নিজের জমি বিক্রি করে সাড়ে ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ জার্মান পতাকা তৈরি
করায় মাগুরা সদর উপজেলার ঘোড়ামারা গ্রামের কৃষক আমজাদ হোসেনকে সংবর্ধিত করেছে
জার্মানদূতাবাস। বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মান চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ড. ফার্দিনান্দ
ফন ওয়েহে আজ শনিবার দুপুর আড়াইটায় মাগুরা স্টেডিয়ামে হাজির হয়ে আমজাদ হোসেনকে
আনুষ্ঠানিকভাবে সংবর্ধনা জানান। এ সময় তার হাতে তুলে দেয়া হয় সে দেশের পক্ষ থেকে নানা
উপহার ও জার্মান জাতীয় ফুটবল ক্লাবের আজীবন অফিসিয়াল সদস্য পদ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন
মাগুরার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক একেএম তারেক সদর ইউএনও আব্দুর রাজ্জাক, কৃষক আমজাদ হোসেনসহ সর্বস্তরের মানুষ।
কৃষক আমজাদ হোসেন তার
প্রতিক্রিয়ায় জানান, জার্মান সরকারের কাছে তার এই
পতাকার খবর পৌঁছে এ ধরনের ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাতের স্বপ্ন ছিল তার। যেটি এখন বাস্তবায়িত
হয়েছে। তিনি এজন্য সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে জার্মান চার্জ দ্য
অ্যাফেয়ার্স ড. ফার্দিনান্দ ফন ওয়েহে বাংলাদেশের একজন প্রান্তিক কৃষকের এ ধরনের
বিস্ময়কর পতাকা তৈরির ভূয়সী প্রশংসা করেন। এজন্য তিনি আজীবন জার্মানের ফুটবল
দল ও সে দেশের মানুষের অনন্য বন্ধু হয়ে থাকবেন বলে জানান। তার মতে, ব্যক্তি উদ্যোগে জার্মানের এ রকম একটি দীর্ঘ পতাকা তৈরির অতীত
রেকর্ড নাই।
দুপুরে গোটা স্টেডিয়াম জুুড়ে
আমজাদ হোসেনের এই পতাকা প্রদর্শিত হয়। এ সময় হাজার হাজার মানুষ
স্টেডিয়ামে জড়ো হয়। আমজাদ হোসেনকে জার্মান চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ড. ফার্দিনান্দ
ফন ওয়েহে নিজের অটোগ্রাফ সমৃদ্ধ একটি ফুটবল, জার্মান ফুটবল দলের
জার্সি ও ক্রেস্ট উপহার দেন। আমজাদ হোসেন ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে দেয়া
হয় বাংলাদেশের বাঁশ জাতীয় শিল্প সামগ্রী ও বাঁশি। স্টেডিয়ামে আসার আগে
জার্মান চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ড. ফার্দিনান্দ ফন ওয়েহে সদরের রামনগরে স্থানীয়
সরকার প্রকেৌশল অধিদপ্তরের একটি প্রকল্প প্রদর্শন করেন।
উল্লেখ্য, মাগুরার সদর উপজেলার ঘোড়ামারা গ্রামের নেহাল উদ্দিন মোল্যার ছেলে
৬৫ বছরের আমজাদ হোসেন। পেশায় একজন সাধারণ কৃষক। ১৯৮৭ সালে তিনি কঠিন
রোগে আক্রান্ত হন। সে সময় অনেক রকম চিকিৎসা নিয়েও কোন সুফল পাননি। অবশেষে এক চিকিৎসকের
পরামর্শে জার্মানের হোমিওপ্যাথিক ওষুধ সেবনের পরই তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। তারপর থেকেই আমজাদ হোসেন
জার্মানের প্রতি আসক্ত হয়ে ওঠেন। সে সূত্র ধরেই বিশ্বকাপে জার্মান ফুটবল দলের ভক্ত হয়ে গেছেন তিনি। যার বহির্প্রকাশ হিসেবে
আমজাদ হোসেন নিজ খরচে তৈরি করেছেন এই পতাকা।
আমজাদ হোসেন একজন খেটে খাওয়া
সাধারণ কৃষক। অথচ ৩ হাজার ৫শ' ৫০ গজের বিশাল দৈর্ঘের এই পতাকা
তৈরিতে তিনি ব্যয় করেছেন প্রায় দেড় লাখ টাকা। যার খরচ জোগাড় করতে
বিক্রি করতে হয়েছে নিজস্ব ৫০ শতক আবাদি জমি।
আমজাদ হোসেন জানান, পতাকা তৈরির জন্য তিনি প্রথম তার গ্রামের এলাহির কাছে ২০ শতক জমি
বিক্রি করেন। কিন্তু সেই টাকার বেশিরভাগ অন্য কাজে খরচ হয়ে যায়। যে কারণে দ্বিতীয় দফায়
তার ভাতিজা মিজানুরের কাছে ৩০ শতক জমি বিক্রি করেছেন। যার ভেতর থেকে দেড় লক্ষ
টাকা ব্যায় করেছেন এই পতাকা তৈরির জন্য। প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই
পতাকা তৈরির জন্য তিনি শহিদুল ইসলাম রেন্টু, জাহাঙ্গীর হোসেন ও সাইদ
মোল্যা নামে ৩ জন দর্জিকে এই কাজে নিয়োগ করেন। যাদেরকে মজুরি হিসেবেই
দিতে হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। তবে টাকা খরচের বিষয় নিয়ে তিনি মোটেই চিন্তিত নন। জার্মান বিশ্বকাপ জিতলে
বরং আরো বেশি টাকা খরচ করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। আমজাদ হোসেন এখন ফাইনালে
জার্মান ফুটবল দলের বিশ্বকাপ জয়ের খেলা দেখার জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন।
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।