গেইয়াস জুলিয়াস সিজার (Gaius Julius Ceasar) ছিলেন একজন
রোমান সেনানায়ক ও রাষ্ট্রনায়ক। লাতিন ভাষার একজন উল্লেখযোগ্য গদ্যলেখক। রোমান প্রজাতন্ত্রকে
রোমান সাম্রাজ্যে ধীরে ধীরে রূপান্তরে তার ভূমিকা ছিল বড়মাপের। তার জন্ম খ্রিষ্টপূর্ব
১০০ অব্দের জুলাইয়ে। নিহত হন খ্রিষ্টপূর্ব ৪৪ অব্দে। নিহত হওয়ার সময় তার পরিচয় ছিল
একজন ডিক্টেটর কিংবা একজন কনসাল হিসেবে। এক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে তিনি নিহত হন। এ ষড়যন্ত্রে
লিপ্ত ছিলেন কমপক্ষে ৬০ জন রোমান সিনেটর। এরা নিজেদের বর্ণনা করতেন ‘লিবারেটর’ নামে। তাদের নেতৃত্ব দেন গেইয়াস ক্যাসিয়াস লঙ্গিনাস এবং মার্কাস
জুনিয়াস ব্রুটাস। তাদের ছুরির ৩৫টি আঘাতে জুলিয়াস সিজার নিহত হন রোমের পম্পেই থিয়েটারের
লাগোয়া একটি স্থানে। সে দিনটি ছিল খ্রিষ্টপূর্ব ৪৪ অব্দের ১৫ মার্চ, যা পরিচিত ওফবং ড়ভ গধৎপয নামে।
উল্লেখ ওফবং বলতে প্রাচীন রোমে মার্চ, মে, জুলাই ও অক্টোবর
মাসের ১৫ তারিখ ও অন্যান্য মাসের ১৩ তারিখকে বোঝায়।
পেছনের কথা
খ্রিষ্টপূর্ব ৬০ অব্দে সিজার, ক্র্যাসান ও পম্পেই যৌথভাবে
গড়ে তোলেন এক রাজনৈতিক জোট। এই জোট বেশ কয়েক বছর সে দেশে প্রাধান্য বিস্তার করতে সক্ষম
হয়। এরা ‘পপুলিস্ট ট্যাকটিকস’ অবলম্বন করে সচেষ্ট হন ক্ষমতা কুক্ষিগত
করতে। এর বিরোধিতায় নামেন রোমান সিনেটের কনজারভেটিভ এলিটরা। তাদের মধ্যে ছিলেন ‘ক্যাটো দ্য ইয়ঙ্গার’। তার প্রতি সমর্থন জানান সিসেরো। সিজারের গাউল বিজয় সম্পূর্ণ হয় খ্রিষ্টপূর্ব ৫১ অব্দে। এর ফলে
রোমান ভূখণ্ড সম্প্রসারিত হয় ইংলিশ চ্যানেল ও রাইন নদী পর্যন্ত। সিজার হন প্রথম রোমান
জেনারেল, যিনি ইংলিশ
চ্যানেল ও রাইন অতিক্রম করতে সক্ষম হন। তিনি রাইনের ওপর একটি সেতু নির্মাণ করেন। প্রথম
অনুপ্রবেশ করেন ব্রিটেনে।
এর মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন এক
অসমান্তরাল সামরিক শক্তি। খ্রিষ্টপূর্ব ৫৩ অব্দে ক্র্যাসাসের মৃত্যুর পর তিনি আবার
মিত্রতা গড়ে তোলেন সিনেটের সাথে। গ্যালিক যুদ্ধ শেষ হলে সিনেট সিজারকে আদেশ দেন সামরিক
কমান্ড ছেড়ে রোমে ফিরে আসতে। কারণ গভর্নর হিসেবে তার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। সিজার সে
আদেশ প্রত্যাখ্যান করেন। কারণ তিনি মনে করেন, সামরিক বাহিনী ছাড়া রোমে প্রবেশ করলে তাকে হত্যা করা হতে পারে।
খ্রিষ্টপূর্ব ৪৯ অব্দে রুবিকন নদী পার হয়ে তিনি এক লেজিয়ন সৈন্য নিয়ে রোমে ফিরে আসেন।
