আগুনে দগ্ধ
হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একজন মানুষের কী করা উচিত তার সুপরামর্শ দিয়েছেন বার্ন
বিশেষজ্ঞরা। ঢাকা
মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক
অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন,
আগুনে পোড়া রোগীর ত্বকের পোড়া অংশের
সঠিক চিকিৎসা না হলে রোগী মারা যেতে পারেন। শিশুদের
ক্ষেত্রে শরীরের
১০ ভাগ এবং বয়স্কদের শরীরের ১৫ ভাগ দগ্ধ হলে তাকে অবশ্যই
হাসপাতালে ভর্তি
হতে হবে।
যা করবেন না : ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, শরীরে আগুন লাগলে আতংকিত হয়ে দৌড়াদৌড়ি বা ছোটাছুটি করা যাবে না। এতে আগুন শরীরে আরও ছড়িয়ে পড়ে। সে ক্ষেত্রে পুরো শরীর দগ্ধ হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে। আগুনে পুড়ে ছোট ছোট ফোস্কা তৈরি হবে। সেগুলো ফাটিয়ে পানি বের করা যাবে না।
যা করবেন না : ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, শরীরে আগুন লাগলে আতংকিত হয়ে দৌড়াদৌড়ি বা ছোটাছুটি করা যাবে না। এতে আগুন শরীরে আরও ছড়িয়ে পড়ে। সে ক্ষেত্রে পুরো শরীর দগ্ধ হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে। আগুনে পুড়ে ছোট ছোট ফোস্কা তৈরি হবে। সেগুলো ফাটিয়ে পানি বের করা যাবে না।
প্রথমেই যা
করবেন : শরীরের কাপড়ে আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে কাপড় খুলে ফেলতে হবে।
শরীরে ধরে গেলে মাটিতে শুয়ে দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে গড়াগড়ি দিতে
হবে। অথবা কম্বল
বা মোটাজাতীয় কাঁথা বা বস্তা দিয়ে চেপে ধরতে হবে। সেটি পানি দিয়ে ভিজিয়ে
নেয়ার সুযোগ থাকলে তা ভিজিয়ে নিতে হবে। এতে
আগুন দ্রুত নিভে যায়। এ পরামর্শ
দিয়েছেন ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি
আরও বলেন, পানি
থাকলে কমপক্ষে ১৫
মিনিট গায়ে ঢালতে হবে। যাতে
ত্বকের তাপমাত্রা স্বাভাবিক হয়ে আসে। পানি দিলে
ক্ষত কম হয়। ত্বকের
সঙ্গে লেগে যাওয়া কাপড় আস্তে আস্তে খুলে নিতে হবে, শরীরে কোনো অলংকার বা জুতা থাকলে খুলে
ফেলতে হবে। হাসপাতাল
দূরে হলে তাৎক্ষণিকভাবে
কোনো ডিসপেনসারিতে গিয়ে ত্বকের উপরিভাগের পোড়া অংশ পরিষ্কার সুতি
কাপড় দিয়ে ঢেকে দিতে হবে,
যাতে তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকে। পোড়া স্থান ড্রেসিং
করে ব্যান্ডেজ করে দিতে হবে। বেশি
পুড়ে গেলে যত দ্রুত সম্ভব বার্ন ইউনিটে নিতে হবে।
যে অংশ
ঝুঁকিপূর্ণ : ডা.
সামন্ত লাল সেন বলেন, সিএনজিচালিত
অটোরিকশায় পেট্রলবোমার আগুন তাৎক্ষণিকভাবে ভেতরেই থেকে যায়। ধোঁয়া বাইরে বের হতে সময় লাগে। এতে শ্বাস নিতে
কষ্ট হয়। অটোরিকশার
গেট লক করে রাখার কারণে যাত্রী দ্রুত বাইরে বের হতে
পারেন না। আগুন
ওপরের দিকে ওঠে। এ
কারণে দ্রুত শ্বাসনালি পুড়ে যায়। শরীরের
বেশি অংশ পুড়লে রোগীর শরীরের তাপমাত্রা খুব দ্রুত কমে যায়। যদি শ্বাসনালি, মুখমণ্ডল, দুই
হাতের তালু, চোখ, মাথা
পুড়ে যায় তাহলে রোগী
আশংকাজনক অবস্থায় থাকেন। এসব
রোগীকে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। তিনি আরও
বলেন, অন্যান্য
আগুনের চেয়ে সহিংসতার আগুনে যারা দগ্ধ হন তাদের মধ্যে আতংক
বেশি থাকে। তাদের
দীর্ঘদিন চিকিৎসা দিতে হয়। সুস্থ
হওয়ার পর তারা সহজ
স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন না। তাদের কেউ কাজ দেয় না। সরকারের পক্ষ থেকে
এদের পুনর্বাসন করা দরকার। ভয়াবহ
ক্ষতি হচ্ছে শিশুদের। পোড়া
শিশুকে সারাজীবন
পঙ্গুত্ব বরণ করতে হতে পারে। এ
বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান
অধ্যাপক ডা. লুৎফুল এহসান ফাতমী বলেন, পোড়া শিশুদের দীর্ঘ মেয়াদি জটিলতা
