কারাগার
মানে হচ্ছে অপরাধী বা আসামিদের শাস্তিভোগের জায়গা। কারাগারের ইংরেজি শব্দ হচ্ছে প্রিজন যা প্রাচীন ফরাসি শব্দ প্রিসাউন থেকে উৎপত্তি হয়েছে। এটি জেল, প্রিজন, গাউল,
দ্য বিগ হাউস, দ্য স্ল্যামার
অথবা দ্য স্টোনি লোনসাম নামেও পরিচিত। কারাগার
মূলত সরকার কর্তৃক পরিচালিত হয়। পৃথিবীর সব দেশেই
অপরাধীদের শাস্তি প্রদানের জন্য কারাগারের প্রচলন রয়েছে। কিন্তু বিশ্বের এমন কিছু কারাগার রয়েছে যেগুলো অতিরিক্ত নির্যাতন, মানবাধিকারের ভয়াবহ লঙ্ঘনসহ নানা কারণে ভয়ঙ্কর কারাগার হিসেবে কুখ্যাতি অর্জন করেছে। আজ আমরা এ রকমই কিছু ভয়ঙ্কর কারাগারের কথা জানব।
গুয়ানতানামো
বেঃ
বিশ্বের
সবচেয়ে ভয়ঙ্কর কারাগারটির নাম গুয়ানতানামো বে। সিআইএ ও মার্কিন প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণাধীন গুয়ানতানামো বে বন্দীশিবির বিশ্বব্যাপী কোটি মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের অনুমতি না থাকায় প্রায় এক দশক সেখানে বহিরাগত কারও পা পড়েনি। বেশ কয়দিন আগে একাধিক সাংবাদিকের সুযোগ হয়েছে কারাগারটি পরিদর্শনের। আর তাদের বর্ণনায় ওঠে এসেছে ভয়ঙ্কর এ কারাগারের দুর্ধর্ষ চিত্র। বিশ্বের সবচেয়ে বড়
বন্দীশিবির। আরও সহজ করে বললে, বন্দী নির্যাতনের ক্ষেত্রে সর্বাধিক আলোচিত কারাগার। এ কারাগারের মালিক পরাশক্তির শীর্ষ
দেশ
যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রশাসনের চোখে যারা
ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী, তাদের আটক করার পর সেখানে বন্দী করে রাখা হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নয়, বরং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে
ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সন্ত্রাসীদের বিচারের জন্য নেওয়া হয় বিচ্ছিন্ন এ কারাগারে। ২০০২ সাল থেকে বন্দী নির্যাতনের জন্য আলোচনায় আসে গুয়ানতানামো বে কারাগার। মার্কিন সামরিক ঘাঁটি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত এ দ্বীপে সাধারণ পর্যটক তো দূরের কথা, কোনো সংবাদকর্মী বা মানবাধিকার
কর্মীর প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল। তবে ২০০২ সালে যখন বন্দী নির্যাতনের জন্য বিশ্বব্যাপী এ কারাগারটি নিয়ে মার্কিন প্রশাসন নিন্দার মুখে পড়ে, তখন বেশকিছু ভিডিওচিত্র গণমাধ্যমে
প্রচার হয়। ওইসব ভিডিওচিত্রে দেখানো হয়, মার্কিন সেনারা বন্দীদের কমলা রংয়ের পোশাকে আবৃত করে চোখ-মুখ বেঁধে অমানবিক নির্যাতন করছে। এরপর থেকে দীর্ঘদিন কোনো সংবাদকর্মীকে এ কারাগারের ধারেকাছে ভিড়তে দেওয়া হয়নি।
২০০৮ সালে বারাক ওবামা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট
হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের দ্বিতীয় দিনেই
কুখ্যাত গুয়ানতানামো বে কারাগার বন্ধের জন্য লিখিত আদেশ দেন। তিনি বলেছিলেন, কারাগারটির স্থাপন, পরিচালনা সবই অসাংবিধানিক। কাজেই যত দ্রুত সম্ভব এর কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এলেন কিন্তু এখনো তার সেই নির্দেশ বাস্তবায়ন হয়নি। আল-জাজিরার এক
