ক্রিস আর রিক হাবার্ড |
চা
মিলবে ঢাকার প্রায় সব অলিগলিতেই। কিন্তু দারুণ এক কাপ কফির খোঁজ পাওয়াটা এখনো পর্যন্ত বেশ কঠিন। সেবার সাপ্তাহিক ছুটিটা আমি ঢাকাতেই কাটিয়েছিলাম। আর সেবারই আমি যাই শহরের চমৎকার
একটি কফি শপে—নতুন এই কফি শপটির নাম নর্থ এন্ড। একটা সময় পোশাক কারখানার
কাজ চলত দোতলার এই জায়গাটায়, সেটাই এখন দারুণ এক কফি শপ,
যার পুরো কৃতিত্বই এর মার্কিন মালিক ক্রিস আর রিক
হাবার্ডের।
কপি সজ্জা |
মার্ক ডুমেট, ৩১ অক্টোবর, ২০১১ মার্ক ডুমেট বিবিসির (ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশন) হয়ে ঢাকায় কাজ করেছেন তিন বছরের বেশি সময়। নর্থ এন্ড কফি শপের কফি মুগ্ধ করেছিল মার্ককে। নিজের ব্লগে তিনি লিখেছেনও তাঁর সেই মুগ্ধতার কথা। অনলাইনে ডুমেটের সেই লেখা পড়ার পর থেকেই মাথায় ঘুরছিল ওই দুই মার্কিন দম্পতির কথা। সুদূর যুক্তরাষ্ট্র থেকে উড়ে এসে তাঁরা দুয়ে মিলে কফি শপ চালাচ্ছেন এই ঢাকার বুকে। চমকপ্রদ তো বটেই। খোঁজ জানতে প্রথমেই অনলাইনে ঢুঁ। www.northendcoffee.com ওয়েবসাইটটিই জানিয়ে দিল বিস্তারিত তত্ত্ব-তালাশ। তারপর ফোন। ওপাশ থেকে ফোন ধরলেন রিকের একজন বাংলাদেশি সহকর্মী। ওপাশে রিক হাবার্ডকে পাওয়া গেল। কিন্তু সেদিন রিক খুব ক্লান্ত। রিকের স্ত্রী ক্রিস সবে লম্বা একটা সফর শেষ করে ঢাকায় এসেছেন। রিকের সঙ্গে দেখা হলো সপ্তাহ দুয়েক পরে।
ক্রিস আর রিক হাবার্ড |
মার্কিন দূতাবাস আর শাহজাদপুর বাস স্ট্যান্ডের কাছাকাছি জায়গায় নর্থ এন্ড। জায়গাটা আশপাশের এলাকার চেয়ে মোটেও আলাদা কিছু নয়। দোতলায় দোকানের যে সাইনবোর্ড ঝুলছে সেটিকেও খুব আহামরি কিছু মনে হলো না। কিন্তু সিঁড়ি ডিঙিয়ে সদর দরজা খুলে ঢুকতেই মন চনমনে হয়ে উঠল। বাতাসে কফির সুবাস। সকালবেলা বলে ভিড় নেই। কোনার দিকের টেবিলে দু-চারজন শ্বেতাঙ্গ মানুষজন দেখা যাচ্ছে। সামনে ধূমায়িত কফির কাপ। জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন তাঁরা। একজন এসে এক কাপ কফি দিয়ে গেল সামনে। কফির উপরিভাগে দারুণ সুন্দর পাতার নকশা। চুমুক দিয়েই মনে হলো মার্ক মোটেও কিছু বাড়িয়ে বলেননি। কফি ফুরোতে না ফুরোতেই হাবার্ড দম্পতি সামনে এসে হাজির। হাসিমুখে হাত মেলালেন। ক্রিসের কাজ আছে। বাচ্চাদের স্কুল থেকে আনতে যেতে হবে। ক্রিস ক্ষমা চেয়ে বেরিয়ে গেলেন। রেস্তোরাঁর মালিক রিক হাবার্ডের সঙ্গে আমরা বসলাম কফি শপের এক কোনায়। শুরুতেই একটা স্বাভাবিক প্রশ্ন।
বাংলাদেশে
প্রথম কীভাবে আসা হলো?
