প্রতিবছর
দুনিয়াজুড়ে লাখ লাখ মানুষ মারা যান কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে। শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ কিডনি। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না কীভাবে এর সঠিক যত্ন নিতে
হয়, কীভাবে
কিডনির ক্ষতি এড়িয়ে দৈনন্দিন
জীবনযাপন
করতে হয়। প্রতিদিনের জীবনে আমরা এমন অনেক কিছুই
করি যা কিডনির জন্য
ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে। অর্গানিক
হেলথ ডটকম এক প্রতিবেদনে এমন ১০
কারণের
কথা জানিয়েছে।
পর্যাপ্ত পানি পান না করা
প্রতিদিন
যেসব কারণে কিডনির ক্ষতি হয় তার মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ কারণটি হলো পর্যাপ্ত পানি পান না
করা। কিডনির অন্যতম প্রধান কাজ শরীর থেকে
পরিপাক প্রক্রিয়ার
বর্জ্য অপসারণ করা এবং লোহিত রক্তকণিকার ভারসাম্য রক্ষা করা।
কিন্তু
পর্যাপ্ত পানি পান না করলে বৃক্বের রক্তপ্রবাহ কমে যায়। এর ফলে রক্তে দূষিত রাসায়নিক জমা হতে থাকে।
দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব না করে থাকা
দীর্ঘক্ষণ
প্রস্রাব না করে থাকা প্রাত্যহিক সমস্যাগুলোর একটা। বিশেষত পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেটের অভাবে শহরাঞ্চলের নারীরা এই সমস্যায়
বেশি ভোগেন। দীর্ঘক্ষণ মূত্রাশয় পূর্ণ করে রাখা শরীরে নানাবিধ জটিলতা
সৃষ্টি করতে পারে। পেশির ওপর চাপ থেকে ডাইভারটিকিউলোসিসের
মতো জটিল রোগ হতে পারে। এ ছাড়া দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব
না করা থেকে হাইড্রোনেফ্রোসিস বা কিডনিতে প্রস্রাবের চাপ বেড়ে যাওয়ার সমস্যা তৈরি হয়। এসব থেকেই কিডনি কর্মক্ষমতা হারায় এবং ডায়ালাইসিস
প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে।
বেশি লবণ খাওয়া
বিভিন্ন খাবার-দাবারে মিশে থাকা
লবণকে পরিপাক করা কিডনির আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
রান্না
করা বা প্যাকেটজাত খাবারে ব্যবহার করা লবণ আমাদের শরীরে সোডিয়ামের বড় উৎস। কিন্তু পরিপাকের মধ্য দিয়ে এই
সোডিয়ামের বেশির ভাগটাই বর্জ্য
হিসেবে
শরীর থেকে বের করে দিতে হয়। আমরা
যখন বেশি বেশি লবণ খাই, তখন এই সোডিয়াম প্রক্রিয়াজাত
করা নিয়ে কিডনিকে অনেক বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়। এতে কিডনির ওপর প্রবল চাপ পড়ে।
ক্যাফেইনে বেশি আসক্তি
তৃষ্ণা
পেলে আমরা অনেক সময় পানি পান না করে নানা ধরনের কোমল পানীয় পান করি। কিন্তু এসব পানীয়ের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে
ক্যাফেইন মেশানো থাকে। অতিরিক্ত
ক্যাফেইন শরীরে রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে। অতিরিক্ত
রক্তচাপ কিডনির
ওপরও চাপ প্রয়োগ করে এবং এতে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ব্যথানাশকের প্রতি নির্ভরশীলতা
মাথাব্যথা, গলাব্যথা যা-ই হোক না কেন
কথায় কথায় ব্যথার ওষুধ খাওয়ার
বাজে
অভ্যাস আমাদের অনেকেরই আছে। কিন্তু
প্রায় সব ব্যথানাশক ওষুধেরই কিছু
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
থাকে। কিডনিসহ নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জন্য এসব
ওষুধ ক্ষতিকর। গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত
ব্যথানাশক ওষুধের ওপর নির্ভরতা
রক্তচাপ কমিয়ে দেয় এবং কিডনির কর্মক্ষমতা হ্রাস করে।
বেশি বেশি প্রোটিন খাওয়া
কিডনি
ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়লে লাল মাংস বা গরু-ছাগলের মাংস বেশি খাওয়া ঠিক না। বেশি প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার কিডনির ওপর
চাপ তৈরি করতে পারে। তবে, কিডনির সমস্যা না থাকলে বা
চিকিৎসকের নিষেধ না থাকলে এমন প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া যেতে পারে।
অ্যালকোহলে আসক্তি
মদ্যপানের
অভ্যাস আছে এমন অনেকেরই অনেক সময় মাত্রাজ্ঞান থাকে না। আর খুব বেশি পরিমাণে মদ পান করা কিডনির জন্য খুবই ক্ষতিকর। অ্যালকোহলে নানা ধরনের টক্সিন থাকে, যেগুলো শরীর থেকে দূর করতে
কিডনির ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে
যায়। ফলে কিডনি বাঁচাতে হলে অবশ্যই
অ্যালকোহলে আসক্তি কমাতে হবে।
ধূমপানে আসক্তি
যুক্তরাষ্ট্রের
রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের অভিমত অনুসারে ধূমপান কিডনিসহ শরীরে সব অঙ্গের
জন্যই ক্ষতিকর। এ ছাড়া বিভিন্ন গবেষণাতেই ধূমপানের সঙ্গে কিডনি
রোগের সম্পর্ক আছে। সুস্থ
কিডনি চাইলে ধূমপানের অভ্যাস
ত্যাগ করুন।
সর্দি-কাশিকে পাত্তা না দেওয়া
সাধারণ
সর্দি-কাশিকে পাত্তা না দেওয়া আমাদের অনেকেরই অভ্যাস। কিন্তু এই সর্দি-কাশিই কিডনির জন্য
ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। এ
ছাড়া নানা গবেষণায় দেখা
গেছে কিডনির সমস্যায় ভুগছেন এমন অনেকেরই অসুস্থতার সময়ে ঠিকমতো বিশ্রাম না নেওয়ার ইতিহাস
আছে।
রাত জেগে থাকা
রাত
জেগে থাকা, ঘুমাতে
না পারা আমাদের অনেকেরই নিয়মিত সমস্যা। কিন্তু
ঘুম শরীরের
জন্য নানা কারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঘুমের
সময়ই শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোর
টিস্যুর নবায়ন ঘটে। ফলে
ঘুমাতে না পারার সমস্যাটা
নিয়মিত
চলতে থাকলে কিডনিসহ শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোর এই কাজ বাধাগ্রস্ত হয়। এতে কিডনির স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা কমে
যায়।
সূত্রঃ প্রথম আলো ১৪/০১/২০১৫ খ্রিঃ।
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।