উইকেটে গিয়ে সঙ্গী
ব্যাটসম্যানকে বলেছিলেন,
‘২-১ ওভার দেখে তার পর চালিয়ে খেলব।’ এটাই
হওয়ার কথা, বাকি
তখন মাত্র ১১ ওভারের একটু বেশি। এই সময়ে একজনের পক্ষে কত রান করা সম্ভব? ৫০...৬০? ৭০-৮০ ভাবা একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যায়।
তিনি যখন বললেন ‘চালিয়ে
খেলব’, নিজের
ভাবনার সীমানাটাও নিশ্চয়ই এত দূর ছিল না! ২-১ ওভার দেখার তর সয়নি, প্রথম বলেই বাউন্ডারি। পরের ঘণ্টা খানেক
জোহানেসবার্গের ওয়ান্ডারার্স স্টেডিয়ামে যা হলো, ঝড়-সাইক্লোন-টর্নেডো—কোনো
বিশেষণই উপযুক্ত নয় সেটিকে বোঝাতে। ব্যাটিং-তাণ্ডবে তছনছ রেকর্ড বই, লেখা হলো নতুন ইতিহাস। গত বছরের প্রথম দিনে
শহীদ আফ্রিদিকে পেছনে ফেলে দ্রুততম ওয়ানডে সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছিলেন কোরি
অ্যান্ডারসন। আরেকটি জানুয়ারি না-ঘুরতেই সেই রেকর্ড অতীত। ৩৬ বলের সেই
সেঞ্চুরিকেও মনে হচ্ছে বড্ড ধীর,
ডি ভিলিয়ার্সের লাগল যে মাত্র ৩১ বল!
সেটি ছিল কাল ডি ভিলিয়ার্সের দ্বিতীয় রেকর্ড। অ্যান্ডারসনের আপাত তরতাজা রেকর্ড ভেঙেছেন, পুরোনো একজনকেও ‘বঞ্চিত’ করেননি। ১৯৯৬ সালের এপ্রিলে ১৭ বলে ফিফটির যে রেকর্ড গড়েছিলেন সনাৎ জয়াসুরিয়া, ১৬ বলের ফিফটিতে সেটিও নিজের করে নিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক। ফিফটির পর প্রথমে বুঝতেই পারেননি রেকর্ড। বড় পর্দায় রেকর্ডের কথা ভেসে ওঠার পরই মুখে ফুটল হাসি। সেঞ্চুরির রেকর্ডটা অবশ্য জানতেন। প্রতিপক্ষ অধিনায়ক জেসন হোল্ডারকে টানা দুই ছক্কায় সেঞ্চুরি ছুঁয়ে যখন উঁচিয়ে ধরলেন ব্যাট, উত্তাল ওয়ান্ডারার্সের গ্যালারি। শেষ পর্যন্ত শেষ ওভারে আউট হয়ে যখন ফিরছেন, নামের পাশে অতিমানবীয় সব সংখ্যা—৪৪ বলে ১৪৯! জোহানেসবার্গের এই ওয়ান্ডারার্স স্টেডিয়ামের খ্যাতি আছে দারুণ সব ‘ওয়ান্ডার’ উপহার দেওয়ার জন্য। এখানেই অস্ট্রেলিয়ার ৪৩৪ রান তাড়া করে জিতেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের ২০৫ তাড়া করে।
কদিন আগে দক্ষিণ
আফ্রিকার ২৩১ রানের এভারেস্ট টপকে টি-টোয়েন্টির নতুন ইতিহাস গড়ল ওয়েস্ট
ইন্ডিজ। কাল সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকেই পাল্টা দুঃস্বপ্ন উপহার দিলেন ডি ভিলিয়ার্স
অ্যান্ড কোং। ডি ভিলিয়ার্সের আগেই সেঞ্চুরি করেছেন দুই ওপেনার হাশিম
আমলা ও রাইলি রুশো, এক
দলের ইনিংসে তিন সেঞ্চুরি ওয়ানডে ক্রিকেট দেখল এই প্রথম। উদ্বোধনী জুটিতে আমলা-রুশোর ২৪৭ রান দক্ষিণ
আফ্রিকার সেরা শুরু।
আমলা-ডি ভিলিয়ার্সের ৬৭ বলে ১৯২ রানের জুটিতে আমলার অবদান ৩৩! অভাবনীয়ভাবে
ইনিংসের শেষ তিন বলে রান করতে না পারায় ওয়ানডেতে দলীয় সর্বোচ্চ
৪৪৩ রানের রেকর্ডটি গড়তে পারল না দক্ষিণ আফ্রিকা। থেমেছে ৪৩৯ রানে।
এই রান তাড়া করে জেতাটা প্রায় অকল্পনীয়। পারেওনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। হেরে গেছে ১৪৮
রানে। নিজেদের
ইনিংস শেষে টেন ক্রিকেটে সাক্ষাৎকারে হাশিম আমলা বলছিলেন ডি ভিলিয়ার্সের ওই কথা, ‘২-১ ওভার
দেখে চালিয়ে খেলব।’ অপরাজিত ১৫৩ রান
করেও কাল আমলা আড়াল ডি ভিলিয়ার্সে। তবু মুখে হাসি। ইনিংসটাই এমন যে
শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নিয়ে শুধু উপভোগ করা যায়, হাততালি দিতে হয় দাঁড়িয়ে!
সূত্রঃ প্রথম আলো, ১৯ জানুয়ারী ২০১৪
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।