উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ নিয়মিতই খাচ্ছেন, কিন্তু চিকিৎসকের কাছে গেলেই হতাশ। প্রতিবারই দেখা যাচ্ছে যে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে। চিকিৎসক ওষুধ বাড়িয়ে দিচ্ছেন, তবু কাজ হচ্ছে না। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এমন অবস্থাকে বলা হয় রেসিসট্যান্ট হাইপারটেনশন। তবে রেসিসট্যান্ট হাইপারটেনশন তখনই বলা হয়, যখন একজন রোগীর সঠিক মাত্রায় সঠিকভাবে অন্তত তিন ধরনের উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সেবন করেও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে নেই।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকার যত কারণ
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন ওষুধ খেয়েও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকা নিয়ে ২০০৮ সালে একটি নির্দেশিকা জারি করে। এতে বলা হয়, ওষুধ খাওয়ার পরও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকার প্রধানতম কারণ হলো, ঠিকমতো নির্দেশিত ওষুধ সেবন না করা। সমীক্ষা মতে, ৪০ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপের রোগী পাশ্চাত্যেই অনিয়মিতভাবে ওষুধ সেবন করেন বা প্রায়ই ওষুধ ছেড়ে দেন। আরও ২০ থেকে ৩০ শতাংশ রোগী চিকিৎসকের চেম্বারে বা হাসপাতালে গেলেই রক্তচাপ বেড়ে যায়। একে বলা হয় সাদা কোট হাইপারটেনশন। রোগী যখন চিকিৎসকের সামনে বসে থাকেন, তখন মানসিক চাপ, উদ্বেগ, অস্থিরতা তার রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া আছে ভুল উপায়ে রক্তচাপ মাপা। অন্তত পাঁচ মিনিট সুস্থ ও শান্তভাবে হেলান দিয়ে বসে থাকার পর রক্তচাপ মাপতে হবে। তাড়াহুড়া বা ছোটাছুটি করে এসেই দেখা যাবে না। আর রক্তচাপ মাপার যন্ত্রটি সঠিক নির্দেশনা দেয় কি না, হাতে লাগানোর কাফ রোগীর মাপমতো আছে কি না তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে এক মিনিট ব্যবধানে পর পর দুইবার রক্তচাপ মাপতে হবে। রক্তচাপ অনিয়ন্ত্রিত থাকার আরেক গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো সঠিক জীবনাচরণ না মেনে চলা।
ওপরের কোনো কারণই যদি দোষী না হয়, তবে চিকিৎসকেরা রক্তচাপ বাড়ার পেছনে কোনো অন্তর্নিহিত গুরুতর কারণ খুঁজতে চান। এর মধ্যে আছে কিডনির জটিলতা, কিডনির রক্তনালিতে ব্লক, অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির সমস্যা, মস্তিষ্কের টিউমার ও স্লিপ এপনিয়া ইত্যাদি।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে কেবল ওষুধ খেলেই চলবে না, চাই রোগীর সচেতনতাও। এ জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে:
ওজন ১০ কেজি কমলে সিস্টোলিক প্রেশার ৬ মিলিমিটার ও ডায়াস্টোলিক ৫ মিলিমিটার কমে আসে।
সঠিক সময়ে ঘুম ও সঠিক নিয়মে নিয়মিত প্রতিদিন ওষুধ সেবন করুন, নিয়মিত রক্তচাপ মাপুন ও চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
দৈনিক ৩০ মিনিট ব্যায়াম করুন বা হাঁটুন। আঁশযুক্ত খাবার, প্রতিদিন তাজা সবজি-ফলমূল ও ননিবিহীন দুধ বা দই খান।
কিছু ওষুধ, যেমন ব্যথানাশক, স্টেরয়েড, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি, হারবাল বনাজি ওষুধও রক্তচাপ বাড়াতে পারে।
লবণ খাওয়া কমান, অ্যালকোহল ও ধূমপান এড়িয়ে চলুন।
ইউনাইটেড হাসপাতাল
সূত্রঃ প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০১৪
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।