বাঙ্গালীদের বিভিন্ন বিষয়ে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় অবদান থাকলেও বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগতিটা খুবই নগন্য। আগ্রহ থাকলেও নানাবিধ সমস্যা আর জটিলতার কারণে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় আমাদের যাত্রায় তেমন সফলতা নেই। তবে কিছু কিছু জায়গায় গর্ব করার মত সাফল্য আছে আমাদের। আজকের লেখাটি সে বিষয় নিয়ে।
উদ্ভিদেরও প্রাণ আছে
উদ্ভিদেরও প্রাণ আছে এই অনবদ্য আবিষ্কার পুরো
বিশ্বকে ধ্যান-ধারণাই পাল্টে দেয়। একজন সফল বাঙালি বিজ্ঞানী হিসেবে নিজেকে নিয়ে
গেছেন সর্বকালের সেরাদের তালিকায়। তার গবেষণার প্রধান দিক ছিল উদ্ভিদ ও তড়িৎ চৌম্বক। তার
আবিষ্কারের মধ্যে উদ্ভিদের
বৃদ্ধিমাপক যন্ত্র ক্রেস্কোগ্রাফ, উদ্ভিদের দেহের উত্তেজনার বেগ নিরুপক সমতল তরুলিপি যন্ত্র রিজোনাস্ট রেকর্ডার অন্যতম।
জগদীশ চন্দ্রের স্ত্রী অবলা বসু
ছিলেন একজন বিদুষী ডাক্তার ও শিক্ষাবিদ। জগদীশ চন্দ্র ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু।
তিনি প্রথম ভারতীয় ব্যক্তি যিনি আমেরিকান প্যাটেন্টের অধিকারী। ২০০৪ সালের এপ্রিলে বিবিসি
রেডিওর জরিপে তিনি সর্বকালের
সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে সপ্তম স্থান অধিকার করেন।
তিনিই প্রথম পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ
করেছিলেন, উদ্ভিদ ও প্রাণী
জীবনের মধ্যে অনেক
সাদৃশ্য রয়েছে। মার্কনি আধুনিক ছোট বা শর্ট তরঙ্গ মাপের বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে দূরে বেতার সংকেত
পাঠাতে সফল হয়েছিলেন যার ফলশ্রুতি হলো রেডিও। কিন্তু জগদীশ চন্দ্র কাজ করেছিলেন অতিক্ষুদ্র তথা
মাইক্রো বেতার তরঙ্গ নিয়ে যার
প্রয়োগ ঘটেছে আধুনিক টেলিভিশন এবং রাডার যোগাযোগের ক্ষেত্রে। জগদীশ চন্দ্র বসু বাংলাদেশের ময়মনসিংহ
শহরে ১৮৫৮ সালের ৩০ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবারের প্রকৃত বাসস্থান ছিল বর্তমান বাংলাদেশের মুন্সীগঞ্জ জেলায়। জগদীশ
চন্দ্রের প্রথম স্কুল ছিল ময়মনসিংহ জিলা স্কুল। তিনি চিকিৎসা বিজ্ঞান পাঠের জন্যই লন্ডনের উদ্দেশে
পাড়ি জমান ১৮৮০ সালে। কিন্তু
অসুস্থতার কারণে বেশিদিন পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি। অচিরেই চিকিৎসা বিজ্ঞান পাঠ ছেড়ে দিয়ে
কেমব্রিজের ক্রাইস্ট কলেজে ভর্তি হন। এখান থেকে ট্রাইপস পাস করেন। দেশে ফিরে আসেন ১৮৮৫ সালে। এসে
প্রেসিডেন্সি কলেজে
পদার্থবিজ্ঞানের অস্থায়ী অধ্যাপক পদে যোগ দেন। তার গবেষণার সূত্রপাতও এখান থেকেই। তার মহান বৈজ্ঞানিক
গবেষণাসমূহের সূতিকাগার হিসেবে এই কলেজকে আখ্যায়িত করা যায়। প্রতিদিন নিয়মিত ৪
ঘণ্টা শিক্ষকতার পর যেটুকু সময় পেতেন তখন তিনি এই গবেষণার কাজ করতেন। তার উপর প্রেসিডেন্সি কলেজে
কোনো উন্নতমানের
গবেষণাগার ছিল না, অর্থ সংকটও ছিল
প্রকট। তার এই গবেষণা কর্মগুলোর গুরুত্ব বিবেচনা করেই ইংল্যান্ডের লিভারপুলে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশন তাকে আমন্ত্রণ
জানিয়েছিল। এই বক্তৃতার সাফল্যের পর তিনি বহু স্থান থেকে বক্তৃতার নিমন্ত্রণ পান। এর মধ্যে ছিল
রয়েল ইনস্টিটিউশন, ফ্রান্স এবং
