শরীরের অন্য জায়গার মতো
যকৃতেও ফোড়া হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানে একে বলে লিভার অ্যাবসেস। ব্যাকটেরিয়া বা পরজীবীর সংক্রমণে যকৃতের কোনো একটি এলাকা আক্রান্ত হয়ে সেখানে যদি পুঁজ জমে, তবেই তাকে
অ্যাবসেস বলা হয়। আর আশ্চর্য হলেও সত্যি যে
দুনিয়াজুড়ে এই যকৃতের ফোড়ার অন্যতম কারণ হলো পরজীবী বা কৃমি সংক্রমণ।
কত রকমের ফোড়া
যকৃতের ফোড়া সাধারণত দুই
ধরনের—পরজীবী সংক্রমণজনিত বা অ্যামিবিক অ্যাবসেস
এবং ব্যাকটেরিয়াজনিত বা পায়োজেনিক অ্যাবসেস।
অ্যান্টামিবা হিস্টোলাইটিকা নামের পরজীবী বা কৃমি সংক্রমণ যেসব এলাকায় বেশি হয়, সেই এলাকার বসবাসকারী বা
ভ্রমণকারীদের পেটে এই পরজীবী দূষিত পানি ও
খাবারের মাধ্যমে প্রবেশ করে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই সংক্রমণ মৃদু ডায়রিয়া বা রক্ত আমাশয় ছাড়া কিছুই করে না। কিন্তু কখনো কখনো
অন্ত্রের দেয়াল ভেদ করে এটি রক্তে ছড়িয়ে পড়ে ও
রক্তের মাধ্যমে যকৃতে পৌঁছে বাসা বাঁধে। ক্রমে সেখানে
কলা ভেদ করে কালচে বা খয়েরি পুঁজের সৃষ্টি করে। ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ সাধারণত
দেহের অন্য কোনো স্থান থেকে রক্তে বাহিত হয়ে আসে। যেমন পিত্তথলিতে সংক্রমণ বা পেটের অন্য কোনো অঙ্গ থেকে জীবাণু আসে, কখনো যকৃতের কোনো সিস্ট বা টিউমারে সংক্রমণ বাসা
বাঁধে। একে বলা হয় পায়োজেনিক লিভার অ্যাবসেস।
কীভাবে বুঝবেন?
জ্বর বিশেষ করে কাঁপুনি
দিয়ে জ্বর,
খাবারে অরুচি, ওজন হ্রাসের সঙ্গে পেটের ওপরে ও ডান দিকে একটা চিনচিনে ব্যথা যকৃতে ফোড়ার মূল উপসর্গ। কখনো পেটের ডান দিকে একটা চাকাও অনুভব করা যায়, যা হাত দিলে ব্যথা করে। কোনো কোনো সময় এর
সঙ্গে জন্ডিস বা হলুদাভ হয়ে আসা বা ডায়ারিয়াও হতে
পারে। রোগ নির্ণয়ের জন্য পেটের একটা আলট্রাসনোগ্রাম ও কিছু রক্ত পরীক্ষা করা হয়। কখনো পেটের সিটি স্ক্যানও প্রয়োজন হয়। সুইয়ের সাহায্যে পুঁজ বের করে এনে সেটা পরীক্ষা করা হয় মাঝেমধ্যে।
চিকিৎসা কী?
দীর্ঘমেয়াদি ও উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক বা পরজীবীনাশক ওষুধ দিয়ে যকৃতের ফোড়ার চিকিৎসা করা হয়। তবে প্রয়োজনে ফোড়া কেটে পুঁজ বের করে আনা দরকার হতে
পারে।
কখনো এই ফোড়া ওপর দিকে ফেটে গিয়ে বুকের খাঁচায়
ছড়িয়ে পড়ে জীবনাশঙ্কা দেখা দিতে পারে।
ডা. মৌসুমী মরিয়ম সুলতানা
মেডিসিন বিভাগ
ইউনাইটেড হাসপাতাল।
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।