তাকে বলা হয় আধুনিক
মালয়েশিয়ার রূপকার। তার রাষ্ট্র পরিচালনা এবং
উন্নয়নের মন্ত্র কেবল নিজের দেশের ক্ষেত্রেই নয়, সমগ্র বিশ্বেই রোলমডেল হিসেবে স্বীকৃত। 'আমাকে দশজন যুবক দাও, আমি মালয়ীদের সঙ্গে
নিয়ে বিশ্বজয় করে ফেলব'- এমনি আদর্শিক চেতনা নিয়ে
দারিদ্র্যের তলানীতে অবস্থান করা মালয়েশিয়াকে তুলে এনেছেন উন্নয়ন আর আধুনিকতার
শীর্ষে। আপাদমস্তক বাস্তববাদী এবং দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ ডা. মাহাথির
মোহাম্মদ আক্ষরিক অর্থেই পৃথিবীর তাবত শাসকদের জন্য একটি অনুকরণীয় আদর্শ।
মাহাথির সম্পর্কে লিখতে গেলে
প্রসঙ্গের শেষ নেই। কিন্তু
বাংলাদেশি হিসেবে লিখতে গেলে তার সম্পর্কে মজার একটি বিষয় না লিখলেই নয়। এ তথ্যটি হয়তো অনেকেরই অজানা। চট্টগ্রাম জেলার উত্তরাংশে
রাঙ্গুনিয়া উপজেলাধীন চন্দ্রঘোনা ও কাপ্তাইগামী সড়কের সামান্য পূর্বে কর্ণফুলী
নদীর তীরে অবস্থিত একটি প্রসিদ্ধ গ্রাম মরিয়মনগর। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে এ গ্রামের
এক যুবক ব্রিটিশ শাসিত মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান। তিনি ছিলেন জাহাজের নাবিক। মালয়েশিয়ায় এ্যালোর সেটর গিয়ে এক
মালয় রমণীর সঙ্গে সম্পর্কে আবদ্ধ হন। তাদের
ঘরেই জন্ম নেয় মোহাম্মদ ইস্কান্দার। আর
এই মোহাম্মদ ইস্কান্দারের ছেলে সন্তান হিসেবে জন্ম নেন মাহাথির। সে হিসেবে চট্টগ্রাম হচ্ছে মাহাথিরের
পূর্বপুরুষের দেশ।
নিম্নমধ্যবিত্তের
একজন
ডা. মাহাথির মোহাম্মদের জন্ম ১৯২৫ সালের
১০ জুলাই মালয়েশিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর এ্যালোর সেটরে। তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা সেখানকারই একটি
নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে। পিতা
মোহাম্মদ ইস্কান্দারের নয় সন্তানের মধ্যে মাহাথির ছিলেন সবার ছোট। মাহাথিরের পিতা প্রথম জীবনে একজন
সাধারণ স্কুলশিক্ষক ছিলেন। পরবর্তীকালে
তিনি একজন সরকারি অডিটর হিসেবে কাজ করেছেন। তার
পিতা ছিলেন অত্যন্ত শৃঙ্খলাপরায়ণ একজন মানুষ। শৃঙ্খলা এবং গুছিয়ে চলার যে সহজাত
গুণ মাহাথিরের পরবর্তী জীবনে খুঁজে পাওয়া যায়, সেটি তিনি তার পিতার কাছ থেকে
পেয়েছেন বলেই ধারণা করা হয়। খেয়াল
করলে দেখা যাবে মাহাথির ছোটবেলা থেকেই দারুণ সুশৃঙ্খল জীবন পালন করেছেন। মাহাথিরের মা সাধারণ গৃহিণী হলেও
তিনি ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন। ছোটকাল
থেকেই তিনি মাহাথিরকে বাসায় পবিত্র কোরআন শিক্ষা দিতেন। মাহাথিরের সাধারণ জীবন দেখে বোঝার
উপায় ছিল না এই ছেলে একদিন বিশ্ব কাঁপাবে। তবে ছোটবেলা থেকেই তিনি মেধাবী ছিলেন এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
শিক্ষা জীবনের
শুরুতে
মাহাথির তার শিক্ষা জীবন শুরু করেন
সেবেরাং পেরাক মালয় স্কুলে। কিন্তু
তিনি চাইতেন ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করতে। সমস্যা হলো, ইংরেজরা মালয় ছেলেমেয়েদের ইংরেজি মাধ্যম
