হা লং
উপসাগর ভিয়েতনামের
কুয়াংনি প্রদেশে অবস্থিত। হা লং
শহরের নামেই
হা লং হা লং উপসাগর । উপসাগরটির
আয়তন ১৫৫৩ বর্গকিলোমিটার। এর
স্বচ্ছ নীল
পানিতে রয়েছে নানা ধরনের চুনাপাথর,
যা
এর সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে
বহুগুণ। ধারণা করা হয়, চুনাপাথরগুলো সৃষ্টি
হয়েছে ৫০ কোটি বছর আগে। উপসাগরে
কিছুদূর পর পর এসব চুনাপাথরের অসংখ্য পাহাড়। এখানকার গড় তাপমাত্রা ১৫-২৫ ডিগ্রি
সেলসিয়াস। হা লং বে-তে রয়েছে ৯২৮টি দ্বীপ। তবে বড় দ্বীপ রয়েছে মাত্র দুটি। হা লং উপসাগরে রয়েছে প্রায় ১৪ প্রজাতির ফুল, ২০০ প্রজাতির মাছ, মালাস্কা পর্বভুক্ত ৪৫০ ধরনের
প্রাণী। মজার বিষয়, রয়েছে চারটি ভাসমান গ্রাম। গ্রামের প্রায় সবাই মৎস্যজীবী। ১৯৯৪ সালে ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ
সাইট হিসেবে স্বীকৃতি দেয় উপসাগরটিকে।
শব্দ ব্যুত্পত্তি
ভিয়েতনামী
শব্দ ‘হা লং’ অর্থ ‘ভূমিতে নেমে আসা ড্রাগন’। ভিয়েতনামবাসীরা এই উপসাগরকে ভিন হা লং
নামে ডাকে। হা লং বে’কে নিয়ে স্থানীয় একটি প্রবাদও চালু আছে- ভিয়েতনামবাসীরা যখন দেশের উন্নয়নে কাজ শুরু করেছে
তখন দস্যুদের
সাথে তাদের প্রায় সময় যুদ্ধ বাঁধে। দস্যুদের
থেকে রক্ষার জন্য সে
সময় ঈশ্বর রক্ষাকর্তা হিসেবে একটি ড্রাগন পরিবারকে পাঠায়। ড্রাগনদের মুখের থু থু থেকে মণি-মানিক্য
নির্গত হয়ে সাগরে পড়ে। মুক্তাগুলো
সাগরে ছড়িয়ে
আছে আর পাথরগুলো পরস্পর একত্রিত হয়ে দস্যুদের প্রতিরক্ষা ব্যুজ্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। যখন দস্যুদের জাহাজ আক্রমন করতে আসে তখন
জাদুকরী পাহাড়গুলোতে
এবং পাহাড়কে পাশ কেটে যেতে গিয়ে একে অপরের সাথে ধাক্কা লেগে ধ্বংস হয়ে যায়। যুদ্ধের পরে ড্রাগনরা এই শান্তিময়
স্থানে বাস করার ইচ্ছা
পোষণ করে। যেখানে মা ড্রাগনরা অবতরণ করেছে, সেই স্থানের নাম হয়েছে ‘হা লং’ আর যেখানে শিশু ড্রাগনরা
মায়ের সাথে থাকত, সেই
স্থানের নাম হয়েছে‘ বাই তু লং দ্বীপ’।( ‘হা’ অর্থ ‘মা’, ‘লং’ অর্থ ‘ড্রাগন’,‘বাই তু’ মানে ‘মায়ের সাথে ছেলে’।) যে জায়গায় ড্রাগনরা লেজের সাহায্যে
যুদ্ধ করেছে
সে এলাকার নাম ‘বাক্
লং ভ্ দি্বীপ’। (‘বাক’ মানে লেজের আঘাতে সৃষ্ট সাদা ফেণা,‘ভি’ মানে ‘লেজ’।)
সংক্ষিপ্ত বিবরণ
এই
উপসাগরের বুকে দাঁড়িয়ে আছে বিভিন্ন আকৃতির প্রায় হাজারের উপর চুনাপাথুরে দ্বীপ। হা লং বে ,উত্তর-পূর্বের বাই তু লং
বে এবং দক্ষিণ-পশ্চিমের
ক্যাট বে একই। তবে হা লং বে পুরো উপসাগরের ভৌগলিক,ভূতাত্ত্বিক এবং গাঠনিক
কাঠামোকে নির্দেশ করে। তাছাড়া
এ অঞ্চল কেন্দ্রভাগে
হওয়ায় এটি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে সবার। হা লং
বে’র
আয়তন ১হাজার
৫শ ৫৩ বর্গ কিলোমিটার। এখানে
চুনাপাথরের প্রায় ১হাজার ৯শ ৬০ থেকে ২ হাজারটি ক্ষুদ্র দ্বীপের অবস্থান। তবে উপসাগরের মূল অংশের আয়তন ৩শ ৩৪ বর্গকিলোমিটার। আনুমানিক ৫শ মিলিয়ন বছর আগে এসব পাথুরে
দ্বীপখন্ডের সৃষ্টি হয়
এবং ২০ মিলিয়ন বছর আগে থেকে আর্দ্র জলবায়ুর প্রভাবে এর বিবর্তন শুরু হয়। গবেষণায় জানা গেছে, ১০হাজার বছর আগে থেকে
এখানে মানুষের বসবাস শুরু
হয়। ‘হাং ডু
গো’ এখানের
সবচেয়ে বড় গুহা। এটি
কাঠের ছাদে ঢাকা একটি কৃত্রিম
গুহা; উনিশ
শতকের দিকে ফরাসী পর্যটকরা এর নাম দিয়েছিলেন ‘গ্রোট্টে
ডি
মারভেলেস্ ’। তিনটি বিশাল চেম্বারে এটি বিন্যস্ত। গুহার ছাদ থেকে বিন্দু বিন্দু জল পড়ার
ফলে চুনাপাথরের অসংখ্য ঝুলন্ত এবং মাটি ফুঁড়ে বের হওয়া স্তম্ভ গুহার পরিবেশকে একটি আলাদা পর্যায়ে নিয়ে গেছে। ‘তুয়ান
চাউ’ এবং ‘কাট বা’ হা লং বে’র সবচেয়ে বড় দ্বীপ। এখানে হোটেল ও সৈকত আছে। হা লং বে’র
জনসংখ্যা এক হাজার ৬শ’র কিছু
বেশি। উপসাগরে ভাসমান চারটি গ্রামে এরা বসবাস করে। গ্রামগুলো ‘কুয়া ভেন’, ‘বা লং’, ‘চং টু’ ও ‘হা লং সিটি’ নামে পরিচিত। অধিবাসীদের প্রায় সবাই মৎসজীবি। প্রায় ২ শ প্রজাতির মাছ এবং ৪ শ ৫০ প্রজাতির শামুক,ঝিনুক এখানে পাওয়া যায়। এখানের জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ;মূলতঃ দুই ঋতু-গ্রীষ্ম ও
শীতকাল। বছরের শেষ গ্রীষ্মকালে বৃষ্টিপাত হয়।
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।