নিবন্ধে বলা হয়,
গুয়ানতানামো দ্বীপটি যেন আইনের বাইরে। মার্কিন বাহিনী নিয়ন্ত্রিত গুয়ানতানামো বে কারাগারে এখনো জঙ্গি, সন্ত্রাসী সন্দেহে বিভিন্ন দেশের ১৭১ জন বন্দী আটক আছে। ইতোমধ্যে ৮০০ বন্দীকে মুক্তি দিয়েছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ। গুয়ানতানামো বে কারাগারে বর্বরভাবে বন্দীদের নির্যাতন করা হয়। তাদের নির্দয়ভাবে পেটানো হয়। ঘুমাতে দেওয়া হয় না ঠিকভাবে। মানসিক নির্যাতনও চলে। অতি উচ্চ বা নিম্ন তাপমাত্রায় রাখা হয়। আর দীর্ঘদিন ধরে অন্ধকার এক প্রকোষ্ঠে আটকে রাখা হয়। যাদের গুয়ানতানামো কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়, মনে করা হয়, তারা সবাই সন্ত্রাসী, জঙ্গি। তাদের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ধরে
আনা হয়েছে। তাদের কোনো আইনি অধিকার নেই। প্রকৃতপক্ষে, মোট বন্দীদের মধ্যে কেবল কিছুসংখ্যক বন্দীকে মার্কিন বাহিনী গ্রেফতার করে। বেশির ভাগ বন্দীই পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের জঙ্গি, বিভিন্ন উপজাতি গোষ্ঠীর সদস্য ও
অন্যান্য কর্মকর্তা।
গুয়ানতানামো বে কারাগারে প্রতিনিয়ত মানুষের
মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে মার্কিন বাহিনী।
যার ফলে বিশ্বব্যাপী নির্যাতিত মানুষের মানবাধিকারের রক্ষক হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্র রীতিমতো প্রশ্নের সম্মুখীন। মার্কিন সেনাবাহিনীর অনেক কর্মকর্তা আছেন, যারা স্বীকার
করেন গুয়ানতানামো বে কারাগারের কারণে অনেক সময় নতুন করে
জঙ্গি, সন্ত্রাসী তৈরি হচ্ছে। তারা অনেক
বেশি হিংস্র ও ক্রুদ্ধ হয়ে উঠছে মার্কিন বাহিনীর ওপর। প্রতিশোধপরায়ণও হয়ে উঠছে অনেকে। ফলে মার্কিনিদের নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় আরও বাড়ছে। এ পর্যন্ত মাত্র ছয়জন বন্দীকে শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। ফলে কারাগারটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে অনেকে।
এ বন্দীশিবিরে যাদের আটক রাখা হয়েছে, তারা সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের শত্রু বলে পরিচিত। এদের কেউ অস্ত্র নির্মাতা, কেউ সন্ত্রাসীদের শীর্ষ নেতা, আবার কেউবা যুক্তরাষ্ট্রে বিধ্বংসী হামলা পরিচালনার পরিকল্পনাকারী। তাছাড়া বিশ্বজুড়ে পশ্চিমাদের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত যুদ্ধে নিয়োজিত ব্রিটিশ ও মার্কিন সেনাদের হত্যাকারীদের শাস্তি দিতে বন্দীদের এখানে আনা হয়। বিশেষ করে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে টুইন টাওয়ারে হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আটক সব সন্ত্রাসীকে রাখা হয়েছে এখানে। সব মিলিয়ে বর্তমানে এ কারাগারে বন্দীর সংখ্যা প্রায় ২০০। গুয়ানতানামো বে কারাগারটি বন্ধ করা বা চালু রাখা নিয়ে আসলে মার্কিন সরকারের অনেক অঙ্গপ্রতিষ্ঠানও দায়ী। এদিকে কংগ্রেস চাইলে এটি বন্ধ করে দিতে পারে। কংগ্রেস সদস্যরা খুব ভালোভাবেই জানেন, গুয়ানতানামো বে কারাগার সম্পর্কে কোনটি সঠিক আর কোনটি সঠিক নয়। কিন্তু