উল্লেখ্য, প্রাচীন রোমান
বাহিনীতে এক লেজিয়নে থাকত তিন থেকে ছয় হাজার সৈন্য। এর ফলে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। সিজার
হয়ে ওঠেন রোমের অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেতা। সরকারের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে সিজার শুরু
করেন এক সামাজিক ও সরকার-সংশ্লিষ্ট সংস্কার। সূচনা করেন জুলিয়ান ক্যালেন্ডার। তিনি
প্রজাতন্ত্রের আমলা-ব্যবস্থা কেন্দ্রীভূত করেন। এক সময় নিজেকে ঘোষণা করেন 'dictator in perpetuity'। সোজা কথায় নিজেকে ঘোষণা করেন ‘স্থায়ী ও অবিরাম স্বৈরশাসক’। কিন্তু সমাধান করেননি বিদ্যমান রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব। এই দ্বন্দ্বের পথ বেয়েই তাকে
প্রাচীন রোমের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী খ্রিষ্টপূর্ব ৪৪ অব্দের ১৫ মার্চ লিভারেটর তথা সিনেটরদের
একাংশের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে খুন হতে হয়। সিনেটরদের যে গ্রুপটি তাকে হত্যা করে তার
নেতৃত্ব দেন মার্কাস জুনিয়াস ব্রুটাস ও গেইয়াস ক্যাসিয়াস লঙ্গিনাস। সিজারের মৃত্যুর
পর আরেক দফা নতুন করে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। ফলে রোমান প্রজাতন্ত্রে সাংবিধানিক সরকার আর
কখনোই প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি। সিজারের দত্তক উত্তরাধিকারী পরবর্তী সময়ে অগাস্টাস
নাম নিয়ে একক শক্তিতে পরিণত হলেন। শুরু হলো ‘রোম সাম্রাজ্যের যুগ’।
হত্যার পটভূমি
সিজারের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে
সবচেয়ে বেশি জানা যায়, তার সামরিক
অভিযান সম্পর্কিত তার নিজের লেখা থেকে। সমসাময়িক অন্যান্য উৎস থেকেও তার সম্পর্কে জানা
গেছে। বিশেষ করে রোমের তৎকালীন বাগ্মী রাষ্ট্রনায়ক ও লেখক সিসারোর চিঠিপত্র ও বক্তৃতা
থেকে সিজারের জীবনীকার সোয়েটনিয়াস ও প্লুটার্কের লেখা ও স্যালাস্টের ইতিহাস সম্পর্কিত
লেখালেখি থেকে সিজার সম্পর্কে জানা যায়। তার জীবনীকারদের বর্ণনায় উল্লেখ আছে, সিজার রাজা উপাধি ধারণ করতে
পারেন, এ ধারণা থেকে
সিজার ও সিনেটরদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। অনেকের মতে, সিজারের নিহত হওয়ার মুখ্য কারণ এ দ্বন্দ্বে নিহিত, তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষই তাকে
হত্যা করেছে। জীবনীকার প্লুটার্ক উল্লেখ করেছেন, এক সময় সিজার সিনেটকে জানান, তার ‘অনার’ বাড়ানোর চেয়ে
