের শেষ ৫০০ পাউন্ডও এই বিলবোর্ড বানাতে গিয়ে খরচ করে ফেলেছি। দয়া করে আমাকে একটা চাকরি দিন। নিচে তাঁর ওয়েবসাইটের ঠিকানা অ্যামপ্লয়অ্যাডামডটকম www.employadam.com

শুধু বাংলাদেশেই নয়, ব্রিটেনের চাকরি বাজারেও ভাটার টান। হাহাকার। এমনিতে চাকরির বাজারে পাসিট্টি কিন্তু সুপাত্রই। যোগ্যতা তাঁর মন্দ নয়। বেশ ভালো। উইনচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিডিয়া প্রোডাকশনে প্রথম শ্রেণীতে অনার্স করেছেন। কাজের অভিজ্ঞতাও আছে। কিন্তু তার পরও কিছুতেই জুতসই একটা চাকরি পাচ্ছিলেন না। জীবনবৃত্তান্ত পাঠাতে পাঠাতে, অনলাইনের আবেদন ফরম পূরণ করতে করতে কি-বোর্ড আর আঙুল দুটোই ক্ষয়ে ফেলেছেন। আড়াই শরও বেশি সিভি পাঠিয়ে সাক্ষাৎকারের জন্য সাড়া পেয়েছেন মাত্র দুই জায়গা থেকে। দিনের প্রায় ছয়টি ঘণ্টা শুধু ব্যয় করছেন সিভি পাঠিয়েই! এভাবে হচ্ছিল না দেখেই তিতিবিরক্ত পাসিট্টি নতুন কিছু করতে চেয়েছেন। আর সেই চাওয়া থেকেই চাকরি চেয়ে বিলবোর্ড বানানোর এই অভিনব আইডিয়া। সেই বিলবোর্ড বসানো হয়েছে উত্তর লন্ডনের কিলবার্ন স্টেশনে। ফলে সহজেই নজরে পড়েছে অনেকের। এই বিলবোর্ডের সূত্র ধরে অ্যামপ্লয়অ্যাডামডটকম নামের ওয়েবসাইটটিতে গেলে তাঁর সম্পর্কে পাওয়া যাচ্ছে বেশ কিছু তথ্য। সেখানে তিনি একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন। যেখানে নিজের দক্ষতা বর্ণনার পাশাপাশি দেওয়া হয়েছে একটি ডিজিটাল সিভি। ডিজিটাল সিভির ধারণাটিও এখন নতুন। আমাদের দেশে তো অচেনাই বলা যায়। তবে ব্রিটেনে এই ধারণা অনেকেই ব্যবহার করেছেন। পাসিট্টি নিজেও মূলত প্রথমে ভেবেছেন ডিজিটাল সিভির কথাই। কিন্তু কীভাবে নিজের এই সিভি আরও বেশি সম্ভব মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়, সেটা ভাবতে ভাবতেই বিলবোর্ডের ব্যাপারটি চলে আসে তাঁর মাথায়।

ইন্টারনেটের দুনিয়ায় মোটামুটি শোরগোল ফেলে দিয়েছে পাসিট্টির এই বিলবোর্ডের ছবি। ফেসবুকে এই ছবির নিচে পৌনে এক লাখের মতো লাইক পড়েছে এই কদিনেই। করা হয়েছে হাজার হাজার কমেন্ট। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই টুইটারে তাঁর এই পোস্টে রি-টুইট করা হয়েছিল সাত হাজার। ফেসবুকে অজস্র কমেন্টের ভিড়ে একজনের দেওয়া তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, এই আইডিয়ার বদৌলতে শুধু একটা ভালো চাকরিই নয়, সুন্দরী একজন প্রেমিকাও নাকি পেয়ে গেছেন পাসিট্টি! আপনি কি চাকরির জন্য হা-পিত্যেশ করে মরছেন? শুধু সিভি আর কাভার লেটার টাইপ করে করে আঙুল ক্ষয় করে কী লাভ। মাথাটাও একটু খাটান। সাধারণ একটা আইডিয়াও হয়ে উঠতে পারে অসাধারণ। চাকরির জন্য মানুষ কত কিছুই না করে!


সূত্রঃ প্রথম আলো, ২৫ জানুয়ারী ২০১৩ ইং

৪টি মন্তব্য:

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।