রহস্যময় আদম চূড়ার অবস্থান শ্রীলংকার দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তের
শ্রীপাডা নামক প্রদেশে। হাজার হাজার বছর ধরে মানুষের কাছে রহস্যময়তার স্বাক্ষর বহন
করে চলেছে এই অ্যাডাম পিক বা আদম চূড়া। খ্রিস্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও মুসলিম- এই চার ধর্মের অনুসারীদের কাছে
অতি পবিত্র এই চূড়াটি (পাহাড়টি)। বলা হয়, এই চূড়াতেই মানুষের আদি পিতা হজরত আদম (আ) বেহেশত
থেকে সরাসরি পতিত হয়েছিলেন। চূড়াটির চারদিকে সবুজের বিপুল সমারোহ, মাঝেমধ্যে পাহাড়ি উঁচু-নিচু টিলা।
পাহাড়ি চূড়ার আশপাশে রয়েছে অসংখ্য ছোট নদী ও পাহাড়ি ঝরনা। সব মিলে এক মায়াবী
নয়নাভিরাম দৃশ্য।
হজরত আদম (আ) বেহেশত থেকে পতিত হন শ্রীলংকায়, আর আদি মাতা হজরত হওয়া (আ) পতিত হন
জেরুজালেমে। শ্রীলংকা থেকে জেরুজালেমের দূরত্ব কয়েকশ হাজার বর্গ কিলোমিটার। মহান
প্রভুর কাছে অনেক অনুতাপের পর উভয়ে মিলিত হন মধ্যপ্রাচ্যে। সেই থেকে শুরু করে
বর্তমান অবধি শ্রীলংকার এই চূড়াকে কেন্দ্র করে রহস্য রয়ে গেছে। হজরত আদম (আ) এই
চূড়ায় পতিত হয়েছিলেন বলে এই চূড়াটিকে বলা হয় আদম চূড়া বা অ্যাডাম পিক। এই চূড়ার
উচ্চতা ৭৩৬২ ফুট বা ২২৪৩ মিটার। চূড়াটিতে আদম (আ)-এর পায়ের যে চিহ্ন রয়েছে তার
পরিমাপ হচ্ছে ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি, দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ হচ্ছে ২ ফুট ৬ ইঞ্চি। বৌদ্ধ ধর্মমতে, খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দে এই পদচিহ্ন
আবিষ্কৃত হয়। আবিষ্কৃত হওয়ার পরে পদচিহ্নের চতুর্দিকে ঘেরাও করে রাখা হয়েছে। যুগ
যুগ ধরে শত শত পর্যটক পরিভ্রমণ করেছে চূড়াটিতে। বিশ্বের যেসব নামকরা পর্যটক এই
চূড়াটিতে পরিভ্রমণ করেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ইবনে বতুতা (১৩০৪-১৩৬৪) ও
মার্কো পলো (১২৫৪-১৩২৪)। চূড়াটিতে যারা পরিভ্রমণ করেছেন তারা এর চতুর্দিকে
পরিদর্শন করা ছাড়াও স্পর্শ করে দেখেছেন আদম (আ)-এর পদচিহ্ন।
বৌদ্ধ ধর্মের
অনুসারীরাই বেশি এই চূড়ায় যাতায়াত করেন। এ ধর্মের অনুসারীরা মনে করেন এই চূড়াটি
তাদের অস্তিত্বের আদি প্রতীক। তবে চূড়াটিতে যাওয়া কোনো সহজ ব্যাপার নয়। প্রথমে
নৌকা কিংবা পানিতে চলে এমন ধরনের যানে আরোহণ, তারপর পায়ে হেঁটে উঁচু পাহাড়ে ওঠা, সেখান থেকে অনেক কষ্টে চূড়ায় উঠতে হয়।
এরই মধ্যে ঘটতে পারে নানা ধরনের বিপত্তি। সাপ, বিষাক্ত পোকামাকড়ের কামড়ে মৃত্যুও ঘটতে পারে
অনেকের। লাখ লাখ বছর ধরে চলে আসা যে রহস্য আজও মানুষ জানতে পারেনি তা হল- চূড়ার যে
স্থানে আদম (আ)-এর পায়ের চিহ্ন সেই স্থানে জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সূর্যের
আলো, আর মে
থেকে নভেম্বর পর্যন্ত মেঘের ঘনঘটা বা বৃষ্টি পড়ে না। এমন আরও অনেক রহস্য আছে এই
চূড়াটিকে কেন্দ্র করে। অতি চমৎকার এই চূড়াটি বছরের পর বছর অবিকল রয়ে গেছে। এর
সৌন্দর্য এতটুকু ম্লান হয়নি। এ কারণে চূড়াটি বিশ্বের মানুষের কাছে পবিত্র বলে পরিচিত।
এ রিয়াজ
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।