কমানো প্রয়োজন। কিন্তু তিনি ধারণ করেন Pater
Patride (Father of the Fatherland) উপাধি। তৃতীয়বারের মতো তাকে নিয়োগ
দেয়া হয় ‘ডিক্টেটর’ হিসেবে। এবং নমিনেশন দেন ৯ মেয়াদের
ডিক্টেটর হিসেবে। ফলে তিনি ১০ বছরের জন্য ডিক্টেটরে পরিণত হন। তা ছাড়া তাকে তিন বছরের
জন্য দেয়া হয় ‘সেন্সরিয়েল অথরিটি’।
সিনেট তাকে আখ্যায়িত করে ‘ডিক্টেটর ইন পারপিরিউটি’ বা ‘অবিরাম স্বৈরশাসক’ নামে। রোমান টাকশাল থেকে এক ধরনের মুদ্রা ছাড়া হয়। এ মুদ্রার
এক পাশে ছিল তার পরিচয় ও পদবিসহ নাম। অপর পিঠে ছিল দেবী সেরেস ও সিজারের খোদাই করা
উপাধি ‘পন্টিফেক্স ম্যাক্সিমাস।
খ্রিষ্টপূর্বাব্দ ৪৭-৪৪ সময়ে
তিনি পরিকল্পনা নেন তার সমর্থক ১৫০০০ পুরনো সৈনিকদের মধ্যে জমি বিতরণের। তার মৃত্যুর
অল্প সময় আগে তিনি বেশ কিছু সংস্কারে হাত দেন। তিনি গড়ে তোলেন একটি পুলিশ বাহিনী। তার
ভূমি সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য কর্মকর্তা নিয়োগ দেন। আদেশ দেন প্রাচীন নগরী কার্থেজ
ও কোরিনথ পুনর্গঠনের। তিনি গোটা রোম সাম্রাজ্যের ল্যাটিন অধিকার সম্প্রসারণ করেন। প্রতিষ্ঠা
করেন করব্যবস্থা। প্রবর্তন করেন আগের ব্যবস্থা, যাতে নগরগুলো প্রয়োজনীয় কর আদায়ের ক্ষমতা ফিরে পায়। তার হত্যার
ফলে বাধাগ্রস্ত হয় তার মার্স মন্দির নির্মাণ, বড় মাপের থিয়েটার ও আলেক্সান্দ্রিয়ার মতো বড়মাপের লাইব্রেরি
তৈরির পরিকল্পনা। তিনি অস্টিয়াকে পরিণত করতে চেয়েছিলেন একটি বড় বন্দরে। পরিকল্পনা ছিল
একটি খাল খননের। সামরিকভাবে তিনি বিজয় করতে চেয়েছিলেন ডেসিয়ান ও পার্থিয়ানদের। সেরূপ
সামরিক প্রস্তুতিও শুরু করেছিলেন। তার হত্যার অল্প কিছুদিন আগে সিনেট তাকে ‘আজীবন সেন্সর’ ও ‘ফাদার অব দ্য ফাদারল্যান্ড’ ঘোষণা করে। আর ‘কুইন্টিলিস’ মাসের নাম
পরিবর্তন করে তার প্রতি সম্মান দেখিয়ে ‘জুলাই’ রাখা হয়।
তাকে আরো সম্মান দেয়া হয়েছিল। তিনি হবেন ভবিষ্যতের ‘ডিভাইন মনার্ক’। মুদ্রার
পিঠে তার ছবিও মুদ্রিত হয়। সিনেটে তার জন্য দেয়া হয় একটি সোনার চেয়ার। এসব কিছুকেই
এখন তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে ধরা হয়।
হত্যাকাণ্ড
ষড়যন্ত্রকারীরা কখনোই খোলাখুলিভাবে
একসাথে বসেননি। মাঝে-মধ্যে এরা একে অন্যের বাড়িতে মিলিত হতেন। সেখানে নানা প্রস্তাব
নিয়ে আলোচনা চলত। আলোচনা হতো কোথায় কখন, কিভাবে তাকে হত্যার কাজটি সম্পন্ন করা যায়। কারো পরামর্শ ছিল তাকে হত্যা করা হবে
ঝধপৎবফ ডধু-তে, এটি ছিল একটি
