জন ফিটজারেল্ড কেনেডি। জন এফ
কেনেডি নামে সমধিক পরিচিত। ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫তম প্রেসিডেন্ট। আততায়ীর হাতে খুন
হন ১৯৬৩ সালের ২২ নভেম্বর শুক্রবারে। স্থানীয় সময় দুপুর সাড়ে ১২টায়। মারা যান টেক্সাস
অঙ্গরাজ্যের ডালাসের ডিয়ালে প্লাজায়। প্রেসিডেন্টের একটি মোটর শোভাযাত্রার সময় তার
ওপর গুলি চালানো হয়। এ সময় তার সাথে ছিলেন তার স্ত্রী জ্যাকুলিন, টেক্সাসের গভর্নর জন কোনালি
ও কোনালির স্ত্রী নিলি। কাছাকাছি সময়ে খুন হওয়া চারজন মার্কিন প্রেসিডেন্টের মধ্যে
কেনেডি ছিলেন চতুর্থ। আব্রাহাম লিঙ্কন, জেমস এ গ্যারিফিল্ড ও উইলিয়াম ম্যাকক্যানলি এই তিনজন প্রেসিডেন্ট গুলিতে নিহত হওয়ার
পর নিহত হন জন এফ কেনেডি।
দশ মাসব্যাপী তদন্ত শেষে ওয়ারেন
কমিশন (১৯৬৩-৬৪) সিদ্ধান্তে পৌঁছে প্রেসিডেন্ট কেনেডিকে এককভাবে হত্যা করেন লি হার্ভে
ওয়াসওয়াল্ড। এবং তাকে বিচারের মুখোমুখি করানোর আগেই জ্যাক রুবি এককভাবে খুন করেন ওয়াসওয়াল্ডকে।
প্রথম দিকে আমেরিকার সাধারণ মানুষ ওয়ারেন কমিশনের দেয়া এ তথ্য সত্য বলে ধরে নেয়। তা
সত্ত্বেও ১৯৬৬ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত সময়ে জনমত জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে, ৮০ শতাংশ আমেরিকানই মনে করেছে
এর পেছনে একটি ষড়যন্ত্র ছিল, আর সে ষড়যন্ত্রের বিষয়টি ঢাকা দেয়া হয়েছে। ফলে কেনেডি হত্যার প্রকৃত রহস্য এখনো
উদঘাটিত হয়নি।
ওয়ারেন কমিশনের বিপরীতে এইচএসসিএ
তথা যুক্তরাষ্ট্রের ‘হাউজ সিলেক্ট
কমিটি অন অ্যাসোসিয়েশনস’ ১৯৭৯ সালে উপসংহারে পৌঁছে, প্রেসিডেন্ট কেনেডি সম্ভবত ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে খুন হয়েছেন।
এইএসসিএ দেখতে পায় মূল এফবিআই তদন্ত রিপোর্ট এবং ওয়ারেন কমিশন রিপোর্ট, এই দুই রিপোর্টই ছিল সাজানো
রিপোর্ট। এইচএসসিএ ওয়ারেন কমিশনের সাথে এ ব্যাপারে একমত, যেসব গুলি কেনেডি ও গভর্নর কোনালির শরীরে লাগে, তার সবই চালান ওয়াসওয়াল্ড।
আর এই সম্ভাবনা প্রবল যে, প্রেসিডেন্টের দিকে গুলি চালিয়েছিল দু’জন বন্দুকধারী। কমিটি এই ষড়যন্ত্রে জড়িত কোনো বন্দুকধারী ও গোষ্ঠী চিহ্নিত করতে
পারেনি। কিন্তু সাক্ষ্যপ্রমাণের ওপর ভিত্তি করে বলা হলো, সিআইএ, সোভিয়েত ইউনিয়ন, সংগঠিত অপরাধী
চক্র ও অন্যান্য গোষ্ঠী এ ষড়যন্ত্রে জড়িত। কেনেডি হত্যার বিষয়টি এখনো একটি ব্যাপকভিত্তিক
বিতর্কের বিষয়। তা নিয়ে আলোচনায় এসেছে নানা ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব।
প্রেসিডেন্ট কেনেডির মোটরবহরটি
