সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: Jezebel -সত্যি মহিমান্বিত নয়!

Jezebel -সত্যি মহিমান্বিত নয়!


Jezebel
Jezebel

নাম তার জেজেবেল। ইতিহাসে তিনি একজন খলনায়িকা হিসেবে কুখ্যাত। তার নাম জেজেবেল, অর্থ হচ্ছে '(যে) মহিমান্বিত নয়' এই নারী সম্পর্কে মুখরোচক গল্পের যেমন প্রচলন আছে, তেমনি প্রাচীন গ্রন্থে নিজের কৃতকর্মের জন্য খলনায়িকা হিসেবে আলাদা জায়গা দখল করে আছেন তিনি। মজার ব্যাপার হলো, তার নামটি এখন শুধু কোনো ব্যক্তির পরিচয় বহন করে না। সভ্যতার পরিক্রমায় সেটি স্থান করে নিয়েছে প্রবাদ প্রবচনে। আর এখানে শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে 'বেহায়া স্ত্রীলোক' অর্থে।


ইউরোপ-আমেরিকা এবং অন্যান্য খ্রিস্টীয় সমাজে জেজেবেল বলতে বোঝায় ছলাকলা এবং যাবতীয় মিথ্যাশ্রয়ী দজ্জাল নারীকে। নামটি কোনো কোনো ভাষায় উচ্চারিত হয় ইজিভেল বা ইজেভেল হিসেবেও। এ নামে দুজন নারীর উল্লেখ রয়েছে বাইবেলে। হিব্রু বাইবেলে বলা হয়েছে, তিনি ছিলেন প্রাচীন ইসরায়েলের রানী। বিয়ের আগে তার পরিচয় ছিল ফিনিসিয়াস রাজকন্যা হিসেবে। তার পিতা প্রথম ইতোবাল ছিলেন টায়ারের রাজা। ইসরায়েলের রাজা আহাবের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পর জেজেবেল ধীরে ধীরে নিজের ক্ষমতা বিস্তার করেন রানী হিসেবে। আহাব ছিলেন এক ও অদ্বিতীয় পরমেশ্বর জেহোবারার উপাসক, কিন্তু তাকে তিনি বিচ্যুত করেন ওই উপাসনা না থেকে। জেজেবেল পূজা করতেন 'বাল' নামের এক দেবতার। তিনি ওই দেবতারই অনুগত করে তোলেন স্বামী আহাবকে। ফলে ইসরায়েলে বাল দেবতার মন্দিরে পূজা -অর্চনা শুরু হয় আবার।

জেজেবেল ছিল কামকলায় পারদর্শী একজন ছলনাময়ী নারী। এসব দিয়েই তিনি রাজা আহাবকে বশে রাখেন। ইসরায়েলজুড়ে শুরু করেন ভয়াবহ স্বৈরশাসন। একে একে হত্যা করেন জেহোবার প্রচারক সব দেবর্ষীকে। এভাবেই তার পাপাচার চলতে থাকে। পরে তাকে বিপক্ষে শক্তির নির্দেশে দুর্গ প্রাসাদের জানালা দিয়ে নিচে ফেলে হত্যা করা হয়। রাস্তায় পড়ে থাকে জেজেবেলের লাশ, আর কামড়ে কামড়ে খায় কুকুরে। নিউ টেসটামেন্টেও জেজেবেল নামে এক দৈবজ্ঞ নারীর উল্লেখ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে ছিল আরও গুরুতর অভিযোগ। বলা হয়েছিল, অবৈধ যৌন ক্রিয়াকলাপে নিয়োজিত হতে এবং দেবী প্রতিমাকে উসর্গ করা খাদ্যবস্তু গ্রহণ করতে মঠের সদস্যদের উদ্বুদ্ধ করেছেন তিনি। এ নিয়ে অবশ্য অনেক মতভেদ রয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য প্রাচীন বৃত্তান্তে জেজেবেল সম্পর্কে বলা হয়েছে, তিনি ছিলেন কারথেজে প্রতিষ্ঠাত্রী রানী দিদোর পিতা বা মাতার মাসি বা পিসি। তবে জেজেবেল নামটি সমাজ সংস্কৃতি জীবনের হাজার হাজার বছর ধরে উলি্লখিত হয়ে আছে সব নষ্ট-ভ্রস্ট দুষ্ট নারীর পরিচয় হিসেবে। এমনিতে খ্রিস্টীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে জেজেবেল বলতে বোঝায় এমন কাউকে যে 'উপলব্ধিগিত প্রমাণ' এবং ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাসী নয়। এ অর্থে কাউকে 'জেজেবেল' বলবে বুঝতে হবে সে পৌত্তলিক বা স্বধর্মত্যাগী। সাহিত্য, চিত্রকলা, চলচ্চিত্র ও সংগীতে এক প্রিয় প্রসঙ্গ এই জেজেবেল। গত একশ বছরে সংস্কৃতির এ তিনটি শাখায় এসেছে এ নামটি, কখনো এসেছে বিশেষ সহানুভূতির সঙ্গেও।

সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন, ১৭ জানুয়ারী ২০১২ ইং

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।