সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: নিখোঁজের সংখ্যা বাড়ছে, থানায় স্বজনদের জিডি

নিখোঁজের সংখ্যা বাড়ছে, থানায় স্বজনদের জিডি



সাভারে রানা প্লাজা থেকে উদ্ধার করা ২৯১ মৃতদেহ এখনো শনাক্ত করা যায়নি। অথচ নিখোঁজ ব্যক্তিদের সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়ে গেছে। এই সংখ্যা আরও বাড়ছে। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ এই ভবনধসের ঘটনায় নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনেরা এখনো সাভার ছাড়েননি। নিখোঁজ ব্যক্তিদের তথ্য জানতে তাঁরা ঘটনাস্থলসহ সাভার উপজেলা পরিষদে এসে ভিড় করছেন। নিখোঁজদের সন্ধান পেতে অনেকে সাভার মডেল থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করছেন।


গত ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসে পড়ে। এর পর থেকে স্বজনদের অপেক্ষায় হন্যে হয়ে ঘুরেছেন শত শত লোক। একপর্যায়ে মর্গ-হাসপাতাল আর ঘটনাস্থলেও স্বজনদের খোঁজ না পেয়ে তাঁরা ঠাঁই নেন সাভার অধরচন্দ্র উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে। ওই বিদ্যালয়ের মাঠেই প্রথম লাশ আনা হয়েছিল। বিদ্যালয়ে স্থাপিত জেলা প্রশাসনের অস্থায়ী নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকেই শনাক্ত মৃতদেহগুলো স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। উদ্ধার অভিযান শেষে ১৪ মে অধরচন্দ্র উচ্চবিদ্যালয় থেকে নিয়ন্ত্রণকক্ষ গুটিয়ে ফেলা হয়। এর পর থেকে উপজেলা পরিষদে গিয়ে ভিড় করছেন সবাই। স্বজনদের দাবির মুখে উপজেলা প্রশাসন থেকে নতুন করে নিখোঁজ ব্যক্তিদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করা হয়। সাভার উপজেলা প্রশাসন গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ৩১৬ জন নিখোঁজ ব্যক্তির তালিকা তৈরি করেছে। এই সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। আর গতকাল বুধবার রাত সোয়া নয়টা পর্যন্ত জিডি হয়েছে ৮৭টি। এর মধ্যে গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ৩৪টি জিডি নথিভুক্ত করা হয় সাভার থানায়। নিখোঁজ ব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজনেরা মনে করছেন, থানায় জিডি করলে অন্তত একটি প্রমাণ থাকবে, যা পরবর্তী সময়ে কাজে লাগবে। 

থানার কর্তব্যরত কর্মকর্তা সহকারী উপপরিদর্শক তাহমিনা বেগম বলেন, গত সোমবার থেকে নিখোঁজ ব্যক্তিদের জিডি নথিভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর পর থেকে গতকাল বিকেল পর্যন্ত ৮৭টি জিডি হয়েছে। আরও অনেকেই জিডি করার জন্য থানায় এসে ভিড় করছেন। ধসে পড়া রানা প্লাজার তৃতীয় তলার নিউ ওয়েব বটমস লিমিটেডে কাজ করতেন জামালপুরের ইসলামপুরের সহিজল মিয়ার মেয়ে নার্গিস আক্তার (২০)। ঘটনার পর থেকে তিনি নিখোঁজ রয়েছেন। হাসপাতাল, মর্গ ও অধরচন্দ্র উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে খোঁজাখুঁজি করে মেয়ের মৃতদেহের সন্ধান না পেয়ে তিনি গতকাল সাভার মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (নম্বর-১০৭৬) করেন। সহিজল মিয়া প্রথম আলোকে অভিযোগ করে বলেন, নিখোঁজ ব্যক্তিদের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদাসীন। তাঁদের স্বজনদের বকেয়া বেতনসহ কোনো সাহায্য দেওয়া হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়েই তাঁরা থানায় জিডি করছেন। এতে অন্তত একটি প্রমাণ রয়ে গেল। ময়মনসিংহ সদর উপজেলার গন্ডফা গ্রামের আজিজুল হকের মেয়ে রেখা খাতুনকে না পেয়ে তাঁর মা মর্জিনা বেগম গতকাল সাধারণ ডায়েরি করেন সাভার মডেল থানায়। এর আগে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে নিখোঁজের তালিকায় নাম তুলে আসেন। 