যাচ্ছিল ডালাস অভিমুখে। পরিকল্পনা ছিল ডালাসের জনসভার আগেই তাকে ও সেই সাথে ভাইস প্রেসিডেন্ট
ও গভর্নরকে বিপুলভাবে সংবর্ধিত করা হবে সেখানকার বিশিষ্ট নাগরিক ও ব্যবসায়ীদের আয়োজিত
দুপুরের এক ভোজসভায়। হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তা গোয়েন্দা বিভাগকে জানিয়েছিল, প্রেসিডেন্ট ১৩ মিনিটের এক
সংক্ষিপ্ত ফ্লাইটে ডালাসে পৌঁছবেন। বিমান বাহিনীর কার্সওয়েল ঘাঁটি থেকে তিনি বিমানে
ডালাস লাভ ফিল্ড এয়ারপোর্টে গিয়ে নামবেন। প্রাথমিকভাবে ভোজসভার স্থান নির্ধারণ করা
হয়েছিল ডালাস ট্রেড মার্টকে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তেও ট্রেড মার্টকে ভোজসভার স্থান হিসেবে
রাখা হয়। কেনেডির বন্ধু ও অ্যাপয়েন্টমেন্ট সেক্রেটারি কেনেথ ও’ গেনেল এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেন। তিনি
আরো সিদ্ধান্ত নেন মোটর শোভাযাত্রার পর কেনেডি এ ভোজসভায় যোগ দেবেন। আর ও’ গেনেল তার সাথে যাবেন।
ডালাসের লাভ ফিল্ড এয়াপোর্ট
ছেড়ে ৪৫ মিনিট সময় ধরা হয় মোটর শোভাযাত্রা শেষে ডালাস ট্রেড মার্টে পৌঁছার জন্য। মোটরযান
ধীরে ধীরে চালিয়ে নির্ধারিত ৪৫ মিনিট সময় ধরে চলবে এ মোটর শোভাযাত্রা। ট্রেড মার্টে
পৌঁছার কথা ১২টা ১৫ মিনিটে। এ সময় অতিক্রম করা হবে ১০ মাইল পথ। কোন রুটে চলবে এ শোভাযাত্রা
তা ঠিক করতে সক্রিয় দায়িত্ব পালন করেন স্পেশাল অ্যাজেন্ট উইনস্টন জি. ল’সন এবং সিক্রেট সার্ভিস অ্যাজেন্ট ফরেস্ট ভি সোরেলস। এরা যথাক্রমে দায়িত্বে ছিলেন
অ্যাডভান্স সিক্রেট সার্ভিসের হোয়াইট হাউজ সদস্য এবং ডালাস অফিস স্পেশাল অ্যাজেন্ট
ইনচার্জ হিসেবে। ১৪ নভেম্বর লসন ও সোরেলস লাভ ফিল্ডে এক বৈঠকে মিলিত হয়ে শোভাযাত্রা
রুট বরাবর গাড়ি চালিয়ে যান। দু’জনে এই রুটটিকে
মোটর শোভাযাত্রার জন্য সর্বোত্তম মনে করেন। লাভ ফিল্ড থেকে এই রুটটি চলে গেছে কিছুটা
শহরতলি হয়ে শহরকেন্দ্রের মূল সড়ক দিয়ে ট্রেড মার্টে।
২২ নভেম্বর ফোর্ট ওয়ার্থে ব্রেকফাস্ট
স্পিচ শেষে প্রেসিডেন্ট গিয়ে ‘এয়ারফোর্স ওয়ান’ বিমানে ১১টা ১০ মিনিটের সময়। পনের মিনিট পর পৌঁছেন লাভফিল্ড বিমানবন্দরে। ১১টা
৪০ মিনিটে প্রেসিডেন্টের মোটর শোভাযাত্রা লাভ ফিল্ড ছাড়ে। শোভাযাত্রার চলার কথা ৪৫
মিনিট। কিন্তু পথে প্রেসিডেন্টকে জনতার অনুরোধে নানা জায়গায় নামতে হয়। এ জন্য শোভাযাত্রার
সময় আরো দশ মিনিট বেড়ে যায়। এক সময় প্রেসিডেন্টের গাড়ি পৌঁছে ডিয়ালে প্লাজার সামনে।
গন্তব্যে পৌঁছতে আর মাত্র ৫ মিনিট বাকি।
ডিয়ালে প্লাজায় দুপুর সাড়ে
১২টায় কেনেডির উন্মুক্ত লিমুজিন গাড়ি ডিয়ালে প্লাজায় ঢুকল। টেক্সাসের তৎকালীন ফার্স্ট