জার্মানি। এই বক্তৃতাটি আনুষ্ঠানিকভাবে 'ফ্রাইডে ইভনিং ডিসকোর্স' নামে সুপরিচিত ছিল। এই ডিসকোর্সগুলোতে আমন্ত্রিত হতেন একেবারে প্রথম সারির কোনো আবিষ্কারক। সে
হিসেবে এটি জগদীশ চন্দ্রের জন্য একটি দুর্লভ সম্মাননা ছিল। ১৮৯৮ সালের জানুয়ারি ১৯ তারিখে
প্রদত্ত তার এই বক্তৃতার বিষয় ছিল
'অন দ্য পোলারাইজেশন অফ ইলেকট্রিক রেইস'। এই বক্তৃতার সফলতা ছিল সবচেয়ে বেশি। ধীরে ধীরে তার
নাম ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে।
সংকর ধাতুর উদ্ভাবন
আধুনিক সময়ে সংকর ধাতুর ব্যবহার অনেক বেড়েছে।
শিল্প কারখানায় এখন সংকর ধাতুর ব্যবহার ছাড়া চিন্তাই করা যায় না। এই সংকর ধাতুর আবিষ্কার
আবদুস সাত্তার খান। তিনি
বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত মহাকাশ গবেষকও বটে। কর্মজীবনে তিনি নাসা, ইউনাইটেড টেকনোলজিসের প্রাট অ্যান্ড হুইটনি এবং অ্যালস্টমে (সুইজারল্যান্ড)
কাজ করেছেন।
আবদুস সাত্তার ১৯৪১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগ থেকে ১৯৬২ সালে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৬৩ সালে স্নাতকোত্তর
ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। তিনি নাসা
ইউনাইটেড টেকনোলজিস এবং অ্যালস্টমে কাজ করার সময় ৪০টিরও বেশি সংকর ধাতু উদ্ভাবন করেছেন। এই সংকর
ধাতুগুলো ইঞ্জিনকে আরও হালকা করেছে, যার ফলে উড়োজাহাজের পক্ষে আরও দ্রুত উড্ডয়ন সম্ভব হয়েছে এবং ট্রেনকে আরও গতিশীল করেছে। তার উদ্ভাবিত সংকর
ধাতুগুলো এফ-১৬ ও এফ-১৭ যুদ্ধবিমানের জ্বালানি সাশ্রয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ১৯৯৩ সালে তিনি 'প্রাট অ্যান্ড
হুইটনি'র বিশেষ
অ্যাওয়ার্ড পান। পেশাদার বিজ্ঞানী থেকে অবসর নেওয়ার পরও তার বিজ্ঞানের সেবা থেমে
থাকেনি। এ ছাড়া তিনি
কার্বন ন্যানো
টেকনোলজি-সম্পর্কিত বস্তুগত বিজ্ঞান ও জৈব রাসায়নিক প্রযুক্তির প্রয়োগের ওপর একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান
প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আর এ জন্যই তার নাম বিশেষভাবে উচ্চারিত হয় আজো।
পাটের জন্মরহস্য
এই সময়ের সেরা আবিষ্কারের মধ্যে বিশেষভাবে
উল্লেখযোগ্য দেশি পাটের জন্ম রহস্য আবিষ্কার। সারা বিশ্বেই এই আবিষ্কারের খবর ফলাও করে প্রচার
করে আন্তর্জাতিক
গণমাধ্যমগুলো। এই আবিষ্কারের ফলে দেশি পাট আরও উন্নত হবে। বাংলাদেশের সেরা সম্পদ হিসেবে পাটের নামও
চলে আসে। পাটের জেনমের পূর্ণাঙ্গ তথ্য এর ফলে মানুষের হাতে এলো। বাংলাদেশ পাট গবেষণা
ইনস্টিটিউটের গবেষক বিজ্ঞানী ড. মাকসুদুর রহমান এই আবিষ্কার করেন। এর আগে বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা তোষা পাটের জীবন রহস্য
উন্মোচন করেছিলেন। বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত জাতের দেশি পাটের উদ্ভাবন, উৎপাদন ও চাষে
প্রতিবন্ধকতা দূর করার পথে বাংলাদেশ এখন একক নেতৃত্বে বলে জানিয়েছেন পাটের জীবন রহস্য
আবিষ্কারকেরা।
পাটের জীবন রহস্য উদঘাটনকারী বিজ্ঞানীরা
এর বেশ কিছু সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন। সবচেয়ে ভালো জাতের পাটের আঁশ থেকে কাগজ ও কাপড়
থেকে শুরু করে গাড়ির ইন্টেরিয়র ডেকোরেশনের মতো আধুনিক ও বহুমাত্রিক পণ্য তৈরি সম্ভব হবে।
