সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: হঠাৎ বুক ধড়ফড়?

হঠাৎ বুক ধড়ফড়?


বুক ধড়ফড় বা বুক ধুকপুকানি হৃদ্যন্ত্রের সমস্যা বটে। আবার বুক ধড়ফড় মানেই যে হৃদ্যন্ত্রের অসুখতাও সব সময় ঠিক নয়। চিকিৎসা বিদ্যায় একে বলা হয় প্যালপিটেশন। আমাদের হৃদ্যন্ত্র নিয়মিত ছন্দে প্রতিনিয়ত স্পন্দিত হচ্ছে, স্বাভাবিক অবস্থায় যা আমরা টের পাই না। কেউ যদি এই স্পন্দন ভালোভাবে টের পেতে শুরু করে তখনই তাকে প্যালপিটেশন হচ্ছে বলা হয়। নানা ভাবে রোগী এই সমস্যার কথা বলতে পারেন। যেমনবুক ধড়ফড় করা, ধুকপুক করা, ঘাড় গলা বা বুক লাফানো, হার্টের গতি বা স্পন্দন অনুভব করা ইত্যাদি।


কারণ কী?
অতিরিক্ত পরিশ্রম, ব্যায়াম বা অতিরিক্ত মানসিক চাপ, আবেগ, উচ্ছ্বাস সাময়িকভাবে হৃদ্স্পন্দন বাড়িয়ে দিতে পারে ও এতে প্যালপিটেশন হয়। এটি স্বাভাবিক। আবার খুব জ্বর, রক্তশূন্যতা, নিকোটিন, ক্যাফেইন, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাজনিত রোগও বুক ধড়ফড়ানির জন্য দায়ী। ডায়াবেটিক রোগীর রক্তে শর্করা হঠাৎ কমে যাওয়া বা থাইরয়েড হরমোনের আধিক্যে বুক ধড়ফড় করে। দীর্ঘদিনের ডায়াবেটিক রোগীর স্নায়ুগত জটিলতার কারণে বিশ্রামের সময়ও হৃদ্স্পন্দন কমে না। হার্টের ভাল্বের সমস্যা, জন্মগত হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট ফেইলিউর, বড় হয়ে যাওয়া হৃদ্যন্ত্রসহ হৃদ্যন্ত্রের নানা ধরনের অনিয়মিত স্পন্দনজনিত কারণে প্যালপিটেশন হয়। কিছু কিছু ওষুধও হৃদ্স্পন্দন বাড়িয়ে দেয়, যেমন অ্যামলোডিপিন, অ্যামিট্রিপটাইলিন, থাইরক্সিন ইত্যাদি।

কী করবেন?
প্রায়ই বিশেষ করে বিশ্রামরত অবস্থায়ও বুক ধড়ফড় করলে অবশ্যই কারণ অনুসন্ধান জরুরি। জেনে রাখবেন প্যালপিটেশন কোনো রোগ নয়, অন্য রোগের উপসর্গ মাত্র। তাই রোগের সঠিক ইতিহাস ও ধরন প্রকৃতি জানা জরুরি। রোগীর নাড়ি স্পন্দন বা পালস বেশি, দ্রুত বা অনিয়মিত আছে কি না তা চিকিৎসক হাত দিয়ে বুঝতে পারবেন। প্রয়োজনে রোগীর ইসিজি, রক্তের দু-একটি পরীক্ষা, হল্টার মনিটরিং বা ইকোকার্ডিওগ্রাফি করে বুক ধড়ফড়ানির কারণ খতিয়ে দেখা হয়। হৃদ্রোগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে হতে পারে। হঠাৎ বুক ধড়ফড় করতে থাকলে নাক মুখ বন্ধ করে দীর্ঘ শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে থাকলে কিছুটা কমে। আবার হৃদ্স্পন্দন হঠাৎ বেড়ে গিয়ে বা অনিয়মিত হলে রোগী পড়ে গিয়ে অজ্ঞানও হতে পারে। এ সময় মাথা ঝিমঝিম, মাথা শূন্য বোধ হওয়া বা মাথা ঘোরার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। এ রকম হলে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া জরুরি। যাদের আগে থেকেই হৃদ্রোগ আছে বা পরিবারে আকস্মিক মৃত্যুর ইতিহাস আছে তাদের জন্য বুক ধড়ফড়ানি একটি সতর্কবাণী। তাই একে অবহেলা করা চলবে না।

ডা. শরদিন্দু শেখর রায়
জাতীয় হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল।


সূত্রঃ প্রথম আলো, ১৪ আগস্ট ২০১৪খ্রিঃ

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।