মর্জিনা বেগম বলেন, কত জায়গায় তো নাম লেখাইলাম। ঢাকায় গিয়া রক্তও দিয়া আইলাম। তাঁর পরেও আমার মেয়েরে পাইলাম না। লাশটা পাইলেও মনেরে বুজাইবার পারতাম, তাও পাইলাম না। এহন জিডি করলাম, দেহি পুলিশ কী করে। জয়পুরহাটের নিখোঁজ মাহেদুলের মা ফেরদৌসি বেগম বলেন, থানা-পুলিশ ও উপজেলায় নাম লেহাইয়াও যদি আমার বাবার লাশ না পাই, তয় আমিও সাভারেই লাশ অইয়া যামু। তিনি রানা প্লাজার সামনে গিয়েও ভবনমালিক সোহেল রানাকে অভিশাপ দেন, তাঁর বিচারের দাবি করেন।


গতকাল সন্ধ্যায় নিখোঁজ মেয়ে আসমাকে খুঁজে পেতে থানায় জিডি করতে এসে মা ঝিনাইদহের বেবি খাতুন থানার কর্তব্যরত কর্মকর্তা তাহমিনাকে উদ্দেশ করে বলেন, মা, আমার মরা মেয়াডারে খুঁইজা বাইর করাবার চেষ্টা কইরো। আল্লাহ তোমাগো ভালো করবো। আসমা কাজ করতেন রানা প্লাজার পোশাক কারখানায়। তাঁর ছোট বোন ময়নার স্বামী হান্নানও কাজ করতেন তাঁর সঙ্গে। ১৩ দিন পর হান্নানের গলিত মৃতদেহ পাওয়া গেলেও আসমার কোনো খোঁজ মেলেনি। সাভার উপজেলা প্রশাসন থেকে জানা গেছে, রানা প্লাজার ভবনধসের পর জীবিত ও মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় তিন হাজার ৫৫৩ জনকে। এর মধ্যে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় এক হাজার ১১৫ জনকে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আরও ১২ জন। স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে ৮৩৬টি মৃতদেহ। অবশিষ্ট ২৯১টি মৃতদেহ অশনাক্ত হিসেবে দাফন করা হয়েছে জুরাইন কবরস্থানে। সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান মোল্যা বলেন, উপজেলায় নিখোঁজ ব্যক্তিদের যে তালিকা তৈরি করা হচ্ছে, তা ডিএনএর তালিকার সঙ্গে মিলিয়ে চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করা হবে। চূড়ান্ত তালিকায় যাঁদের নাম থাকবে, তাঁদের পরিবারই সহায়তা পাবে। পোশাকমালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, রানা প্লাজার নিচে শতাধিক দোকান ছিল। দোকানগুলোতে অনেক কর্মচারী থাকতেন। তা ছাড়া সেদিন ভবনের নিচতলায় মিছিলের প্রস্তুতি চলছিল। ভবনধসে তাঁদের অনেকেই মারা গেছেন। তাঁরাই হয়তো নিখোঁজ। শহিদউল্লাহ আজিম আরও বলেন, আমরা শ্রমিকদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা পেয়েছি। বিমা কোম্পানি ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে তালিকাটি করা হয়েছে। তার পরও কোনো শ্রমিক নিখোঁজ থাকলে বিজিএমইএর তরফ থেকে খোঁজখবর নেওয়া হবে। অশনাক্ত সব লাশের ডিএনএ নমুনাও সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে। বিজিএমইএ কর্মকর্তারা সেটিও নজরদারি করছেন।

  
সূত্রঃ প্রথম আলো, ২৩ মে ২০১৩ খ্রিঃ


0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।