তাই পাটের জীবন রহস্যের
মেধাস্বত্বের অধিকার পেতে যাওয়া বাংলাদেশ আগামীতে বিশ্ব নেতৃত্বে থাকা সম্ভব। গোড়া পচা রোগের কারণে সবচেয়ে
ভালো মানের দেশি সাদা পাট চাষের প্রতিবন্ধকতা শীঘ্রই দূর হবে। শুধু বস্তা বা ব্যাগ তৈরি নয়, মসৃণ কাপড়, কাগজ, গাড়ির ভেতরের
নকসায় ব্যবহারের মতো বহুমাত্রিক ব্যবহারও বৃদ্ধি পাবে। এরই মধ্যে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক
মেধাস্বত্ব প্রদানকারী সংস্থা ওয়াইপোতে আবেদন করেছে বাংলাদেশ। আগামী দেড় বছরের
মধ্যে পাটের জীবন রহস্য উন্মোচন মেধাস্বত্বের একক অধিকার পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
স্বাধীনতার-পরবর্তী সময়ে মূলত বস্তা বা ব্যাগ তৈরির কাঁচামাল
হিসেবেই পাট দেশের ৪০ ভাগ রাজস্ব আয় করে দেশের প্রধান অর্থকরী ফসলের স্বীকৃতি পেয়েছিল পাট।
পাট নিয়ে বাংলাদেশে গবেষণার
কথা আর অজানা নেই কারও। সারা বিশ্বেই এই গবেষণা সাফল্য ছড়িয়ে গিয়েছে। বিশেষ করে বিগত দুই বছরে
তোষা পাট ও পাটের গোড়া পচা রোগ ফাংগাসের জীবন রহস্য উদঘাটন করেছেন। বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা
তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সবাইকে।
বিজ্ঞানী ড. মাকসুদুর রহমানের মতে, খুব শীঘ্রই মাঠ পর্যায়ে এর সুফল পাওয়া যাবে। বাংলাদেশের এই পাট
নিয়ে গবেষণার সাফল্য এসেছে মূলত দীর্ঘদিনের কর্মপরিকল্পনার পথ। পাটের জন্ম রহস্য যেসব
ফাংগাসের ফলে পাটের গোড়া পচা রোগ হতো সেটা অনেকটাই রুখে দেওয়া যাবে। পাটের ফলন বৃদ্ধির পাশাপাশি পাটের ব্যবহার নিয়ে আরও
বৈচিত্র্যময় বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা সমন্বয় হলে এই আবিষ্কারের সুফল পাওয়া যাবে।
ড. মুহম্মদ কুদরাত-ই-খুদা
ড. কুদরাত-ই-খুদা শুধু একজন বাংলাদেশি
রসায়নবিদই ছিলেন না, তিনি গ্রন্থকার এবং শিক্ষাবিদ হিসেবেও সমধিক পরিচিত
ছিলেন। তিনি ১৯০০ সালের ডিসেম্বর ১ পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের মারগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ড. কুদরাত-ই-খুদার শিক্ষাজীবন শুরু হয় মারগ্রাম এমই স্কুলে।
১৯১৮ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন তিনি। তারপর তিনি ভর্তি হন বিখ্যাত প্রেসিডেন্সি কলেজে।
সেখান থেকেই তিনি ১৯২৫ সালে রসায়নে
প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে এমএসসি পাস করেন। পাস করার পর তিনি উচ্চশিক্ষার উদ্দেশে ইংল্যান্ড পাড়ি
জমান। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ১৯২৯ সালে রসায়নে ডিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫২-৫৫ সাল
পর্যন্ত মাধ্যমিক শিক্ষা
বোর্ডে চেয়ারম্যান এবং ১৯৫৫ থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান বিজ্ঞান ও শিল্প
গবেষণাগারসমূহের পরিচালক ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর দেশের শিক্ষাব্যবস্থা
পুনর্গঠনের জন্য যে শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়। ড. কুদরাত-ই-খুদা তার সভাপতি নির্বাচিত হন। তার
নেতৃত্বে বাংলাদেশ শিক্ষা
কমিশন রিপোর্ট প্রণীত হয়। বিজ্ঞানী হিসেবে তার ও সহকর্মীদের ১৮টি আবিষ্কারের পেটেন্ট
রয়েছে, যার মধ্যে ৯টি
পাটসংক্রান্ত। ১৯৭২ সালের জুলাই ২৬