তারা কারাগারটি বন্ধের ব্যাপারে যথেষ্ট আগ্রহী নন বা ত্বরিত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চাইছেন না। জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী, প্রতিটি বন্দী, তাকে আটকে রাখার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করতে পারেন। এ ব্যাপারে আদালতের কাছে তিনি বিচার চাইতে পারেন। কিন্তু গুয়ানতানামো কারাগারের বন্দীরা এ অধিকার থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন।
ট্যাডমোর
কারাগারঃ
গুয়েনতানামো
বে কারাগারের কথা বাদ দিলে রাষ্ট্রের মালিকানাধীন সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ও খারাপ কারাগার
মনে করা হয় সিরিয়ার ট্যাডমোর কারাগারকে। সিরিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলের মরুভূমিতে এ
কারাগারটি অবস্থিত। ১৯৮০ সালের দিকে একবার এ কারাগারে সিরিয়ার প্রেসিডেন্টকে
হত্যার চেষ্টা চালানো হয়। মূলত এরপর থেকেই এই কারাগারটি সবচেয়ে ভয়ঙ্কর নরকতুল্য
স্থানে পরিণত হয়। কঠোর শর্ত, অমানবিক
নির্যাতন, রক্ষীদের কাছ
থেকে বিরূপ আচরণসহ নানা কারণে এখানে প্রায় প্রতিদিনই মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে
বিশ্ব মিডিয়ায় খবর বেরোয়। শুধু তাই নয়, এ কারাগারের বন্দীদের যে খাবার দেওয়া হয়, তাকে পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্টমানের
খাবার মনে করা হয়। আর এখানাকার খাবার পানি পর্যন্ত ময়লা। এই কারাগার সম্পর্কে
আরেকটি ভয়াবহ তথ্য হচ্ছে, এখানকার
কারারক্ষীরা কেবল নির্মমই নয়, কখনো
কখনো এরা পিশাচও হয়ে ওঠে। এখানকার রক্ষীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, এরা বন্দীদের হত্যা করে তারপর তাদের
কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলে। এসব নানা কারণে এই বন্দীশালার কথা শুনলেই অপরাধীদের
গলা শুকিয়ে যায়।
গিতারামা কারাগারঃ
আফ্রিকার এ
কারাগারটিকে বলা হয় 'রুয়ান্ডার
দুঃস্বপ্ন'। আফ্রিকার
একটি রাজ্য রুয়ান্ডায় অবস্থিত এ কারাগারটি বিশ্বের আরেকটি ভয়ঙ্কর কারাগার
হিসেবে কুখ্যাত। এই কারাগারে মানবাধিকার বলতে কিছু নেই। বিশ্ব মিডিয়ার দাবি
অনুসারে এ কারাগারে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে মানবাধিকারের লঙ্ঘন ঘটে। এই কারাগারের
ধারণক্ষমতা মাত্র ৫০০। কিন্তু আঁতকে ওঠার মতো তথ্য হলো, এই ৫০০ জনের থাকার জায়গাতেই গাদাগাদি
করে রাখা হয়েছে ৫০০০ এরও বেশি অপরাধীকে। আর এতেই প্রমাণিত হয়, কারাগারের ভেতরে বন্দীদের কী পরিমাণ
দুর্দশা পোহাতে হয়। শুধু তাই নয়, এমন বদ্ধ পরিবেশে একে অপরের মধ্যে চাপাচাপির
কারণেই এখানে বন্দীদের মৃত্যু ঘটে। এর চেয়ে ভয়ঙ্কর তথ্য হলো এই মৃতদেহ বন্দী
সেলের ভেতরেই ফেলে রাখা হয়। বন্দীদের এখানে কোনো খাবার দেওয়া হয় না, যাতে তারা একে অন্যকে খেতে পারে! আর
তাই দুর্ভিক্ষ বা খাবারের অভাবে এখানকার অনেক বন্দীর মৃত্যু ঘটে। আর সেই সঙ্গে
নানা ধরনের পুলিশি নির্যাতন আর অত্যাচার তো রয়েছেই। সব মিলিয়ে কারাগারটিকে
আক্ষরিক অর্থেই রুয়ান্ডার দুঃস্বপ্ন বলা চলে।
লা সান্তেঃ
