BRTC Bus |
শিরোনামটা বাংলা
করতে গেলে হবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন অভিশাপ। নিশ্চয় বলবেন
এভাবে ভুল অর্থ লিখলাম কেন। দুঃখ মানুষকে অনেক কিছু বলতে শেখায়, অনেক কিছু করতে বাধ্য
করে। দেশটা আমাদের স্বাধীন হয়েছিল প্রায় ৪৩ বছর আগে। একটি সভ্য,
শিক্ষিত এবং উন্নত জাতি হওয়ার জন্য এ সময় কিন্তু মোটেও কম নয়। অথচ আমরা এ
দীর্ঘ সময়টাকে খুব অল্পই কাজে লাগাতে পেরেছি। বাঙ্গালীরা
স্বাধীনতা চাওয়ার পেছনে দুটো প্রধান কারণ হলো-পূর্বপাকিস্তানীদেরকে চাকুরী দেয়া হত
না আর পূর্বপাকিস্তানের উন্নয়নকে অবহেলা করা হত। আরো অন্যান্য
কারণ থাকলেও এ দুটি কারণকেই আমার বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়। স্বাধীনতার
এতদিন পরও এ দুটি অভিশাপ থেকে বাঙ্গালীরা পুরোপুরি মুক্ত হতে পারে নি। সাথে যোগ হয়েছে
সীমাহীন দুর্নীতি। আর এ দুর্নীতীর সাথে যুক্ত এ দেশের রাজনিতীবিদ, সরকারী
কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের সাঙ্গ-পাঙ্গরা। BRTC তার একটি উদাহরণ।
আমার জানামতে জনসেবার উদ্দেশ্য নিয়ে ১৯৫৮ সালে এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে এ সংস্থাটি
প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে
বিভিন্ন সংস্কারের মধ্যমে পরিচিত পায় আজকের BRTC. ইতিমধ্যে অত্যাধিক দামের বেশ কিছু নতুন বাস (AC
& Non AC) সংযোজন করে গাড়ির সংখ্যা হাজারের মত করা
হয়েছে যা বাংলাদেশে অন্যকোন প্রাইভেট কোম্পানির নেই। কিন্তু ঐ যে
সরকারী বলে কথা! “ক্ষতি হলে সরকারের
হবে, তাতে আমার কি আসে যাবে” এ
স্লোগান নিয়ে যাত্রা শুরু করায় বাংলাদেশ রেল আর বাংলাদেশ বিমানের মত যেমন সেবা
পাচ্ছে না জনগণ তেমনি লাভবান হচ্ছে না সরকার! প্রায় অর্ধ কোটি মুল্যের এক একটা
গাড়ি মাসিক ভাড়া দেয়া হয় একজনকে। ছোটখাট মেরামত ছাড়া চাকা-টিউব বদলানো বা অন্যান্য
যন্ত্রাংশ বদলানোর মত বড় বাজেটের খরচগুলো বহন করে BRTC। এতে মাসিক ভাড়া
হিসেবে যা পাওয়া যায় অনেক সময় তার চেয়ে বেশি খরচ হয়ে যায়। ফলে বিষয়টা এমন
দাঁড়াই যে, সরকার প্রায় অর্ধকোটি টাকায় কয়েকজন বেকারের কর্মসংস্থান করে দিল মাত্র। গত তিন মাসের
মধ্যে BRTC নিয়ে আমার দুটি অভিজ্ঞতা লিখবো আপনাদের কাছে।
১ম ঘঠনাঃ
অফিসিয়াল কাজে চট্টগ্রাম –চকরিয়া যাবো। বাসের জন্য অপেক্ষার এক ফাঁকে BRTC ‘র একটি এসি বাস এসে যাত্রী ঢাকছিল।
অন্য এসি বাসে আগে চড়লেও BRTC ‘র নতুন বাসগুলোতে অভিজ্ঞতা ছিল না।
তাই উঠে পড়লাম। গাড়ি ছাড়ার কিছুক্ষণ পর এসি আস্তে আস্তে কমতে শুরু করলো। প্রায় ৪০
মিনিটের মাথায় এসি বন্ধ হয়ে গেলে। এরই মধ্যে বাসের দুজন হেল্পার মাঝখানের গেইট
বন্ধ করে ড্রাইভারের পাশে গিয়ে বসলো। ফলে অনেক ডকাডাকি করেও কোন লাভ হল না। পাশের
একজন বলল। “আমি অনেকবার এই গাড়িতে ভ্রমণ করেছি। এসে কমিয়ে বা বন্ধ করে তারা সামনে চলে যায়
যাতে যাত্রীরা ডাকাডাকি করেও না পায়। আধাঘন্টা পর ৫/১০ মিনিটের জন্য এসি দেবে আবার
বন্ধ করে দেবে। তাই ডেকে লাভ নেই”। এ কথা শুনে যাত্রী একজন সীট থেকে
উঠে গিয়ে ডেকে এনে কিছুক্ষণ গাল মন্দ করলে এসি চালু হলো ঠিক কিন্তু কিছুক্ষণ পর
আবার একই অবস্থা। এয়ার ফ্রেসার চাইলাম। সেটা নাকি গতকাল শেষ হয়ে গেছে। সেই গতকালটা
কয়জনকে বলেছে মনে হয় তারও মনে নেই।
২য় ঘঠনাঃ
এবারের ঈদে বাড়ি গেলাম। কক্সবাজার
বাস টার্মিনাল নামার পরেই ঈদের পর অগ্রিম টিকিট চাইলাম। তারা নাকি ঈদ করতে যাবে
তাই অগ্রিম টিকিট দেবে না। বাধ্য হয়ে ঈদের একদিন পর আসলাম। দেখি কাউন্টারে তাদের
চেয়ার টেবিল উল্ঠানো। পাশে দাঁড়ানো একজনকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম এখনো অগ্রিম
টিকিট ছাড়ে নি। পরের দিন আবার গেলাম। চেয়ার টেবিলের অবস্থা আগের মতই। জানাল- গাড়ির
সিডিউল ঠিক না থাকায় অগ্রিম টিকিট দেয়া যাচ্ছে না। এভাবে মঙ্গলবার থেকে শুক্রবার
সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রতিদিন একবার করে যাওয়ার পরও টিকিট পেলাম না। বাধ্য হয়ে শনিবার ভোরে
গিয়ে গাড়ির হেল্পারের সাথে কথা বললাম। সে বলল-“যাত্রী আগে হয়ে গেছে। আমরা শুধু
সময় মত যাত্রী নিয়ে চলে যাবো”। এ কথা শুনে আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে
পড়ল। রেলের মত এখানেও কালোবাজারি!!! বাধ্য হয়ে অন্য গাড়িতে চলে আসলাম।
এই যদি হয় BRTC তাহলে সেটাকে অভিশাপ না বলে কিভাবে জনগণের জন্য আশির্বাদ
বলতে পারি? শহরেও কতগুলো সার্ভিস আছে। ভাড়া নেই অন্য সাধারণ বাসের মত উঠা নামা ৫
টাকা। সরকারী রেটের কথা বললে তারা নাকি সরকারী রেট বুঝে না। এই হলো BRTC-Bangladesh
Road Transport Curse.
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।