রিক
উত্তরটা দিলেন বেশ ঘুরিয়ে। না,
কফি শপ চালু করার জন্যই প্রথমবার দেশে আসেননি তাঁরা। এমনকি তাঁদের প্রথম আগমন ঢাকাতেও নয়। চট্টগ্রামের একটি ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে
শিক্ষকতা করেছেন তাঁরা। তারপর ফিরে গেছেন
নিজের দেশে। কিন্তু বাংলাদেশ সব সময়ই তাঁদের
অন্তরে ছিল। মনে মনে ভেবেছিলেন, অনেক কিছুই করার আছে এই দেশে। ভেবেছিলেন তার প্রমাণ, বছর দুয়েক আগে ক্রিস আর রিক আবারও
ফেরত আসেন বাংলাদেশে।
ও হ্যাঁ, শিক্ষকতা ছাড়াও
আরেকটি কাজে সুদক্ষ রিক হাবার্ড। সেটি কফি তৈরি। স্টারবাকস, বারিসতার মতো বিশ্বখ্যাত
প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দীর্ঘ সময় কাজ করার অভিজ্ঞতা
তাঁর। করেছেন স্টোর ম্যানেজার এবং শিফট সুপারভাইজারের কাজ। আর ক্রিস সিদ্ধহস্ত পেস্ট্রি তৈরির কাজে। প্রশিক্ষণ নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের
কিং আর্থার বেকিং এডুকেশন সেন্টার থেকে। দুজনে
মিলে ভাবলেন,
নিজেদের এই দিকটাকেই কাজে লাগাবেন তাঁরা। সেই
চিন্তা থেকেই ২০১১ সালে তাঁরা চালু করেন নর্থ এন্ড কফি শপ। ‘নর্থ এন্ড চালু করার পেছনে মূলত দুটো চিন্তা কাজ করেছে। প্রথমত এর
মাধ্যমে আমরা অনেকগুলো মানুষের কাজের সুযোগ
তৈরি করতে পারব। দ্বিতীয়ত, আমরা চেয়েছিলাম এখানকার মানুষকে “লোকালি রোস্টেড” কফির স্বাদের সঙ্গে পরিচয় করাতে।’
কফি বীজ |
পার্বত্য চট্টগ্রামের কফি! ব্রাজিল,
কোস্টারিকা, ইথিওপিয়া এসব
দেশের বিভিন্ন ঘরানার কফি মিলবে নর্থ এন্ড
কফি শপে। কিন্তু এসব কফি উৎপাদনকারী দেশের পাশে চোখে পড়বে
বাংলাদেশের নামও। নানা জাতের কফির পাশে আপনার
দৃষ্টি আকর্ষণ করবে যে কফি সেটির নাম ‘হিল ট্র্যাক্ট
ব্লেন্ড।’
পার্বত্য চট্টগ্রামে এই কফির খোঁজ কীভাবে পেলেন
রিক হাবার্ড?
পাহাড়ি কৃষকদের কাছে কিছু কফি চারা সরবরাহ করেছিল
একটি দাতা সংস্থা। তারপর যেকোনো কারণেই
হোক সেই কফি চাষ প্রকল্প আর এগোয়নি। সেই ভুলে যাওয়া কফিখেতেরই সন্ধান বের করেছেন রিক।
রিক বলছিলেন, ‘এই মুহূর্তে আমরা
খুব অল্প পরিমাণের কফি সেখান থেকে পাই। কিন্তু
আশা করছি আগামী বছর তিনেকের মধ্যে আমরা যথেষ্ট পরিমাণে কফি পাব। শুধু কফির ব্যবসা নয়, আমি চাই ওখানকার চাষিরাও একই সঙ্গে
লাভবান হোক। মধ্যস্বত্বভোগীদের পাল্লায় যাতে
তাদের পড়তে না হয়।’ রিক মনে করেন, এই মুহূর্তে মানের দিক থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের কফি খুব ভালো এমন নয়। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে কফি চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা আছে। কফি দম্পতি এরই মধ্যে অল্পবিস্তর বাংলা শিখেছেন
হাবার্ড দম্পতি। স্ত্রী ক্রিসকে জিগ্যেস করুন।
কফি দম্পতি শিরোনামে তাঁর খানিকটা অরাজি হওয়ার কথা। প্রায় পরিষ্কার বাংলাতেই ক্রিস বলবেন—‘আমি তো কফি বানাই
না। পেস্ট্রি বানাই।’ উচ্চারণটা একটু কানে বাজবে কিন্তু
বাংলায় কোনো ভুল নেই। ক্রিস আর রিকের পরিচয়
যুক্তরাষ্ট্রেই। প্রেম করে নিশ্চয়ই? বলতেই রিক লজ্জা
পেয়ে হাসলেন। তাঁর সঙ্গে বিয়েবিষয়ক আলাপচারিতার একাংশ:
আপনাদের নিশ্চয়ই প্রেম করে বিয়ে
—না না। প্রেম নয়। পারিবারিকভাবে
বিয়ে।
বলেন কি? আমেরিকায় পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়?