শিল্প, সাহিত্য আর রোমান্সের শহর হিসেবে
খ্যাত ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস। আর এখানেই অবস্থিত বিশ্বের কুখ্যাত কারাগারগুলোর
একটি। লা সান্তে। প্যারিসের নাম আর ইমেজের সঙ্গে এই কারাগারের বিষয়টি ঠিক না
মিললেও এটাই বাস্তবতা। রীতিমতো শহরের প্রাণকেন্দ্রেই এ কারাগারটির অবস্থান। কারাগারটিকে
বলা হয় নরকের গর্ত। আক্ষরিক অর্থেই এটিকে নরকের গর্ত বলা যেতে পারে। তার কারণ এই
কারাগারের জনাকীর্ণ সেলগুলোর ভয়ঙ্কর অবস্থা। আর এই কারাগারের সেলগুলোর ভেতর ইঁদুর, উকুন আর পোকামাকড়ে ভরা। শুধু কী তাই, কোনো সুস্থ মানুষ এই কারাগারের ভেতর
ঢুকলে দু-চার দিনের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়বে। এ কারাগারের প্রতিটি কক্ষকেই
জনাকীর্ণ বলা চলে। বিষণ্নতা ও হতাশার কারণে এখানকার বন্দীরা প্রায়ই আত্দহত্যার পথ
বেছে নেন। বলা হয়ে থাকে, বন্দীদশার
যাতনা থেকে মুক্তির জন্য এখানকার বন্দীরা ড্রেন পরিষ্কারের মতো কাজ করার জন্য
উদগ্রীব থাকেন।
কান লি সো
নম্বর ২২ কারাগারঃ
কান লি সো
নম্বর ২২ হচ্ছে উত্তর কোরিয়ার একটি কুখ্যাত কারাগার। এই কারাগারটিও নানা কারণে
বিশ্বের কুখ্যাততম কারাগারগুলোর অন্যতম হিসেবে পরিণত হয়েছে। এটি হচ্ছে এই শতকের
সবচেয়ে বড় কারাগারগুলোর একটি। টিই
বিশ্বের একমাত্র কারাগার যাতে শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সব বয়সী বন্দী রয়েছে।
উত্তর কোরিয়ানরা কেবল রাজনৈতিক বন্দীদেরই অন্তরীণ করে না, তাদের আত্দীয়রাও রক্ষা পান না। কথিত
আছে, এ কারাগারের
ভয়াবহতা থেকে রেহাই পান না এখানকার গর্ভবতী নারী বন্দীরাও। তাদের সন্তান
জন্মদানের সময় চিৎকার করার অর্থ হলো অনাগত সন্তানের নিশ্চিত মৃত্যু। এখানকার
বন্দীদের পশুর মতো করে রাখা হয়। এখানকার নির্যাতন, কঠিন শর্ত ও বাজে ব্যবহার কেবল সাধারণ বন্দীদের
সঙ্গেই নয়, শিশুদের সঙ্গেও
একই আচরণ করা হয়।
লুজিয়ানা
পেনিটেনশিয়ারিঃ
এটিকে বলা
হয় দক্ষিণের আলকাট্রজ। দ্য ফার্ম অথবা এলএসপি নামেও এই কারাগারের আলাদা পরিচিতি
রয়েছে। এ কারাগারের অবস্থান আমেরিকার লুজিয়ানা অঙ্গরাজ্যে। আর লুজিয়ানা স্টেট
পেনিটেনশিয়ারি শীর্ষক এই কারাগারটি যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা সংবলিত
বৃহত্তম কারাগার বলা চলে। এ কারাগারে প্রায় ৫ হাজারেরও বেশি বন্দী রয়েছে। আর এসব
বন্দীদের নিয়ন্ত্রণর জন্য প্রায় ১৮০০-এরও বেশি রক্ষী ও কর্মকর্তা রয়েছেন। এই
কারাগারটি আগে অ্যাঙ্গোলা কারাগার হিসেবে পরিচিত ছিল। এখানে একশরও বেশি বন্দীকে
শিরশ্ছেদ করা হয়েছে বলে কথিত রয়েছে। এই কারাগারটিকে রাজ্যের মৃত্যুকূপ হিসেবে
বিবেচনা করা হয়। ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর অপরাধীরাও এই কারাগারের নাম শুনলে চমকে ওঠে। ১৯৪০
সালের পর থেকে এই কারাগারের নির্যাতন পদ্ধতি ও বন্দীদের শাস্তিদানের পদ্ধতিতে
পরিবর্তন আসে। বলা চলে, এখানে
পৃথিবীর সবচেয়ে সর্বাধুনিক উপায়ে বন্দীদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়।
ইলেকট্র্রনিক শক, ইলেকট্র্রিক