গঠিত 'জাতীয় শিক্ষা
কমিশন' প্রণীত
সুপারিশমালা। এই কমিশনের সভাপতি
ছিলেন ড. কুদরাত-এ-খুদা। তার নামানুসারে পরবর্তীকালে রিপোর্টটির নাম রাখা হয় 'ড. কুদরাত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট'।
কৃত্রিম ফুসফুস
আয়েশা আরেফিন টুম্পা কৃত্রিম ফুসফুস আবিষ্কার
করে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন বিশ্ববাসীর কাছে। তিনি ন্যানো-প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি
করেছেন কৃত্রিম মানব ফুসফুস।
টুম্পা বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অব নিউ মেক্সিকোতে ন্যানো-সায়েন্সের ওপর ডক্টরেট করছেন। একই
সঙ্গে লস আলামস ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিতে চলছে তার গবেষণা। আয়েশা তার ক্যারিয়ার শুরু করেন লস আলামস ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির বায়ো-সিকিউরিটি
বিভাগে। এর পরই ওই ল্যাবের ভারতীয় গবেষক প্রখ্যাত টক্সিকালজিস্ট রাশি আইয়ার আয়েশাকে
অপ্টোজেনিক্স সংক্রান্ত গবেষণা কাজের জন্য নিয়োগ দেন।
প্টোজেনিকস হচ্ছে জিনবিদ্যা ও প্রোটিন প্রকৌশল (ইঞ্জিনিয়ারিং) এর মাধ্যমে
জীবন্ত টিস্যুর মাঝে ঘটতে থাকা বিভিন্ন স্নায়ুবিক কাজ (Neuron Activitz) নিয়ন্ত্রণ করা।
এই প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃত্রিম অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও কৃত্রিম টিস্যু বা কলা তৈরি করা সম্ভব। আয়েশা ও রাশি আয়ারের দলের অন্যান্য সদস্যরা
বিভিন্ন জীবাণু দ্বারা সৃষ্ট বিষক্রিয়া, রোগ ও কৃত্রিম অঙ্গ সংস্থাপনের জন্য সম্পূর্ণ নতুন
প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেছেন। তারা একটি কৃত্রিম মানব ফুসফুস তৈরি করেন। আয়েশা একই সঙ্গে বিভিন্ন স্নায়ুবিক ব্যাধি ও মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ
নিয়েও গবেষণা করছেন। বাংলাদেশি এই বিজ্ঞানী আয়েশা আরেফিন টুম্পা কৃত্রিম ফুসফুস আবিষ্কারের
মাধ্যমে চিকিৎসাক্ষেত্রে
নতুন সম্ভাবনার কথা জানান দিয়েছেন।
বাংলাদেশি চন্দ্রবোট
বাংলাদেশি চন্দ্রবোট নাসার প্রথম পছন্দ
হওয়ার পরই সারা দুনিয়ায় বাংলাদেশি এই প্রযুক্তি নিয়ে সবার তুমুল আগ্রহ সৃষ্টি হয়। তিন শিক্ষক এবং আট শিক্ষার্থী মিলেই এই
চন্দ্রবোট রোবটটি তৈরি করেছেন এ দেশে রোবট নির্মাণই একটি বিশাল ব্যাপার। আবার সেখানকার নির্মিত
রোবট চাঁদে যাওয়ার কথা।
অনেকেই হয়তো ভাবেন না। কিন্তু এটাই সত্যি। এই রোবট 'চন্দ্রবোট' বর্তমানে ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস
সেন্টারে গেছে।
নাসা আয়োজিত এ প্রতিযোগিতায় টিকলে এটা চাঁদে যাবে কিছুদিন আগে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
একটি আমন্ত্রণ পায়
নাসার কাছ থেকে। তা হলো অসমান চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে ধুলোমাটি সংগ্রহের রোবট তৈরির প্রতিযোগিতায় অংশ
নেওয়ার। সেই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার ল্যাবে দীর্ঘ সাত মাসের
পরিশ্রমে বিজ্ঞানীরা তৈরি
করেছেন রোবটটি। রোবটটির নাম চন্দ্রবোট। নাসার আমন্ত্রণে এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে বিশ্বের নামকরা