স্কুলগুলোতে সহজে সুযোগ দিত না। ভর্তি
পরীক্ষা হতো খুবই কঠিন। তাই
মালয় ছেলেমেয়েদের জন্য সুযোগ পাওয়া ছিল দুঃসাধ্য। সেই ছোটবেলাতেই তিনি এ বিষয়টিকে
চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেন। সবাইকে
অবাক করে দিয়ে ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় প্রথমদিকে স্থান করে নেন। আলোর সেতারের গভর্নমেন্ট ইংলিশ
স্কুলে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা শুরু করেন মাহাথির।
বাসায় তাদের একজন ধর্ম শিক্ষক ছিলেন
যিনি প্রতিদিন বাড়িতে এসে পবিত্র কোরআন, ইসলাম ধর্মের ওপর বিশ্বাস এবং ধর্মীয় বিভিন্ন
আচার-অনুষ্ঠান শেখাতেন। দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪১ সালে জাপান মালয়েশিয়া আক্রমণ করে। তখন সেখানকার ইংরেজি মাধ্যম স্কুল
বন্ধ হয়ে যায়। সেখানে একটি
জাপানি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। মাহাথিরের
বয়স তখন মাত্র ১৬। প্রথমে
তিনি জাপানি স্কুলে যেতে চাননি। ওই
সময় মাহাথির একটি স্থানীয় ছোট বাজারে কলা বিক্রি শুরু করেন। কিন্তু পিতার চাপে তিনি পরবর্তীতে ওই
জাপানি স্কুলে ভর্তি হন। মালয়েশিয়ায়
জাপানি শাসন প্রায় তিন বছর স্থায়ী ছিল। ১৯৪৭ সালে তিনি সিঙ্গাপুরের কিং এডওয়ার্ড মেডিসিন কলেজে ভর্তি হন
এবং চিকিৎসা শাস্ত্রে অধ্যয়ন সমাপ্ত করেন। ১৯৫৩ সালে তিনি সিঙ্গাপুর থেকে মালয়েশিয়া ফিরে আসেন।
মেধার
স্বাক্ষর
মেধাবী ছাত্র হিসেবে মাহাথিরের
পছন্দের বিষয় ছিল আইনবিদ্যা; কিন্তু সরকার তাকে পরামর্শ দেয় ডাক্তার হওয়ার। তাই তিনি সিঙ্গাপুরের কিং এডওয়ার্ড
সেভেন মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। স্কুলে
এবং মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় তিনি একটি ম্যাগাজিন সম্পাদনা করতেন এবং পত্রিকায়
লিখতেন। উল্লেখ্য, মেধাবী ছাত্র মাহাথির খুব সহজেই
বৃত্তি পেয়ে যান। এখানে উল্লেখ
করার মতো আরও একটি বিষয় রয়েছে। সেটি
হচ্ছে ১৯৪৭ সালে সিঙ্গাপুরের মেডিকেল কলেজে মাহাথিরসহ মাত্র সাতজন মালয় শিক্ষার্থী
ছিলেন। পরবর্তীতে এক সময়
মেধাবী মাহাথির পড়াশোনা শেষ করে ফিরে আসেন নিজ দেশ মালয়েশিয়ায়। ফিরে আসার পরই আসলে নিজের জীবনের
বাঁক পরিবর্তন করেন তিনি। দেশ
ও জাতির জন্য নতুন কিছু করার প্রত্যয়ে এগিয়ে যাওয়া শুরু করেন।
রাজনীতির বীজ কৈশোরেই
অন্য আট-দশজন মেধাবী
যেখানে রাজনীতি আর রাষ্ট্রীয় ঝুট-ঝামেলা থেকে বিরত থাকতে চান, সেখানে ব্যতিক্রম
ছিলেন মাহাথির মোহাম্মদ। তার রাজনৈতিক
আগ্রহের পরিচয় মিলেছিল সেই কিশোর বয়সেই। মাহাথিরের বয়স যখন
২০ বছর তখনই রাজনীতির সিংহ দরজায় কড়া নেড়ে ওঠেন তিনি। সমমত আর একই আদর্শের অনুসারী সহপাঠীদের একত্র
করে তিনি গোপনে 'মালয়ান ইউনিয়ন' প্রস্তাবের
বিরুদ্ধাচরণ শুরু করেন। দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত জাপানিরা চলে যাওয়ার আগে তৎকালীন মালয়েশিয়াকে তারা থাই সরকারের
