সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: লৌহমানবী মার্গারেট থ্যাচার আর নেই।

লৌহমানবী মার্গারেট থ্যাচার আর নেই।

মার্গারেট থ্যাচার
মার্গারেট থ্যাচার


লৌহমানবীখ্যাত ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার আর নেই। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে ৮৭ বছর বয়সে গতকাল তিনি পরলোকগমন করেন । মার্গারেট থ্যাচারের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করে তার মুখপাত্র লর্ড বেল বলেন, অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে মার্ক এবং ক্যারোল থ্যাচার জানিয়েছেন যে, তাদের মা ব্যারোনেস থ্যাচার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে সকালে মারা গেছেন।


১৯৭৯ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ১১ বছর ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মার্গারেট থ্যাচার। ব্রিটেনের ইতিহাসে একমাত্র নারী প্রধানমন্ত্রী থ্যাচার কনজারভেটিভ পার্টির নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনে কাজ করেন। একটানা তিনবার১৯৭৯, ১৯৮৩ এবং ১৯৮৭ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হন তিনি। বিংশ শতাব্দীতে তিনি ব্রিটেনের সবচেয়ে দীর্ঘ সময় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ব্রিটেনের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হয়েও যেভাবে শক্ত হাতে, বিভিন্ন বাধা সামলে তিনি ব্রিটেনের অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক সংস্কার এনেছিলেন, তার জন্য তিনি আয়রন লেডি বা লৌহমানবী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন। তিনি ৩৫ বছরের সমাজতান্ত্রিক শাসন থেকে ব্রিটেনকে সংসদীয় গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনেন। ফকল্যান্ড যুদ্ধে তিনি জয়লাভ করেন। স্নায়ুযুদ্ধের কঠিন সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক ব্যয়বহুল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধাক্কায় ভগ্নপ্রায় অর্থনীতি থেকে দেশকে পুনরুদ্ধারের জন্য বিশ্বব্যাপী তিনি ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করেন। তবে নিজ দেশে তার ব্যাপারে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তিনি শ্রমিক ইউনিয়নের ক্ষমতা খর্ব করেন। তিনি লেবার পার্টিকে শিল্পের রাষ্ট্রায়ত্তকরণ ও মুক্তবাজার অর্থনীতি গ্রহণে বাধ্য করেন। থ্যাচারবাদ নামে তিনি যে নীতির প্রবর্তন করেন, তার মূলকথা হলো অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য একে অপরের পরিপূরক। তার মতে, ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা ও কঠোর পরিশ্রম জাতীয় উন্নয়নের একমাত্র উপায়। তিনি বিশ্বাস করতেন, আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জোরালো ভূমিকা রাখতে পারে মুক্তবাজার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। সমালোচকরাও তার এসব দৃষ্টিভঙ্গির প্রশংসা করেছেন।২০০২ সালে ছোটখাটো একটি স্ট্রোক করার পর থেকে অনেকটা নিভৃত জীবনযাবন করে আসছিলেন মার্গারেট থ্যাচার।
মার্গারেট থ্যাচার
মার্গারেট থ্যাচার

থ্যাচারের মৃত্যুর সংবাদে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন থ্যাচারের মৃত্যু সংবাদে ইউরোপ সফর সংক্ষিপ্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, আমরা একজন মহান নেতা, একজন মহান প্রধানমন্ত্রী এবং একজন মহান ব্রিটিশকে হারালাম।ব্রিটিশ সরকার জানিয়েছে, সেন্ট পল ক্যাথেড্রালে সামরিক মর্যাদায় তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। তবে পরিবারের ইচ্ছা অনুসারে তার জন্য রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্যানুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে না। স্নায়ুযুদ্ধকালে থ্যাচারের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে বসা সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্ভাচেভ বলেছেন, এই মহান রাজনীতিক ইতিহাসে ঠাঁই পাবেন।
 
শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার শোক প্রকাশঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থ্যাচারের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ জানান, থ্যাচারের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেছেন, ব্রিটিশ জনগণ ও তার পরিবার এ শোক কাটিয়ে উঠতে পারবে। থ্যাচারের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া। গতকাল এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, ১৯৭৯ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত দুদফায় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে তার নিজের দেশ ও জনগণের কল্যাণে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। বেগম জিয়া বলেন, রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন তাত্পর্যপূর্ণ ভূমিকা পালনের মাধ্যমে তিনি শুধু নিজ দেশে নয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও সুপরিচিতি অর্জন করেছিলেন। তার চারিত্রিক দৃঢ়তা ও অবিচল নীতিনিষ্ঠা থ্যাচারকে এক পৃথক ব্যক্তিত্বমণ্ডিত্ব মহিমা এনে দিয়েছিল। বিএনপি চেয়ারপারসন তার নিজের এবং দলের পক্ষ থেকে ব্রিটিশ সরকার, জনগণ, কনজারভেটিভ পার্টি ও মার্গারেট থ্যাচারের পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।

সূত্র : বিবিসি, নিউ ইয়র্ক টাইমস ও আল জাজিরা

সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন, ০৯-০৪- ২০১৩ ইং

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।