লেডি নিলি কোনালি কেনেডির দিকে ফিরলেন। যিনি তার পেছনে বসা ছিলেন, প্রেসিডেন্টকে বললেন ‘মি. প্রেসিডেন্ট আপনি বলতে পারবেন না, ডালাস আপনাকে ভালোবাসে না’। প্রেসিডেন্ট কেনেডি তা স্বীকার করলেন।
হাউস্টন স্ট্রিট থেকে প্রেসিডেন্টের
লিমুজিন পরিকল্পনা অনুযায়ী বাম মোড় নেয় ইলম স্ট্রিটে ওঠে স্টিমন ফ্রিওকে এক্সিটে যাওয়ার
জন্য। এলম স্ট্রিটে উঠে প্রেসিডেন্টের মোটরকেও অতিক্রম করে ‘টেক্সাস স্কুল বুক ডিপোজিটরি’। এলম স্ট্রিট বরাবর মোটরকেড চলার সময় গুলি চলতে লাগল কেনেডির ওপর। অনেকেই তিনটি
গুলির শব্দ শোনার কথা জানিয়েছেন।
ওয়ারেন কমিশন ও হাউজ সিলেক্ট
কমিটি অন অ্যাসোসিয়েশনের মতে, প্রেসিডেন্ট যখন তার ডান দিকের জনতার উদ্দেশে তার ডান নেড়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, ঠিক তখন পিঠের ওপরের দিকে গুলি
লাগে, যা ঘাড়ের দিক দিয়ে বেরিয়ে যায়।
এ গুলি সামান্য ক্ষতি করে মেরুদণ্ড ও ফুসফুসের। ওয়ারেন কমিশনের মতে, দ্বিতীয় আরেকটি গুলি এসে লাগে
প্রেসিডেন্টের দেহে। সিলেক্ট কমিটি অবশ্য বলেছে, শেষ গুলিটি ছিল চতুর্থ গুলি, আর শুটার ছিল দুইজন। এ দু’জনের একজনের গুলি মিস হয়। কমিশন ও কমিটি শেষ গুলিটি লাগে প্রেসিডেন্টের মাথায়।
মিসেস কেনেডি এক সময় হামাগুড়ি দিয়ে লিমুজিনের পেছনে চলে যান এবং বলতে থাকেন : ‘ওরা আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। তার ব্রেন এখন আমার হাতের মধ্যে’। গভর্নর কোনালি ও মিসেস কোনালি তাকে এ কথা কয়েকবার উচ্চারণ করতে শুনেছেন। এ ঘটনায়
গভর্নর কোনালিও মারাত্মক আহত হন, তবে তিনি বেঁচে যান। ডাক্তার পরবর্তী সময়ে বলেছেন, কোনালি আহত হওয়ার পর তার স্ত্রী তাকে কোলে তুলে নিয়ে তার বুকে
রক্তপাত বন্ধ করে দেন। জেমস ট্যাগু নামে একজন দর্শকও। এ হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী। তার গালের
ডান দিকে সামান্য আহত হয়েছিলেন। তার মতে, দ্বিতীয় অথবা তৃতীয়টি তার শরীরে লাগে।
যখন প্রেসিডেন্টকে গুলি করা
হয়, তখন প্রেসিডেন্টের লিমুজিন
গাড়িটি এলম স্ট্রিটের উত্তর পাশের একটি গোলাকার ঘাসময় টিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। এস এম
হল্যান্ড নামে একজন তখন মোটর শোভাযাত্রা দেখছিলেন। তদন্তকারীদের কাছে তিনি বলেছেন, তিনি কাউকে এখান থেকে দৌড়ে
পালিয়ে যেতে দেখেননি। বারয়ার নামে একজন বেলরোড সুইসম্যান দোতলা টাওয়ারে বসে মোটর শোভাযাত্রা
উপভোগ করছিলেন। তিনি বলেছেন টাওয়ার ও এলম স্ট্রিটের মাঝে গুলির সময় মোট চারজন মানুষকে
