বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী প্রায় ৩০০
মিলিয়ন মানুষ হাঁপানি রোগে আক্রান্ত। আক্রান্ত রোগীর শ্বাসপথ দেহের ভেতরের বা
বাইরের অ্যালার্জেন বা অ্যালার্জেনসম পদার্থের প্রতি অত্যধিক মাত্রায় সংবেদনশীলতা
প্রদর্শনপূর্বক অনেক সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে এবং শ্বাসপথের সঙ্কোচনের সময়ের ব্যাপ্তি
হয় স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি। ফলে আক্রান্ত রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাসের সময়
শ্বাসপথ দিয়ে বায়ুর স্বাভাবিক আসা-যাওয়া ব্যাহত হয়। পরিণতিতে আক্রান্ত রোগী
কাশি, শ্বাসকষ্ট, স্বশব্দে কষ্টসহকারে শ্বাস নেয়া, বুকে চাপসহ নানা উপসর্গে ভুগে থাকেন। মূলত হাঁপানি
হলো শ্বাসতন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহজনিত রোগ। নিম্নে হাঁপানি রোগীদের জন্য
হাঁপানির যথাযথ নিয়ন্ত্রণকল্পে ১০টি সতর্কতামূলক পরামর্শ দেয়া হলো :
১. ধুলাবালি ও ঠাণ্ডা এড়িয়ে
চলুন: ধুলাবালি ও ঠাণ্ডা হাঁপানি
রোগের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে স্বীকৃত। কাজেই হাঁপানি রোগীরা রাস্তাঘাটে চলার
সময় মুখে মাস্ক ব্যবহার করুন। সেই সাথে ঠাণ্ডা এড়িয়ে চলার পাশাপাশি যত
তাড়াতাড়ি সম্ভব সর্দিকাশির যথাযথ চিকিৎসা নিন।
২. ধূমপান বিষপান: ধূমপান বিভিন্ন মাত্রায় ও সময়ব্যাপী হাঁপানির
প্রকোপ বাড়িয়ে দেয়। কাজেই আজই ধূমপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করুন। হয়ে উঠুন ‘আমরা ধূমপান নিবারণ করি’র একজন সক্রিয় সদস্য।
৩. অ্যালার্জির সাথে আড়ি: অ্যালার্জির উদ্রেককারী বিভিন্ন খাবার যেমন : গরুর
গোশত, চিংড়ি মাছ, ইলিশ মাছ, পুঁই শাক, মিষ্টি
কুমড়া, বেগুনসহ আরো যেসব খাবার আপনার
শরীরে অ্যালার্জির উদ্রেক করে কিংবা শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায় তা এড়িয়ে চলুন। সেই
সাথে বাদ দিন ঠাণ্ডার উদ্রেককারী আইসক্রিমসহ বিভিন্ন হিম শীতল খাবার। এতে হাঁপানি
রোগ অনেকটাই আপনার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
৪. বিষণ্ণতার ভূতটাকে আজই
রুখুন: আজই মাথা থেকে তাড়িয়ে দিন
বিষণœতা নামক ভূতটাকে।
আত্মবিশ্বাসের বলে বলিয়ান হয়ে জয় করুন দুশ্চিন্তা নামক শত্রুটাকে। কেননা
অতিরিক্ত মানসিক চাপজনিত বিষণœতা
আপনার হাঁপানির লক্ষণ ও মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক গুণ বেশি বাড়িয়ে দিতে
পারে।
৫. পরিচ্ছন্নতার শুভ্রতা বিরাজ
করুক আপনার বাসস্থান ও চার পাশের পরিবেশে: আপনার ঘরের বিছানাপত্র, কাঁথা, বালিশ কিংবা ম্যাটে অবস্থানকারী ধুলাবালি বা মাইট
নামক অতি ক্ষুদ্র কীট কিংবা বিভিন্ন পোষাপ্রাণি যেমন : কুকুর, বিড়াল, খরগোশ প্রভৃতির লোম আপনার হাঁপানির প্রকোপ বাড়িয়ে দিতে পারে। এ ছাড়া
আপনার বাড়ির ভেতর ও বাইরের বিভিন্ন ফাঙ্গাল স্পোর ও ফুলের রেণু আপনার হাঁপানির