ফেভারিট প্যাসেজ। আরেকটি ধারণা ছিল কাজটা করা নির্বাচনের সময়, যখন তিনি ব্রিজ পার হয়ে ক্যাম্পাস
মার্টিয়াসে যাবেন ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়োগ দিতে। কারো পরিকল্পনা ছিল সেতু থেকে তাকে
ফেলে দিয়ে কিংবা সেতুর ওপরই তাকে হত্যা করা। কেউ চেয়েছিলেন তাকে গ্ল্যাডিয়েটর শোর দিনে
হত্যা করা। এর একটা সুবিধা ছিল গ্ল্যাডিয়েটর শোতে অস্ত্র দেখতে পেলেও কেউ সন্দেহ করবে
না। তবে ষড়যন্ত্রকারীদের বেশির ভাগের অভিমত ছিল তাকে সিনেটে হত্যা করা। কারণ সিনেট
অধিবেশনের দিনে শুধু সিনেটরদেরই ভেতরে যেতে দেবে। সেদিন সিনেটরেরা তাদের ড্যাগার আলখেল্লার
ভেতরে লুকিয়ে ঢুকে পড়তে পারবেন সহজেই। এ পরিকল্পনাই চূড়ান্ত হলো।
যেদিন সিনেটে তিনি খুন হন, সেদিন সিজারকে তার চিকিৎসক, বন্ধুরা তার স্ত্রী ক্যালপুর্নিয়া
নানা কারণে সিনেটে যেতে মানা করেন। চিকিৎসক বললেন, তার শরীরটা ভালো নয়, তার মধ্যে এক ধরনের তন্দ্রালু ভাব লেগে আছে। তা ছাড়া স্ত্রী
ক্যালপুর্নিয়া রাতে যে স্বপ্ন দেখেন, তা তার কাছে ভালো ঠেকছে না। তাই তিনি ১৫ মার্চের সিনেট অধিবেশনে না যাওয়ার জন্য
সিজারের ওপর জোরাজুরি করছেন। কিন্তু ব্রুটাস, যিনি সিজারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে ভাবা হলেও তিনি ছিলেন ষড়যন্ত্রকারীদের
অন্যতম একজন। ব্রুটাস তখন সিজারকে বললেন, ‘একি সিজার, একজন মহিলা কী স্বপ্ন দেখল না দেখল, আর সে জন্য আপনি সিনেটে যাবেন না। কী হয়েছে আপনার? এসব বাদ দিন। চলুন সিনেটে। সিনেটে সবাই আপনার অপেক্ষায়, সেই সকাল থেকে। ব্রুটাসের কথামতো সিজার চলে গেলেন সিনেটে।
১৫ মার্চ, খ্রিষ্টপূর্বাব্দ ৪৪। ষড়যন্ত্রকারীরা
গ্ল্যাডিয়েটর খেলার বাস্তব খেলাটি মঞ্চায়ন করে পম্পেইয়ের থিয়েটারে। জুলিয়াস সিজার যখন
সিনেটে প্রবেশ করেন, তাকে দেখে
সিনেটরেরা তাকে সম্মান জানানোর জন্য উঠে দাঁড়ান। যারা এই হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রের সাথে
জড়িত ছিলেন, তারা দাঁড়িয়েছিলেন
সিজারের কাছাকাছি। তার ঠিক ডান পাশে এসে দাঁড়ান সিনেটর টিলিয়াস কিম্বার। এই কিম্বারের
ভাইকে সিজার নির্বাসনে পাঠিয়েছিলেন। কিম্বার তার ভাইয়ের একটি পিটিশন নিয়ে সিজারের কাছে
দেন। অন্যান্য ষড়যন্ত্রকারী তার চার পাশে এসে দাঁড়ান তার সমর্থনে। এ সময় হঠাৎ করে কিম্বার
সিজারের ঘাড় ধরে ফেলেন এবং সিজারের জ্যাকেট টেনে খুলে ফেলেন। সিজার তখন চিৎকার করে
