Hugo Chavez |
লাতিন আমেরিকাতে “একবিংশ শতাব্দীর সমাজতন্ত্র” সেই আর তৈরী করা হল না
ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রপতি হুগ চাভেসের. ৬ই মার্চ ভোর রাত্রে তিনি রাজধানী কারাকাস শহরের সামরিক
হাসপাতালের এক শয্যায় ক্যান্সার
রোগে মারা গিয়েছেন. ভেনেজুয়েলা রাষ্ট্রে সাত দিনের জন্য রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা হয়েছে.
৮ই মার্চ শুক্রবারে চাভেসের শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে. দেশের
সংবিধান অনুযায়ী পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচন দেশের প্রধানের মৃত্যুর পরের থেকে তিরিশ দিনের মধ্যে
ঠিক করার কথা. সাময়িক
ভাবে দেশের শাসনভার হাতে নিয়েছেন উপ রাষ্ট্রপতি নিকোলাস মাদুরো.
এই কথা বলা যায় না যে, চাভেস ভেনেজুয়েলাকে সম্পূর্ণ ভাবেই এক
অনির্দিষ্ট অবস্থার মধ্যে রেখে গিয়েছেন. গত ১৪ বছরের শাসন কালে তিনি
ভেনেজুয়েলাকে এক অর্ধ নিঃস্ব দেশ থেকে বেশ সামাজিক ভাবে স্থিতিশীল দেশে পরিণত
করেছিলেন. তিনি খনিজ তেল বিক্রীর অর্থ থেকে আসা প্রচুর আয় দেশে বাড়ী ঘর, হাসপাতাল,
স্কুল, জিনিষের দাম ঠিক রাখা, চাষীদের বাড়তি সহায়তা, দরিদ্রদের সাহায্যে ব্যয়
করেছেন. হুগ চাভেসের সময়ে
ভেনেজুয়েলা
দেশে এক লিটার সর্ব্বোচ্চ মানের পেট্রোলের দাম ছিল ২ মার্কিন সেন্টের সামান্য বেশী. তাই
অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, চাভেসের
জন্য সারা দেশের
লোকই পাহাড়ের মত আগলে দাঁড়িয়েছিলেন. আর এটা ইতিমধ্যেই খুবই শক্ত ও মজবুত নির্বাচনী ভিত্তি, যা তাঁর উত্তরাধিকারী
নিকোলাস মাদুরো পেতে চলেছেন.
ভেনেজুয়েলা দেশে আসন্ন ভবিষ্যতে কোন
রকমের রাজনৈতিক ঝড়ের সম্ভাবনা নেই,
এই
রকম বিশ্বাস
নিয়ে রাশিয়ার লাতিন আমেরিকা ইনস্টিটিউটের ডেপুটি ডিরেক্টর বরিস মার্তীনভ বলেছেন:
দুই মেয়ে রোসা ও মারিয়ার সঙ্গে চাভেজ। |
“চাভেস তাঁর প্রয়াণের পরে যথেষ্ট বেশী সংখ্যক অনুসারী রেখে
গিয়েছেন, যাঁরা
সম্ভবতঃ দেশে ক্ষমতার হাল ধরে রাখতে পারবেন. এখন আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে শক্তির হার একেবারে নিশ্চিত
ভাবেই চাভেস পন্থীদের
পক্ষে. মনে তো হয় না যে, আসন্ন
ভবিষ্যতে কোন বিকল্প দেখতে পাওয়া
যাবে
– বিরোধী
পক্ষ জিতবে. যদিও বিরোধী পক্ষও এবারে শক্তির উদয় টের পেয়েছে ও তাদের সকলের একক প্রার্থী
রয়েছে, তবুও
খুবই তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে তাঁর চলে
যাওয়ার
পরে দেশের নীতির খুব দ্রুত কোন পরিবর্তন আসার. দেখাই যাচ্ছে যে, আগামী কয়েক বছরে পরিস্থিতি
থাকবে যথেষ্ট স্থিতিশীল ভাবেই”.
