সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: জিহাদ উদ্ধার- ফায়ার সার্ভিসের ২৩ ঘণ্টা আর স্বেচ্ছসেবীদের ২৩ মিনিট (ভিডিও)!!

জিহাদ উদ্ধার- ফায়ার সার্ভিসের ২৩ ঘণ্টা আর স্বেচ্ছসেবীদের ২৩ মিনিট (ভিডিও)!!


দীর্ঘ প্রায় ২৩ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়েও শিশু জিয়াদকে উদ্ধার করতে পারেনি ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। এমনকি তারা বলেছে পাইপের মধ্যে জিয়াদের কোনো অস্তিত্বই নেই। অথচ স্বেচ্ছাসেবীদের মাত্র ২৩ মিনিটের চেষ্টায় সেই পাইপ থেকে উদ্ধার হয় শিশু জিয়াদ। তবে জীবিত নয়। সময় ক্ষেপনের কারণে পাইপের ভেতরই জিয়াদের মৃত্যু হয়। চিকিৎসকরা বলছেন, উদ্ধারের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে জিয়াদের মৃত্যু হয়েছে। এত সময় জীবিতই ছিলো শিশুটি। এলাকাবাসী বলছেন, শুরু থেকেই স্থানীয় সাধারণ মানুষ ও স্বেচ্ছাসেবীদের সাথে নিয়ে উদ্ধার কাজ শুরু করলে হয়তো জিয়াদকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা যেত।

শুক্রবার বিকেল ৪টায় খেলা করতে করতে শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনীতে ওয়াসার একটি খোলা পাইপের মধ্যে পড়ে যায় চার বছরের শিশু জিয়াদ। পাইপের ভেতর থেকে চিৎকার শুনে পু®প নামে একটি মেয়ে সবাইকে ডাকাডাকি শুরু করে। এরপর পু®পর বাবা জাহিদ পাইপের কাছে গিয়ে কথা বলেন। প্রায় ৩০০ ফুট নিচ থেকে জিয়াদ তার কথার উত্তর দেয়। খবর দেয়া হয় ফায়ার সার্ভিসকে। ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে জিয়াদকে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে। প্রথমে তারা পাইপের ভেতর একটি রশি ফেলে।


উদ্ধারের পর মেডিকেলে নেয়ার পথে
উদ্ধারের পর মেডিকেলে নেয়ার পথে
ফায়ার সার্ভিসের দাবি, জিয়াদ রশি ধরলে তারা টেনে তোলার চেষ্টা করে। কিন্তু মাঝপথে আসতেই জিয়াদ রশি ছেড়ে দেয়। এরপর একটি চটের ব্যগ দেয়া হয়। কিন্তু ছোট্ট শিশু জিয়াদ ব্যাগে বসার কথা মাথায় আনতে পারেনি। যার কারণে সে চেষ্টাও ব্যর্থ হয়। এর মধ্যে পাইপের মধ্যে কয়েক দফা অক্সিজেন দেয়া হয়। জিয়াদের অবস্থান জানতে তৃতীয় দফায় একটি সিসি ক্যামেরা পাঠানো হয় পাইপের ভেতর। কিন্তু সেটা মাঝপথে গিয়ে বিকল হয়ে পড়ে। অবশেষে আনা হয় অধিক ক্ষমতা সম্পন্ন গোল্ড হোল নামক ক্যামেরা। এই ক্যামেরিটি চালু করতে প্রায় এক ঘণ্টা সময় চলে যায়। বলা হয়, কেনার পর থেকে এই মেশিনটি কখনো চালানো হয়নি। এক পর্যায়ে চালু হয় যন্ত্রটি। পাঠানো হয় পাইপের ভেতর। মেশিনটি পাইপের ভেতর থাকা টিকটিকি, ব্যাঙ, তেলাপোকাসহ অন্যান্য বস্তুর ছবি পাঠালেও জিয়াদের কোনো ছবি পাঠাতে পারেনি। এক পর্যায়ে সেই যন্ত্রটিও তুলে নেয়া হয়।
উদ্ধার প্রচেষ্টা
উদ্ধার প্রচেষ্টা
এসময় এনএসআইর একজন কর্মকর্তাসহ কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, এই পাইপের মধ্যে মানব শিশুর কোনো অস্তিত্বই নেই। কিন্ত ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক বলেন, আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাবো। পরদিন শনিবার পুনরায় পাঠানো হয় অধিক ক্ষমতা সম্পন্ন ক্যামেরাটি। তখন পাইপের নিচে কঠিন কোনো বস্তুর সন্ধান পাওয়া যায়। ওই বস্তুটির কারণে যন্ত্রটিকে নিচে নামানো যাচ্ছিলো না। যার কারণে বস্তুটিকে ভাঙতে হামার জাতীয় কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়। কিন্তু সেটিকে ভাঙা সম্ভব হয়নি। এরপর থেকেই মুলত ফায়ার সার্ভিসের কার্যক্রম শিথিল করা হয়। এক পর্যায়ে বেলা আড়াইটার দিকে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার আলী আহম্মদ খান সংবাদ সম্মেলন করে তাদের ২৩ ঘণ্টার উদ্ধার কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে বলে ঘোষণা দেন।

জিহাদকে উদ্ধারের জন্য স্বেচ্ছসেবীদের তৈরি যন্ত্র
জিহাদকে উদ্ধারের জন্য স্বেচ্ছসেবীদের তৈরি যন্ত্র
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওই পাইপে জিয়াদের কোনো অস্তিত্বই নেই। এদিকে ফায়ার সার্ভিসের কার্যক্রম শিথিল হওয়ার পর কয়েকজন সাধারণ মানুষ ও স্বেচ্চাসেবীরা নিজের প্রযুক্তি ব্যবহার করে উদ্ধার কার্যক্রম চালাতে চান। ফায়ার সার্ভিস তাদের অনুমতি দেয়ায় তারা দ্রুত গতিতে দুটি ক্যাচার বা খাচা তৈরি করেন। মহাপরিচালকের সংবাদ সম্মেলন চলা অবস্থায় তারা একটি খাচা পাইপে ঢুকিয়ে দেন। সবাইকে আবাক করে দিয়ে মাত্র ২৩ মিনিটের মধ্যে তারা শিশু জিয়াদকে উপরে তুলে নিয়ে আসেন। কিন্তু ততক্ষণে জিয়াদ আর বেঁচে নেই।
ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী বলছিলেন, অত্যাধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করে ফায়ার সার্ভিস যে কাজ ২৩ ঘণ্টায় করতে পারেনি, সাধারণ মানুষ সাধারণ যন্ত্র ব্যবহার করে সেই কাজ ২৩ মিনিটে করে দেখিয়েছে।




সূত্রঃ নয়াদিগন্ত, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৪, শনিবার, ৯:০৬

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।