সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: ১৬২ আরোহী নিয়ে এয়ার এশিয়ার বিমান নিখোঁজ

১৬২ আরোহী নিয়ে এয়ার এশিয়ার বিমান নিখোঁজ


ইন্দোনেশিয়া থেকে সিঙ্গাপুরগামী এয়ার এশিয়ার একটি উড়োজাহাজ আজ রোববার নিখোঁজ হয়েছে। উড়োজাহাজটিতে ১৬২ জন আরোহী ছিলেন বলে জানিয়েছেন ইন্দোনেশিয়ার পরিবহন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জে এ বারাতা। খবর এএফপি, বিবিসির।

জাভা সাগরের ওপরে থাকার সময় নিয়ন্ত্রণকক্ষের সঙ্গে উড়োজাহাজটির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। ইন্দোনেশিয়ার নিয়ন্ত্রণকক্ষের কর্মকর্তা হাদি মোস্তফা জানান, জাভা ও কালিমান্টান দ্বীপের মধ্যবর্তী ওই জায়গায় বিমানটির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে বিমানটি নির্ধারিত পথে ছিল না। ওই সময় আকাশ মেঘলা ছিল। এদিকে টাইমস অব ইন্ডিয়ার অনলাইনের খবরে জানানো হয়, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব দিকের বেলিটাং দ্বীপে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়েছে। সেখানে উড়োজাহাজের ধ্বংসাবশেষ দেখতে পাওয়া গেছে। তবে কর্তৃপক্ষ নিশ্চিতভাবে কিছু জানায়নি।
এয়ার এশিয়ার যাত্রীদের স্বজনদের কান্না
এয়ার এশিয়ার যাত্রীদের স্বজনদের কান্না
এর আগে পরিবহন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জে এ বারাতা এএফপিকে জানান, স্থানীয় সময় সকাল সাতটা ৫৫ মিনিটে জাকার্তার নিয়ন্ত্রণকক্ষের সঙ্গে এয়ার এশিয়া কিউজেড৮৫০১ ফ্লাইটির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বিবিসি ও এএফপির খবরে জানানো হয়, উড়োজাহাজটিতে সাতজন ক্রু ও ১৫৫ জন যাত্রী ছিলেন। যাত্রীদের মধ্যে ১৩৮ জন প্রাপ্তবয়স্ক, ১৭ শিশু রয়েছে। রয়টার্সের খবরে জানানো হয়, নিখোঁজ যাত্রীদের মধ্যে ১৪৯ জন ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক। নিখোঁজ বাকি ছয় যাত্রীর মধ্যে তিনজন কোরিয়ার নাগরিক। এ ছাড়া মালয়েশিয়া, ব্রিটেন ও সিঙ্গাপুরের একজন করে নাগরিক রয়েছেন। ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব জাভার সুবাবায়া এলাকার জুয়ানদা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে স্থানীয় সময় ভোর পাঁচটা ২০ মিনিটে উড়োজাহাজটি ছেড়ে আসে। এয়ার এশিয়ার কিউজেড ৮৫০১ ফ্লাইটটি সকাল সাড়ে আটটায় সিঙ্গাপুরে পৌঁছানোর কথা ছিল। মালয়েশিয়ার এয়ার এশিয়া এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ জানায়, নিখোঁজ উড়োজাহাজটির সন্ধান ও উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছে। আরোহীরা কোন অবস্থায় আছেন, সে ব্যাপারে এখনো কিছু জানা যায়নি।

নিখোঁজ বিমানের অনুসন্ধান স্থগিত - আপডেট: ২০:২৪, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৪

নিখোঁজের ১১ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এয়ার এশিয়ার উড়োজাহাজের খোঁজ পাওয়া যায়নি। উড়োজাহাজটির খোঁজে জাভা সাগরে অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে। তবে রাত নেমে আসায় আজকের মতো অনুসন্ধান স্থগিত করা হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকালে আগামীকাল সোমবার সকাল থেকে পুনরায় অনুসন্ধান শুরু হবে। এএফপির প্রতিবেদনের এ খবর জানানো হয়েছে।

খবরে বলা হয়, ১৬২ জন আরোহী নিয়ে এয়ার এশিয়ার ফ্লাইট কিউজেড ৮৫০১ ইন্দোনেশিয়া থেকে সিঙ্গাপুরে যাচ্ছিল। স্থানীয় সময় সকাল পাঁচটা ২০ মিনিটে সুরাবায়ার জুয়ানডা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইটটি ছেড়ে যায়। সকাল সাড়ে আটটায় বিমানটির সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। কিন্তু বিমানটি আকাশে ওড়ার এক ঘণ্টার মধ্যে এর সঙ্গে জাকার্তা এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ওই সময় উড়োজাহাজটি জাভা সাগরের ওপর দিয়ে যাচ্ছিল।

