অর্থনীতি ডেস্ক : হাজারো কোটি
টাকা উপার্জন করেছেন তারা। কিন্তু এত টাকা কি শুধু সন্তানদের ভবিষ্যৎ চিন্তায় আয়
করেছেন? আর এ টাকা নিয়ে তারা কী করবেন? প্রযুক্তি জগতের কোটিপতি এমন কিছু মহানুভব মানুষ আছেন
যারা নিজেদের পরিবারের বাইরের মানুষের কথাও চিন্তা করেন। বিল গেটস, স্টিভ কেজ, মার্ক বেনিয়ফ, আরউইন জ্যাকবস, গর্ডন মুর, এলন মাস্ক ও ল্যারি পেজ সেই মহানুভব মানুষের তালিকায় শীর্ষে
থাকবেন নিঃসন্দেহে।
নিজেদের সন্তানের জন্য নয়, তাদের বেশির ভাগ অর্থসম্পদ তারা দান করেছেন
মানুষের কল্যাণে। প্রযুক্তি উদ্যোগের কল্যাণে কোটি টাকা আয় করা উদ্যোক্তাদের কেউ কেউ ব্যক্তিগত বিমান
কিনেছেন, বিলাসবহুল বাড়ি কিনেছেন আবার কেউবা কিনেছেন
পুরো দ্বীপ। তবে এই আটজন উদ্যোক্তা তাদের অর্থ-সম্পাদকে মানবহিতৈষী কাজে লাগিয়ে মহানুভবতার
পরিচয় দিয়েছেন। বিভিন্ন ফাউন্ডেশন ও ট্রাস্টের মাধ্যমে তাদের অর্থসম্পদ দাতব্য কাজে লাগিয়েছেন
তারা। সম্প্রতি প্রযুক্তি ও ব্যবসাবিষয়ক ওয়েবসাইট বিজনেস ইনসাইডার এই আটজন প্রযুক্তি
উদ্যোক্তাকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
বিল গেটসমাইক্রোসফট-প্রতিষ্ঠাতা
বিল গেটসঃ
নিজের সন্তানের কথা না ভেবে
দাতব্য কাজে অর্থসম্পদ ব্যয় করেছেন এমন কোটিপতির কথা বলতে গেলে সবার প্রথমে আসে মাইক্রোসফটের
প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের নাম। বিল গেটস তার সাত হাজার ৮০০
কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের সম্পদ তার উত্তরাধিকারী তিন সন্তানের জন্য রেখে যাবেন না
বলে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন। বিল গেটসের সম্পদ থেকে তার এই
তিন সন্তান সর্বোচ্চ এক কোটি মার্কিন ডলার করে পাবেন। এ বছরের ফেব্র“য়ারিতে বিল গেটস বলেছেন, ‘আমি মনে করি সন্তানদের জন্য বিশাল অর্থসম্পদ
রেখে যাওয়া তাদের জন্য সুখকর হবে না। ১৯৯৪ সালে বিল গেটস বিল ও মেলিন্ডা
গেটস ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে এই ফাউন্ডেশনের সম্পদ
তিন হাজার ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার।
স্টিভ কেসএওএল সহপ্রতিষ্ঠাতা
স্টিভ কেসঃ
লাখ লাখ মার্কিনকে অনলাইনে আনার
কৃতিত্ব দেওয়া হয় এওএলের সহপ্রতিষ্ঠাতা স্টিভ কেস, প্রযুক্তির উন্নয়নে নিজের
সম্পদের বেশির ভাগ দান করেছেন যিনি। ১৯৯৭ সালে প্রযুক্তির সাহায্যে
মানুষকে সেবা করার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন কেস ফাউন্ডেশন। এ ছাড়াও প্রতিষ্ঠা করেন
রেভল্যুশন নামে একটি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান। যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন
ভ্যালির বাইরের বিভিন্ন উদ্যোগ বা স্টার্টআপগুলোতে বিনিয়োগ করে থাকে তার এই রেভল্যুশন। কেস ও তার সহধর্মিনী গিভিং
প্লেজে স্বাক্ষর করেছেন। তাদের ভাষ্য হচ্ছে, যে সম্পদ আমরা অর্জন করেছি সেগুলো আমাদের নিজের
মনে করি না, বরং আমরা সম্পদের দায়িত্বশীল ব্যবহারে বিশ্বাসী।
মার্ক বেনিয়ফসেলসফোসের প্রধান
নির্বাহী মার্ক বেনিয়ফঃ
মার্ক বেনিয়ফ সম্প্রতি এসএফ
গিভস নামে একটি কর্মসূচি চালু করেছেন যাতে প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলোকে বিভিন্ন অলাভজনক
সংস্থাকে সাহায্য করতে অনুপ্রেরণা দেয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে
১/১/১ মডেল অনুসরণ করার উৎসাহদাতা হিসেবেও বেনিয়ফের খ্যাতি রয়েছে। এই মডেল অনুযায়ী একটি
প্রতিষ্ঠানকে তার তহবিলের ১ শতাংশ, কর্মী সময়ের ১ শতাংশ ও
সম্পদের ১ শতাংশ দাতব্য কাজে ব্যয় করতে বলা হয়। বেনিয়ফ ও তার স্ত্রী লাইনি
