ওরা আমায় মারে কেন?
|
গাজার বাসিন্দা মুহাম্মাদ ওমর বলেন, বেঁচে থাকা বা আত্মরক্ষার কোনো অধিকার আমাদের
আছে বলে আমি মনে করি না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিতে ওই অধিকার কেবল
ইসরাইলের একারই রয়েছে। আমার ছেলে ওমরের বয়স মাত্র তিন মাস। নিজের বিছানায় কাঁথায় জড়ানো
অবস্থায় ও কাঁদছে। চার দিক অন্ধকার। বিদ্যুৎ-পানি কিছুই নেই। আমার স্ত্রী ওকে বুকের মাঝে আগলে ধরে ওর কান্না
থামাতে, ওকে
শান্ত করতে মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছে। তার চোখের পানিতেও কপোল ভিজে আছে।
আমার দোষ কি?
|
ওমর ওই রাতের ইসরাইলি হামলার ঘটনাকে ওয়েগনারের ‘রাইড অব দ্য ভলকাইরিস’এর সাথে তুলনা করেন। এফ-১৬ জঙ্গি বিমানগুলোর ফেলা বোমা বিস্ফোরণে প্রচণ্ড শব্দ, হেলফায়ার মিসাইলের বিস্ফোরণ এবং ড্রোন হামলার
শব্দ মিলে এক ভয়াবহ আতঙ্ক নিনাদ। এ ছাড়া ইসরাইলের গানশিপ ও স্থলভিত্তিক মর্টারের
গোলা আমাদের চার পাশে এসে পড়ছে। এসব হামলার শব্দ মিলে একটি পরিপূর্ণ সিম্ফনীর
সৃষ্টি করে যা কুখ্যাত ওয়েগনার তুবাসের অনুরূপ। ওয়েগনারের অপেরার মতো সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য নয়, গাজার এ হত্যাকাণ্ডের অপেরা বেশ কয়েক দিন ধরে
চলে। অপেরার দর্শকদের প্রশংসা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন আতঙ্কিত
শোনামণি ও শিশুদের আর্তচিৎকারের মধ্যে লীন হয়ে যায়। একটি ক্ষেপণাস্ত্রের শার্পনেল বাড়ি ও গাড়িকে ক্ষতবিক্ষত করে দেয়ার পর সেই চিহ্ন
ধরে আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্র সেখানে আঘাত হানছে। আরেকটি বাড়িও আক্রান্ত হচ্ছে। আজ আরো ৬ জন নিহত হয়েছে। ডাক্তারের বাড়ির দরজায় তিনটি এফ-১৬ জঙ্গি বিমান
থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। ডাক্তার
নিহত হন। তাদের টার্গেট কী ছিল তা বোঝা মুশকিল। ২০০৮-০৯ সালের যুদ্ধের সময় তার বাবা ও মা নিহত হয়েছিলেন। আমার ও লিনার কানে বিমান হামলার শব্দ ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। ছেলে ওমর কেঁদেই চলেছে। বর্তমানে ২২০ জন নিহত ও এক হাজার ৪০০ আহত হয়েছে। জাতিসঙ্ঘের হিসাবে তাদের বেশির ভাগই নিরীহ
বেসামরিক লোকজন।
এ দুর্যোগের কোনো শেষ দেখা যাচ্ছে না। সীমান্তে ট্যাংক জড়ো করা হচ্ছে। স্থল হামলার প্রস্তুতি চলছে। আকাশে অ্যাপাচে হেলিকপ্টারের শব্দে ওমরের দোলনা
কেঁপে উঠছে। রাতে ইসরাইলের গানশিপ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে
আসার সঙ্কেত জানিয়ে সাইরেন বেজে উঠছে। সীমান্ত কাছেই কিন্তু আমরা
যেতে পারছি না। ২০০৭ সাল থেকেই গাজা অবরুদ্ধ হয়ে আছে। ইসরাইলের মতো আমাদের বোমা হামলার হাত থেকে বাঁচার আশ্রয়কেন্দ্র নেই। গাজার ১৮ লাখ মানুষের অর্ধেকই শিশু যাদের বয়স ১৮ বছরের কম। ম্যানহাটানের ক্ষুদ্র এলাকায় তাদের বসবাস। কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। আমাদেরকে এখানেই থাকতে হবে এবং আমরা যাতে অক্ষত
থাকতে পারি তারই প্রার্থনা করছি। আমি এরই মধ্য দিয়ে গাজায় বড় হয়েছি। কিন্তু পিতা ও স্বামী হিসেবে এবারই প্রথম আমি হামলার মধ্যে পড়েছি। এ এক ভিন্ন চিত্র। ভিন্ন অভিজ্ঞতা। আমি চাইলে আমার সন্তান ও স্ত্রীকে বিমানে করে এখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যেতে পারতাম। কিন্তু এটি হলো আমার পৈতৃক বাসস্থান। একে ছেড়ে কোথায় যাবো আমি? বিমান হামলার প্রচণ্ড শব্দ যেন শেষহীন। এরই মধ্যে আতঙ্কিত লিনা শান্ত হয়ে ওমরকে বুকের দুধ পান করাতে করাতে দোয়া পড়তে থাকে।
সূত্রঃ নয়া দিগন্ত, ১৮ জুলাই ২০১৪, শুক্রবার, ৯:৪২
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।