উড়োজাহাজটিতে যাত্রী ছিলেন ১৫৫ জন। তাঁদের মধ্যে ১৭ জন শিশু রয়েছে। আর কেবিন ক্রু পাঁচজন এবং পাইলট ও সহকারী পাইলট ছিলেন। আরোহীদের মধ্যে ১৫৫ জন ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক। এ ছাড়াও দক্ষিণ কোরিয়ার তিনজন এবং সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের একজন করে নাগরিক রয়েছে। ফ্রান্সের ওই নাগরিক সহাকারী চালক ছিলেন। এয়ার এশিয়া তাদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে এক বিবৃতিতে বলেছে, উড়োজাহাজটি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে পাইলট বৈরী আবহাওয়ার কারণে জাকার্তা এয়ার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণকক্ষের কাছে গতিপথ পরিবর্তনের অনুমতি চান।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩২ হাজার ফুট ওপর দিয়ে উড়োজাহাজটি চলছিল। কিন্তু আকাশে প্রচুর মেঘ থাকায় তা এড়াতে বিমানের চালক ৩৮ হাজার ফুট ওপর দিয়ে চালানোর জন্য নিয়ন্ত্রণকক্ষের অনুমতি চেয়েছিলেন।এদিকে, ইন্দোনেশিয়া বিমানবাহিনী নিখোঁজ বিমানের সন্ধানে জাভা সাগরে তাদের দুটি উড়োজাহাজ পাঠিয়েছে।বিমানবাহিনীর মুখপাত্র হাদি চায়য়ান্তো ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগে বলেন, আবহাওয়া মেঘলা এবং ওই এলাকা সাগরঘেরা। আমরা এখনো পথে রয়েছি। তাই উড়োজাহাজটির কী হয়েছে, তা নিয়ে কোনো অনুমান করতে চাইছি না।

অনুসন্ধানকারী দলের প্রধান এফ এইচ বি সোইলিসতিও এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, আমরা আমাদের সর্বোচ্চ শক্তি ব্যবহার করব। এ ক্ষেত্রে সেনাবাহিনী, পুলিশ থেকে শুরু করে জেলেদের কাছ থেকে সহায়তা নেওয়া হবে। তিনি আরও জানান, আগামীকাল মারয়েশিয়া থেকে তিনটি বিমান তাদের সঙ্গে যোগ দেবে। ইন্দোনেশিয়ার কাছ থেকে অনুমতি পাওয়ার পর সিঙ্গাপুর থেকেও সি-১৩০ নামের সামরিক বিমানও অনুসন্ধানকাজে অংশ নিতে প্রস্তুত রয়েছে। অস্ট্রেলিয়া সাহায্য করতে আগ্রহী। দেশটির যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা হাদি মোস্তফা এএফপিকে বলেন, অন্ধকার হয়ে আসায় আমরা স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে পাঁচটায় আজকের জন্য তল্লাশি অভিযান স্থগিত করেছি। সেখানকার আবহাওয়াও তেমন ভালো না, খুবই মেঘলা। যদি আবহওায়া ভালো থাকে, তাহলে আগামীকাল সকাল সাতটায় বা তার আগে পুনরায় তল্লাশি শুরু হবে।


এ বছরেই ৮ মার্চ মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ৩৭০ একটি নিয়মিত যাত্রীবাহী বিমান নিখোজ হয়।  মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে চীনের বেইজিং যাওয়ার উদ্দেশে বিশ্বের ১৫টি দেশের ২২৭ জন যাত্রী ও ১২ জন কর্মী নিয়ে বিমানটি যাত্রা শুরু করে, যার বেশির ভাগই ছিল চীনা। বিমানটি কুয়ালালামপুর ছাড়ার এক ঘণ্টার কিছু কম সময় পরে ভিয়েতনামের দক্ষিণে কামাউ-এর আকাশসীমায় প্রবেশের পর বিমানটির সাথে নিয়ন্ত্রণ কক্ষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বিমান চলাচলের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি খরচ করা হয়েছে বিমানটির অনুসন্ধানের জন্য। ২৮টি দেশ এই উদ্ধারকার্যে অংশগ্রহণ করে।


মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের নিখোঁজ বিমানটির তল্লাশি নিয়ে বিশ্বজুড়ে তোলপাড় চলে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার আগে সম্ভবত সাত ঘণ্টা ধরে আকাশে ছিল ফ্লাইট ৩৭০। সাধারণত যোগাযোগব্যবস্থা পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও যেকোনো বিমানের বেসিক সিস্টেম হিসেবেই ইঞ্জিন নির্দিষ্ট প্রযুক্তির সাহায্যে নিজে নিজেই তাদের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কিংবা এয়ারলাইন্সকে কিছু কারিগরি তথ্য পাঠাতে পারে। তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, এ রকমই কিছু সিস্টেম এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারদের সাথে ফ্লাইট ৩৭০-এর যোগাযোগ নষ্ট হয়ে যাওয়ার পরও অনেকক্ষণ ধরে কাজ করছিল। আর সেটা থেকেই তারা ধারণা করছেন অকৃশ্য হয়ে যাওয়ার পরও প্রায় সাত ঘণ্টা ধরে আকাশেই অবস্থান করছিল বিমানটি।
সাধারণত যেসব প্রযুক্তির মাধ্যমে বিমান খোঁজা হয় তার একটি হলো এসিএআরএস (এয়ারক্র্যাফট কমিউনিকেশন্স অ্যাড্রেসিং অ্যান্ড রেসপন্ডিং সিস্টেম)। এর কাজ হলো শর্ট রেডিও বার্স্টের মাধ্যমে এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তাদের সাথে বিমানের অবস্থা সম্পর্কে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তথ্য আদান-প্রদান করা। এসিএআরএস-এর মাধ্যমে একটা বিমানের বিভিন্ন রকমের তথ্য পাঠাতে পারে। বিমানের কতটুকু জ্বালানি বাকি আছে কিংবা ইঞ্জিনের অবস্থাই বা কেমন এ ধরনের হালহকিকত তদারকির জন্য এই প্রযুক্তিকে কাজে লাগানো হয়। ২০০৯ সালে ব্রাজিলের এক সমুদ্রসৈকতে আছড়ে পড়ার আগে এয়ার ফ্রান্সের ফ্লাইট ৪৪৭ এ ধরনের ২৯টি এসিএআরএস মেসেজ পাঠিয়েছিল; যার কারণে ট্রান্সপন্ডার নষ্ট হয়ে গেলেও বিমানটির ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা সম্ভব হয়। কিন্তু মালয়েশিয়ার বিমানটির কোনো হদিস পাওয়া যায় নি।

পতনের ঠিক আগে বিমানটির অবস্থান সঠিক কী ছিল তা নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। বিমানটি ধ্বংস হয়ে গেছে নিশ্চিত হওয়ার পর এর ধ্বংসাবশেষ, বিশেষ করে ব্ল্যাক বক্স বা ফ্লাইট রেকর্ডারে উদ্ধারের কার্যক্রম চলতে থাকে। অনুসন্ধানী জাহাজ সাগরের তলদেশে ব্ল্যাকবক্স থেকে সিগন্যাল পেয়েছে এবং তারা এর অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত বলে দাবি করা হয়েছিলো। তবে শেষ পর্যন্ত কিছুই খুঁজে পাওয়া যায়নি। সমুদ্রের তলদেশে ব্যাপক অনুসন্ধান চালানো হয় কিন্তু বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার কোনোরূপ নিশ্চিত ইঙ্গিত বা ধ্বংসাবশেষ চিহ্নিত করা যায়নি।

মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ ফ্লাইট এমএইচ৩৭০ কে মার্কিন গুলিতে বিধ্বস্ত হয়েছে বলে দাবি উঠে। এ ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য পরস্পর বিরোধী নানা তত্ত্ব প্রকাশ করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন ফরাসি এয়ারলাইন্সের সাবেক প্রধান নির্বাহী মার্ক ডুগেইন। ভারত মহাসাগেরর দিয়াগো গাসিয়ায় কাছে বিমানটি ভুপাতিত করা হয় বেল ফরাসি এই বিশেষজ্ঞ দাবি করেন। মালয়েশিয়া এয়ার লাইন্সের অারেকিট উড়োজাহাজ ২৮৩ জন যাত্রী ও ১৫ জন ক্রু নিয়ে আমাস্টারডাম থেকে কুয়ালালামপুর যাওয়ার পথে ইউক্রেন - রাশিয়া সীমান্তে বিধ্বস্ত হয়। ই্‌উক্রেনের বিদ্রোহীদের ক্ষেপনাস্ত্রর আঘাতে এটি বিধ্বস্ত হয়। চলতি বছরের জুলাই মাসে বোয়িং ৭৭৭ এই বিমানটি ভুপাতিত করা হয়। যারা নিহত হয় তাদের বেশির ভাগ ইউরোপের নাগিরক। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে রাশিয়ার সম্পকের চরম অবনতি ঘটে।


সূত্রঃ প্রথম আলো, ১২:৩৩, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৪

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।