সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: ইসরায়েলের ইতিহাস আর ফিলিস্তিন সংঘাত

ইসরায়েলের ইতিহাস আর ফিলিস্তিন সংঘাত

ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল

ইসরায়েল ভূমধ্য সাগরের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত একটি ইহুদী রাষ্ট্রের নাম যার রাজধানী জেরুসালেম বিশ্বের ৫০টা মুসলিম রাষ্ট্রের [২] ৩০টা দেশ ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় নাবর্তমানে এই অঞ্চলের গাজা উপত্যকা, পশ্চিম তীর ও গোলান মালভূমি ইসরায়েল-এর দখলে থাকা বিতর্কিত স্থান হিসেবে পরিগণিত হয়


ইতিহাসঃ
British Mandate for Palestine
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুর্কি উসমানীয় সাম্রাজ্যের পতনের পর প্যালেস্টাইন বা ফিলিস্তিন সহ বেশিরভাগ আরব এলাকা চলে যায় ইংল্যান্ড-ফ্রান্সের ম্যান্ডেটে১৯১৭ সালের ২রা নভেম্বর বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্থার জেমস বালফোর ইহুদীবাদীদেরকে লেখা এক পত্রে ফিলিস্তিনী ভূখন্ডে একটি ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেনবেলফোর ঘোষণার মাধমে ফিলিস্তিন এলাকায় ইহুদীদের আলাদা রাষ্ট্রের সম্ভাবনা উজ্জল হয় এবং বিপুলসংখ্যক ইহুদী ইউরোপ থেকে ফিলিস্তিনে এসে বসতি স্থাপন করতে থাকে

plestine১৯০৫ থেকে ১৯১৪ সাল পর্যন্ত ফিলিস্তিনে ইহুদীদের সংখ্যা ছিল মাত্র কয়েক হাজারকিন্তু ১৯১৪ সাল থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ১৯১৮ সাল পর্যন্ত বৃটিশদের সহযোগিতায় ফিলিস্তিনে ইহুদীদের সংখ্যা ২০ হাজারে উন্নীত হয়এরপর প্রকাশ্যে ফিলিস্তিনে ইহুদী অভিবাসীদের ধরে এনে জড়ো করা শুরু হলে ১৯১৯ থেকে ১৯২৩ সাল নাগাদ ফিলিস্তিনে ইহুদীদের সংখ্যা ৩৫ হাজারে পৌঁছে যায়১৯৩১ সালে ইহুদীদের এই সংখ্যা প্রায় ৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ১ লাখ ৮০ হাজারে পৌঁছায়এভাবে ফিলিস্তিনে ইহুদী অভিবাসীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে থাকে এবং ১৯৪৮ সালে সেখানে ইহুদীদের সংখ্যা ৬ লাখে উন্নীত হয়

১৯১৮ সালে বৃটেনের সহযোগিতায় গুপ্ত ইহুদী বাহিনী "হাগানাহ" গঠিত হয়এ বাহিনী ইহুদীবাদীদের অবৈধ রাষ্ট্র তৈরির কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেপ্রথমে ফিলিস্তিনী জনগণের বিরুদ্ধে ইহুদীবাদীদের সহায়তা করা হাগানাহ বাহিনীর দায়িত্ব হলেও পরবর্তীকালে তারা সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী বাহিনীতে পরিণত হয়ফিলিস্তিনী জনগণের বাড়িঘর ও ক্ষেতখামার দখল করে তাদেরকে ফিলিস্তিন থেকে বিতাড়িত করা এবং বাজার ও রাস্তাঘাটসহ জনসমাবেশ স্থলে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ফিলিস্তিনীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে তাদের বিতাড়নের কাজ ত্বরান্বিত করা ছিল হাগানাহ বাহিনীর কাজ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনী ভূখন্ডকে দ্বিখন্ডিত করা সংক্রান্ত ১৮১ নম্বর প্রস্তাব গৃহীত হয়জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে দ্বিখন্ডিত করার প্রস্তাব পাশ করে নিজেদের মাতৃভূমির মাত্র ৪৫ শতাংশ ফিলিস্তিনীদের এবং বাকি ৫৫ শতাংশ ভূমি ইহুদীবাদীদের হাতে ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়এভাবে ১৯৪৮ সালের ১৪ মে ইসরায়েল স্বাধীনতা ঘোষণা করে