শাসনাধীনে হস্তান্তর করে।পরবর্তীতে ব্রিটিশরা আবার ফিরে আসে এবং 'মালয়ান ইউনিয়ন' প্রতিষ্ঠা করে। মালয়ান ইউনিয়ন সত্যিকার অর্থে সম্পূর্ণ
উপনিবেশ ছিল। আর এটারই
প্রতিবাদে মাঠে নামেন মাহাথির ও তার বন্ধুরা। তারা তখন রাতের অন্ধকারে সারা শহরে রাজনৈতিক
বাণী সম্বলিত পোস্টার লাগাতেন। তাদের উদ্দেশ্য
ছিল সীমিত, 'মালয়ান ইউনিয়ন'প্রস্তাবের
সমাপ্তি এবং প্রজাতন্ত্রের মর্যাদা ফিরে পাওয়া। সাইকেল চালিয়ে তারা সমগ্র প্রদেশ ঘুরে ঘুরে
জনগণকে ব্রিটিশবিরোধী হিসেবে সংগঠিত ও সক্রিয় করার কাজে ব্যস্ত থাকতেন। সংগঠনে মাহাথির সাধারণত সম্পাদক বা দ্বিতীয়
অবস্থানটা বেছে নিতেন, কারণ দ্বিতীয় ব্যক্তিকেই
বেশি সাংগঠনিক কাজ করতে হয় ও অন্য দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হয়। মাহাথির প্রথম কেদাহ মালয় যুব ইউনিয়ন এবং পরে
কেদাহ মালয় ইউনিয়ন নামে রাজনৈতিক দল গঠন করেন, যা পরবর্তীতে
বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ইউনাইটেড মালয় ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন বা ইউএমএনও হিসেবে
পরিচিত হয়।
সিঙ্গাপুরে
ছাত্রনেতা
মাহাথিরের সিঙ্গাপুর জীবন খুব বেশি
বর্ণিল ছিল না। কিন্তু সেখানে
রাজনীতি না হলেও সাংগঠনিক নৈপুণ্য দেখিয়েছিলেন ঠিকই। সিঙ্গাপুরে থাকাকালীন মাহাথির
সেখানের কলেজের মালয় ছাত্রদের নিয়ে 'মালয় ছাত্র সংগঠন' গঠন করেন। তবে এই সংগঠনের উদ্দেশ্য ছিল
ছাত্রদের শিক্ষার মান ও ফলাফল উন্নয়ন করা। এর কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল না।
জীবনসঙ্গী
মাহাথির মোহাম্মদের সফল সাধারণ জীবনে কখনোই ঝামেলা ছিল না। আর
জীবনসঙ্গিনী নির্বাচনেও তিনি সাদামাটা মানুষেরই পরিচয় দেন। সিঙ্গাপুরে পড়ার
সময় সিথি হাসমা মো. আলীর সঙ্গে মাহাথিরের পরিচয় হয়। সিথি হাসমা তখন
দ্বিতীয় মালয় মহিলা হিসেবে সিঙ্গাপুরে বৃত্তি নিয়ে একই কলেজে চিকিৎসাশাস্ত্র
পড়ছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৫৬ সালের ৫ আগস্ট তারা বিয়ে করেন। তখন
তার বয়স ছিল ৩৩ বছর এবং তার স্ত্রী ডা. সিথি হাসমার বয়স ছিল ২২ বছর। তাদের
মোট সাতজন সন্তান আছে, এর মধ্যে আবার তিনজনকে তারা
দত্তক নিয়েছিলেন।
স্বয়ং মাহাথিরও বোধ হয় ভাবতে পারেননি
এভাবে পাল্টে দিতে পারবেন দারিদ্র্যপীড়িত মালয়েশিয়াকে যে গল্পের হিরো ডা. মাহাথির মোহাম্মদ,
সেই গল্পের শুরুটা
কিন্তু অন্য আট-দশটি দুনিয়া পাল্টানো গল্পের মতোই সাদামাটা। বদলে ফেলার জন্য চাই জীর্ণশীর্ণ একটা
অবয়ব। সেই অবয়বকে আমূল
পাল্টে ফেলাটাই একজন শিল্পী কিংবা স্বপ্নদ্রষ্টার কাজ। মাহাথির সেই স্বপ্নদ্রষ্টা। আর মাহাথিরের স্বপ্নের কেন্দ্রবিন্দু
আজকের আধুনিক মালয়েশিয়া। কিন্তু
আলো ঝলমলে যে আধুনিক মালয়েশিয়া আমাদের চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে, সেই চোখ ধাঁধানো কী আগে থেকেই ছিল?
