নেদারল্যান্ডসের হেগের
স্থায়ী সালিসি আদালতের রায়ে পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া দক্ষিণ তালপট্টি ভারতের অংশে
পড়েছে। সাতক্ষীরার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের এ দ্বীপটি নিয়ে গত তিন দশক ধরে
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিরোধ ছিল। আজ
মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাবেক
পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি বলেন, তালপট্টি এখন নেই। তালপট্টি যে জায়গায় ছিল
তার ক্ষুদ্র একটি জায়গা এই সীমানা নির্ধারণের মাধ্যমে ভারতের দিকে পড়লেও নিচের
দিকে গিয়ে বিশাল একটি এলাকায় বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
নেদারল্যান্ডস থেকে একটি কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, বেশ কয়েকটি কারণে তালপট্টি নিয়ে শেষ পর্যন্ত আদালতে কোনো আলোচনা
হয়নি। প্রথমত, বাংলাদেশ ও ভারতের সমুদ্রসীমা
নির্ধারণের রায়টি হয়েছে ১৯৪৭ সালের রেডক্লিফের মানচিত্রের ভিত্তিতে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ দক্ষিণ তালপট্টির মালিকানা দাবি করলেও কোনো মানচিত্রেই
দেখাতে পারেনি দ্বীপটি বাংলাদেশের অংশে। তা ছাড়া গত বছরের অক্টোবরে
বিচারকেরা বঙ্গোপসাগর সফরের সময় এটির অস্তিত্ব খুঁজে পাননি। ঢাকার এক কর্মকর্তা মনে করেন, তালপট্টির অস্তিত্ব ভারত দেখাতে সমর্থ হলেও দেশটি সমদূরত্বের দাবি
প্রতিষ্ঠার করার ক্ষেত্রে এগিয়ে যেত। কারণ, ভূখণ্ডের অস্তিত্ব থাকলে সীমারেখা
টানার ক্ষেত্রে সমদূরত্বের দাবিটিকে বিশেষভাবে বিবেচনায় নিতে হতো আদালতকে।
১৯৭০ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের পর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার জানায়, ২৪ পরগনা জেলার হাড়িয়াভাঙ্গা নদীর মোহনায় একটি নতুন দ্বীপের
উত্পত্তি হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সীমানায় এ দ্বীপের মালিকানা দাবি করে এর নাম দেওয়া হয়
দক্ষিণ তালপট্টি। অন্যদিকে, ভারতও নিজেদের মানচিত্রে এর
অধিকার দাবি করে নাম দেয় পূর্বাশা বা নিউ মুর। সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (মেরিটাইম
অ্যাফেয়ার্স ইউনিট) রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম জানান, ১৯৭০-এর ঘূর্ণিঝড়ের পর দ্বীপটি জেগেছিল। ১৯৮৫ সালে উড়িরচরে যে ঝড়
হয়, তার পর থেকে দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপটি আর নেই। ১৯৮৯ সাল স্যাটেলাইটের
ধারণ করা ছবিতে এই দ্বীপটির অস্তিত্ব আর পাওয়া যায় না। ২০০৮ সালে ভারতের এক
গবেষণাতে বলা হয়েছে, ‘নিউ মুর ইজ নো মোর।’ ভারত দক্ষিণ তালপট্টিকে ‘নিউ মুর’ হিসেবে অভিহিত করে।
তাহলে তালপট্টি এখন কাদের ভাগে যাবে—এ প্রশ্নের উত্তরে খুরশেদ আলম জানান, গত বছরের অক্টোবরে
বিচারকদের বঙ্গোপসাগরে সরেজমিনে সফরে নেওয়ার সময় তালপট্টি-সংলগ্ন এলাকায় নেওয়া হয়। ভারতও বিশেষ ক্যামেরার
সাহায্যে তালপট্টিকে দেখানোর চেষ্টা করে, সেখানেও তালপট্টির
অস্তিত্ব মেলেনি। দ্বীপ হিসেবে থাকলে তালপট্টির পানির ওপরে থাকার কথা। ওই অংশটুকু এখন কার ভাগে
পড়েছে—এমন এক প্রশ্নের উত্তরে
তিনি বলেন, যেহেতু রেডক্লিফের ১৯৪৭ সালের মানচিত্র অনুযায়ী সমুদ্রসীমা
নির্ধারিত হয়েছে, তাই ওই অংশটুকু ভারতের দিকে পড়েছে।
খুরশেদ
আলম বলেন, ১৯৮০ সাল থেকে বাংলাদেশে
যতগুলো মানচিত্র প্রকাশ করা হয়েছে, তাতেই তো তালপট্টি নেই। রাজনৈতিক সীমারেখার মানচিত্র দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে কিন্তু তালপট্টি আমাদের না। আমরা তালপট্টির দাবি করে
এসেছি, কিন্তু কেউ খেয়াল করে দেখিনি
যে হাড়িয়াভাঙ্গা নদীর মানচিত্রে তালপট্টি নেই।’ মালিকানা
কি তবে তুলে নিয়েছি—এমন প্রশ্নের উত্তরে দীপু মনি বলেন, ‘যেটির অস্তিত্ব নেই, সেটি দাবির প্রশ্ন আসে কী
করে!’ এ বিষয়ে খুরশেদ আলম বলেন, ‘১৯৮০
সালের আগে যখন দ্বীপ ছিল তখন অবশ্যই দাবি করেছি। আমাদের কোনো মানচিত্রেই আমরা
প্রমাণ করতে পারিনি যে জায়গাটা আমাদের। আমাদের নিজেদের মানচিত্রগুলো আগেই সংশোধন করা উচিত
ছিল, কিন্তু করিনি। ২০১০
সালে যে মানচিত্র আমরা সংশোধন করেছি, আদালত তা গ্রহণ করেনি।’
এ সম্পর্কে আরো পড়ুনঃ আলোচিত খবর
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।