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে বাছাই করা ৪৬টি প্রকল্প। এর মধ্যে বাংলাদেশের একমাত্র প্রকল্প 'চন্দ্রবোট'।
সোলার এনার্জি সেল
বিশ্বের সবচেয়ে কার্যকর সোলার এনার্জি সেলস
উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে মেরিল্যান্ডের কপিন স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এবং গবেষক বাংলাদেশি
বিজ্ঞানী ড. জামালউদ্দিন
ইতিহাস গড়েছেন। কপিন স্টেট ইউনিভার্সিটির ন্যাচারাল সায়েন্সের সহকারী অধ্যাপক এবং ইউনিভার্সিটির ন্যানো-টেকনোলজি
রিচার্স সেন্টারের গবেষক ড. জামালউদ্দিন এবং তার পাঁচ আন্ডারগ্র্যাজুয়েট শিক্ষানবিস গবেষকরা স্পেকট্রোল্যাবের সোলার সেলের তুলনায়
প্রায় ৪ পারসেন্ট অধিক কার্যকর সোলার এনার্জি সেল উদ্ভাবন করলেন।
প্রসঙ্গত, এ মুহূর্তে
বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সোলার এনার্জি সেল তৈরির শীর্ষস্থানটি দখলে রেখেছে বিখ্যাত
প্রতিষ্ঠান স্পেকট্রোল্যাব। ২০০৬
সাল থেকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সোলার সেল তৈরির সুনামটিও তাদের। নিজের এই উদ্ভাবনের
বিষয়ে প্রতিক্রিয়াতে ড. জামালউদ্দিন জানান, এটা সত্যিই রোমাঞ্চকর এবং আশাব্যঞ্জক একটি বিষয় যা আরও অধিক ন্যানো-টেকনোলজির ওপর গবেষণাকল্পে আমাদের
আরও উৎসাহ জোগাবে। ড. জামালউদ্দিন এবং তার গ্রুপ সোলার সেল থেকে শতকরা ৪৩.৪ পুনঃব্যবহারযোগ্য
এনার্জি উৎপাদনে সক্ষমতা
অর্জন করেছে যা বিশ্বে এই উৎপাদনের সর্বোচ্চ মাত্রা। চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জের মরহুম আবদুল
জলিল ও বেগম ফজিলাতুন্নেছার পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে দ্বিতীয় সন্তান ড. জামাল।
পি সি রায়
নিজের বাসভবনে দেশীয় ভেষজ নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে
তিনি তার গবেষণাকর্ম আরম্ভ করেন। তার এই গবেষণাস্থল থেকেই পরবর্তীকালে বেঙ্গল কেমিক্যাল
কারখানার সৃষ্টি হয়। যা ভারতবর্ষের
শিল্পায়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। তাই বলা যায় বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ভারতীয়
উপমহাদেশের শিল্পায়নে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য। ১৮৯৫ সালে তিনি মারকিউরাস নাইট্রাইট আবিষ্কার
করেন যা বিশ্বব্যাপী আলেড়ন
সৃষ্টি করে। এটি তার অন্যতম প্রধান আবিষ্কার। তিনি তার সমগ্র জীবনে মোট ১২টি যৌগিক লবণ এবং ৫টি
থায়োএস্টার আবিষ্কার করেন। পি সি রায় বাংলাদেশের খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার রাডুলি গ্রামে
আগস্ট ২,১৮৬১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই
প্রফুল্লচন্দ্র অত্যন্ত তুখোড় এবং প্রত্যুৎপন্নমতি ছিলেন। তিনি জগদীশ চন্দ্র বসুর সহকর্মী
ছিলেন।
কলেরার কারণ আবিষ্কার
চিকিৎসা বিজ্ঞানে কলেরার কারণ আবিষ্কার বাঙালি
বিজ্ঞানীদের অন্যতম সেরা আবিষ্কার। এই রোগের কারণে মানুষের মৃত্যুর হার অনেক কমিয়ে আনতে এই
আবিষ্কার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত
করেছে। ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থেকে কীভাবে মারাত্দক কলেরা হয় তার কারণ আবিষ্কার করেন
বাংলাদেশের এক বিজ্ঞানী। আন্তর্জাতিক কলেরা রোগ গবেষণা কেন্দ্র বা আইসিডিডিআরবির আণবিক জেনেটিক্স