ইতিহাস বলছে ভিন্ন কথা। এই মালয়েশিয়া আসলে রূপকথার সফল
বাস্তবায়নেরই প্রতিচ্ছবি।
একসময়ের মালয়েশিয়া ছিল
দারিদ্র্যপীড়িত একটি অগোছালো রাষ্ট্র। শুধু কি দরিদ্রতা? দরিদ্রতার পাশাপাশি নিরক্ষরতা আর পশ্চাদমুখিতার
কারণে অর্থনীতির ভঙ্গুর দশা কাটানোর কোনো উপায়ই বলতে গেলে ছিল না। এরপর পাল্টানোর গল্পটাও কিন্তু
একদিনের নয়।
টেংকু আবদুর রহমান প্রথম
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বহুধাবিভক্ত দেশটিতে রোপণ করেন ঐক্যের বীজ। ঐক্যের মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত করে দেশ
পরিবর্তনের যে ধারার সূচনা তিনি করেছিলেন তা তার উত্তরসূরি আবদুল রাজ্জাক,
টোয়াংকু ইসমাঈল এবং ডা.
মাহাথির বিন মোহাম্মদ ধরে রেখেছিলেন। এর
মধ্যে শেষোক্তজন কেবল ধারা বজায় রেখেই ক্ষান্ত হননি। তার নীতি আদর্শ আর দেশ পরিচালনার
জাদুস্পর্শে তিনি ছাড়িয়ে গেছেন অন্য সবাইকে। তিনি আধুনিক মালয়েশিয়ার স্থপতি ও রূপকার হিসেবে পৃথিবীতে নন্দিত
হয়েছেন। মূলত মাহাথির
মোহাম্মদের হাত ধরেই দারিদ্র্যপীড়িত মালয়েশিয়া পৌঁছে যায় স্বপি্নল সাফল্যের বিশ্বে। স্বাধীনতার সময় যে মালয়েশিয়ার
অধিকাংশ জনসমষ্টি ছিল বেকার অথবা অর্ধবেকার, মাত্র দুই দশকে নিজের দেশের বেকারত্ব
ঘুচিয়ে সেই মালয়েশিয়ায় কর্মরত রয়েছেন বিদেশের লাখ লাখ কর্মী। স্বাধীনতার সময় এমনকি পরবর্তী সময়েও
যে মালয়েশিয়া প্রায় প্রকম্পিত হয়েছে নিম্নস্তরের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায়,
সেই মালয়েশিয়া আজ
রূপান্তরিত হয়েছে একটি সুস্থ, নিরাপদ, উদার, কল্যাণমুখী জনপদে। কিন্তু
মাহাথির মোহাম্মদ এবং পূর্বসূরিদের রাজনৈতিক লক্ষ্য ছিল জাতির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। মাহাথির অতীতকে স্মরণে রেখে
বর্তমানকে সাজিয়েছেন এবং বর্তমানকে সাজানোর সময় ভবিষ্যৎকে সুস্পষ্টভাবে মনে
রেখেছেন।
বর্ণিল কর্মজীবন এবং রাজনীতি
মাহাথির সিঙ্গাপুর থেকে ফেরত আসেন ১৯৫৩
সালে। সেখান থেকে ফিরে
তিনি একজন চিকিৎসক হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। মালয়েশিয়ার স্বাধীনতার ঠিক আগে তিনি সরকারি চাকরি ছেড়ে দেন। তবে চিকিৎসা পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন
ঠিকই। তখন তিনি তার
নিজের নিজ শহর এ্যালোর সেটরে মাহা-ক্লিনিক নামে একটি প্রাইভেট ক্লিনিক শুরু করেন। শহরের পাঁচটি প্রাইভেট ক্লিনিকের
মধ্যে এটি একমাত্র মালয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তি মালিকানাধীন ক্লিনিক ছিল। তিনি রোগীদের বাড়িতে যেতেন এবং মাঝে
মাঝে ছোটখাটো অস্ত্রোপচার করতেন। মাহাথিরের
মতে, চিকিৎসক হিসেবে তার প্রশিক্ষণ ও প্র্যাকটিস তার মধ্যে স্থিরতা
এনেছিল ও তাকে যে কোনো পরিস্থিতি মূল্যায়ন করতে সক্ষম করেছিল। তিনি একবার 'দ্য ইকোনমিস্ট'