কিম্বারের উদ্দেশে বলেন : কেন এই সন্ত্রাস? এ সময়ে বাকিরা সবাই তাদের ড্যাগার বের করে ফেলেন। এবং সিজারের
ওপর হামলে পড়েন। প্রথমেই সার্ভিলিয়াস কাসকা সিজারের বাম কাঁধে কলার-বোনের ওপরের দিকটায়
ছুরি দিয়ে আঘাত করতে চেষ্টা করেন। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে তার এই আঘাত লক্ষ্যভ্রষ্ট
হয়। সিজার দাঁড়িয়ে তা প্রতিরোধের চেষ্টা করেন। হাত দিয়ে ছুরির আঘাত ঠেকাতে সচেষ্ট হন।
কাসকা তখন চিৎকার করে নাম ধরে তার ভাইকে সাহায্যের জন্য ডাকেন। তার ভাই ডাক শুনে এসে
তার তরবারি সিজারের পাঁজরে ঢুকিয়ে দেন। এক মুহূর্ত পর ক্যাসিয়াস সিজারের মুখ ছুরি দিয়ে
বার বার আঘাত করতে থাকেন। এতে তার মুখ ফালি ফালি হয়ে কেটে যায়। ব্রুটাস সিজারের শরীরের
এক পাশে ছুরি ঢুকিয়ে দেন। যখন ক্যাসিয়াস মার্কাস সিজারকে মুষ্টাঘাত দিতে চেষ্টা করেন, তখন তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে মার্কাস
ব্রুটাসের হাতে লাগে। মিনিউকাসও সিজারকে আঘাত করেন। সবাই মিলে যেন এক সিজারের বিরুদ্ধেই
মল্লযুদ্ধ করছিল। এক সময় আঘাতের পর আঘাত পেয়ে তিনি পরে গেলেন পম্পেইয়ের মূর্তির পায়ের
নিচে। মনে হচ্ছে, সবাই যেন
চেয়েছিলেন এই খুনে অংশ নিতে। ফলে ষড়যন্ত্রকারীদের এমন কেউ বাকি ছিলেন না, যারা তাকে আঘাত করেননি। ছুরির
৩৫টি আঘাতের পর সিজার মারা যান।
তাকে খুন করার পর ব্রুটাস এগিয়ে
এসেছিলেন সেসব সিনেটরের উদ্দেশে কিছু বলতে, যারা এই ষড়যন্ত্রে সংশ্লিষ্ট ছিলেন না। কিন্তু তারা সবাই সিনেট
ভবন ছেড়ে ইতোমধ্যেই পালিয়ে যান। ব্রুটাস ও তার সাথীরা এরপর মিছিল করে চলে যান ক্যাপিটুলে।
এ সময় নগরবাসীর উদ্দেশে চিৎকার করে বলতে থাকেন : ‘রোমের প্রিয় জনতা, আমরা আবার স্বাধীন!’ সিজারের খুনের কথা শুনে নগরীর লোকজন
নিজেদের ঘরে চলে যায়। এই হত্যাকাণ্ডের পর কী ঘটে না ঘটে তা নিয়ে নগরবাসী ছিল শঙ্কিত।
ঘটনাস্থলে সিজারের মৃতদেহ পড়েছিল প্রায় ৩ ঘণ্টা। এরপর অন্য কর্মকর্তারা এসে তার লাশ
সরিয়ে নেয়।
হত্যাকাণ্ডের
পর
এই হত্যাকাণ্ডের পর কী ঘটবে
সে উপলব্ধি ছিল না হত্যাকারীদের মধ্যে। সিজারের মৃত্যুর ফলে রোম প্রজাতন্ত্রের দ্রুত
অবসান ঘটার অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছিল। রোমান মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের মধ্যে সিজার
খুবই জনপ্রিয় ছিলেন। সিনেটরদের একটি অভিজাত গোষ্ঠী সিজারকে হত্যা করায় তারা ক্ষুব্ধ
হয়েছিল। এন্টনি ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছিলেন সিজার থেকে। তিনি রোমান জনগণের এই অসন্তোষকে
