সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: ১৬ সেকেন্ডে ৬৪ জেলা, ১ মিনিটে ২০০ দেশ!

১৬ সেকেন্ডে ৬৪ জেলা, ১ মিনিটে ২০০ দেশ!


বুদ্ধিদীপ্ত চোখের একজন মানুষ ২২ সেপ্টেম্বর প্রথম আলো কার্যালয়ে এসেছিলেনদেখা করতেই বললেন, আমার মধ্যে কিছু প্রতিভা আছেআপনাকে দেখাতে এসেছি কী প্রতিভা? এরপর তিনি তাঁর প্রতিভার কথা বললেন এবং নমুনাও দেখালেন 


মো. রফিকুল ইসলাম নামের এই মানুষের যে বিশেষ প্রতিভা আছে, সেটার কথায় একটু পরে আসিতার আগে প্রিয় পাঠক আপনাকে একটা প্রশ্ন করিবাংলাদেশের সব কটি জেলার নাম কি আপনি মুখস্থ বলতে পারবেন? অনেকেরই উত্তর হবে নাআর যদি বলি ২০০টি দেশের নাম বলুন, প্রায় সবার ক্ষেত্রেই উত্তরটা না-তেই গড়াবে বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার নাম মুখস্থ বলতে পারেন মো. রফিকুল ইসলামসময় কতটা নেন জানেন? মাত্র ১৬ সেকেন্ডআর ২০০টি দেশের নাম বলতে পারেন মাত্র এক মিনিটেতবে এ সময় ৫৭ থেকে ৫৮ সেকেন্ডেও নেমে আসেআরও আছে, ৬৪ জেলার ৬৪টি উপজেলার নাম রফিকুল বলে যান মাত্র ১৮ সেকেন্ডে১৯ সেকেন্ডে বলতে পারেন ৬৪ জেলার ৬৪টি ইউনিয়নের নাম

তাঁর এই কথা শুনে স্টপওয়াচ ধরা হলো, শুরু হলো রফিকুলের দ্রুতগতির কথা বলা পর্বঅডিও ক্যাসেট প্লেয়ারের যুগে ফাস্ট-ফরোয়ার্ডের বোতাম চাপলে যেমন কিচিরমিচির শব্দ শোনা যেত, রফিকুলের ৬৪ জেলার বা ২০০ দেশের নাম বলা শুনে সেই কথা মনে পড়েতবে পার্থক্য হলো, ফাস্ট-ফরোয়ার্ডে কোনো শব্দই বোঝা যায় না, কিন্তু রফিকুলের বলা সবগুলো জেলা বা দেশের নামই বোঝা যায়দেয়াল ঘড়ির কাঁটার দিকে তাকিয়ে ১৬ সেকেন্ডেই বলে দেন ৬৪ জেলার নামপরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে কখনো এটা ১৮-১৯ সেকেন্ড হতে পারেতবে সেটাই বা কম কিসে!

এবার মনোযোগ দিই রফিকুলেতিনি চাকরি করেন ঢাকার নাসা গ্রুপে২৩ সেপ্টেম্বর তাঁর মুখোমুখি বসে জানা গেল, এসএসসি পর্যন্ত পড়েছেনউত্তীর্ণ হতে পারেননিএসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট বের হওয়ার পরের দিন থেকেই চাকরিতে ঢুকে গেলামকারণ, বাবার আর্থিক অবস্থা সচ্ছল ছিল না বললেন রফিকুল কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার পদ্মনগর গ্রামের কৃষক মোক্তার হোসেন ও আছিয়া খাতুনের চার ছেলেমেয়ের মধ্যে রফিকুল সবার বড়৩২ বছরের জীবনে চাকরি করছেন ১৪ বছর ধরে
 
মুখস্থ করে এই দ্রুত বলার বিদ্যাএটা রফিকুল শিখলেন কীভাবে? বললেন, ১০-১২ বছর আগে টিভি বা পত্রিকা থেকে জেনেছিলাম এক ব্যক্তি নাকি এক মিনিটে ৬৪ জেলার নাম মুখস্থ বলতে পারেনওই সময় পত্রিকায় একটা চাকরির বিজ্ঞাপন ছাপা হয়, যেখানে প্রতিটি জেলা থেকে একজন করে লোক নিয়োগ দেওয়া হবেআমি সেখান থেকে ৬৪ জেলার নাম লিখে নেই শুরু হলো রফিকুলের চর্চা চর্চা করতে করতেই দেখলেন, ১৬ সেকেন্ডে ৬৪ জেলার নাম বলতে পারছেনএকটা বই থেকে ২০০ দেশের নাম লিখে নিয়ে সেগুলো মুখস্থ করা শুরু করলেনদেখলেন, এক মিনিটেই গড় গড় করে বলে দিচ্ছেন দেশগুলোর নাম
 
দুই বছর আগের ঘটনাযে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন রফিকুল, সেখানকার এক পরিচালককে তিনি বললেন, আমাদের এখানে প্রতিদিন দুপুরের খাবারের পর যে গান-বাজনার অনুষ্ঠান হয়, সেখানে আমি কিছু দেখাতে চাই পরিচালক অনুমতি দিলেন৷ পরদিন পুরো কারখানায় যথাসময়ে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ রফিকের স্মরণশক্তি ও দ্রুত বলার প্রতিভা দেখলপরিচালক খুশি হয়ে পুরস্কারও দিলেন তাঁকে 

রফিকুল ইসলাম ২০০৭ সালে পাশের গ্রামের মোছা. বেবী নাজনীনকে বিয়ে করেছেনতাঁদের একমাত্র ছেলের বয়স দেড় মাসরফিকুল বললেন, আমি নিজে লেখাপড়া বেশি করতে পারি নাইতাই আমি চাই আমার স্ত্রী ও ছেলে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হোক বেবী নাজনীন এরই মধ্যে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন, একটা স্কুলে শিক্ষকতাও করছেনআর একই সঙ্গে স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে পড়ছেন রফিকুল চান তাঁর এই গুণের কথা ছড়িয়ে পড়ুক দেশে ও বিদেশেভবিষ্যতে রাজধানীর নাম, বিভিন্ন ভাষার নাম, নদীর নাম ও ৬০০ উপজেলার নাম মুখস্থ করে দ্রুত বলার অনুশীলন করার ইচ্ছা তাঁরতাক লাগিয়ে দিতে চান গোটা দুনিয়াকে


সূত্রঃ প্রথম আলো, ০০:৫৮, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৪

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।