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতঃ
মানচিত্রে ইসরায়েল, পশ্চীম তীর, গাজা উপত্যকা ও গোলান হাইট্‌স
ইসরায়েলের জন্মের আগ থেকেই ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত লেগে আছে যা কোন দিন থামবে কেউ বলতে পারে না। বিষয়টা এমন আপনার ঘরে কেউ এসে অস্ত্র ঠেকিয়ে বলল যে, এই ঘর আজ থেকে আমার, আপনি এখনই বের হয়ে যান। তখন আপনি শুধু প্রতিবাদই করবেন না বরং সর্বশক্তি দিয়েই লড়বেন আপনার সম্পদ রক্ষা করার জন্য। আর যদি আপনাকে তাড়িয়ে দেয় তাহলে আপনি প্রতিশোধ নিবেন। পৃথিবীর কোন আইন আপনার এই প্রতিবাদ বা প্রতিরোধকে অবৈধ বলতে পারবে না। ফিলিস্তিনে আজ সেটাই ঘঠছে যা বিরামহীনভাবে ফিলিস্তিনিদের ভূমিছাড়াই করছে না শুধু, প্রতিনিয়ত প্রাণ হারাচ্ছে অসংখ্য নারী-শিশু। আজ তারা তৃঞ্চা মেটানোর পানি পায় না, ক্ষুধা মেটানোর খাদ্য পায় না, পায় না জীবন বাঁচানোর ঔষধ। ইসরায়েল ইচ্ছা করলেই মিলে, অন্যথায় নয়। সবচেয়ে বড় কথা জীবন পরিচালনা করার জন্য যে আয়ের দরকার তারও কোন উৎস নেই। নিজ বাড়িতে, নিজ ভূমিতে আজ তারা শরণার্থী, যাযাবর। একে বৃহত্তর অর্থে আরব-ইসরায়েল সংঘাতের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হিসেবেও আখ্যায়িত করা যায়দুইটি আলাদা জাতি করার জন্য অনেক পরিকল্পনাই করা হয়েছেএই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়িত হলে ইসরায়েলের পাশে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্রও গঠিত হতোএকটি জরিপে দেখা গেছে, দুই দেশের অধিকাংশ মানুষই এই সংঘাত নিরসনে অন্য যেকোন পরিকল্পনার তুলনায় দুই-জাতি পরিকল্পনাকে বেশি সমর্থন করেঅধিকাংশ প্যালেস্টাইনী মনে করে, তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র হওয়া উচিত পশ্চিম তীর  গাজা উপত্যকা-কে কেন্দ্র করেঅধিকাংশ ইসরায়েলীও এই ধারণা সমর্থন করেহাতে গোনা মাত্র কয়েকজন শিক্ষাবিদ সবকিছু বাদ দিয়ে একটিমাত্র রাষ্ট্র গঠনকে সমর্থন করেতাদের মতে সমগ্র ইসরায়েল, পশ্চিম তীর ও গাজা মিলে একটি দ্বি-জাতীয় রাষ্ট্র গঠিত হওয়া উচিত যেখানে সবার সমান অধিকার থাকবেকিন্তু এ নিয়ে কোন স্থির সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব হয়নিকারণ প্রত্যেকেই অন্যের কোন না কোন প্রস্তাবে অসম্মতি জ্ঞাপন করছে