চেয়ারসহ অন্যান্য উপায়ে চালানো এই নির্যাতন বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়াবহতম
নির্যাতন হিসেবে খ্যাত। এখানকার কারাগারের নির্যাতন এতটাই ভয়াবহ যে প্রায়ই এর
ফলে বন্দীদের মৃত্যুর দিকে ধাবিত করে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্যও কারাগারটি কুখ্যাত।
দিয়ারবাকিরঃ
দিয়ারবাকির
নামের কুখ্যাত কারাগারটি তুরস্কে অবস্থিত। এ কারাগারটির ধারণক্ষমতা ৭৫০ হলেও এটি
প্রায় সবসময় জনাকীর্ণ থাকে। কখনো
কখনো এই কারাগারের বন্দীসংখ্যা এর ধারণক্ষমতা ২০ গুণও ছাড়িয়ে যায়। এখানকার
বন্দীদের রুটিন করে পেটানো হয়। এ ছাড়াও বন্দীদের ওপর চালানো হয় নানা ধরনের
পাশবিক অত্যাচার। অভিযোগ রয়েছে, এই
কারাগারের বন্দীদের নগ্ন করে নির্যাতন চালানো হয়। আর এই নির্যাতনও চালানো হয়
খুবই অভিনব উপায়ে। এখানকার বন্দীদের জোরপূর্বক কুকুরকে স্যালুট জানাতে বাধ্য করা
হয়। এ কুকুর হচ্ছে বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর। কখনো কখনো উলঙ্গ বন্দীদের
কুকুরের মাঝখানে ছেড়ে দেওয়া হয় যাতে কুকুর বন্দীদের যৌনাঙ্গ কামড়ে ধরতে পারে।
এমন অমানবিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে এখানকার অনেক বন্দীরই ভবলীলা সাঙ্গ হয়ে
যায়। এখানকার
বন্দীদের ঠিকমতো খাবার-দাবাড় দেওয়া হয় না। কখনো কখনো খাবার দেওয়া হলেও সেটাকে
নামমাত্র বলা চলে। ফলে ক্ষুধার কারণে এখানকার অনেক বন্দী মৃত্যুমুখে পতিত হয়। এই
কারাগারের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে অনেক। আর এখানকার কোনো
বন্দী পালানোর চেষ্টা করলে তাকে সেই স্থানে গুলি করে মারা হয়। এখানকার বন্দীদের
ইলেকট্রিক শকের মাধ্যমেও নির্যাতন করা হয়।
এডিএক্স কারাগারঃ
এই কারাগারটি কলোরোডায় অবস্থিত। এই কারাগারটিকে নরকের সবচেয়ে স্বচ্ছ
ভার্সন হিসেবে বিচেনা করা হয়। এ কারাগারে বিশ্বের অনেক বড় বড় এবং মোস্ট
ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী ও সন্ত্রাসী গ্রুপের নেতাকে আটক রাখা হয়েছে। হাই প্রোফাইল
সন্ত্রাসী অথবা যেসব অপরাধী জাতির জন্য হুমকির কারণ হতে পারে তাদেরও এই কারাগারে
স্থানান্তর করা হয়। এ কারাগারকে বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন নিরাপত্তাবিশিষ্ট কারাগার
মনে করা হয়। দিনের ২৩ ঘণ্টাই এখানকার বন্দীদের তাদের ছোট্ট সেলের ভেতর রাখা হয়।
অন্যান্য বন্দীদের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ থাকে না। এমনকি গার্ডের সঙ্গেও তাদের
যোগাযোগ হয় খুব সামান্যই। দিনের আলো দেখার কোনো সুযোগ পান না এখানকার বন্দীরা।
মাত্র এক ঘণ্টার জন্য সেলের বাইরে আসেন বন্দীরা। তাও আবার কঠিন নিরাপত্তার মধ্যে।
কর্তৃপক্ষ মনে করে, একজন বন্দীকে আলো থেকে দূরে রাখার অর্থ হলো তাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে
তোলা। এখানে মোট ৫০০ সেল রয়েছে যেগুলোতে একটি করে চেয়ার এবং বিছানা রয়েছে।
এরপরও কক্ষটিকে খুব ছোটই বলা যেতে পারে।
সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২২-০৪- ২০১৩
ইং
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।