ব্যবহার করে রোমে তার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হন। এ দিকে সিজার তার ভাইপোর ছেলে
গেইয়াস অক্টাভিয়ানকে একমাত্র উত্তরাধিকারী ঘোষণা করে গিয়েছিলেন। উইলের মাধ্যমে সিজার
তাকে সবকিছু দিয়ে রোমান প্রজাতন্ত্রের সবচেয়ে সম্পদশালী নাগরিক করে তুলেছিলেন। সিজারের
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় জনতা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য তৈরি মঞ্চ, লাশ পোড়ানোর জন্য সংগৃহীত কাঠ
বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা চালিয়ে ধ্বংস করে। ফলে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে
যায়। জনতা ব্রুটাস ও ক্যাসিয়াসের বাড়িতেও হামলা চালায়। এ ঘটনা লিবারেটরদের গৃহযুদ্ধ
স্ফুলিঙ্গ ছড়ায়।
ব্রুটাস ও ক্যাসিয়াসে প্রচুর
সৈন্য ছিল গ্রিসে। তাদের দমাতে এন্টনির প্রয়োজন ছিল সৈন্য ও নগদ অর্থ। এরপর মার্ক এন্টনি
মিত্রতা গড়ে তোলেন মিসরের রূপকথাতুল্য সম্পদের অধিকারী ক্লিওপেট্রার সাথে, যিনি ছিলেন সিজারের প্রেমিকা।
তৃতীয় গৃহযুদ্ধ বাধলে এক পক্ষে থাকেন অক্টাভিয়ান এবং অপর পক্ষে থাকেন এন্টনি ও ক্লিওপেট্রা।
শেষ এই যুদ্ধে দ্বিতীয় পক্ষের পরাজয় হয়। এর ফলে অক্টাভিয়ানের ক্ষমতায় আরোহণ স্থায়ী
হয়। তিনি হলেন রোমান সাম্রাজ্যের প্রথম সম্রাট এবং তিনি তখন নাম ধারণ করেন সিজার অগাস্টাস।
এই নাম ধারণ তার মর্যাদা দেবত্বে পর্যায়ে ওঠে।
মৃত্যুর আগে জুলিয়াস সিজার
প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন পার্থিয়া, ককেশাস এবং সিথিয়া দখল করে পূর্ব ইউরোপ দিয়ে জার্মানিয়া ফিরে আসার জন্য। তার মৃত্যুর
কারণে তা আর সম্ভব হয়নি। তার উত্তরসূরিরা অভিযান চালিয়েছিলেন পার্থিয়া ও জার্মানিয়া
বিজয়ের জন্য। কিন্তু তাতে কোনো স্থায়ী ফলোদয় ঘটেনি। জুলিয়াস সিজার ছিলেন প্রথম রোমান, যিনি সরকারিভাবে দেবত্ব লাভ
করেছিলেন। তাকে মরণোত্তর Divus
Lulilus অথবা Divus
Julim (the devine Julius) ঘোষণা করা হয় রোমান সিনেটের এক ডিক্রির
মাধ্যমে। এই ডিক্রি জারি করা হয় তার মৃত্যুর পর খ্রিষ্টপূর্ব ৪২ অব্দের ১ জানুয়ারি।
তার মৃত্যুর অল্প কিছুদিন আগে অক্টাভিয়ান ও মার্ক এন্টনি উভয়েই ডিভিয়াস লুলিয়াস সংস্কৃতি
ঊর্ধ্বে তুলে ধরেন। এন্টনির মৃত্যুর পর অক্টাভিয়ান ধারণ করেন Divi Filius (son of God) উপাধি।
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।