সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: শিরীন শারমিন দেশের প্রথম নারী স্পিকার

শিরীন শারমিন দেশের প্রথম নারী স্পিকার



সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ শিরীন শারমিন চৌধুরী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জাতীয় সংসদের স্পিকার নির্বাচিত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার স্পিকার পদে একমাত্র প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম প্রস্তাব করা হলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের ইতিহাসে শিরীন শারমিন চৌধুরী প্রথম নারী স্পিকার। এর আগে সংরক্ষিত নারী কোটার কোনো সাংসদের স্পিকার নির্বাচিত হওয়ারও নজির নেই। এদিকে দলীয় নেতারা প্রকাশ্যে শিরীন শারমিন চৌধুরীকে স্পিকার হিসেবে স্বাগত জানালেও দলের ভেতরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। দলের বেশির ভাগ সাংসদই মনে করেন, রাজনীতি ও সংসদীয় কর্মকাণ্ডে অনভিজ্ঞ এ রকম একজনকে স্পিকার পদে নির্বাচিত করা ঠিক হয়নি।


গতকাল বিকেল সোয়া পাঁচটায় ভারপ্রাপ্ত স্পিকার শওকত আলীর সভাপতিত্বে সংসদের অধিবেশন শুরু হয়। শুরুতে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী স্পিকার পদে শিরীন শারমিনের নাম প্রস্তাব করেন। প্রস্তাবটি সমর্থন করেন হুইপ সাগুফতা ইয়াসমীন। এ সময় ভারপ্রাপ্ত স্পিকার বলেন, স্পিকার পদে নির্বাচনের জন্য মাত্র একটি প্রস্তাব পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় শিরীন শারমিনকে স্পিকার পদে নির্বাচন করা যেতে পারে। এরপর শওকত আলী সংসদে কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী প্রস্তাবটি ভোটে দেন এবং তা সর্বসম্মতভাবে কণ্ঠভোটে পাস হয়। জাতীয় সংসদের স্পিকার মো. আবদুল হামিদ গত ২৪ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেওয়ার পর স্পিকারের পদটি শূন্য হয়। রাতে অধিবেশন শেষে নবনির্বাচিত স্পিকারকে শপথ পড়ান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

দলে প্রতিক্রিয়া
শিরীন শারমিন চৌধুরীকে স্পিকার করায় আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ থাকলেও দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের দোষে দুষ্ট হবেনএই আশঙ্কায় কোনো নেতা বা সাংসদ এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের অন্তত ২০ জন কেন্দ্রীয় নেতা ও সাংসদের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁরা সবাই এ বিষয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করলেও পত্রিকায় নাম প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তাঁরা বলেন, শিরীন শারমিন চৌধুরীর নির্দিষ্ট কোনো নির্বাচনী এলাকা নেই। তিনি প্রথমবারের মতো সংরক্ষিত মহিলা আসনে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। অথচ এই সংসদে পাঁচ-ছয়বার নির্বাচিত অনেক প্রবীণ রাজনীতিক ও সাংসদ রয়েছেন। তাঁদের সামনে স্পিকার পদে শিরীন শারমিন কতটুকু মানানসই হবেন, তা দেখার বিষয়। দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, গত ১০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখনকার অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পরবর্তী স্পিকার কাকে করা যায়, তা নিয়ে কথা বলেন। সেদিনের আলোচনায় প্রথমবারের মতো স্পিকার হিসেবে শিরীন শারমিন চৌধুরীর নাম উঠে আসে। গত রোববার আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের বৈঠকে প্রথমবারের মতো নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তাঁর মনোনয়ন নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে জ্যেষ্ঠ নেতারা তাঁর বিদ্যা-বুদ্ধি ও মেধার প্রশংসা করেন। কিন্তু রাজনৈতিক ও সংসদ বিষয়ে তেমন কোনো অভিজ্ঞতা না থাকায় তাঁকে স্পিকার করার ব্যাপারে সায় দিতে জ্যেষ্ঠ নেতারা প্রথমে অনাগ্রহ দেখান।

ওই বৈঠকসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, পরিবেশ আঁচ করতে পেরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকের শুরুতেই মাইক্রোফোন নিয়ে সাংসদদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। তিনি শিরীন শারমিনের যোগ্যতা ও দক্ষতার কথা তুলে ধরে একজন নারীকে স্পিকার পদে বসানোর আগ্রহ দেখান। এ ক্ষেত্রে তিনি যুক্তরাষ্ট্রসহ ভারত ও পাকিস্তানের উদাহরণ দেন। পরে তিনি স্পিকার পদে দলীয় সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে আহ্বান জানান। সৈয়দ আশরাফ ছাত্রজীবনে শিরীন শারমিনের মেধার কথা উল্লেখ করেন এবং দলের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে স্পিকার পদে তাঁর মনোনয়নের কথা জানান। তিনি শিরীন শারমিন চৌধুরীর মনোনয়নকে দলের জন্য বিনিয়োগ বলেও মন্তব্য করেন। এরপর নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সামনে এ বিষয়ে বিরোধিতা করেননি। তাঁরা করতালি দিয়ে দলীয় সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান।

সংক্ষিপ্ত রাজনৈতিক জীবন
শিরীন শারমিন চৌধুরী ২০০৯ সালের আগ পর্যন্ত সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। এক-এগারোর সরকারের সময় শেখ হাসিনা যখন কারারুদ্ধ ছিলেন, তখন তাঁর আইনজীবী প্যানেলের সদস্য ছিলেন তিনি। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার গঠন করা হলে শিরীন শারমিন ২০০৯ সালে সংরক্ষিত নারী কোটায় সাংসদ নির্বাচিত হন এবং সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। সর্বশেষ গত বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে তাঁকে দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

শিরীন শারমিন ১৯৬৬ সালের ৬ অক্টোবর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা রফিকউল্যাহ চৌধুরী, মা নাইয়ার সুলতানা। তিনি ১৯৮৩ সালে ঢাকা বোর্ড থেকে মানবিক বিভাগে সম্মিলিত মেধাতালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করে এসএসসি এবং ১৯৮৫ সালে একই বোর্ড থেকে মানবিক বিভাগে মেধাতালিকায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে এইচএসসি পাস করেন। এরপর তিনি ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে (সম্মান) এবং ১৯৯০ সালে এলএলএম ডিগ্রি অর্জন করেন। দুটিতেই তিনি প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন। এ ছাড়া তিনি ২০০০ সালে যুক্তরাজ্যের এসেক্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মানবাধিকার ও সাংবিধানিক বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি (পিএইচডি) নেন। শিরীন শারমিন ২০০০ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন ও ঢাকা বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য, ২০০৮ সালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল লিগ্যাল অ্যাডুকেশন উপকমিটির সদস্য এবং ২০০৯ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের সদস্য নির্বাচিত হন।

সূত্রঃ প্রথম আলো, ০১-০৫- ২০১৩ ইং


0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।