বিভাগের প্রধান ডাক্তার শাহ এম
ফারুক ও তার গবেষণা দল এ আবিষ্কার করেছেন। যখন বিশ্বব্যাপী কলেরার কারণ হিসেবে নতুন
ধরনের ব্যাকটেরিয়া দায়ী বলে ধারণা করা হচ্ছে, তখন গবেষক দলটি এ সাফল্য অর্জন করল। তারা বলছে, 'ভিবরিও' নামে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে মানুষ
আক্রান্ত হয় এবং অসুস্থ হয়ে পড়ে।
এ গবেষণায় দেখানো হয়েছে কীভাবে অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া ভিবিরিওর
সংস্পর্শে এসে একে আরও কার্যকরী
বা শক্তিশালী করে তোলে। ডাক্তার ফারুক ও তার দলের এ আবিষ্কারের খবর আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানবিষয়ক
জার্নাল 'নেচার' এ প্রকাশিত হয়েছে। ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থেকে কীভাবে
কলেরা ছড়ায় সেটা আবিষ্কারের পর এই বিজ্ঞানীর নতুন প্রত্যয় এই রোগকে চিরতরে পৃথিবী থেকে
বিদায় দেওয়া। কলেরার কারণ
আবিষ্কারের ফলে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া মোকাবিলায় নতুন ওষুধ আবিষ্কারের ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে যাওয়া
হলো। তার গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে কলেরা প্রতিরোধক ওষুধ আবিষ্কারের দিকে মনোযোগী হচ্ছে। এই
ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ থেকে
বাঁচতে আরও কার্যকরী ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।
সত্যেন্দ্রনাথ বসু
সত্যেন্দ্রনাথ বসু বাঙালি বিজ্ঞানীদের অন্যতম একজন।
তিনি সৃষ্টির রহস্য নিয়ে ব্যাপক আলোচিত হিগস কণার প্রাথমিক ধারণা দিয়েছিলেন, এটা হয়তো অনেকেই
জানেন না। বাঙালি বিজ্ঞানী
সত্যেন্দ্রনাথ বসু সুইজারল্যান্ডের ইউরোপিয়ান কাউন্সিল ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চের (সার্ন) গবেষকেরা ৪
জুলাই ঈশ্বর কণা বা হিগস-বোসন কণার অনুরূপ একটি কণার আবিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছেন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে কেবল ১৯৬০
সালে হিগস -বোসন কণার ধারণার প্রবর্তক পিটার হিগসকে নিয়ে প্রশংসা করা হলেও অনেকেই বলে
থাকেন সত্যেন্দ্রনাথ
বসুর সেই কণা মূলত ঈশ্বর কণার প্রাথমিক ধারণা দেয়।
সোলার হেলিকপ্টার
বিশ্বের প্রথম সোলার হেলিকপ্টার তৈরি করেন
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিজ্ঞানী ড. হাসান শহীদ। তার তত্ত্বাবধানে কুইনমেরি
ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা এমন হেলিকপ্টার উদ্ভাবন করেছেন যা শুধু সৌরশক্তি দিয়ে চলবে।
বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় আবারও
বাংলাদেশের নাম। বিশ্বের প্রথম সোলার হেলিকপ্টার তৈরির কৃতিত্ব এই প্রবাসী বাংলাদেশির। কুইনমেরি
ইউনিভাসির্টি অব লন্ডনের স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ার, ম্যাথ অ্যান্ড সায়েন্সের সহকারী অধ্যাপক তিনি। সুইজারল্যান্ডের সোলার ইমপালস এবং নাসার
সান সিকার, পাথফাইন্ডার ও
হেলিওসসহ সোলার প্যানেলের
অনেক প্রজেক্ট থাকলেও বাঙালি ডক্টর হাসানের হাত ধরেই বিশ্বের প্রথম সোলার হেলিকপ্টার। বিশ্বে
বিকল্প জ্বালানি হিসেবে সোলার প্যানেল ব্যবহার হলেও সোলার হেলিকপ্টারটির উদ্ভাবন তৈরি
