অন্ধকারের প্রতি ভয় অনেকের মধ্যেই দেখা যায়। শিশুদের ক্ষেত্রে এটি বেশি পরিলক্ষিত হয়। তবে অনেক ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটি
পূর্ণবয়স্ক হওয়ার পরেও থেকে
যায়, যা তাদের মানসিক
স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।অনেক
সময় রাতে সামান্য শব্দ শুনলেই ভয়ে আপনার শিশুর মুখ ফ্যাকাসে হয়ে ওঠে। অনেক
শিশু রাতে অন্ধকারে ঘুমাতে পারে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় গল্পের
ছলে এই ভয়-ভীতি বাড়ির বড়রাই শিশুর মস্তিস্কে স্থায়ী করে দেন। ফলে
ভূত আর কথিত দাবনের ভয় তাকে তাড়া করে ফেরে সর্বদা। এটা শিশুদের মানসিক বৃদ্ধিকে চরমভাবে বাধাগ্রস্ত করে। গবেষণায় দেখা গেছে একজন মানুষ অন্ধকারে সবচাইতে
ভালো ঘুমাতে পারে। কারণ
অন্ধকার মানুষের ইন্দ্রিয়গুলোকে
নিষ্ক্রিয় করে, মস্তিষ্ক
শান্ত করে। আর শিশুদের জন্য ভালো ঘুম অত্যন্ত অপরিহার্য। সুতরাং অভিভাবক হিসেবে আপনার সন্তানের
অন্ধকারের ভয় দূর
করার দায়িত্বটি আপনারই।
শিশুদের এই ভয় দূর করতে যা করণীয়:
সন্তানকে
অহেতুক
ভূত-প্রেতের কল্পিত কাহিনী শোনানো থেকে বিরত থাকুন। তাকে বুঝিয়ে দিন ভূত-প্রেত, রাক্ষস-খোক্ষস কাল্পনিক। এর বদলে তাকে বাস্তবধর্মী বিভিন্ন বিষয় গল্পের ছলে বলুন। এতে একদিকে তার জ্ঞানের সীমা বাড়বে, অন্যদিকে কল্পিত ভয় থেকে মুক্তি মিলবে। পরিবারের অন্যদেরও বিষয়টি জানিয়ে দিন। আপনার
সন্তান
বিছানায় শোয়ার পর ঘুমিয়ে যাওয়া পর্যন্ত তাকে সময় দেওয়ার চেষ্টা করুন। তাকে জিজ্ঞেস করুন সে কেন ভয় পায়। যদি কোন আসবাবপত্র, যেমন আলমারি বা খাটের তলার দিকে ইঙ্গিত
করে তাহলে আলো জ্বালিয়ে তাকে দেখিয়ে দিন যে সেখানে কিছু নেই। আপনার সন্তানের কক্ষে একটি নাইট লাইট লাগিয়ে দিন। এতে শিশুর ঘরে আলো থাকবে, সে আবছাভাবে সবকিছু দেখতে
পাবে। ফলে তার ভয়ও কম থাকবে। শিশুকে
সাথে
নিয়ে লাইট জ্বালিয়ে এবং বন্ধ করে বোঝান যে ঘরে আলো থাকলে ঘর যেমন থাকবে, অন্ধকারেও ঠিক একই রকম
থাকবে। প্রয়োজনে তাকে বলুন আলো জ্বালিয়ে নিভিয়ে পরীক্ষা করতে।
রাতে বাইরের কক্ষ যেমন ড্রয়িং রুম বা হলওয়ের আলো জ্বালিয়ে রাখুন এবং
শিশুর ঘরের দরজা খোলা রাখুন। এতে
বাইরে থেকে আলো আসলে
সে ভয় পাবে না। যদি সেইরকম ব্যবস্থা না থাকে তবে তার
ঘরের বাথরুমের দরজা
হালকা ভেজিয়ে রেখে আলো জ্বালিয়ে দিতে পারেন। শিশুকে অন্ধকারের ভয় দূর করার জন্য কাউন্সিলিং করুন। তাকে নিয়ে অন্ধকার ঘরে প্রবেশ করুন এবং
বোঝান যে অন্ধকারকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। শিশুকে
নিশাচর
প্রাণীদের পুতুল বা খেলনা কিনে দিন। যেমন – বিড়াল, পেঁচা কিংবা বাদুড়। যদি শিশুরা ভাবতে পারে যে 'অন্ধকারে দেখতে পায়' এমন একটি প্রাণী তার বন্ধু তবে তার ভয়
অনেকাংশেই কমে যাবে। আপনার শিশু অন্ধকারে যেসব জিনিসের ভয় পায় সেগুলোর ছবি আঁকতে
বলুন, সেগুলোকে
সুন্দর করে রঙ করতে বলুন। ভয় কমে
যাবে। আপনার শিশুকে ইচ্ছামত পড়াশোনা করতে দিন, খেলতে দিন। তারা ক্লান্ত হয়ে পড়লে দ্রুত বিছানায়
যেতে চাইবে। দ্রুত ঘুমিয়ে পড়বে। যদি আপনার
শিশু কোন ভয়ের মুভি দেখার পর থেকে অন্ধকারে ভয় পেতে শুরু করে, তবে ওই ভয়ের মুভির পেছনে কি
ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে সেগুলো বোঝান। দরকার হলে কিছু উদাহরণ দেখাতে পারেন। কখনোই আপনার সন্তানকে এটা শেখাবেন না যে সে ভয় পেলে বাবা-মা তার
ভয় দূর করতে ছুটে আসবে। তাহলে
শিশু নিজের ভয় দূর
করতে শিখবে না। শিশুকে পরিস্থিতির মুখে ঠেলে দিন। আপনি পেছনে থেকে সহযোগিতা করুন। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিন ভয়ের নানা দিকের।
সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।