অন্যতম কারণ হতে পারে। কাজেই আপনার ঘর ও আসবাবপত্র নিয়মিত পরিষ্কার করার পাশাপাশি
বেডশিট, বালিশ প্রভৃতি কাপড়ের পুরু
কভার দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। এ ছাড়া বাইরে চলাচলের সময় মুখে মাস্ক ব্যবহারের
মাধ্যমে ধুলাবালি ও উপরোক্ত হাঁপানির উদ্রেককারীর নানা পদার্থ এড়িয়ে চলার
মাধ্যমে আপনার হাঁপানি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
৬. বাদ দিন অভিশপ্ত মদ্যপান: শত রোগের জননী আর বছরান্তে মিলিয়ন সংখ্যক
মানুষের জীবননাশি ঘাতক মদ্যপান এড়িয়ে চলুন। কারণ মদ্যপান যে মাত্রায়ই করা হোক
না কেন তা আপনার হাঁপানি কম-বেশি বাড়িয়ে দিতে পারে।
৭. পরিশ্রম হবে সাধ্যের মধ্যে: অতিরিক্ত পরিশ্রম কিংবা ভারী কাজ কিংবা ব্যায়াম
আপনার হাঁপানি বাড়িয়ে দিতে পারে। কাজেই আপনার কৃত কাজের মাত্রা ও ব্যায়াম হতে
হবে শারীরিক সক্ষমতার মধ্যে। আর যদি অতিরিক্ত পরিশ্রম বা কাজ করতেই হয় তবে সে
ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক নির্দিষ্ট ওষুধ সেবনের পর কাজে নেমে পড়–ন। অন্যথায় তা এড়িয়ে চলুন।
৮. গর্ভাবস্থায় হাঁপানি: গর্ভাবস্থায় হাঁপানির নিয়ন্ত্রণে অভিজ্ঞ
চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক নির্দিষ্ট ওষুধ সেবন করুন। কেননা উপযুক্ত চিকিৎসকের
পরামর্শ ব্যতিরেকে হাঁপানির চিকিৎসায় কখনো কবিরাজ বা হাতুড়ে ডাক্তারদের দেয়া
ওষুধ না নেয়াই উত্তম। কারণ গর্ভাবস্থায় হাঁপানির যথাযথ চিকিৎসা না নিলে
অক্সিজেনের অভাবজনিত কারণে রোগীর গর্ভস্থ সন্তানের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হতে
পারে।
৯. হাতের নাগালে মধ্যে থাকতে
হবে নিয়মিত ও পর্যাপ্ত ওষুধের সরবরাহ: যদিও
যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে হাঁপানি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব, তথাপি যেকোনো সময়ে হাঁপানির প্রকোপ নানা কারণে
যেমন : ওষুধের অনিয়মিত ব্যবহার, নানা
রোগ, হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে যথাযথ
পরামর্শ না গ্রহণ কিংবা ওষুধের ভুল ব্যবহার প্রভৃতি কারণে বেড়ে যেতে পারে। তাই
তাৎক্ষণিক হাঁপানি নিয়ন্ত্রণকল্পে চাই চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক হাতের নাগালের
মধ্যে পর্যাপ্ত ওষুধ যেমন : ব্রঙ্কোডাইলেটর, স্টেরয়েডসহ নানা ওষুধের সরবরাহ।
১০. বেড়ে উঠুক ডাক্তার-রোগীর
মধ্যকার সম্পর্কের গাঢ়তা: হাঁপানি
চিকিৎসা উপযুক্ত চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক চিকিৎসা নিতে হবে এবং সেই সাথে এর
নিয়ন্ত্রণকল্পে চিকিৎসক কর্তৃক নির্দেশিত বিভিন্ন উপদেশ মেনে চলার কোনো বিকল্প
নেই। প্রায়োজনে চিকিৎসক কর্তৃক প্রদত্ত ওষুধে যদি আপনার হাঁপানি যথাযথ
নিয়ন্ত্রণে না আসে তা হলে আবার আপনার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন।
এছাড়া আরো পড়ুন
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।