করেছে নতুন ইতিহাস।
গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ যন্ত্র
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ময়মনসিংহের
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) উদ্ভাবিত
গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ যন্ত্রের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। সম্প্রতি সেনেগালে অনুষ্ঠিত 'ভবিষ্যতের কৃষি প্রযুক্তি বাজার' শীর্ষক প্রদর্শনীতে বাংলাদেশে উদ্ভাবিত
উন্নয়নশীল দেশের উপযোগী ইনজেকটর পদ্ধতিতে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগের যন্ত্রটি অত্যন্ত
মনোযোগ দিয়ে দেখেন বারাক ওবামা।
তিনি যন্ত্রটির কাজের পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত হন এবং
যন্ত্রটির ভূয়সী প্রশংসা করেন।
গুটি ইউরিয়া যন্ত্রের উদ্ভাবক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রকৌশল ও কারিগরি অনুষদের গবেষক
অধ্যাপক ড. এটিএম জিয়াউদ্দিন গতকাল ওই তথ্য জানান। আফ্রিকা সফরের অংশ হিসেবে গত জুনের শেষ দিকে
দক্ষিণ আফ্রিকা ও সেনেগালে
গিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। সে সময় গত ২৮ জুন ইন্টারন্যাশনাল ফার্টিলাইজার
ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (আইএফডিসি) ও ইউএসএআইডির আয়োজনে সেনেগালে অনুষ্ঠিত 'ফিড দ্য ফিউচার ইভেন্ট' শীর্ষক ওই কৃষি উপকরণ যন্ত্রপাতিবিষয়ক প্রদর্শনী
ঘুরে দেখেন তিনি। সেখানেই বাংলাদেশ থেকে সংগ্রহ করা গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ যন্ত্রটি প্রদর্শন করা
হয়। আইএফডিসির অর্থায়নে বাংলাদেশ
কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিবিড় গবেষণার মাধ্যমে এ যন্ত্রটি তৈরি করেন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি
প্রকৌশল ও কারিগরি অনুষদের গবেষক ড. এটিএম জিয়াউদ্দিন। এ গবেষণায় তার সঙ্গে আরও ছিলেন আইএফডিসির
বিশেষজ্ঞ ড. ওহাব। তাদের
ডিজাইন করা যন্ত্রটি একটি ওয়ার্কশপে তৈরি করার পর এটি রংপুর ফাউন্ড লিমিটেডকে (আরএফএল) বাণিজ্যিকভাবে
তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয় সারা দেশে বিপণনের জন্য।
কৃষ্ণগহ্বরের নতুন রহস্য
মহাবিশ্বের সৃষ্টির রহস্যের পেছনে যেসব বিচিত্র বিষয়
রয়েছে তার মধ্যে কৃষ্ণগহ্বর একটি। কলকাতার দুই বিজ্ঞানীর গবেষণায় কৃষ্ণগহ্বরের ধারণায়
নতুনত্ব এসেছে। ক্যালকাটা
টেলিগ্রাফের খবরে এ তথ্য প্রথম প্রকাশ করে। ইন্দ্রানী ব্যানার্জি ও বনিব্রত মুখোপাধ্যায় নামের ওই দুই
বিজ্ঞানী ব্যাঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান সায়েন্সে ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সে গবেষণারত রয়েছেন। তারা
কৃষ্ণগহ্বরের ঘূর্ণন ও ভরের
মধ্যে সম্পর্ক আবিষ্কার করেন। তাদের গবেষণায় উঠে এসেছে, ভর বেশি হলে গতি এবং ঘূর্ণনও বেশি হয়। মূলত
তাদের গবেষণায় উঠে এসেছে, ভর ও ঘূর্ণনের মধ্যে সম্পর্ক। গবেষণায় তারা
দেখিয়েছেন ভর ও ঘূর্ণন একে অন্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, আর এ ভর দিয়ে ঘূর্ণন গণনা করা সম্ভব।
তানভীর আহমেদ
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।