শরীরের প্রয়োজনীয় লবণ শাক, সবজি, ফলমূল
ইত্যাদি খাদ্য থেকেই যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া যায়। এজন্য রান্নায় বা পাতে আলাদা
লবণ খাওয়ার একেবারেই প্রয়োজন নেই। তবুও আমরা লবণ খাই! কারণ মানুষ তার
রসনাকে দীর্ঘকাল ধরে এমনভাবে অভ্যস্ত করেছে যে, সেই
অভ্যাসগত পরিমাণের চেয়ে কম বা বেশি হলেই খাবার বিস্বাদ লাগে।
অনেকের রসনা আবার এমনভাবে তৈরি করা যে রান্নার লবণ ছাড়াও
তারা পাতে কাঁচা লবণ না খেয়ে পারেন না।
বহুকাল ধরে অর্জিত এই অভ্যাস ছাড়াও লবণ খাওয়া সম্পর্কে
কিছু ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত আছে। আমরা ভাবি, ঘাম
হয়ে শরীরের যে পানি বেরিয়ে যায় তা পূরণের জন্য লবণ খাওয়া দরকার। এই বিশ্বাসে অনেকেই
মনে করেন খেলোয়াড়দের, বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে, বাড়তি লবণ খাওয়া আবশ্যক। কিন্তু বৈজ্ঞানিকরা বলছেন
যে, ঘামের মাধ্যমে শরীর বাড়তি লবণটাই বের করে দেয়। বিভিন্ন পরীক্ষায়
বার বার প্রমাণিত হয়েছে যে, কী শীত কী গ্রীষ্ম - যেকোনো ঋতুতেই লম্বা
দৌড় যাদের দৌড়াতে হয়, তারা সবচেয়ে ভালো দৌড়াতে পারেন যদি লবণমুক্ত
খাবার খান।
Institute of Experimental Therapy and Pathology-র রাশিয়ান বৈজ্ঞানিকরা
নির্দিষ্ট করে বলেছেন যে, লবণ সুনিশ্চিতভাবেই হৃদরোগ ও অন্যান্য
উপসর্গের সৃষ্টি করে। পর্যবেক্ষণে জানা গেছে যে, ৪০ বছর বয়সের পর কাঁচা
লবণ খেলে হাই ব্লাডপ্রেশার হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে। আসলে অতিরিক্ত
লবণ খেলে শরীরে যে অনুপাতে পানি আর লবণ আছে সেই অনুপাত বিঘ্নিত হয়, তখন
শরীরকে ওই অতিরিক্ত লবণ সামাল দেওয়ার জন্য ধরে রাখতে হয় বাড়তি পানি।
আর এই বাড়তি পানির ওজন সামলাতে হৃদযন্ত্রের পরিশ্রম হয় বেশি।
উত্তর জাপানের লোকেরা আমাদের চেয়ে ৩.৪ গুণ বেশি লবণ খায়
এবং ওদের শতকরা ৪০ জনই হাই ব্লাডপ্রেশারে ভোগে। অন্যদিকে, যে
দেশের লোকেরা লবণ কম খায় তাদের মধ্যে হাই ব্লাডপ্রেশারও খুম কম দেখা
যায়। যেমন গ্রীনল্যান্ডের এস্কিমো, চীন, অস্ট্রেলিয়ার আদিম অধিবাসী এবং পানামার কুনা
ইন্ডিয়ানরা। খাবারে বাড়তি লবণ
খাওয়ার ফলে পাকস্থলীর আস্তরণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার ফলে
ধীরে ধীরে পাকস্থলীতে ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে। লবণ শরীরে শোথ (edema) সৃষ্টি
করে। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে যদি দেখা যায় মাংসপেশী বা গাঁটগুলো শক্ত (stiff) হয়ে
আছে, তাহলে বুঝতে হবে বাড়তি লবণ খাওয়ার ফলেই শোথ দেখা দিয়েছে।
শোথ শরীরের টিস্যুগুলোতে ঠিকমতো অক্সিজেন পৌঁছাতে দেয় না। ফলে দেখা
দেয় আরথ্রাইটিস, দর্শন, শ্রবণ ও স্পর্শ ইন্দ্রীয়ের ত্রুটি ইত্যাদি।
Dr. Niel Laverson বলেন, মেয়েদের প্রায় শতকরা ৮০-৯০ জন নিয়মিত ভাবে মাসিকের
ঠিক আগ দিয়ে বদমেজাজ, বিষণ্নতা ইত্যাদি নানা অকারণ টেনশনে ভোগেন। এরা
কিন্তু লবণ খাওয়া একেবারেই কমিয়ে দিয়ে অনায়াসে ওই টেনশন থেকে মুক্ত হতে
পারেন। তবে অভ্যস্ত সুস্থদেহীর পক্ষে লবণ একেবারেই ছেড়ে দেওয়া
কষ্টকর বলে তাদের জন্য পুষ্টিতত্ত্বের বিচারে সব মিলিয়ে দৈনিক ৩ থেকে ৪
গ্রাম লবণ খাওয়া অনুমোদিত। তবে ডিজেনারেটিভ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে
লবণ খাওয়া একবারেই বাদ দিতে হবে।
তথ্যসূত্র: চিন্ময় সেনগুপ্ত,
বিনা ওষুধে রোগ নিরাময়, ২০০৩
বিনা ওষুধে রোগ নিরাময়, ২০০৩
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।