সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: আল্লাহ সুদকে হারাম করেছেন

আল্লাহ সুদকে হারাম করেছেন


ইসলাম মানবতার ধর্মমানবজীবনের রাকবচইসলাম মানবজাতিকে উন্নত জীবন গড়ার লক্ষ্যে যেমনিভাবে ইসলামী শিক্ষা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে, তেমনিভাবে সর্বস্তরে ইসলামী বিধান মেনে চলার নির্দেশও দিয়েছেসুখী, সমৃদ্ধ সমাজ ও উন্নত দেশ গড়ার কার্যকরী পন্থা বাতলে দিয়েছেসামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের সর্বপ্রকার শোষণপ্রক্রিয়া ইসলামে হারাম করেছেইসলামী অর্থনীতি ও ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সুদি প্রক্রিয়ায় লেনদেন পন্থাকে অবৈধ বলে আখ্যা দিয়েছেসুদের আরবি হচ্ছে রিবারিবা শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে অতিরিক্ত, বর্ধিত ইত্যাদিমূলধনের অতিরিক্ত কিছু গ্রহণ করাকে সুদ বলেইসলামী অর্থব্যবস্থায় সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য সুদ একটি মারাত্মক অভিশাপএতে মানবতা ধ্বংস হয়বিদায় নেয় মুমিনের পারস্পরিক সহানুভূতি, জন্ম নেয় সীমাহীন অর্থলিপ্সা ও স্বার্থপরতাঅতিরিক্ত লোভ-লালসার কারণে সুদি কারবারিরা তখন মানুষের জানমাল ও ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে থাকেসুদি কারবারে সবচেয়ে বেশি তিগ্রস্ত হয় সাধারণ জনগণ

দেশের অর্থনৈতিক দুর্গতির সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা ব্যাংকে প্রচুর লোনের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য গুদামজাত করে ফেলেব্যাংকগুলোও অনেক সুদপ্রাপ্তির লোভে লোন দিয়ে তাদেরকে সহযোগিতা করেঅল্প সময়ের মধ্যেই বাজারে খাদ্যশস্যের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি হয়যথার্থ কারণেই সাধারণ জনগণ প্রাণরার দায়ে বহুগুণ মূল্যে প্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয় করতে বাধ্য হনসুদ শোষণের অন্যতম হাতিয়ারসুদপ্রথা ধনসম্পদকে সমাজের মুষ্টিমেয় কিছু পুঁজিপতির হাতে কুগিত করেএ কারণেই ইসলামে সুদকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে

এ প্রসঙ্গে মহান রাব্বুল আলামিন কুরআনে কারিমে ইরশাদ করেন, আমি ব্যবসায়কে হালাল করেছি এবং সুদকে হারাম ঘোষণা করেছি’ (সূরা বাকারা : ২৭৫)

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেয়ো না আর আল্লাহকে ভয় করতে থাকো, যাতে তোমরা কল্যাণ অর্জন করতে পারো’ (ইমরান : ১৩০)

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, যারা সুদ খায় তারা কিয়ামতে দণ্ডায়মান হবে, যেভাবে দণ্ডায়মান হয় ওই ব্যক্তি, যাকে শয়তান আসর করে মোহাবিষ্ট করে দেয়তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তারা বলেছে ক্রয়-বিক্রয়ও তো সুদ নেয়ার মতোইঅথচ আল্লাহ তায়ালা ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেনঅতঃপর যার কাছে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত হয়েছে, আগে যা হয়ে গেছে, তা তারতার ব্যাপার আল্লাহর ওপর নির্ভরশীলআর যারা পুনরায় সুদ নেয়, তারাই জাহান্নামে যাবেতারা সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে, (সূরা বাকারা : ২৭৫)

আল্লাহ পাক আরো বলেন, হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদের যেসব বকেয়া আছে, তা পরিত্যাগ করো, যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাকোঅতঃপর যদি তোমরা পরিত্যাগ না করো, তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়ে যাওকিন্তু যদি তোমরা তাওবা করো, তবে তোমরা নিজের মূলধন পেয়ে যাবেতোমরা কারো প্রতি অত্যাচার করো না এবং কেউ তোমাদের প্রতি অত্যাচার করবে না, (সূরা বাকারা : ২৭৮-২৭৯)

হজরত জাবির রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সুদ গ্রহণ ও প্রদানকারী, সুদের লেখক এবং সাক্ষী সকলকেই রাসূল সা: অভিশাপ দিয়েছেন’ (মুসলিম শরিফ, মিশকাত : ২৪৩)

হজরত আবু হুরায়রা রা: বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, ‘মেরাজের রাতে আমি এমন এক শ্রেণীর লোকের নিকট পৌঁছলাম, যাদের পেট খরের মতো এবং তার ভেতরে বহু সাপ রয়েছে, যা বাহির থেকে দেখা যায়আমি আমার সঙ্গীকে জিজ্ঞেস করলাম। হে জিব্রাইল, এরা কারা? তিনি বললেন, এরা সুদখোর’ (মিশকাত : ২৪৬)

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে হানজালা রা: থেকে বর্ণিত, রাসূল সা: ইরশাদ করেন, ‘জেনেশুনে কোনো ব্যক্তির এক দিরহাম পরিমাণও সুদ খাওয়া ছত্রিশবার ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার চেয়েও বেশি মারাত্মক (পাপ)’ (মিশকাত : ২৫৪)

হজরত আবু হুরায়রা রা: বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, সুদের গুনাহের সত্তরটি স্তর রয়েছেতন্মধ্যে সর্বনিম্ন হলো মানুষের আপন মায়ের সাথে বিবাহ করা (জিনা বা সঙ্গম করা)’ (ইবনে মাজাহ ও মিশকাত : ২৪৬)

সুদের কুফল সমাজ থেকে নিয়ে ধর্মীয় পর্যায়সহ সব ক্ষেত্রেই রয়েছেসুতরাং সুদ থেকে বেঁচে থাকা অতীব জরুরিদুঃখজনক হলেও সত্য, বর্তমান যুগে সুদ মহামারী আকার ধারণ করেছেসমগ্র বিশ্ব আজ এর রাহুগ্রাসে পতিতসুদের কারণে শোষিত হচ্ছে সমাজতিগ্রস্ত হচ্ছেন রাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিকসুদি সমাজের লোকেদের সুখ ভোগই হয়ে পড়ে জীবনের প্রধান কর্মঅবৈধভাবে জনগণের ধন লুটে নেয়ার প্রবণতা প্রবলভাবে দেখা দেয়টাকাই তাদের কাছে সবচেয়ে বড় বলে মনে হয়ফলে তাদের হৃদয়ে দরিদ্র্যের প্রতি দয়ামায়া স্থান পায় নামানুষের এ রকম অভাবের মুহূর্তকে তারা নিজেদের সবচেয়ে বড় সুযোগ বলে মনে করেদরিদ্রদের নিজের অর্থ উপার্জনের একমাত্র হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেতাই তো সুদের বোঝা তাদের ওপর চাপিয়ে ধীরে ধীরে নিঃশেষ করে দেয় তাদের বেঁচে থাকার সামান্য আশাটুকুও 

এহসান বিন মুজাহির

সূত্রঃ নয়া দিগন্ত, ২৯ আগস্ট ২০১৪, শুক্রবার, ৯:০৩

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।