জন্মদিনের অনুষ্ঠানে চ্যাভেজ |
গত বছরে ৭ই অক্টোবরের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী পক্ষের
প্রার্থী এনরিকে কাপ্রিলেস
পেয়েছিলেন প্রায় ৪৪ শতাংশ ভোট. চাভেসের ছিল শতকরা ৫৪ ভাগের সামান্য বেশী ভোট. এবারে
সেই রকমের কোনও সকলকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রতীক লালা হুগ ছাড়াই তাঁর পক্ষের লোকদের বিজয়ের জন্য সত্যিকারের লড়াই
করতে হবে. চাভেস সত্যই এমনকি অভ্যস্ত লাতিন আমেরিকার ঔজ্জ্বল্যের
পরিপ্রেক্ষিতেও বিশেষ ভাবেই
উজ্জ্বল ছিলেন. মনে তো হয় না যে,
অন্য
কেউ লাতিন আমেরিকা বা এমনকি
বলা
যায় সারা বিশ্বেও এই ধরনের অনন্য সাধারন প্রতিভার অধিকারী ছিলেন. চাভেস এমনকি নিজে শুধু
ব্যক্তিত্বই ছিলেন না, বলা
যেতে পারে ছিলেন এক বিশ্ব
রাজনীতিতে
আবির্ভাব. তাঁকে হয় পছন্দ করা যেত,
নয়তো
ঘৃণা করা সম্ভব ছিল. এক শিক্ষকের
ছাত্র হিসাবে তাঁর জন্য ধর্ম যাজকরা ভবিষ্যত ঠিক করেছিলেন যাজক হওয়ার, কিন্তু তিনি গিয়েছিলেন
প্যারাট্রুপার বাহিনীতে যোগ দিতে ও হয়েছিলেন সেনা বাহিনীর অফিসার, আর তারপরে ১৯৯৮ সালে – একটি খনিজ তেলে খুবই ধনী দেশের রাষ্ট্রপতি. আর শুরু করেছিলেন ভেনেজুয়েলা দেশে একবিংশ শতকের
বলিভারিও সমাজতন্ত্র
তৈরী করা. হুগ কবিতা লিখতেন,
গান
গাইতেন, প্রত্যেক
সপ্তাহে নিজেই
দেশের টেলিভিশনে অনুষ্ঠান করতেন. তাঁকে মনে করা হয়েছিল দ্বিতীয় ফীদেল অথবা চে গুয়েভারা নামে, আর তিনি হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন
প্রথম ও অনন্য হুগ চাভেস, এই কথা উল্লেখ করে “বিশ্ব রাজনীতিতে রাশিয়া” নামের জার্নালের প্রধান সম্পাদক ফিওদর লুকিয়ানভ
বলেছেন:
খেলাধূলাতে চ্যাভেজ |
“চাভেসের এই বিশ্বের বিখ্যাত লোকে পরিণত হওয়ার ঘটনা তার সঙ্গেই জড়িত যে, বিশ্বে লোকে রাজনৈতিক ভাবে বহু মতের অনুপস্থিতি
নিয়ে খানিকটা অভাব বোধ করেছে. নব্বইয়ের দশকে সকলের মনে হতে শুরু করেছিল যে, নব লিবারেল সহমতে পৌঁছনোর বোধহয় আর কোন বিকল্পই হতে পারে না. আর
এমন একজন লোকের উদয়, যিনি
প্রথম বললেন যে, পুরনো সমাজতন্ত্র ইতিমধ্যেই
ধ্বসে পড়েছে, কিন্তু
আমরা প্রস্তাব করব নতুন আর সেই
রকমই
করলেন, যে
লোকে তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিল,
এক
নতুন ফীদেল বা চে গুয়েভারা
হিসাবে.
ফীদেল এটা করে উঠতে পারেন নি. কিন্তু যারা ধনতান্ত্রিক স্ট্যাটাস ক্যুয়ো নিয়ে সন্তুষ্ট হতে
পারছিলেন না, তারা
নিজেদের আভ্যন্তরীণ আকর্ষণ
থেকেই
এক নতুন প্রতীককে পেলেন ও তার একটা মুখও হল”.
জনতার ভালবাসা |
ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রপতি চিনের সঙ্গে
মজবুত বন্ধন স্থাপন করলেন,
মৈত্রী
স্থাপন করলেন ইরানের
সঙ্গে. তিনি মস্কোতেও এসেছেন প্রায়ই. রাশিয়ার সঙ্গে চাভেসের ছিল বিশেষ সম্পর্ক. রাশিয়ার
খনিজ তেল ও গ্যাস কোম্পানী গুলি বর্তমানে ভেনেজুয়েলার সঙ্গে বহু শত কোটি ডলার অর্থমূল্যের খনিজ তেল ও
গ্যাস উত্পাদনের
চুক্তি করেছে. মস্কো ভেনেজুয়েলাতে শক্তি উত্পাদন, রাসায়নিক ও
খনিজ
তেল উত্তোলনের যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে. আর সেখানে পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্রও স্থাপন করবে. রাশিয়ার
সঙ্গে ভেনেজুয়েলার বহু শত কোটি ডলারের চুক্তি রয়েছে সমরাস্ত্র সরবরাহের. হুগ একাধিকবার একসঙ্গে
রাশিয়া ও ভেনেজুয়েলার
বিমান বহর ও সামরিক নৌবহরের প্রশিক্ষণের বন্দোবস্ত করেছেন.
বিরোধী পক্ষের প্রতিনিধিরা বলে থাকে যে, রাশিয়ার সঙ্গে সমস্ত
চুক্তিই জারি রাখা হবে.
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।