পত্রিকাতে বলেছিলেন,
'চিকিৎসা বিদ্যায়
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লোকের জন্য রাজনীতি একটি ভালো পেশা। একজন ডাক্তার রোগীকে পর্যবেক্ষণ করেন,
স্বাস্থ্যগত ইতিহাস
রেকর্ড করেন, স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন, ল্যাব পরীক্ষা করেন এবং চূড়ান্তভাবে রোগ নির্ণয়
করেন। এ প্রক্রিয়াটি
রাজনীতির মতোই।' ১৯৭৪ সালে মন্ত্রী হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি চিকিৎসা পেশা অব্যাহত
রেখেছিলেন।
মাহাথিরের রক্তে মিশে ছিল দেশাত্মবোধ
আর রাজনীতি। তিনি ১৯৬৪ সালে
কোটা সেটর দক্ষিণ এলাকা থেকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হলে কী হবে?
তিনি তার দলের অনেক
নীতির সঙ্গে একমত হতে পারেননি। ১৯৬৯
সালে তিনি একটি বই লেখেন, যার নাম The
Malloy dilemma বা
মালয়ীদের উভয় সংকট। বইটি
নিষিদ্ধ করা হয়।
১৯৬৯ সালের ৩০ মে কুয়ালালামপুরে চীনা
ও মালয় জাতির মধ্যে তুমুল দাঙ্গার জন্য মাহাথির ইউএমএনও নেতৃত্বকে দোষারোপ করে
প্রধানমন্ত্রী টেংকু টুংকু আবদুর রহমানকে খুব কঠিন ভাষায় একটি চিঠি লেখেন ও তাকে
পদত্যাগের পরামর্শ দেন। এ
সমালোচনায় পার্টি নেতৃবৃন্দের দলীয় সিদ্ধান্তের মাধ্যমে মাহাথিরকে দল থেকে
বহিষ্কার করা হয়। তিনি তখন আবার
তার পেশায় ফিরে গেলেও অনেক ঘটনার পর ১৯৭২ সালের ৭ মার্চ পার্টিতে আবার ফিরে আসেন। পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালের নির্বাচনে তিনি
এমপি নির্বাচিত হয়ে শিক্ষামন্ত্রী হন। শিক্ষামন্ত্রী হয়ে তিনি ঘোষণা দেন তার নামে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের
নামকরণ করা যাবে না। এই
ধারা তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়েও অব্যাহত রাখেন। তার কোনো ছবি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে
কিংবা সরকারি অফিসে টাঙানো যাবে না বলেও তিনি নির্দেশ দেন। মালয়েশিয়াকে বদলে দেওয়ার ক্ষেত্রে
শিক্ষা সংস্কার হচ্ছে মাহাথিরের প্রথম বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। ১৯৭৫ সালে মাহাথির পার্টির ভাইস
প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তুন
হোসেন ওই দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলে তিনি দেশের উপ-প্রধানমন্ত্রী হওয়ার
পথকেও সুগম করেন। ১৯৮১ সালের ১৬ জুলাই
৫৫ বছর বয়সে ডা. মাহাথির মোহাম্মদ মালয়েশিয়ার চতুর্থ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ
করেন এবং একটানা ২২ বছর ক্ষমতায় থাকার পর ৭৭ বছর বয়সে ২০০৩ সালের ৩১ অক্টোবর
স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ও রাজনীতি থেকে বিদায় নেন।
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।