—হয় হয়। দুই পরিবার
আলাপ করেই আমাদের বিয়েটা হয়েছে।
আপনার একজন আরেকজনকে চিনতেন না? দেখোনি আগে? অবিশ্বাস্য।
—না আসলে চিনতাম।
একটা শিক্ষাসফরের মতো হয়েছিল। সেখানে ক্রিসও ছিল।
—তাহলে তো অবশ্যই
প্রেম।
রিক
আবার লাজুক ভঙ্গিতে হাসেন। তারপর হাল ছেড়ে দেওয়ার ভঙ্গিতে বলেন, ‘আমাদের বিয়েটাকে তুমি অর্ধেক প্রেম আর অর্ধেক পারিবারিক বলতে পারো। ’ কফিবিষয়ক জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে এই দম্পতি চালু করেছেন নিজেদের কফি একাডেমি।
কফি
আর পেস্ট্রি প্রস্তুতবিষয়ক প্রশিক্ষণ মিলবে এই
একাডেমিতে। তাঁকে নিয়ে পত্রিকায় লেখা হলে নর্থ
এন্ডের পরিচিতি বাড়বে? রিক কি আরও বেশ কয়েকটি শাখা চালু
করতে চান নর্থ এন্ডের?
রিকের জবাব, ‘মোটেও না। এটাকে পুরোপুরি বাণিজ্যিক দিক থেকে কোনোভাবেই চালু করতে চাই না আমরা। অনেকগুলো শাখা হলে মান ধরে রাখা সম্ভব হবে না বলে আমার ধারণা।’ বাংলাদেশি আতিথেয়তা সম্ভবত এত দিনে ভালোই রপ্ত করেছেন রিক। ফেরার সময় কিছুতেই কফির দাম নিলেন না। উল্টো বাসার জন্য উপহার হিসেবে পেস্ট্রি দেওয়ার জন্য ঝুলোঝুলি করলেন অনেকক্ষণ। রাজি করাতে না পেরে শেষে হাত মুছতে মুছতে ফিরে গেলেন কাউন্টারের পেছনে। কফি মেশিনটা চালু করলেন অভ্যস্ত হাতে। আরও একবার কফির সুবাসে চনমন করে উঠল মন।
পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি কেনাবেচা হয়, এমন পণ্যের মধ্যে কফি দ্বিতীয়। তেল আছে এক নম্বরে। কফি ফল সংগ্রহের পর শুকানো হয় এবং খোসা ছাড়ানো হয় যতক্ষণ পর্যন্ত না সবুজ বীজটা বের হয়।
রিকের জবাব, ‘মোটেও না। এটাকে পুরোপুরি বাণিজ্যিক দিক থেকে কোনোভাবেই চালু করতে চাই না আমরা। অনেকগুলো শাখা হলে মান ধরে রাখা সম্ভব হবে না বলে আমার ধারণা।’ বাংলাদেশি আতিথেয়তা সম্ভবত এত দিনে ভালোই রপ্ত করেছেন রিক। ফেরার সময় কিছুতেই কফির দাম নিলেন না। উল্টো বাসার জন্য উপহার হিসেবে পেস্ট্রি দেওয়ার জন্য ঝুলোঝুলি করলেন অনেকক্ষণ। রাজি করাতে না পেরে শেষে হাত মুছতে মুছতে ফিরে গেলেন কাউন্টারের পেছনে। কফি মেশিনটা চালু করলেন অভ্যস্ত হাতে। আরও একবার কফির সুবাসে চনমন করে উঠল মন।
পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি কেনাবেচা হয়, এমন পণ্যের মধ্যে কফি দ্বিতীয়। তেল আছে এক নম্বরে। কফি ফল সংগ্রহের পর শুকানো হয় এবং খোসা ছাড়ানো হয় যতক্ষণ পর্যন্ত না সবুজ বীজটা বের হয়।
ইকবাল
হোসাইন চৌধুরী
সূত্রঃ প্রথম আলো, ১৯ জানুয়ারী ২০১৩
ইং
by akta full idm download er link dan pilz orginal v
উত্তরমুছুনঅরজিনাল যেকোন ভার্সন নামিয়ে প্যাচটা ব্যবহার করুন।
মুছুনhttp://www.mediafire.com/?7rngjn5zl9f16m8
thanks brother
উত্তরমুছুনthanks brother
উত্তরমুছুনআপনাকে স্বাগতম।
মুছুনby rar file er vitore file nai pilz chk koren orginal file ta dan link
উত্তরমুছুনধন্যবাদ আপনাকে। লিংকটা ঠিক ছিলো। ওটা ডিলিট করে আরেকটি দিলাম।
মুছুনhttp://www.mediafire.com/?ecxhu31ovqo0xyw