দেখেছেন : একজন মধ্যবয়সী, একজন তরুণ। এরা ট্রিপল আন্ডারপাসের কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময়ে তাদের দু’জনের মধ্যে দূরত্ব ছিল ১০ থেকে ১৫ ফুট। এদের দু’জনের একজন আরেকজনকে চিনত বলে মনে হয় না। ডিয়ালে প্লাজায় ১০৪ জন এয়ার উইটনেসের মধ্যে
৫৪ জন বলেছেন গুলি এসেছে টেক্সাস স্কুল বুক ডিপোজিটরির দিক থেকে, ৩৩ জন বলেছেন গুলি এসেছে ঘাসময়
টিলার এলাকা থেকে কিংবা ট্রিপল আন্ডারপাসের দিক থেকে, ৯ জন বলেছেন গুলি এসেছে টিলা অথবা ডিপোজিটরি ছাড়া অন্য কোনো
এলাকা থেকে এবং তিনজন বলেছেন গুলি করা হয়েছে টিলা অথবা ডিপোজিটরি এলাকা থেকে। ওয়ারেন
কমিশন বলেছে, উল্লেখযোগ্যসংখ্যক
লোকের মতে গুলির সংখ্যা ৩।
লি হার্ভে ওসওয়াল্ডকে এই গুলির
ঘটনার ৭০ মিনিট পর গ্রেফতার করা হয়। ডিপোজিটরিতে তার সুপারভাইজার রয় ট্রলি পুলিশকে
জানিয়েছিল তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। তাকে আটক করা হয় ঘটনাস্থল থেকে ৩ মাইল দূরে এক স্থানে।
ডালাস পুলিশ কর্মকর্তা জে ডি টিপিটকে খুন করার জন্য তাকে আটক করা হয়। সাক্ষী হেলেন
মারকাসের মতে, পুলিশ কর্মকর্তা
জেডি টিপিট দেখেন ওয়াসওয়াল্ড সাইডওয়াক দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে ডিয়ালে প্লাজা থেকে ৩ মাইল
দূরের ওক ক্লিপের বাড়ির পাশ দিয়ে। পুলিশ অফিসার টিপিট এর আগে একটি রেডিও মেসেজ পেয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট কেনেডি হত্যার সন্দেহভাজনের বর্ণনা এ মেসেজে ছিল। টিপিট পেট্রল কারে ওয়াসওয়াল্ডের
সাক্ষাৎ পান। হেলেন মারকাম তদন্তকারীদের কাছে বলেছেন, কথা বিনিময়ের পর টিপিট তার গাড়ি থেকে নামেন। ওয়াসওয়াল্ড তখন
তাকে চারবার গুলি করেন। ওয়াসওয়াল্ডকে আটক করা হয় পাশের একটি মুভি থিয়েটার থেকে। কোনো
টিকিট না কিনেই চোরের মতো তিনি থিয়েটারে ঢুকে পড়ার পর তাকে আটক করা হয়। তাকে আটক করেন
যে কর্মকর্তা তার নাম এম এন ম্যাকডোনাল্ড। ওয়াসওয়াল্ড গ্রেফতারে বাধা দিয়ে তার পিস্তল
বের করতে চেয়েছিলেন। তাকে জোর করে থামিয়ে দেন পুলিশ কর্মকর্তা। রাতে তার বিরুদ্ধে কেনেডি
ও পুলিশ কর্মকর্তা হত্যার অভিযোগ আনা হয়। ওয়াসওয়াল্ড অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং বলেন
তিনি একজন নিপীড়িত ব্যক্তি। তাকে হত্যা করার কারণ তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নে ছিলেন।
ওয়াসওয়াল্ডকে কোনো বিচারের
মুখোমুখি হতে হয়নি। কারণ তিনিও এর মাত্র দুই দিন পর গুলিতে নিহত হন। তাকে গুলি করে
ডালাসের নাইটক্লাবের মালিক জ্যাক রুবি। তাকে ডালাস পুলিশ সদর দফতর থেকে ডালাস কারাগারে