এই সংঘাতে দেশী-বিদেশী অনেকগুলো শক্তি ও বিষয় জড়িয়ে পড়েছেসংঘাতে সরাসরি অংশ নেয়া দলগুলো হচ্ছে, এক পক্ষে ইসরায়েল সরকার আর অন্য পক্ষে ফিলিস্তিন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও) যার প্রধান নেতা বর্তমানে মাহমুদ আব্বাসএই দুই পক্ষের মধ্যে আনুষ্ঠানিক সমঝোতা তৈরীতে কেন্দ্রী চরিত্র হিসেবে কাজ করে কোয়ার্টেট অফ দ্য মিড্‌ল ইস্ট (বা শুধু কোয়ার্টেট) নামে পরিচিত একটি দলএই দলে কূটনৈতিকভাবে অংশ নেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘ আরব লীগ এই সংঘাতের আরেক নায়ক যারা একটি বিকল্প শান্তি পরিকল্পনা পেশ করেছেআরব লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মিশর এতে মুখ্য ভূমিকা রাখছে

২০০৬ সালের পর থেকে প্যালেস্টাইনীয় অংশ দুটি প্রধান দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে: ফাতাহ এবং হামাসএর মধ্যে ফাতাহ-ই বর্তমানে সবচেয়ে বড়এর ফলে দেশের কেন্দ্রীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক শাসিত মূল ভূমি ব্যবহারিক অর্থে দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে: পশ্চিম তীরে ফাতাহ এবং গাজা উপত্যকায় হামাস প্রভাব বিস্তার করেছেএতে সমস্যা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে, কারণ ইসরায়েলসহ অনেকগুলো দেশই হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন মনে করেফলে ২০০৬ এর নির্বাচনে হামাস সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী হওয়ার পরও ইসরায়েল-যুক্তরাস্ট্র সহ পশ্চিমা দেশগুলো মিলে হামাসের পতন ঘটায়

মাউন্ট অফ অলিভ্‌স থেকে দৃশ্যমান জেরুজালেম শহর
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা অনুষ্ঠানটি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের অ্যানাপোলিসে, ২০০৭ সালের নভেম্বর মাসেএই আলোচনার মাধ্যমে ২০০৮ এর শেষ নাগাদ একটি চিরস্থায়ী শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হয়েছিলঅংশগ্রহণকারী দলগুলো বলেছে, ৬ টি প্রধান বিষয় আছে যেগুলোর সমাধান না হলে শান্তি আসবে নাএগুলো হচ্ছে: জেরুসালেম, শরণার্থী, আবাসন, নিরাপত্তা, সীশান্ত এবং পানিএই বিষয়গুলো নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে কিন্তু সংঘাত বন্ধ হচ্ছে নাএই সংঘাতের সবচেয়ে বীভৎস দিক হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদী সহিংসতাবছরের পর বছর এই অঞ্চলে এক নাগাড়ে হতাহতের ঘটনা ঘটছে যাতে বেশিরভাগ সময় ফিলিস্তিনি নারী-শিশু মারা যাচ্ছে। ইসারায়েল রাস্ট্র সৃষ্টির পর থেকে হাজার হাজার ফিলিস্তিনির মৃত্যু যেমন হয়েছে তেমনি হাজার হাজার ফিলিস্তিনি পালিয়ে গেছে মিশর, লেবানন, জর্দান সহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে। কখনো স্ব-পরিবারে বা কখনো একা। আর তারা এখনো বুক বেঁধে আছে একদিন তাদের দেশটা স্বাধীন হবে, ফিরে পাবে প্রিয় সেই মাতৃভূমি যাতে রয়েছে তাদের বাড়ি-ঘর, খেত-খামার, আত্মীয়-স্বজন। কিন্তু কেউ বলতে পারে না সেটা আদৌ হবে কি না।


সূত্রঃ উইকিপিডিয়া

1 টি মন্তব্য:

  1. এ পৃথিবীতে যতদিন আমেরিকা নামক দেশটি থাকবে ততদিন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র স্বাধীন হবে বলে মনে হয় না।

    উত্তরমুছুন

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।