ক্যালিফোর্নিয়ার একটি হাসপাতালে ২০ কোটি মার্কিন ডলার দান করেছেন।
মর্ক জ্যাকবসকোয়ালকমের প্রতিষ্ঠাতা
আরউইন জ্যাকবসঃ
আরউইন জ্যাকবস ও তার স্ত্রী
জোয়ান ৫০ কোটি মার্কিন ডলার দাতব্য কাজে ব্যয় করেছেন। আরউইন ‘গিভিং প্লেজ’ কর্মসূচিতে
স্বাক্ষর করেছেন ও সম্পদের অর্ধেক দাতব্য কাজে লাগানোর প্রতিশ্র“তি দিয়েছেন। তবে তার ছেলে কোয়ালকমের প্রধান নির্বাহী পল বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির
১৫ লাখ শেয়ারের মালিক। কিন্তু আরউইনের সম্পদের সঙ্গে পলের সংশ্লিষ্টতা নেই।
পিয়েরে অমিডায়ারইবের প্রতিষ্ঠাতা
পিয়েরে অমিডায়ারঃ
অমিডায়ার ও তার স্ত্রী পাম প্রযুক্তি
জগতের অন্যতম দানশীল ব্যক্তি হিসেবে খ্যাতি পেয়েছেন। ১৯৯৮ সালে ইবে যখন পাবলিক
লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে শেয়ারবাজারে আসে, তখন যে ১০০ কোটি মার্কিন
ডলার সম্পদের মালিক হয়েছিলেন তা দাতব্য কাজে ব্যয় করার ঘোষণা দেন তারা। ২০১০ সালে তারা গিভিং
প্লেজ কর্মসূচিতে স্বাক্ষর করেন। অমিডায়ার দম্পতির ভাষ্য, ‘আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে খুবই সরল। আমাদের পরিবারের প্রয়োজনের
চেয়ে আমাদের অনেক বেশি অর্থ রয়েছে। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি অর্থ ধরে
রাখার কোনো প্রয়োজন নেই। বিশ্বের কল্যাণকর কাজে এই অর্থ
কাজে লাগুক।অমিডায়ার অমিডায়ার নেটওয়ার্ক
নামের একটি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানে তার ইবের শেয়ার দান করেছেন। প্রতিষ্ঠানটি দাতব্য কাজে
অর্থ সহায়তা করে। মানবপাচার রোধ করতে যেসব প্রতিষ্ঠান অর্থ খরচ করে তার মধ্যে অমিডায়ার নেটওয়ার্ক
অন্যতম।
গর্ডন মুরইনটেলের সহপ্রতিষ্ঠাতা
গর্ডন মুরঃ
ইনটেলের সহপ্রতিষ্ঠাতা গর্ডন
মুর দানশীল হিসেবে খ্যাত। দাতব্য কাজে ১০০ কোটি মার্কিন
ডলারেরও বেশি ব্যয় করেছেন তিনি। ২০০১ সালে নিজের অর্ধেকের বেশি
সম্পদ নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন মুর ফাউন্ডেশন। সংস্থাটি পরিবেশ, স্বাস্থ্য সুরক্ষার মতো বিষয়গুলো নিয়ে কাজ
করে। বর্তমানে এ সংস্থার ৫০০ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি সম্পদ রয়েছে। ২০১২ সালে গর্ডন মুর ও
তার স্ত্রী গিভিং প্লেজ কর্মসূচিতে স্বাক্ষর করেছেন। এই কর্মসূচিতে স্বাক্ষর
করার বিষয়ে তারা বলেন, গিভিং প্লেজের অংশ হতে
পেরে আমরা খুশি। আমরা বিশ্বাস করি এই অর্থ সম্পদ বিশ্বের হিতকর কাজে লাগবে।
এলন মাস্কটেসলার প্রধান
নির্বাহী এলন মাস্কঃ
একবার যমজ ও একবার একসঙ্গে তিন
সন্তানের বাবা হন উদ্যোক্তা এলন মাস্ক। বর্তমানে পাঁচ সন্তানের
বাবা হলেও নিজের অর্জিত সম্পদের অধিকাংশই তিনি নবায়নযোগ্য শক্তি, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল শিক্ষা ও শিশুস্বাস্থ্যখাতে
দান করেছেন। ২০১২ সালে তিনি গিভিং প্লেজ কর্মসূচিতে স্বাক্ষর করেন। টেসলাতে কাজের জন্য তিনি
বছরে মাত্র এক মার্কিন ডলার প্রতীকী বেতন নেন।
ল্যারি পেজ গুগলের প্রধান
নির্বাহী ল্যারি পেজঃ
গুগলের প্রধান নির্বাহী ল্যারি
পেজ তার অর্থসম্পদ সন্তানের দেওয়ার বদলে পৃথিবীতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে ব্যয়
করতে চান। তিনি তার কোটি কোটি ডলার ভালো উদ্যোগের পেছনে খরচ করতে চান। এ বছরের মার্চে তিনি বলেছেন, তার বিলিয়ন ডলার অর্থ সম্পদ দুই সন্তানকে দেওয়ার
চেয়ে এলন মাস্কের মতো উদ্যোক্তার হাতে দেবেন যিনি পৃথিবী বদলে দেওয়ার মতো ধারণা বাস্তবায়নে
কাজ করছেন।
সূত্রঃ আমাদের অর্থনীতি,
১৫ জুলাই ২০১৪
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।