নিয়ে যাচ্ছিল পুলিশ। এ সময়ই তিনি গুলিতে নিহত হন। সে দৃশ্য সরাসরি আমেরিকান টেলিভিশনে
দেখানো হয়। এটাই ছিল কোনো খুনের ঘটনা প্রথমবারের মতো সরাসরি টেলিভিশনে দেখানোর উদাহরণ।
ওয়াসওয়াল্ডকে খুনের পরপরই আটক করা হয় জ্যাক রুবিকে। তখন তিনি বলেন কেনেডি হত্যার ঘটনায়
তিনি ক্ষেপে গিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটান।
গুলির পর কেনেডির চিকিৎসা চলে
পার্কল্যান্ড হাসপাতালের ১ নম্বর ট্রমা কক্ষে। চিকিৎসক দেখলেন, তাকে বাঁচানো সম্ভব হবে না।
প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. জর্জ বার্কলি মাথার আঘাতেই কেনেডি মারা যাবেন
বলে নিশ্চিত ছিলেন। তিনিই কেনেডির ডেথ সার্টিফিকেটে সই করেন। স্থানীয় সময় বেলা ১টায়
তার হৃদযন্ত্রের যাবতীয় কাজ বন্ধ হলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। একজন চিকিৎসক বললেন :
আমরা কখনোই প্রেসিডেন্টকে বাঁচানো যাবে, তেমন প্রত্যাশা করিনি। আসলে প্রেসিডেন্টকে যখন হাসপাতালে আনা হলো কার্যত তিনি তখনই
মৃত। তার মৃত্যুর কথা হোয়াইট হাউজ সরকারি পর্যায়ে ঘোষণা করে বেলা ১টা ৩৩ মিনিটে। ঘোষণা
দেন হোয়াইট হাউজের অ্যাকটিং প্রেস সেক্রেটারি ম্যালকম কিলডাফ। তখন প্রেস সেক্রেটারি
পিয়েরে সেলিঙ্গার জাপান সফরে ছিলেন। তার সাথে ছিলেন মন্ত্রিসভার প্রায় অর্ধেক সদস্য।
তার মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডিন রয়স্কও ছিলেন। এ দিকে গভর্নর কোনালিকে নেয়া হলো ইমার্জেন্সি
সার্জারিতে। সে দিন তার দু’টি অপারেশন
চলে।
বেলা ২টায় ডালাস পুলিশ ও সিক্রেট
সার্ভিসের মধ্যে দ্বন্দ্বের পর কেনেডির লাশ একটি বাক্সে করে পার্কল্যান্ড হাসপাতাল
থেকে এয়ারফোর্স ওয়ানে নিয়ে যাওয়া হয়। পেছনের দরজা দিয়ে শবাধার বাক্সটি বিমানে তোলা
হয়। বিমানের পেছন দিকে কয়েক সারি আসন তুলে দিয়ে সেখানে রাখা হলো শবাধারটি। তার লাশ
নেয়া হলো ওয়াশিংটন ডিসিতে। সেখানে হোয়াইট হাউজের পূর্ব দিকের কক্ষে রাখা হলো ২৪ ঘণ্টার
জন্য। এর পর তাকে সমাহিত করা হয় ইউএস ক্যাপিটালে। ৯০টি দেশের প্রতিনিধিরা তার শেষকৃত্য
অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তাকে সমাহিত করা হয় ২৫ নভেম্বরে। সে দিন ছিল সোমবার। ভাইস প্রেসিডেন্ট
জনসন মোটর শোভাযাত্রার সময় প্রেসিডেন্টের সাথেই ছিলেন। তিনি আহত হননি। তিনি হন পরবর্তী
প্রেসিডেন্ট। লাভ ফিল্ড বিমানবন্দর ছাড়ার পরপরই বিমানেই তিনি প্রেসিডেন্টের শপথ নেন।
তখন ঘড়িতে ২টা ৩৮ মিনিট। তারিখটি ছিল ১৯৬৩ সালের ২২ নভেম্বর। প্রেসিডেন্ট কেনেডির মৃত্যুর
দিনও এটি।
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।