সৃষ্টি হয়। হাঁপানি, ব্রংকাইটিস বক্ষব্যাধি
জটিলতাসহ নানা রোগে ভোগে। অনেক
ক্ষেত্রে দগ্ধ শিশু বাড়ে না। তাদের
চামড়া কুচকে থাকে। সারা
জীবন এভাবেই তাদের বেঁচে থাকতে হবে।
সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলিং করতে হবে : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী সাইফুদ্দিন বলেন, পোড়া রোগীর ভবিষ্যৎ জীবনে মানসিক ও শারীরিক অসুস্থতা দেখা দিতে পারে। পোড়া অংশ দেখে সে আঁতকে উঠতে পারে। আগুন দেখলে ভয় পাবে। পোড়া রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়ার পর তাকে সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলিং করা দরকার। এমনকি তার পরিবারের অন্য সদস্যদের এ কাউন্সেলিং করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, সমাজের অন্যরা যখন তাকে দেখে একটু অন্যভাবে ভাবতে থাকে তখন সে নিজের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলতে পারে। বিশেষ করে শিশু বা কিশোররা পুড়ে শরীরে ক্ষত হলে সহপাঠীদের কাছ থেকে উপেক্ষিত হয়। এতে তাদের পড়ালেখা ক্ষতির পাশাপাশি নিজের মনোবল হারাবে। জীবনের প্রতি মায়া-মমতা হারাতে পারে। এ কারণে সমাজের অন্যদের উচিত হবে, পোড়া মানুষের সঙ্গে স্বাভাবিক আচরণ করা। সমাজের আর ৫ জনের মতো তাদেরও ভাবতে হবে। এতে তাদের মনবোল বৃদ্ধি পাবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নেহাল করিম বলেন, পোড়া রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে নিজের পোড়া শরীর দেখে হীনমন্যতায় ভোগে। সমাজে এদের কদর কমে যায়। চাকরি, বৈবাহিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এদের দূরে রাখা হয়। সামাজিক অনুষ্ঠানেও অনেকে তাদের এড়িয়ে চলে। তিনি বলেন, একদল চাচ্ছে তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে আর সরকার চাচ্ছে ক্ষমতা ধরে থাকতে, এ দ্বন্দ্বে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
যানবাহনে সতর্কতা : ফায়ার
সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন ও মেনটেইন্যান্স)
মেজর একেএম শাকিল নেওয়াজ মঙ্গলবার যুগান্তরে পাঠানো এক বিবৃতিতে
বলেন, রাজনৈতিক সহিংসতায় পেট্রলবোমায় বাস ও অন্যান্য যানবাহন পোড়ানো
হচ্ছে। এতে সাধারণ যাত্রীরা
দগ্ধ ও আহত হচ্ছেন। যানবাহনের চালক ও কর্মীদের
উদ্দেশে বলেন, যানবাহন চলাচলের সময় অবশ্যই গাড়ির জানালার গ্লাস বন্ধ
রাখতে হবে, গাড়িতে সবসময় এক ক্যান পানি সংরক্ষণ করতে হবে। দগ্ধ রোগীর প্রাথমিক
চিকিৎসার জন্য প্রতিটি গাড়িতে ফার্স্ট এইড বক্স রাখা জরুরি। প্রত্যেক
গাড়িতে ন্যূনতম ২টি ফায়ার এক্সটিংগুইশার (ড্রাই পাউডার টাইপ) রাখতে
হবে। এটি ব্যবহারে প্রয়োজনে
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স থেকে প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন
চালক ও কর্মীরা। বাসের ভেতরে দৃশ্যমান
স্থানে ফায়ার এক্সটিংগুইশারের সচিত্র ব্যবহারবিধি টানিয়ে রাখতে হবে। রাস্তার পাশে কিংবা অরক্ষিত
স্থানে গাড়ি পার্ক করে গাড়ির ভেতরে না ঘুমানোর জন্যও পরামর্শ দেয়া হয়
ওই বিবৃতিতে। গণপরিবহনের গাড়ি
ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে স্টপেজ করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে
আরও বলা হয়েছে- প্রতিটি গাড়িতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স
কন্ট্রোল রুমের টেলিফোন নম্বর (০২-৯৫৫৫ ৫৫৫ অথবা ০১৭৩০৩৩৬৬৯৯) দৃশ্যমান
স্থানে বড় অক্ষরে লিখে রাখতে হবে। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসে
খবর জানানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে
সূত্রঃ যুগান্তর, ২১ জানুয়ারী ২০১৫
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।