সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: Emilie Du Chatelet-আঠারো শতকের সুন্দরী

Emilie Du Chatelet-আঠারো শতকের সুন্দরী


Emilie Du Chatelet
Emilie Du Chatelet

ইতিহাসখ্যাত নারীদের সবার মধ্যে একটা সাধারণ ব্যাপার ছিল। তারা প্রত্যেকেই অপূর্ব রূপবতী ও আবেদনময়ী ছিলেন। আর এমনই একজন আবেদনময়ী রমণী ছিলেন আঠারো শতকে ফ্রান্সের এমিলি দু শেতেলেত। কেবল ফ্রান্স নয়, তার রূপ ও প্রজ্ঞার খ্যাতি তখন দেশের সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। পাশাপাশি অহঙ্কারী নারী হিসেবে তার নামে একটা চাপা দুর্নামেরও প্রচলন ছিল। সুন্দরী হওয়ার কারণেই কিনা কে-জানে ভোগ-বিলাসে উন্মত্ত হয়ে তিনিও হয়ে পড়েন লাইনচ্যুত। আর রাজকীয় অভিজাত সমাজে কামনা-বাসনার এক মোহিনী প্রতিমূর্তি হিসেবে নিজেকে করে রেখেছেন স্মরণীয়।


ছোটবেলা থেকেই অন্য আট-দশজনের চেয়ে আলাদা ছিলেন এমিলি। সুন্দরী হলেও সাহস আর চাঞ্চল্যের কারণে মেয়েলি বিষয়ের চেয়ে পুরুষালি বিষয়ই তাকে কাছে টানত বেশি। অস্ত্র চালনা ও ঘোড়দৌড়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন তিনি। লেখাপড়ায় দুর্দান্ত এমিলি সমবয়সীদের ছাড়িয়ে যান। অন্যদিকে নাচের প্রতি বিশেষ অনুরাগ ছিল তার। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি সোৎসাহে অংশ নিতেন নাচে। বাদ্যসংগীতেও দক্ষতা ছিল এমিলির। তিনি হাপসিকর্ড বাজাতেন, অপেরা গাইতেন, অভিনেত্রী হিসেবে মঞ্চনাটকও করতেন। এমন মেধাবী ও বহুগুণে গুণান্বিত এমিলির বিয়ে হয় খুব অল্প বয়সেই। তার বয়স তখন মাত্র ১৯। ১৭২৫ অব্দের ২০ জুন। মারকি ফ্লোরেঁত ক্লদ দু শেতেলেতের সঙ্গে বিয়ে হয় তার।

এমিলির স্বামী মারকি ছিলেন একজন সেনা কর্মকর্তা। অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ হওয়ার কারণে আগে থেকে কেউ চিনতেন না কাউকে। ফলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে চিন্তা-ভাবনা, ধ্যান-ধারণা, মেজাজ-মর্জি কোনো কিছুতেই কোনো মিল ছিল না। চরম অশান্তি থাকলেও তাদের প্রকাশ্যে ঝগড়া করতে দেখা যায়নি। বিয়ের পর একে একে তিন সন্তানের মা হন এমিলি। কিন্তু এর মধ্যেই একদিন ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায় এমিলির। আলাদা থাকার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। সে কালে ফরাসি অভিজাত সমাজে স্বামী ও স্ত্রীর একজন করে প্রণয়ী থাকা ছিল সাধারণ স্বীকৃত বিষয়। আর এমিলির জীবনে সবচেয়ে আলোচিত প্রণয় ছিল ভলতেয়ারের সঙ্গে। অবশ্য তার সঙ্গে পরিচয়ের আগে এমিলি জড়িয়ে পড়েছিলেন পর পর তিনটি গভীর প্রণয়ের সম্পর্কে। ২৪ বছর বয়সে তিনি সম্পর্কিত হন দুক দরিশেলিউর সঙ্গে। এ সম্পর্ক স্থায়ী ছিল দেড় বছর। মজার ব্যাপার হলো, ইতিহাসের বিখ্যাত সব ব্যক্তির সঙ্গে প্রেম প্রেম বা কাছাকাছি ধরনের সম্পর্কের জন্য অন্য সবার চেয়ে আলাদা একটা স্থান দখল করে আছেন এমিলি। এক পর্যায়ে আইজাক নিউটনের গবেষণার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন এমিলি। তখন তাকে উচ্চতর গণিতের চর্চায় উদ্বুদ্ধ করেন রিশেলিউ।

লোরেঁ-এর সাইরি-তে চমৎকার এক পল্লী নিবাস ছিল এমিলির। সেখানে এসে থাকার জন্য তিনি আমন্ত্রণ জানান ভলতেয়ারকে। তারপর দীর্ঘকাল তাকে নিয়ে তিনি প্রকাশ্যে বসবাস করেছেন এমিলির সহিষ্ণু স্বামীর সম্মুখেই। ওই সময়ে এমিলি গবেষণা করেছেন পর্দাথবিদ্যা ও গণিত নিয়ে, আর প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানবিষয়ক প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও অনুবাদ। নিউটনের প্রিনসিপিয়া ম্যাথমেটিকার যে অনুবাদ তিনি করেছেন ফরাসি দেশে এখনো তা শ্রেষ্ঠ হিসেবে স্বীকৃত। এমিলির নানা আবিষ্কারের মধ্যে যা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে স্বীকৃত তা হলো : The kinetic energy of an object is a function of the square of its velocity. ভলতেয়ারের পরে চল্লিশ উত্তীর্ণ বয়সে এমিলি সম্পর্কে জড়ান মারকি দ সাত লামবার্তের সঙ্গে। গভীর আগ্রহ নিয়ে তিনি সন্তান ধারণ করেন এই প্রণয়ীর; কিন্তু সেই সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে তিনি বুঝতে পারেন তার জীবনের সংশয় দেখা দিয়েছে। তা হলেও সন্তানের জন্ম দেন এমিলি। এর দুই দিন পর ১৭৪৯ অব্দের ১০ সেপ্টেম্বর, ধমনিতে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তখন তার বয়স হয়েছিল মাত্র ৪৩ বছর। এমিলির মৃত্যুতে এক শোকবাণীতে ভলতেয়ার লেখেন, তিনি ছিলেন এক মহামানব, নারী হওয়াটাই ছিল তার একমাত্র ত্রুটি।


সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন, ১৭ জানুয়ারী ২০১২ ইং

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।